মলয় রায়চৌধুরী : কলকাতার মাটির তলায়


click me


প্রথম গহবর

মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়:  ব্যক্তিগত ভাবে পরিচয় থাকলে একটা সমস্যা থাকে। প্রশ্নগুলো সহজ হয়ে আসে নিজে থেকেই। এক্ষেত্রেও কতটা নিরপেক্ষ হব, জানি না। তবে চেষ্টা একটা করে যাব। তাই প্রথমে চরম শত্রুতা নিয়েই শুরু করতে চাইছি এই সাক্ষাৎকার। 
এই সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগেই আমি তোমাকে জানিয়েছিলাম, এটা শুধু মাত্র তোমার লেখালিখি নিয়ে। কারণ তোমার যেকোনো সাক্ষাৎকারেই উঠে আসে তোমার ব্যক্তিগত জীবন। 

‘কোজাগরির রাত ডাস্টবিনে নেমে এসেছে পূর্ণিমার ঝকঝকে চাঁদ পথবালকদের কাড়াকাড়ি’

কবে লিখেছ ?

মলয় রায়চৌধুরীঃ   সেরেছে । আমি আমার কবিতা মনে রাখতে পারি না । দুচারটে কবিতা মোটামুটি কোন সময় নাগাদ লিখেছিলুম, তা চেষ্টা করলে হয়তো বলতে পারব । বেশির ভাগ কবিতার ক্ষেত্রে পারব না । অনেকে বুড়ো বয়সেও গড়গড় করে নিজের কবিতা একের পর এক আবৃত্তি করে যান, দেখেছি । আমায় বললে আমি আমার একটাও কবিতা মুখস্থ বলতে পারব না । তাই এই লাইনগুলো কবে লিখেছি বলতে পারলুম না । বাবা পড়া মুখস্হ করার বিরুদ্ধে ছিলেন বলে ছোটোবেলা থেকেই মুখস্হ করা রপ্ত করে উঠতে পারিনি ।



মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: তোমার হাইকুগুলো একসময়ের লেখা নাকি আলাদা আলাদা সময়ের ?

মলয় রায়চৌধুরীঃ হাইকুগুলো ২০১১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে লেখা । হঠাৎই হাইকু লেখার ইচ্ছে হয়েছিল, বা বলা যায় হাইকুতে পেয়ে বসেছিল ।




মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: কখনো কি বুঝতে পারো এই ইচ্ছে অনিচ্ছাগুলো? কেন হঠাৎ লিখতে ইচ্ছে হল, কেনই বা তারপর আর হল না?

মলয় রায়চৌধুরীঃ   লেখা আমার মগজে জমতে থাকে, কলকাতার ভ্যাট ডাস্টবিনগুলোর মতন, অনেককাল যাবত অনেক লেখা জমতে থাকে । জমতে-জমতে কিচাইন হয়ে ওঠে । আমি সবই লিখি, কবিতা উপন্যাস প্রবন্ধ কাব্যনাট্য, সবই । ডাস্টবিনের যেমন নির্দিষ্ট বিষয় হয় না, আমারও তেমনি । এখন আথ্রাইটিসের জন্য হাতে কলম ধরে লিখতে পারি না । কমপিউটারে এক আঙুল দিয়ে লিখি । যখন কলমে লিখতুম তখন মনের ভেতরে বাক্য এলে বা পথচলতি কোনো উক্তি শুনলে ডায়েরিতে লিখে রাখতুম, ব্যবহার করার জন্য । এখন আর অমন কোনো ব্যাংক নেই আমার । কমপিউটারে তো যখন ইচ্ছে লিখতে বসতে পারি না ; যেমন স্বাভাবিকভাবে ডায়েরিতে লিখতুম । তবে কিছু একটা মগজে বহুক্ষণ যাবত একত্রিত হতে থাকলে সাইক্লোনের ঘোরের মধ্যে থাকি, যাতে ভুলে না যাই তার চেষ্টা করি । আমি রাস্তায় একা-একা ঘুরতে ভালোবাসি, লোকজন একত্রিত হয়ে হইচই একেবারে ভালো লাগে না । সবাই মিলে মদ খাওয়া আমি একেবারে পছন্দ করি না ; যদিও আজকাল আর মদ খাই না শরীরে নানা গণ্ডোগোল দেখা দেয়ায় । লেখালিখিটা ঘটে ওই একাকীত্ব বা নিঃসঙ্গতাকে এনজয় করার জন্য । উপন্যাসের ক্ষেত্রে ফর্মটাও চিন্তা করতে হয় ; তাও বেশ কিছুকাল ধরে ভেবে তারপর লিখি । ব্যাপারটা বোঝা যাবে "অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা", আর "নখদন্ত"-র ফর্ম দেখলে ; কাব্যনাট্য "ভালোবাসার উৎসব" আর "যে জীবন ফড়িড়ের দোয়েলের" দেখলে ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: আমি তোমার লেখার ভেতরে ঢুকবো,  এই সময়ের লেখালিখি গুলো নিয়েই আগে একটু কথা বলব। তারপর পিছবো। এভাবেই ভেবেছি। কিন্তু তার আগে একটা কথা জিজ্ঞেস করি, আমি বহু মানুষের ক্ষেত্রে দেখেছি, তাদের কাছে তুমি তোমার লেখার থেকেও বেশী আলোচ্য তোমার জেলে যাওয়া নিয়ে, এবং এই মুহূর্তেও তোমার লেখালিখিতে 'অশ্লীলতা' নিয়েই তারা বেশী আলোচনা করেন, সবাই করেন বলছি না, কিন্তু পাঠকের একটা বড় অংশ করে। তোমার কখনো খারাপ লাগে না এটা ? তোমার লেখা নিয়ে আলোচনা করার এতো দিক রয়েছে, অথচ...

