দ্বিতীয় গহ্বরে | মলয় রায়চৌধুরী - কলকাতার মাটির তলায়
|
দ্বিতীয় গহবর
মৃগাঙ্ক : অতুলদাস মুখোপাধ্যায়ের মেয়ের মেয়ে, অর্থাৎ নাতনি, ইন্দিরা ব্যানার্জি, শিশির দত্ত নামে কোনো একজনের নামে, বর্ধমানের ঠিকানায় লেখা পোস্টকার্ডটা, যাতে তারিখ নেই কিন্তু পোস্টঅফিসের ছাপ থেকে তার জন্মেরও আগের বলে মনে হয়েছে, প্রয়াত দাদুর একটা ডায়েরির মধ্যে পাবার পর, কৌতুহলবশে শিশির দত্তকে পোস্টকার্ডের জেরক্সসহ চিঠি লিখে জানতে চেয়েছিল, তিনি এ-ব্যাপারে আলো ফেলতে পারেন কিনা ।' এখন স্টাইল হয়েছে ছোট ছোট বাক্যে লেখার। সেখানে তুমি একটা শুরু করছ এই ভাবে। ৫৩ শব্দের পর দাঁড়ি। তোমার এক পাঠিকাকে জিজ্ঞেস করলাম, এতো বড় বাক্য পড়তে ভালো লাগে? সে বলল এতো বড় বাক্য বলেই ভালো লাগে তার। তুমি কি বল?
মলয়
:
বাংলা ভাষায় পাল্প ফিকশানের রমরমার ফলে ছোটো-ছোটো বাক্য প্রয়োগ আরম্ভ হয়েছে । তাহলে
তাড়াতাড়ি দোল-দুর্গোৎসব-বইমেলা ইত্যাদির জন্য হু-হু করে একের পর এক গল্প-উপন্যাস ভড়ভড়াতে
থাকা যায় । অন্য কোনো দেশে আছে নাকি ৩০০-৪০০ উপন্যাস লেখক, ২০০০০ গল্প লেখক । সাহিত্যিকের
কাজ হল নিজের মাতৃভাষাকে উন্নত করা । কাহিনি তো ঠাকুমা-দিদিমারা পাল্প ফিকশান লেখকদের
চেয়েও ভালো বলতে পারেন । আমাদের দুর্ভাগ্য যে ভাষাকে অবহেলা করে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে
গপপোকে । কাফকা, মার্কেজ, ফকনার, প্রুস্ত পড়ে দ্যাখ, অনেক সময়ে পুরো পৃষ্ঠা জুড়ে একটা
বাক্য, যার ভেতরে ভবিষ্যৎ-বর্তমান-অতীত তিনটিকেই একযোগে আনতে পেরেছেন ওনারা । জয়েসের
মতন নিরীক্ষাকারীকে বাদই দিচ্ছি না হয় । বাংলাতেও পাল্প ফিকশান অলাদের হামলে পড়ার আগের
ঔপন্যাসিক আর গল্পকাররা ভাষাকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন । কমলকুমার মজুমদার, অমিয়ভূষণ মজুমদার,
অসীম রায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, ওয়ালিউল্লাহ, আখতারুজ্জমান প্রমুখকে আমরা গুরুত্ব
দিই কেন ? তাঁদের ভাষার কাজের জন্য । বাংলা সংবাদপত্র হাতে নিয়ে তার একটা প্যারার সঙ্গে
টাইম ম্যাগাজিনের একটা প্যারা মিলিয়ে দ্যাখ । ইংরেজিটা উন্নত কেন ? তাঁদের সাহিত্যিকদের
অনলস পরিশ্রমের জন্য । সালমান রুশডি যদি ছোটো-ছোটো বাক্যে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন লিখতেন,
তাহলে ওটাও পাপ্ল ফিকশান হয়ে যেতে পারত । আমি যতটা পারি, প্রয়াস চালিয়ে যাই । বয়স হয়ে
গেছে আর আঙুলে সমস্যার জন্য যদিও পরিশ্রম করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে । কোন পাঠিকা,
নাম জানালি না কেন ? বিদেশে সাক্ষাৎকারে তো সকলেরই নামোল্লেখ করার রেওয়াজ আছে ।
মৃগাঙ্ক
:
আমি তার সাথে আমার পুরো কথপোকথনটাই সাক্ষাৎকারের শেষে প্রকাশ করব।
পড়তে পড়তে ক’টা প্রশ্ন মাথায় আসছে করে ফেলি।
অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা । আমি পড়া শুরু করেছি। প্রথম ভূমিকা শেষ করেই একটা
প্রশ্ন মাথায় এলো। ইন্দিরা, শিশির দত্ত, সুবীর - এরা তোমার জীবনের চরিত্র ?
