ব্যথার অ্যাবস্ট্রাক্ট | অনির্বাণ
যাদের ব্যথা লাগে না | অনির্বাণ ভট্টাচার্য
[চিত্রণ: মেগান ডানকানসন্, ইউ.এস.এ]
শেকড়ের ব্যথা লাগে না। উপড়ে নিলে বড়জোর দাগ রেখে যায়। দুটো প্রজন্মের মাঝে হাইফেনটুকুর দৈর্ঘ্য বড়জোর ‘এই একটু আসছি’ বলে বড়দের এক এক করে পালাবার রাস্তার মতো বাড়তে থাকে। আর যাদের বাড়িতে সত্যি সত্যি একান্নজন থাকে, চৌবাচ্চা-পাতকুয়ো-অনন্ত চাঁদ পেরিয়ে তারাও কেমন যেন খিটখিটে হয়ে যায়। একটা সময় পলেস্তারা খসতে থাকে। ভেঙে পড়ে চাঙ্গড়। ভোরের দিকে ঘুমের মধ্যেই ঘাড়ে এসে পরে মেজকাকার। এখনো, খবর নিতে গেলেই বলে, ওখানে প্রচণ্ড ব্যথা। রান্নাঘর আলাদা হয়। পরের বাড়ির মেয়ে আপন হয়ে যায়, শুধু দাদুভাই-এর সাথে গল্পের সময়টুকু দক্ষিণ কলকাতার খেলার মাঠগুলোর মতোই ছোট হতে থাকে। দাদু হঠাৎ একদিন রাস্তায় পড়ে যায়, ধরাধরি ক’রে বাড়িতে আনতে আনতে খরচা করতে হয় বেশ কিছু পড়ে পাওয়া রক্ত। হাসপাতালে মানুষটাকে দেখতে শেষ লীয়ারের মতো লাগে। ‘লাগছে’.. কোথায়? প্রশ্ন করলে দাদু বলেছিল ‘ছবিতে’। আধখেঁচড়া শব্দগুচ্ছ কমা থেকে একটু দেরি ক’রে হলেও ফিরতে পারে বাক্যের শুরুতে – কোমা থেকে ফিরতে পারে না। দাদুও। তবে দেখে যেতে পেরেছিল কিভাবে এক একটা গুচ্ছ থেকে আলাদা হয়ে যায় ফুলের অংশগুলো। খাবার মেনু, চানের সময়, শোবার নিয়ম – সব। তারপর ঠাকুমা একা। কাটাছেঁড়ার চিহ্ন। যারা সারা শরীরেই সারাক্ষণ ব্যথা মেখে ঘোরে, বুঝিনি তারা কিভাবে সব্বাইকে ভালবাসতে পারে, ঈশ্বরের চেয়েও ম্যাজিকাল কোনও এক টানে। বুঝিনি চাঙ্গড় ভেঙে পড়াটাও আসলে বাড়িটার কোনও এক ব্যক্তিগত প্রেতের চলে যাওয়ার চিহ্ন। তারপর, একদিন এইসব কোলহারানো ব্যথার মাঝে, চলে যেতে হয় ঠাম্মাদের। ছিঁড়ে যায় শেকড়। লাগে না। মাইলের পর মাইল ঘুরপাক খায় শহরের কিছু উটকো প্লাস্টিক। দেখি, একটুও না থমকে, একটুও না থেঁতলে, দিব্যি জল-হাওয়া খাচ্ছে ওরা। কই, ব্যথা তো লাগছে না? আদৌ কি লেগেছে কখনো?
যে ব্যক্তিগত আলোর অহঙ্কারে জ্বলতে পারে জোনাকিরা, সেই কালো ব্যথার মাটিতে হঠাৎই পায়ে কাঁটা ফোটে দীপ্ত’র। লেগেছে কখনো? চোখে প্রশ্ন নিয়ে নতজানু তৃণা। না, দেয়ালের লাগতে নেই। কথা ছোঁড়াছুঁড়ির লেগ্যাসি দীর্ঘজীবী হয়ে ওঠে দেয়ালের ভরসায়। ফর্মুলা ছবির মতো কড়কড়ে বাজের দাগ, স্ক্রিন চিরে বিদ্যুৎরেখা। যা তো আসলে মধ্যবিত্ত দেয়ালেরই ইউফেমিসম। দুটো আলাদা আলাদা সেলের কয়েদিরা নিজেদের ভেতর যোগাযোগ করে দেয়ালে টোকা মেরে। যে দেয়াল আলাদা করে, তা-ই ওদের কাছে সেতু হয়ে ওঠে। তারপর একদিন, সকাল সকাল ডাক পড়ে লোকটার। চান-টান করিয়ে কানে ফিসফিস ক’রে বলা হয় – রেডি তো? এবার হাত থেকে রুমাল ফেলে দেবে একটা লোক। তুমি ভাসবে, হাওয়ায়। আর লাশের মজা হল, লাগবে না। শুধু ‘জাগিবার গাঢ় বেদনার অবিরাম ভার’ বয়ে বয়ে একদিন ধুস, ভাল্লাগেনা ব’লে বেরিয়ে আসবে। ফুলের পর ফুল, পাথরের পর পাথর সরাতে সরাতে আকস্মিক ক্রোধে বলে উঠবে, ফুলগুলো সরিয়ে নাও, আমার লাগছে। কিন্তু এহ বাহ্য। একসময় খইয়ের দাগ খুঁজে খুঁজে একদিন ঠিক ঘরে ফিরবে পুরনো বেড়াল। রাস্তায় লেগে থাকবে বমি, ক্রীজে রক্ত। একটাই বল লাম্বা, হিউজ হয়ে নতুন নতুন শিকার খুঁজবে। তারপর উইন্ডসরের বাড়িতে নিজের হাতটার ওপর রাগ করতে করতে চিনচিন ব্যথায় আঃ ব’লে পাশ ফিরবেন শন অ্যাবট। ব্যথার মাঝে ঘুমিয়ে পড়বেন। বাইরে তখন হেঁটে বেড়াবে চারপেয়ে মেঘ। আধেকলীন হৃদয়। দূরগামী দ্বীপের মাঝে, পাথরের মাঝে তৈরি হবে ঘর। তারপর পল সাইমনের ওই গানটার মতো কে যেন বলে উঠবে -‘and a rock feels no pain/and an island never cries’। একসময় ওই শেকড়গুলো, ওই বাতিল পলিথিনগুলো, ওই চুপচাপ শরীরগুলো, ওই পাথরগুলো-ও গপ্পের খাতিরে নষ্ট হয়ে যাবে। কমরেড, নেড়েচেড়ে দেখবেন, বিপ্লব নয়, একমাত্র ব্যথাই তারপর দীর্ঘজীবী হবে। আর তখনই কোয়েৎজি-র ‘Waiting for the Barbarians’-এর ওই কথাটার মানে বুঝতে পারবেন -‘Pain is truth; all else is subject to doubt.’
সূচীব্যথাপত্র
Pain-একটু হোক ইংরিজি
অনুগল্প
এটা গল্প হলেও পারত
কী-ওয়ার্ডে ব্যথা
ব্যথার অ্যাবস্ট্রাক্ট
Bong Pen-এর মডেল পৃথিবী
পার্ট ভুলে গিয়ে
সি রি য়া স ঋ সা র্চ
আড্ডা, সাবেকী ভাষায় Interview
আমার জীবন থেকে উঠে আসা সুর
এখনো অ্যানাউন্সমেন্ট হয় নাই, আসবে কি না জানা নাই
Comments
Post a Comment