মলয় রায়চৌধুরীঃ   হাংরি মকদ্দমা যখন আরম্ভ হল তখন হিন্দি লেখক ফণিশ্বরনাথ রেণু, একদিন বলেছিলেন, "এই যে তোমার প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার নিয়ে অবসিনিটির আর সাবভার্শানের মামলা আরম্ভ হল তো, তুমি দেখবে তুমি ক্রমশ ওই অশ্লীলতার জন্যই পাঠকদের সঙ্গে অ্যাসোশিয়েটেড হয়ে যাচ্ছে ; শুঁটকি মাছের গন্ধ আমাদের ভালো লাগে, টাটকার চেয়েও বেশি টানে ।" অ্যালেন গিন্সবার্গও বলেছিল, এত কবিতা লিখছি, তবু সবাই কবিতার চেয়ে আমি কী করে বেড়িয়েছি, কবে কোথায় ল্যাংটো হয়েছি, তাতে ইনটারেসটেড । আমার কাছে ব্যাপারটা স্বাভাবিক মনে হয় সেকারণে । আমার ক্ষেত্রে প্রধান কারণ হল এতকাল পাঠকরা আমার বইপত্র খুঁজেও পেতেন না । তাঁদের দৃষ্টিতে আমার মামলাটাই জীবন্ত ছিল ; অন্যান্য লেখার সঙ্গে তাঁদের পরিচয় সাম্প্রতিক । তাই ব্যাপারটা খারাপ লাগে না । অশ্লীলতার লেবেলটার একটা পজিটিভ দিকও আছে : যারা কবিতার পাঠক নয়, তারাও আমার কবিতার খোঁজ করে । উপন্যাস প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯৫ সালে । কবিতার বই নতুন করে বেরিয়েছিল আশির দশকের শেষ, "মেধার বাতানুকূল ঘুঙুর", উত্তম দাশ-এর সৌজন্যে, উনি সস্ত্রীক লখনউ এসেছিলেন বই বের করার প্রস্তাব নিয়ে, কেননা সেসময়ে আমার বেশির ভাগ কবিতা ঢাকার পত্রিকায় প্রকাশিত হতো, কলকাতার সম্পাদকরা ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত, ওই অশ্লীল কবিতার ভয়ে, তারা কেউই চাইত না । প্রথম চাইল কৌরবের কমল চক্রবর্তী, ওনাদেরও ভয়ে সিঁটিয়ে-থাকা সম্পাদকদের মুখোমুখি হতে হতো । এখন তো ইনটারনেট হয়ে পাঠকরা অন্যান্য লেখা পড়তে চান, প্রবন্ধের বইয়ের খোঁজ করেন । এখন কে কী বলল বা লিখল তা নিয়ে আর ভাবি না । আসলে জানতেই পারি না কে কোথায় কী লিখছে ; পত্রিকা তো পাইনা বিশেষ । আথ্রাইটিসের কারণে পড়ার সময়ও তেমন পাই না; লিখতেই প্রচুর সময় লেগে যায় । ভেবে দ্যাখো, এক-একটা উপন্যাস লিখেছি কেবল এক আঙুলে কমপিউটারে টাইপ করে ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: আমি সেটা প্রথম যখন বলেছিলে তখনই ভাবতাম। আমার দশ আঙ্গুলে লেখা তেই গল্প লিখতে সপ্তাহ লেগে যায়। সেটা লেখা এডিট করা। তুমি এই শরীরে কি ভাবে পারো! শুধু তো তাই নয়। তুমি যখন অনলাইনে কোন comment কর দেখি, কত সুন্দর ভাবে গুছিয়ে বল। এখন তো বেশির ভাগই লাইক মেরে চলে যায়। কথা বলার প্রয়োজনই বোধ করে না। এই করে কতজনের সাথেই কথাই হয় না। তোমার ইচ্ছে শক্তিই অনেক কিছু শেখায়। আচ্ছা মলয়দা তুমি তোমার লেখায় বাঁকগুলো আলাদা করতে পারো?

মলয় রায়চৌধুরীঃ জীবনে যখন-যখন বাঁকবদল ঘটেছে, তার সঙ্গে লেখাতেও বাঁকবদল ঘটেছে । আমার বাল্যস্মৃতি "ছোটোলোকের ছোটোবেলা" পড়লে জানা যাবে যে প্রথম বাঁকবদল ঘটে যখন জানতে পারি যে আমার মেজদা বড়ো জ্যাঠার নিজের ছেলে নয় ; তাকে এক বেশ্যার কাছ থেকে কেনা হয়েছিল । জানি না আর কোনো লেখকের জীবনে এই ধরণের আকস্মিক বিদার ঘটেছে কিনা । ওই বইতেই কুলসুম আপার কথা আছে, যিনি যৌনতার বাঁকবদল ঘটিয়েছিলেন, যদিও তখনও আমার বয়ঃসন্ধি আরম্ভ হয়নি । আমার ঠাকুমাকে ঘটনাটা বলতে উনি বলেছিলেন তোকে পুরুষ বানিয়ে দিয়েছিল মাগিটা ।  "ছোটোলোকের যুববেলা" বইতে আছে পরের বাঁকবদল, যখন বন্ধুদের সঙ্গে নেশা আর যৌনহুল্লোড়ে ভিড়ি । এরপর থেকে আমি পড়ুয়া হয়ে যেতে থাকি, বুকওয়র্ম, আর একাকীত্ব এনজয় করা আরম্ভ করি । "রাহুকেতু" উপন্যাসে আমি ঘটনাগুলো দিয়েছি যাতে বৌদ্ধিক বাঁকবদলগুলোকে চিহ্ণিত করা যায় । পড়ে দেখিস যোগাড় করতে পারলে । তবে, যৌবনে বাঁকবদলগুলো সীমালঙ্ঘন দিয়ে গড়ে উঠেছে । জন্মেছিলুম গোঁড়া ব্রাহ্মণ পরিবারে, প্রচুর সীমা ছিল। তারপরে অভিজ্ঞতাগুলো সংগ্রহ করলুম চাকুরিসূত্রে যখন আমি সারা ভারত ট্যুর করা আরম্ভ করলুম, আর ভারতের গ্রামের মানুষের আতঙ্ক আর ক্ষুধার জীবনের সঙ্গে সরাসরি পরিচিত হলুম । আমার উপন্যাসগুলোয় প্রতিফলিত হয়েছে অভিজ্ঞতাগুলো । একটা উপজাতি গ্রামে, যেহেতু আমি অতিথি, আমার স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলুম, গাছ থেকে বেগুন পেড়ে পুড়িয়ে আমাদের নেমন্তন্ন খাওয়ানো হয়েছিল, ব্যাস শুধু বেগুন, আর কিছু নয় ; জল খাবার জন্য কুয়ো বা পুকুর ছিল না। আর কিছুই ছিল না ওই গ্রামে খাবার মতন । জীবনের এই লাথিগুলো যখনই খেয়েছি, তখনই বাঁকবদল ঘটেছে । প্রথম প্রেমিকার লাথি দিয়ে আরম্ভ-- তাও আছে "রাহুকেতু" উপন্যাসে ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: আমি তোমার কবিতা প্রায় সবই অল্পবিস্তর পড়েছি। ২০০৪ - ১৯৬১। গদ্য তেমন পড়া হয় নি। আজ একজনের সাথে কথা হচ্ছিল। সে বলছিল, তোমার লেখা বুঝতে গেলে, আগে তোমার প্রবন্ধ গুলো পড়া দরকার। তোমার কি মনে হয় ?