পড়তে গিয়ে সাধু আর চলিত ভাষা এক পর্বে চলিত
এক পর্বে সাধু। এই খেলাটা কেন খেলছ বলতো ?
"নির্মল, জানি না, কোন জাদুবলে নিজেকে
নারীদেহের প্রতি উদাসীন ও নির্লিপ্ত এবং ছবি
আঁকার প্রতি একাগ্র ও মগ্ন রাখিয়াছে । শ্বেতাঙ্গিনী হইতে এত তফাতে বসিয়াও আমার শরীর
টাটাইয়া উঠিতেছে । আনকোরা উত্তেজনা দমনে হইতেছি উত্তাল ; শব্দ করিয়া ফেলিতে পারি এই
আশঙ্কায় পায়ের উপর পাও রাখিলাম না ।"
ঠিক এই মুহূর্তে তোমার কাছে কোন চরিত্রটা আদর্শগত ভাবে ঠিক নির্মল না কি উত্তম
পুরুষ ?
ডায়েরিটা সাধুতে না করলে কিন্তু এই মজা পেতাম
না। কি বল তুমি ?
'ওঃ, জিমি হেনড্রিক্স ! ইনডিয়ায় আসিয়া এই
প্রথম একজন ভারতীয়ের কন্ঠে জিমি হেনড্রিক্সের নাম শুনিলাম । গিটার তাঁহার হাতে যৌনতায়
উত্তেজিত রমণীদিগের ন্যায় হইয়া উঠে ; যেনবা গিটারের অরগ্যাজম ঘটে ! শরীরে আনন্দের ঢেউ
তুলিয়া ম্যাডেলিন কহিল । তদ্ব্যাতীত, অরগ্যাজম শব্দটি শুনিয়া প্রীত হইলাম । ইতোপূর্বে
কোনো নারীর কন্ঠে এই শব্দটি শুনি নাই ; বস্তুত, ভাষার ভিতরে যে আরাম প্রদানের ক্ষমতা
আছে তাহা মাঝে-মধ্যে অন্যের কন্ঠস্বর নিঃসৃত শব্দে অনেকসময়ে ফুটিয়া উঠে ।' - তোমার
ভাষা নিয়ে একথা বলেছে কেউ?
মলয়: চরিত্রগুলো আমার পরিচিতদের জীবন থেকে হুবহু তুলে
নেয়া নয় । কিছু-কিছু ইনপুটস নিয়েছি ষাটের দশকে কাঠমাণ্ডু আর বেনারসে হিপিনি আর চিত্রকর
বন্ধুদের জীবন থেকে, ঘটনাও কিছু-কিছু নিয়েছি । হিপি-হিপিনিদের সঙ্গে কয়েকমাস ছিলুম,
কাঠমাণ্ডুর একটা বিশাল তিনতলা চালাবাড়ি কমপ্লেক্সে । বেনারসে মাসখানেক ছিলুম কাঞ্চন
মুখোপাধ্যায়ের মেজানাইন ফ্লোরের ঘরে । তখন পেইনটারদের একটা গোষ্ঠী ছিল যাদের প্রতি
হিপিনিরা আকৃষ্ট হতো ; এই পেইনটারদের কয়েকজন ছিল আমাদের আন্দোলনে । তাদের মধ্যে কয়েকজন
নকশাল আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিল । চলিতভাষা আর সাধুভাষার মাধ্যমে ওই দুটি চরিত্রের ভাবজগতের
পার্থক্যকে প্রকাশ করার প্রয়াস করেছি, তাদের চারিত্রিক বৈভিন্ন্যও প্রকাশ করার চেষ্টা
করেছি । কেকা নামের নারী চরিত্রটির মন্তব্যও আছে এই বিষয়ে । কবি অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়
বলেছিলেন যে ভাষার খেলার জন্যই বইটা পর্নো হয়ে ওঠেনি, যদি ভাষার খেলা আর সমাজ-রাজনীতি
নিয়ে পাশাপাশি অধ্যাপকের বিশ্লেষণ না থাকত, তাহলে মুশকিল হতো ।
আমার কাছে কোনো চরিত্রই "আদর্শ"
হিসাবে চিহ্ণিত করার প্রসঙ্গ ওঠে না ; লেখার সময়ে চরিত্রদের জীবনের আনন্দ নেবার রেষারেষি
আর পারস্পরিক সংঘাত-প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ধরার চেষ্টা করেছিলুম । জিমি হেনড্রিক্স প্রসঙ্গে
অরগ্যাজমের উক্তিটা বলেনি কেউ । লেখার সময়ে মগজে নানা জিনিস চলে আসতে থাকে; এই উক্তিটাও
তেমনইভাবে উদয় হয়েছিল ।
মৃগাঙ্ক
:
চরিত্রগুলো তাহলে কি আগে ঠিক করে নাও। এই চরিত্র - তার এই বৈশিষ্ট্য হবে, তাকে দিয়ে
এটা বলাব, এটা বলালে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে কন্ট্রাডিক্ট করবে- এগুলি কি সচেতন
ভাবে ঠিক করে নাও ?
কেন পর্নো হবার এলিমেণ্ট ছিল নাকি! আমি তো
যেটুকু পড়লাম এখনো কিছু পাই নি। আর ' আদর্শ ' বলতে জিজ্ঞেস করছিলাম, তুমি যদি সেই মুহূর্তে
উপস্থিত থাকতে, সেক্ষেত্রে তুমি কোন চরিত্রটা বেছে নিতে?
মলয়
:
কোনো-কোনো উপন্যাসে কলম বা মগজটাই কাহিনি, চরিত্র, ঘটনা তৈরি করে এগোতে থাকে । প্রথমে
একটা ভাবনা নিয়ে আরম্ভ করি, তারপর কলম নিজেই সেই ভাবনাটাকে নিয়ে এগিয়ে যায় । আমি ট্র্যান্সের
সেই স্রোতের সঙ্গে বইতে থাকি । আবার কোনো-কোনো
উপন্যাসে পুরোটা আগাম ছকে নিয়ে এগিয়েছি, যেমন "ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস" সিরিজের
চারটে উপন্যাসেই । পঞ্চমটা লিখতে গিয়ে আটকে গেছি, এটাতেই সিরিজটা শেষ হবার কথা ; পাটনায়
শুরু করে অতনু চক্রবর্তী চরিত্রটাকে তাদের উত্তরপাড়ার খণ্ডহরে এনে বার্ধক্যে স্বাভাবিক
মৃত্যু দেখাবার কথা ভেবেছিলুম, কিন্তু আগের বইগুলোর ঘটনার সঙ্গে সময়-শেকল গড়তে পারছি
না । ডিটেকটিভ উপন্যাসটায় প্লট আগে থাকতে ড্রাফ্ট করে নিয়েছিলুম, চরিত্রগুলো লেখার
সময়ে গড়ে উঠেছে ; তবে খুনি, ডিটেকটিভ আর যাকে খুন করা হয়েছে সকলকে নারী চরিত্রে রাখব
ভেবে নিয়েছিলুম । কাহিনির ছকটা বলার পর শাশ্বত শিকদার একটা অ্যানাটমির বাংলা বই এনে
দিয়েছিল । "অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা"
উপন্যাসের ফর্ম আর চরিত্রগুলো, সেক্সুয়াল কর্মকাণ্ড ছকে নিয়েছিলুম, কিছু সেক্সুয়াল
আইডিয়া অ্যানিমাল প্ল্যানেট দেখে পেয়েছিলুম, তারপর লিখতে-লিখতে কলম এগিয়ে নিয়ে গেছে
। সেক্স আর প্রেমের একটা সূক্ষ্ম পার্থক্য গড়ার চেষ্টা করেছি উপন্যাসটায়; প্রেসিডেন্সি
আর যাদবপুরের ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ-কেউ নাকি বলেছে যে এতে পর্নোর উপাদান আছে ।
"জঙ্গলরোমিও" নামে একটা উপন্যাস লিখেছি, পুজোয় বেরোবার কথা একটা পত্রিকায়,
তাতেও সেক্সুয়াল অ্যাক্টিভিটি ছকে নেয়া, চরিত্রগুলোও ভেবে নেয়া, কেবল তাদের সংলাপ ভেবেচিন্তে
তৈরি করতে হয়েছে, কেননা "জঙ্গলরোমিও" উপন্যাসে আমি কোনো চরিত্রের নাম দিইনি
।
আমি কোন চরিত্র হতে চাইতুম জানতে চাইছিস কেন
? "রাহুকেতু" পড় । তাতে আমার চরিত্র, অর্থাৎ রাহুল সিংহকে, তার প্রেমিকা
বলেছে সে আসলে একজন লেচার ।
মৃগাঙ্ক
:
অনেক সময় এরকম দেখেছি, নিজে যখন লিখতে গেছি, কিছু কিছু চরিত্রের ক্ষেত্রে যেখানে উত্তম
পুরুষে লিখছি, সেখানে আমি নিজেকে সেই চরিত্রে ঢুকিয়ে নিয়েছি। এ ক্ষেত্রে যেটা বুঝতে
চাইছিলাম, শিশির দত্ত উত্তম পুরুষে তুমি লিখছ। ডায়েরি হলেও। ডায়েরিটাও তো তোমারই লেখা।
তুমি কি শিশির দত্তের মধ্যে নিজেকে ফেলেছিলে? যদি ফেলো, শিশির দত্ত মানুষটার কথা যদি