মলয় রায়চৌধুরীঃ আমি প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছি প্রচুর ; বোধহয় দুশোর মতন হবে । প্রভাত চৌধুরী, মুর্শিদ আর উৎপল ভট্টাচার্য তিনটে সংকলন প্রকাশ করেছেন প্রবন্ধের বইয়ের । অপ্রকাশিত প্রবন্ধ রয়ে গেছে অসংখ্য । আমি নিজের লেখাপত্র সংগ্রহে রাখি না ; তাই প্রবন্ধের সংকলন আর বেরোতে পারেনি । কে-ই সেসব সংগ্রহ করবে বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন থেকে । প্রবন্ধের বিষয়-বস্তুও ভ্যারিড, সাহিত্য ছাড়াও সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি দর্শন নিয়ে লিখেছি । তবে কবিতা আর নাটক লেখার পরে উপন্যাস লেখা আরম্ভ করেছি । ১৯৯৪ সালে  "ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস" উপন্যাস প্রকাশের পর, দাদা যখন "হাওয়া৪৯" সম্পাদনা আরম্ভ করলেন, তখন প্রবন্ধ লেখায় হাত দিই, মূলত "হাওয়া৪৯" পত্রিকার প্রবন্ধের ফাঁক মেটাতে । এখন আঙুলের সমস্যা আর মস্তিষ্কের আলস্যের জন্য আর বিশেষ সিরিয়াস প্রবন্ধ লিখতে পারি না । আমার কবিতা, নাটক, কাব্যনাট্য, উপন্যাস পড়ার জন্য আমার প্রবন্ধ পড়ার কোনোই দরকার নেই । অনেকে আমার কবিতা বুঝতে পারছেন না, অনুযোগ তুলেছিলেন বলে "অ" নামে একটা বইতে গোটা কুড়ি নিজের কবিতা বিশ্লেষণ করেছিলুম , তাও শূন্য দশকের মাঝে সম্ভবত। আমার তো মনে হয় প্রবন্ধের মাধ্যমে আমার কবিতা-কাব্যনাট্য-উপন্যাস বোঝার প্রয়াস করতে গেলে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলার চান্স আছে । কবিতা পড়ার দাবিদার তো অর্ধশিক্ষিত পাঠকরাও করেন ; প্রবন্ধ পড়ে বুঝতে হলে কিছুটা শিক্ষিত তো হতেই হবে ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: হ্যাঁ যার সাথে কথা হচ্ছিল সে অ এর কথাই বলছিল। হ্যাঁ এই একটা ভয় আমারও ছিল, যখন তোমার প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার নিয়ে কাজ শুরু করি। আমি কবিতার বাইরে, ঐ কবিতা বিষয়ক কিছু তেমন পড়তাম না। আমার ভয় হত কোন ভাবে আমার নিজস্ব চিন্তাকে যদি প্রভাবিত করে! কবিতাটা পড়তে গিয়ে আমি কবিতাটার মধ্যে বেশ কটা স্তর খুঁজে পেয়েছিলাম। তার মধ্যে একটা ছিল প্রতিবাদ। যেটা আমি খবরের কাগজে বলেছিলাম। হতেই পারে, এটা নিয়ে একটা মতভেদ থাকতেই পারে। কিন্তু এটা আমি পেয়েছিলাম। আমি তোমার সাথেও কবিতাটা নিয়ে তেমন আলোচনা করি নি সে ভাবে। আমার মনে হয়েছিল, তা হলে আমি প্রভাবিত হব, হবই। তবে প্রতিবাদ ছাড়াও আরও কিছু স্তর ছিল, যেটা আমি নিজে বলে দিতে চাই নি। চেয়েছি দর্শক নিজে দেখে বুঝুক। তুমি কি তোমার কবিতাতে একাধিক স্তরের উপস্থিতি বুঝতে পারো? লেখার সময় কি বিভিন্ন স্তর থেকে আসে কবিতাটা?