ঐটুক সময়ের কথা শুনেই বুঝতে চাই, সে শিল্প তার মাথায় নেই পুরোপুরি ভাবে সে শরীর দেখছে।
আর প্র বৈ ছু তে ভাবো, 'নারীকে ভুলে গিয়ে শিল্পে
ফিরে এসেছি' এই দুটো চরিত্রই উত্তম পুরুষে। একটা কণ্ট্রাডিকসান। একটা মানুষের মধ্যে
কি এই দুটি সত্তাই কাজ করে? যদি তুমি বলতে তুমি নির্মলকে বেছে নিচ্ছ তাহলে আমি অন্য
প্রশ্নে যেতাম। যদি বলতে শিশির দত্ত আমি এই প্রশ্নটা করতাম।
মলয়
:
"অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা" উপন্যাসে ডায়েরির ফর্মে তিনজনের লেখাই তো আমার ।
তাহলে কেবল শিশির দত্তের চরিত্রে ঢুকে আছি বলছিস কেন । উত্তম পুরুষে কেকা নামের মহিলাটিও
তাহলে আমি বলে ধরতে হবে ! ডায়েরিতে লেখা অধ্যাপকের নোটসগুলো কেবল আমার বিভিন্ন প্রবন্ধ
থেকে কোট করা, যেখানে যেটা অ্যাপলিকেবল ; এই অংশটা আমি পরে ঢুকিয়েছি । উপন্যাসটা লেখার
জন্য, তখন কলম ধরে লিখতে পারতুম, চরিত্রগুলোর এনট্রি আলাদা-আলাদা কাগজে লিখে তারপর
সাজিয়েছি, যাতে সাধুভাষা আর চলিতভাষা গোলমাল করে না ফেলি । আমার ফিকশানগুলোয়, নিজে
কোনো চরিত্রে "রাহুকেতু" লেখার আগে ঢুকিনি । বাল্যস্মৃতিগুলোতে, “ছোটোলোকের
ছোটোবেলা” আর “ছোটোলোকের যুববেলা” বইতে অবশ্য
আমি আছি, হুবহু ; আর আছেন আমার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ।
মৃগাঙ্ক
:
আমি তো এখনো পড়ছি। পড়তে পড়তে যে প্রশ্নগুলো মাথায় আসছে করছি। পুরো পড়ে সব জেনে নিয়ে প্রশ্ন
করলে প্রশ্নগুলো কেমন সবজান্তা টাইপ হয়ে যায়।
অন্যান্য কিছু সাক্ষাৎকার পড়ে আমার মনে হয়েছে। সবই জানে, তাও তোমাকে একবার জিজ্ঞেস
করে নিতে হয় বলে নিচ্ছি। আমার কাছে এটা গল্প শোনার মত। সেটাই আমি এনজয় করছি। তাই পড়তে
পড়তে প্রশ্নগুলো করে যাচ্ছি। 'ডায়েরিতে লেখা অধ্যাপকের নোটসগুলো কেবল আমার, বিভিন্ন
প্রবন্ধ থেকে কোট করা, যেখানে যেটা অ্যাপলিকেবল ; এই অংশটা আমি পরে ঢুকিয়েছি । ' -
এটা তো দারূণ। কিন্তু যারা ধরো তোমার প্রবন্ধগুলো পড়েছে, তাদের কাছে রিপিটিসান লাগতে
পারে কি ?
মলয়
: না, আমারই প্রবন্ধগুলো থেকে যে কেটে নিয়ে বসিয়ে
দিয়েছি, তা কেউই ধরতে পারেননি । বা, ধরতে পারলেও জানাননি আমাকে । আসলে এতো বেশি প্রবন্ধ
এককালে লিখেছি যে পাঠকদের সেসব মনে আছে বলে মনে হয় না । কেবল বিষয়বস্তুই কেউ-কেউ মনে
রেখেছেন । প্যারার পর প্যারা তো আর কেউ বিশেষ মনে রাখে না ।
মৃগাঙ্ক
:
পড়তে পড়তে যেটা মনে হচ্ছে, যারা তোমার এই উপন্যাসকে পর্নো বলেছে, তাদের প্রতি করুণা
হয়। একটা অবান্তর প্রশ্ন করি। কি কি এলিমেণ্ট থাকলে সেটা পর্নো বলে ব'লে তোমার মনে
হয় ?