মলয় রায়চৌধুরীঃ শুধু কবিতাতেই নয়, একজন লেখকের প্রতিটি লেখাতেই লেয়ারিং থাকবে । এমন কি যাঁরা হু-হু করে বাংলা পাল্প-ফিকশান লিখছেন তাঁদেরও থাকবে । বাংলা ভাষাটাই তো বহু সাংস্কৃতিক লেয়ার্সের ইতিহাসের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলেছে । একজন লেখক স্বাভাবিকভাবে সেই লেয়ারগুলোর অন্তর্গত । সে নিজের ভেতরে তার ভাষা-সংস্কৃতিকেও বয়ে নিয়ে চলেছে । যখন সে লিখছে তখন তার চেতনা-অবচেতনায় সেই লেয়ার্সগুলো অবিরাম কাজ করে যায় । দ্বিতীয়ত, ব্যক্তি-এককের অভিজ্ঞতা । প্রত্যেকের অভিজ্ঞতার নিজস্ব  লেয়ার্স গড়ে উঠতে থাকে । ব্যক্তি-এককের কৌম-চরিত্রটা তার কৌমের ইতিহাসের অবদান । কিন্তু তার ভেতরেও তার নিজস্ব অভিজ্ঞতা, যা শৈশব থেকে তার অন্তরজগতে ফোঁটায় ফোঁটায় জমে চলেছে, সেগুলো পৃথিবীর জলস্তরের মতন তার অভিজ্ঞতায় লেয়ার্স তৈরি করে চলে । আমার শৈশব মধ্যবিত্ত বাঙালির শৈশব নয়, বাল্যকাল আর যৌবনও মধ্যবিত্ত বাঙালির মতন নয় । আমার "ছোটোলোকের ছোটোবেলা" আর "ছোটোলোকের যুববেলা" পড়লে টের পাবি যে আমার চতুর্দিকের পরিবেশ-প্ররিবেশি ছোটোবেলা থেকেই অন্যরকম । আমি যৌবনের কিছু উপাদান "ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস" উপন্যাসেও প্রয়োগ করেছি । আমি একই বাড়িতে, একই পাড়ায়, একই রাস্তায়, একই শহরে, একই মানুষের মাঝে জীবন কাটাইনি ; অবিরাম স্থান পালটাতে থেকেছি । তাই আমার অভিজ্ঞতার এই কৌম-স্তরটাতেও বৈভিন্ন্য পাবি । মধ্যবিত্ত বাঙালি জীবনের কথা এই জন্যে পাড়লুম যে, ইমলিতলায়, যে পাড়ায় আমার শৈশব কেটেছে, সেখানে যৌনতাকে খোলাখুলি মেনে নেয়া হতো, যে ধরণের যৌন আচার-আচরণ ইমলিতলার বাইরের লোকজনদের কাছে ছিল অস্বাভাবিক । বলা যায় যে সামাজিক সীমা, অভিব্যক্তির হোক বা সম্পর্কের, ছিল না, এবং যেটুকু ছিল তা লঙ্ঘনীয় ছিল । উত্তরঔপনিবেশিক ভাবুকরা একটা শব্দ ব্যবহার করেন, "লিমিন্যালিটি", ইংরেজি Limn থেকে এসেছে ; আঁকার ক্ষেত্রে যেমন ক্যানভাসের ওপর একজন পেইনটার মনের মতন না হলে তার ওপরেই আঁকেন, আগেরটা চাপা পড়ে যায়, লিওনার্দো দা ভিঞ্চির অমন বহু কাজ আছে, সেরকমই কবিতার লেয়ার্স গড়ে ওঠে । কবিতাটা মস্তিষ্কে তৈরি হতে থাকে আর প্রাথমিক ফ্ল্যাশের ওপর স্তরের পর স্তর ফ্ল্যাশ জমা হতে থাকে ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: আমাকে তোমার গর্ভে আমারই শুক্র থেকে জন্ম নিতে দাও( ১৯৬৪)জলডোবা ফানুস পেট মোষের শিং থেকে জন্মেছিলুম (১৯৯০)দেখো এই দুটি লাইনেই জন্ম প্রক্রিয়া , আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। জন্ম রহস্যের এই বিবর্তন। তুমি কি বলবে একে?

মলয় রায়চৌধুরীঃ    মৃত্যুচেতনার চেয়ে আমি জন্মচেতনা নিয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি নিমগ্ন । তা বোধহয় এই জন্যে যে ক্যাথলিক স্কুলে এই ধরণের আত্মচিন্তাকে প্রশ্রয় দেয়া হতো, প্রধানত "আমার জন্মের উদ্দেশ্য কী ?" ইত্যাদি । জন্ম তাই মৃত্যুর চেয়ে রহস্যময় মনে হয়েছে । "প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার" থেকে যে লাইনটা তুলেছিস, তাতে, সেই সময়ে যে প্রশ্ন উদয় হতো, তা ছিল "আমি কি জাস্ট চান্স কলোকেশান অফ অ্যাটমস?" ক্যাথলিক স্কুলে এই চিন্তাকে অস্বীকার করা হতো । আমি প্রেমিকার গর্ভেও তো জন্মাতে পারতুম ! সে আমার মা হতে পারত । মায়ের দুধ খেয়েছি । তার বুকেও সেই মুখ দিয়েছি, গন্ধে আকৃষ্ট হয়েছি । প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্কে ওই মায়ের লেয়ারটাও কাজ করে । আমি আমার মাকে একবার জিগ্যেস করেছিলুম, "দাদা যখন জন্মছিল, আমি যখন জন্মেছিলুম, তখন যে যন্ত্রণা তোমার হয়েছিল তা কি তোমার মনে আছে ?" মা উত্তর দিয়েছিলেন, "তুই যখন জন্মাচ্ছিলিস তখন তো তোর আরও বেশি কষ্ট আর যন্ত্রণা হচ্ছিল, তা কি তোর মনে আছে ?" বস্তুত এই অভাবনীয় উত্তরটা আমার চেতনায় রয়ে গেছে । সত্যিই তো, যোনি থেকে বেরোবার কতো চেষ্টা করে তারপর জন্মায় বাচ্চাটা, কিন্তু আমরা কেউই নবজাত শিশুর কষ্টের কথা চিন্তা করি না । আমার মা করেছিলেন, আর নিজের কষ্টের সঙ্গে সন্তানের কষ্টকে একাত্ম করেছিলেন । একইভাবে, আমার প্রেমিকার যখন আমার শুক্র থেকে বাচ্চা হল, তখন তার কষ্টের সঙ্গে আমার সন্তানের কষ্ট আর আমার কষ্ট একাত্মতায় বেঁধে গেল । জন্ম ব্যাপারটা তাই অদ্ভুত একটা যন্ত্রণাদায়ক অ্যাবসার্ডিটি । দ্বিতীয় লাইনটা "টাপোরি" কবিতার আর এই লাইনটায় প্রতিফলিত হয়েছে জন্মের অ্যাবসার্ডিটি । "টাপোরি" কবিতাটা সম্পূর্ণই জীবনের বিভিন্ন অ্যাবসার্ডিটি নিয়ে, যেখানে আমি ব্যক্তি-এককের অস্তিত্বের অ্যাবসার্ডিটি নিয়ে বলছি, "আমি যে-কিনা উচ্চিংড়ের স্বরলিপিতে গাওয়া ফুসফাসুরে গান / বেড়াজালের হাজার যোনি মেলে ধরে রেখেছি ইলশেঝাঁকের বর্ণালী ।"


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: 'যোনি' শব্দটাও কিন্তু দু টি কবিতাতেই এসেছে। দু টি দৃশ্যকল্প। এই দৃশ্যকল্পের সৃষ্টি রহস্য-এর কথা ভাবছিলাম, প্রচণ্ডের যোনি মেলে ধরো শুভা, যতটা সহজে আমি ভিসুয়ালাইস করতে পারছি, টাপোরি-তে কিন্তু পারছি না। কেন হচ্ছে এরকম। তুমি আমার বয়সটা পেরিয়ে এসেছো। আমাকে কি বুঝতে পারছ?

মলয় রায়চৌধুরীঃ  তুই বলছিস 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' কবিতায় লেখা 'যোনি' তা তুই ভিজুয়ালাইজ করছিস । তুই তো সেদিন বলছিলি চুমু  খেয়েছিস কৈশোরে ; তারপর আর খাসনি । যোনি কি স্বচক্ষে দেখেছিস ? মানে রিয়্যাল মাংসের যোনি ? ইনটারনেটে পর্নোর মেমদের যোনির কথা বলছি না । তরুণীর যোনির কথা বলছি । 'প্রবৈছু' কবিতায় যে যোনি প্রসঙ্গ আছে তা ওই রিয়্যাল মাংসের যোনি । দ্বিতীয় কবিতার যোনি অক্সিমোরোন । একটু আগেই যে অ্যাবসার্ডিটির কথা বলেছিলুম । মাদি  ইলিশমাছগুলো এসেছে ডিম পাড়তে, যাতে তার ওপর পুরুষ ইলিশগুলো বীর্যের ফেনা ছড়িয়ে দিতে পারে, আর খোকা ইলিশের জন্ম হয় । আমরা কি করছি ? জাল পাতছি যার ফাঁদটা মানুষীর যোনির আকারের । মানে, যোনির মাধ্যমে প্রাণীর জন্মকে প্রতিহত করছি । এই কবিতার যোনি মেয়েমানুযের মাংসের যোনি নয়, নাইলন সুতোর যোনি । তুই যোনি না দেখে থাকলেও, মাছ ধরার জালের ফুটোগুলোকে ভিজুয়ালাইজ করতে পারছিস তো !  যে ফুটোয় পড়েই মরে যায় ইলিশগুলো । যোনির কাজ জন্ম দেয়া, মেরে ফেলা নয় । জালের ফুটো জন্ম আর মৃত্যুকে একই ফাঁদে একত্রিত করে দিচ্ছে । জন্ম আর মৃত্যুর মাঝে পার্থক্য রাখছে না । মানুষ ভাপা-ইলিশ আর ইলিশের পাতুরি খেয়ে একযোগে জন্ম আর মৃত্যুর স্বাদে আহ্লাদিত হচ্ছে, তাদের মুখের ভেতরে নাইলন জালের যোনি । 'প্রবৈছু' এর যোনি ছিল যৌনতার আনন্দের যোনি আর জন্ম দেবার যোনি । যোনির অভিজ্ঞতা নেবার বয়স হয়ে গেছে তোর, এবার মাভৈ বল।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: হা হা হা। আমি কি সেই মুক্ত চিন্তার দেশের বাসিন্দা! আমাকে শুনতে হয়, তুই নোংরা ছবি বানাস। যেহেতু তাতে নগ্নতা খুব স্পষ্ট ভাবে দেখানো হয়। এখানে সবাই নগ্নতাটুকুই দেখে নগ্নতার পিছনের অর্থ টুকু খোঁজে না। প্র বৈ ছু ছবি তৈরীর পর ফোনে হুমকিও পেয়েছিলাম, সেটা মজা ধরেই উপেক্ষা করেছিলাম। সেদিন একজনের সাথে কথা হচ্ছিল, সে বলল, ' পুরুষেরা শরীর বাদে আর কিছু বোঝে না।' যৌনতার কথা বলতে চাইছিল। আমাদের দেশে এখনো প্লেটো রাজত্ব করছেন। এই বলতে বলতেই একজনের কথা মনে পড়ে গেল। তুমি একজায়গায় বলছ, "শ্রীমন্তিনী, ইনি আমার কবিতার প্রেমিকা, আমার কবিতাকে প্রিডেটর পুরুষ বলে মনে করেন, বলেন যে আমার কবিতা ওনার দেহেও কাজ করে, ওনাকে জাপটে পিষে ফেলতে চায় । কী বলব ? আমার পাঠিকার সংখ্যা পাঠকের চেয়ে বেশি, কিন্তু কেউই এভাবে আমাকে অতিক্রম করে আমার কবিতার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা কখনও বলেননি । ওয়ানডারফুল পাঠক-প্রেমিকা ।"  আমি পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, কি অসাধারণ অনুভূতি। এই অনুভূতির কাছে কজন পাঠক পোঁছতে পারেন। উনি তোমার  নাটকের চরিত্রও।  তুমি যখন বাস্তব থেকে কোন চরিত্রকে তোমার লেখায় আনো, কতটা আলাদা কর তাকে ?