মলয়: আমার ব্যাংকশাল
কোর্টের সিনিয়ার উকিল বলেছিলেন "যার বিষয়বস্তু যৌনতা আর যার একমাত্র উদ্দেশ্য
হল একজন একলা মানুষকে যৌনকর্মে উদ্দীপ্ত করে তোলা" তাই আদালতের কাছে পর্নোগ্রাফি
। ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার” কবিতাটা কাউকেই এই অর্থে উত্তেজিত করেছিল বলে মনে হয় না
। আমি ছোটোবেলায় যে পাড়ায় থাকতুম, অর্থাৎ ইমলিতলা, সেখানে আমাদের রোয়াকে বসে অনেকে
'কোকা পণ্ডিত কা কিতাব' বা হিন্দি পর্নোগ্রাফি
পড়ত, চেঁচিয়ে-চেঁচিয়ে, অনেকে জড়ো হতো শোনার জন্য, মহিলারাও, ঘোমটার ভেতর খিক-খিক
হাসি হেসে । তাই আমার পক্ষে ডিফাইন করা কঠিন । আমাদের বাড়ির ভেতরেই একটা কুয়ো ছিল,
বিহারি বউরা সেই কুয়ো ঘিরে যৌনতার গান গাইতে আসতো কারোর বিয়ে থাকলে । যৌনতার গান মানে
প্রথম রাতে যোনি আর লিঙ্গ কীভাবে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত হবার পর কেমন ধরণের কর্মকাণ্ডে
লিপ্ত হল । আমরা, বাড়ির ছোটোরাও তাতে ভিড় করতুম । তাই বড়োজ্যাঠা কুয়োটা বুজিয়ে ফ্যালেন
। কুয়ো বোজাবার লাল গোল দাগটা থেকে গিয়েছিল । আমার মেজদা ওই লাল দাগটার ভেতরেই মাথা
ঘুরে পড়ে কম বয়সে মারা যান । ঘটনাটা “ছোটোলোকের ছোটোবেলা”র “এই অথম ওই অধম” অংশে পাবি
।
মৃগাঙ্ক
: আমার মনে হয় শরীরেরও রাজনীতি আছে। সেই শরীর রাজনীতির
কথাই যেন বলা এই উপন্যাসে। তোমার কি মনে হয় ?
মলয়: মানুষ-মানুষের
সম্পর্কে রাজনীতি থাকেই । জন্তু-জানোয়ারের ভেতরেও থাকে । হ্যাঁ. "অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা"
উপন্যাসে, প্রতিটি সম্পর্কের মতনই ডমিন্যান্সের রাজনীতি আছে, কেবল যৌনতার নয়, শ্রেণি-সংস্কৃতি
আর ভাষারও, তিন ধরণের ভাষা-কাঠামো আর তাদের ব্যক্তিগত গরিমার আস্ফালন ; সঙ্গে ভিয়েতনাম
যুদ্ধের রাজনীতির বিরোধিতাকারিনী মার্কিন নারী, নকশাল আন্দোলনকারী চিত্রকর যুবকদল,
হিন্দুধর্মকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া ভারতীয় নারী । প্রত্যেকে নিজের রাজনৈতিক খেলা খেলে
গেছে ।
তৃতীয় গহবর
অরূপ তোমার এঁটকাঁটা পড়তে পড়তে কখনো আমার
যৌনাঙ্গ শক্ত হয়েছে, নিজের ভেতরেই শিশির দত্ত হয়ে উঠেছি। শারীরিক উত্তেজনার মধ্যে হঠাৎই
এমন একটা লাইন এসেছে, আমাকে ওলটপালট করেছে। ধর্ম ব্যবসা, দুই ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের
শরীরের ক্ষিদে, সঙ্গমে টিকটিকি ঘোড়া। দিনের পর দিন যৌন ক্ষিদে আর পেটের ক্ষিদে
ব্যতিত জগত থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারে মানুষ কি ভাবে! আর কেকা আর শিশিরের দুটি চরিত্র
- কিন্তু প্রেক্ষিতটা কতটা স্পষ্ট করে দেওয়া। সবের মধ্যে আমার মনে হল, যৌনতাকে কেন্দ্র
করে ধর্ম সমাজ রাজনীতিকে ধরলে, নাকি যৌনতা পরিধী, যা ঘিরে রেখেছে বাকি জিনিসগুলোকে
?( চলছে )
|
Comments
Post a Comment