মলয় রায়চৌধুরীঃ  পরিচিত বাস্তব জগত থেকে চরিত্রকে হবহু আনি না । চরিত্র-বিশেষের চোখে পড়ার মতো উপাদান আনি । মানে চরিত্রটির যে উপাদান আমার চোখে পড়েছে । কখনও-কখনও চরিত্র গড়ে ওঠে বিভিন্ন পরিচিত মানুষের মানসিক ঝোঁক আর আচরণ নিয়ে । একজনের চরিত্র গড়ার সময়ে বেশ কিছু লোকের জীবন থেকেও উপাদান  নিয়েছি ।  "ডুবজলে যেটুকু প্রশ্বাস" এর চরিত্ররা আমার প্রথম চাকুরিক্ষেত্র থেকে পাওয়া, বেশিরভাগ ঘটনাই সেই চাকুরিক্ষেত্রে ঘটেছে, এমনকি জলে ডুবে থেকে তিন বন্ধুর জলের ওপরে খাড়া লিঙ্গ ভাসিয়ে চতুর্থ বন্ধুকে ওয়াটার অর্কিড দেখানো ; চতুর্থ বন্ধুটির জলে ডুবে যাবার ভয় ছিল । নালন্দার খণ্ডহরে যৌনকর্মীকে লুকোতে বলে তাকে খুঁজে বের করার যুবকদের খেলা । বাস্তব জগত থেকে আমি কেবল চরিত্রই নয়, স্হান বা পরিসরও এনেছি । যেমন আমার ডিটেকটিভ বইতে একটি উপজাতি সমাজে কেবল কাঁঠাল বিচি পুড়িয়ে খাওয়া, চাল-গম-জোয়ার-বাজরা কিছুই যায় না সেখানে ; ভোটার কার্ড কাকে বলে জানে না । ডিটেকটিভ বইতে 'চলুন পালাই' বলে ওঠেন যে তরুণী তাও বাস্তব, আমার "রাহুকেতু" উপন্যাসে আরেকবার আছে । ট্যুরের চাকরির ফলে বাস্তব জগত থেকে উপাদান সংগ্রহের সুযোগ বেড়ে গিয়েছিল । যেমন "নামগন্ধ" উপন্যাসে আলু চাষের সমস্যা, আলু চাষিদের দুর্দশা নিজের চোখে দেখেছি, আলু নিয়ে রাজনীতি। "নখদন্ত" উপন্যাসে পাটচাষ আর চটকলের দুর্দশার সমস্যা । টেসটোসটেরন যতদিন থাকে ততদিন যৌবন কাজ করে যায় ; তারপর যৌনতা ফুরিয়ে যায় । যেমন আমার টেসটোসটেরন ফুরিয়ে গেছে, ফলে যৌনতাও ফুরিয়ে গেছে ; ইন ফ্যাক্ট লিঙ্গ হয়ে গেছে শিশুদের মতন, কেবল পেচ্ছাপ পেলেই রাতের বেলায় খাড়া হয় । তাই পুরুষরা একত্রিত হলেই যৌনতার কচকচিতে মাতে ভাবা ভুল । ওটা কেবল উঠতি যুবকেরা করে । তারপর ব্যাপারটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার আওতায় চলে যায় । তখন কে লুকিয়ে কী করছে তা আর জানা যায় না । বাসুদেব দাশগুপ্ত নিকটাত্মীয়াকে ভালো বাসতেন, যে ধরণের সম্পর্ক তামিলনাডুতে সবচেয়ে ভালো বলে মনে করা হয় অথচ বাঙালি সমাজে অবৈধ । এটা কেবল যৌনতার ব্যাপার নয় ; সাংস্কৃতিক, সামাজিক প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হবার সমস্যায় পড়তে হয় । বস্তুত বাসুদেবের লেখালিখি ক্রমশ কমে যেতে থাকে এই বিপর্যয়ের কারণে । তিনি অন দি রিবাউণ্ড আরেকজনকে বিয়ে করেন । আমাকে থমথমে মুখে ব্যাপারটা বলেছিলেন যখন  বিষাদ সামলানো অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: আগের প্রশ্নটা ধরেই আর একটা কথা মাথায় এলো।  আমি এই সাক্ষাৎকারের একটা দিক হিসেবে, কিছু মানুষের সাথে কথা বলেছি, যাদের দেখেছি, তোমার প্রোফাইলে তোমার সাহিত্য নিয়ে উৎসাহ দেখাতে। কিন্তু কথা বলতে গিয়ে দেখছি, তারা তোমার লেখালিখি নিয়ে কিছুই বলতে পারছে না, স্পষ্ট করে। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছিল, এরা হয় তো তোমাকে ভালোবাসে, তোমার সাহিত্য ছাপিয়ে এখানে তুমি বড় তাদের কাছে। আবার দেখো, শ্রীমন্তিনীর কাছে হয় তো, তোমার কবিতা , তোমাকে ছাপিয়ে যাচ্ছে। এই দুটি ক্ষেত্রেই তোমার অনুভূতি কি ভাবে কাজ করে ?

মলয় রায়চৌধুরীঃ হ্যাঁ, এটা হয় । কখনও কখনও আমার নাম আমার লেখাকে অতিক্রম করে যায় । তাই আমার ফেসবুক বন্ধু ৫০০০ পৌঁছে গেছে ; আরেকটা প্রোফাইলও ২৫০০ হয়ে গেছে । আসলে আমার নামটা আমার বইগুলোর আগেই পাঠকের কাছে পৌঁছে গেছে, প্রধানত হাংরি আন্দোলনের কারণে । আমার বইগুলোর কোনো আউটলেট এতকাল ছিল না । পাঠকরা বাজারে খুঁজলেও পেতো না, যা এখন ঘটছে আমার বাংলাদেশী পাঠকদের সঙ্গে, সেখানে বই পৌঁছোবার পথ নেই । কলকাতায় এই সবে পাঠকদের কাছে বই পৌঁছোচ্ছে, তাও গুরুচণ্ডালী প্রকাশনী আমার উপন্যাসগুলোর দাম চল্লিশ টাকা করে রেখেছে বলে । ধ্যানবিন্দু, দীপুর দেবুকস আর ক্রান্তিক আমার বই রাখছে । আগে আমার বই কোথাওই পাওয়া যেত না । হাংরি আন্দোলনের সময়ে তো প্রতিষ্ঠানের বড়দারা পাতিরামকে ভয় দেখাতো, ভয়ে বই-পত্রিকা রাখতে চাইত না পাতিরাম । 'হাওয়া৪৯' থেকে প্রকাশিত বই প্রথম দিকে  বিলি করা হয়েছিল, আর বিলি করা বই সাধারণত কেউ পড়ে না । এখন একটু-একটু করে পাঠকরা পরিচিত হচ্ছেন আমার লেখার সঙ্গে । তুই দেখবি আমার বইগুলো পত্র-পত্রিকায় আলোচনা হয় না ; বই বেরোবার সংবাদ পৌঁছোয় না, বিশেষ করে মফসসলের পাঠকদের কাছে । আমার বই যারা প্রকাশ করে সেই লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশনীরাও সেল্ফরেসপেক্টফুল ; তারা রিভিউ করাবার জন্য ধরাধরি করে না । যারা আমার কিছু কবিতা পড়েছে, বা উপন্যাস পড়েছে , তারা প্রায় সকলেই ইনটারনেট থেকে পড়েছে । শ্রীমন্তিনি নামে যে যুবতীটির কথা বলছিস, সেও প্রথম ইনটারনেটে আমার কবিতার স্টকার ছিল ; পরে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আমাকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছিল । আমার বেশ কিছু পাঠক-পাঠিকা আছেন যাঁরা নেটে আমার লেখার খবর রাখেন, তাঁরা আমার লেখা নিয়ে, বিশেষ করে উপন্যাসের ঘটনা নিয়ে, যতটা মনে রাখেন, আমি ততটা মনে রাখতে পারি না ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: তোমার সব বইগুলোই অনলাইনে আনতে পারা যায় না? এটা আমি নিজে দেখেছি, পাতিরামের সাথে কথা বলতে গিয়ে। ওরা চাইছে তোমার বই। নিশ্চয়ই পাঠক চাইছে। রিভিউয়ের একটা সমস্যা হয় তো থাকে, পরিচিতি বা ঐ যা বললে ধরাধরি।  তার ওপর এটাও দেখেছি তোমার ওপর ব্যক্তিগত রিপু গুলির কারণে, আটকে যাচ্ছে রিভিউ। এ থেকে কি আমরা কখনো বেরতে পারবো না?  তোমার একটা কবিতার কথাই মনে এলো, ' চ্যালেঞ্জের জবাব দেবে তা প্রার্থনারত আঙুলের জট ছাড়াতেই তো / ভাড়াটে-অধ্যুষিত বঙ্গসংস্কৃতির একশা' ভাড়াটে-অধ্যুষিত বঙ্গসংস্কৃতি। মনে আছে তোমার কবিতাটি?

মলয় রায়চৌধুরীঃ  রোহন কুদ্দুস আমার "ছোটোলোকের কবিতা" বইটা অ্যামাজন ডট ইন-এ দিয়েছেন, কেউ-কেউ অনলাইনে কিনেছে বলে জানিয়েছে । কিন্তু অ্যামাজন বাংলাদেশে ক্যাটার করে না । ঈপ্সিতা পাল "অরূপ তোমার এঁটোকাঁটা" বইটার ই-বই দিয়েছেন অনলাইনে ; এক পাঠিকা পড়ে জানিয়েছেন । লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশকরা অত টেকস্যাভি বলে মনে হয় না ; তার ওপর তাদের একাই সবকিছু করতে হয় । দিতে পারলে তো খুবই ভালো হতো । পাতিরাম "কবিতীর্থ" থেকে প্রকাশিত আমার বই রাখে, সে কথা আবার বেশিরভাগ পাঠক জানেন না, কেননা পাতিরাম ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বাইরেরটা ভেতরে ভেতরেরটা বাইরে করতে থাকে । "ভাড়াটে অধ্যুষিত বঙ্গসংস্কৃতি" উক্তিটা মনে আছে, কোন কবিতায় তা মনে নেই । উক্তিটা আমি আমার প্রবন্ধ "পোস্টমডার্ন কালখণ্ড ও বাঙালির পতন" বইতেও আলোচনা করেছি । আমি পশ্চিমবঙ্গ ট্যুরে দেখেছি যে প্রায় সর্বত্র অবাঙালিরা ছোটো-বড়ো ব্যবসা দখল করে নিয়েছে, প্রথমে ভাড়াটে হয়ে ঢোকে তারপর জায়গাটার কেন্দ্র দখল করে নেয় । একটা জায়গার কেন্দ্র কবজা করা থেকেই সংস্কৃতি দখল শুরু । বাঙালির মিষ্টান্ন লোপাট হয়ে গিয়ে এখন হলদিরামের মিষ্টান্ন বাজার দখল করে নিয়েছে । সিপিএমের সময়ে মারোয়াড়িরা রাজনৈতিক ফানডিং করার জোরে সব শহর-গঞ্জে সেঁদিয়ে গেছে । কলকাতার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান তাদের ফানডিং ছাড়া হয় না, তাদের টাকায় "সেরা বাঙালি" ঘোষিত হয় ।ফালগুনী রায় লিখে গেছে, বৈজয়ন্তিমালার নাচ হয় । নয়তো 'সারদা' আর ‘রোজ ভ্যালি’ টাইপ পনজি স্কিমের টাকা দরকার হয় সেসব অনুষ্ঠানের জন্য । জয়গাঁর মতন সীমান্ত শহরেও দেখেছি অবাঙালিদের রাজত্ব । হ্যাঁ, ও-কথাটা যথার্থ বলেছিস ; অনেকে আমার ওপর চটা, কেন তা জানি না । যাঁরা চটেছিলেন তাঁরা তো প্রায় সকলেই জন্নত বা জাহান্নমে  কেয়ামতের অপেক্ষায় বিশ্রাম নিচ্ছেন । পরের গুলো কেন পয়দা হয়েছে জানি না ; আমি তো কারোর পোঁদে লাগি না ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: হতে পারে তাদের চ্যালা। রিপুও হয় তো গুরুমন্ত্রের অংশ হয়ে ছড়ায়। লাইনটা ' আইরিস গাছ, রাইজোম' কবিতার, ২৫ মে ১৯৯৮, পোস্টমডার্ন আহ্লাদের কবিতা। আমি  পড়েছি ' মলয় রায় চৌধুরির কবিতা' ২০০৪ - ১৯৬১ - তে।  তোমার কিছু কবিতায় অনেকগুলি নাম, একটি কবিতার, তিরশ্চিরাজি বা পৃদাকু বা স্বজ ... কেন ? আর তুমি একটা জায়গায় বলেছ ‘শিরোনামটা কেবল ক্লু’ ।

মলয় রায়চৌধুরীঃ  ২০০২-২০০৩ নাগাদ আমি পুরাণে ইনটারেসটেড হয়েছিলুম । বস্তুত 'আমি'র বহুস্বরিকতা আর বহুমাত্রিকতা থেকে পুরাণে আগ্রহ হয়েছিল । দেখলুম যে এক-একটা পুরাণে একই দেবী বা দেবতাকে নিয়ে ভিন্ন-ভিন্ন কাহিনী রয়েছে, তাদের পারস্পরিক সম্পর্কেও এক পুরাণ থেকে আরেক পুরাণে আলাদা । কবিতার ক্ষেত্রে বলছিলুম যে তার বিষয়কেন্দ্র আর থাকে না, যেমন সত্যেন দত্তের 'মেথর' লেখার সময়ে ছিল । পুরাণে দেখলুম দেবী-দেবতার কাজই কেবল নয়, নামগুলোও ভ্যারি করে । তাছাড়া, ভাবছিলুম কবিতার কেবল একটাই শিরোনাম থাকবে কেন ! একটা কবিতার শিরোনাম চিহ্ণিত করার সময় কবির মগজে বিকল্পগুলোও চলে আসে । যদি আসে, তাহলে তার মধ্যে থেকে একটাকে না বেছে সবগুলোকেই তো রাখা যায় । তুই যে কবিতাটার উল্লেখ করেছিস তাতে এগারোটা শিরোনাম দেয়া আছে ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: হ্যাঁ এই রকম বেশ কটি কবিতা পড়লাম তোমার। আচ্ছা এই কবিতার নামকরণের সময়, তোমার মাথায় যে নাম গুলি আসছে, সেগুলি কি ভাবে ক্লু হিসেবে আসছে কবিতাটায়?

মলয় রায়চৌধুরীঃ  ক্লু বা পাঠবস্তুর রহস্যসূত্রটা পাঠকদের জন্য । যেমন একজন ডিটেকটিভ একটা ক্লু পেয়ে সেটা অনুসরণ করে নির্ণয়ে পোঁছোয় যে প্রকৃত ঘটনাটা ঠিক কি, সেই রকম । আমার মাথায় এসেছে পাঠকদের  ক্লু দিয়ে সরে যাওয়ার ; এর পর তারা খুঁজুক । যদি উৎসাহী না হয় তাহলে হাল ছেড়ে দিক । দুর্ভাগ্য যে বেশিরভাগ পাঠকই পুরাণের কাহিনিগুলোর সঙ্গে পরিচিত নয় । তারা তাই ভুলভুলাইয়ায় পাক খেয়ে বেড়ায় । তাই বেড়াক তাহলে ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: এখানে একটা কথা মনে এলো তোমার একটা কবিতায়, কী হয় কী হয় কিংবা রেখো মা দাসেরে। সেখানে কবিতার সাথে, সূত্র গুলো ধরিয়ে দিচ্ছ। 'কবিতাটির ব্যাকড্রপ' বলে।  এই বিষয়ে একটু বলো।

মলয় রায়চৌধুরীঃ   নব্বুই দশকে আমার কবিতাগুলো কমপ্লেক্স হয়ে উঠছিল । 'রূপসী বাংলার ভাতার' নামে একটা কবিতা লিখেছিলুম, কোন পত্রিকায় বেরিয়েছিল মনে নেই । পড়ে দেখতে পারিস কবিতাটা । ভূমেনদা, মানে ভূমেন্দ্র গুহ'র বাড়ি গিয়ে কোনো গাণ্ডু কবি ওনাকে জানায় যে মলয় আপনাকে নিয়ে 'রূপসী বাংলার ভাতার' নামে একটা কবিতা লিখেছে, কেননা আপনি জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে কাজ করছেন । ভূমেনদাও সেকথা বিশ্বাস করে নিয়েছিলেন । আমার ওপর এতো চটে গিয়েছিলেন যে আমার আর আমার স্ত্রীর চিকিৎসা করাই বন্ধ করে দ্যান । নাকতলার ফ্ল্যাটে আসা বন্ধ করে দ্যান, হঠাৎই । আমি প্রথমে ভেবেছিলুম যে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হয়তো ওনাকে বারণ করে দিয়েছিলেন আমার সঙ্গে মিশতে । কিন্তু অভিযোগটা উনি নিজেই করলেন, তখন আসল ঘটনাটা জানতে পারলুম । ওনার বাড়ি গিয়েছিলুম ব্যাপারটা খোলোশা করতে, তা উনি এমন খাপ্পা হয়েছিলেন যে ঠিক মতন কথাই বললেন না, যোগাযোগ ছিন্ন করে ফেললেন । আমি অন্য কাউকে ‘নিয়ে’ কবিতা লিখি না, কাউকে উপলক্ষ করে লিখতে পারি, যেমন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ‘কী বিষয় কী বিষয়’ বা ‘নখকাটা ও প্রেম’ । আমার প্রেমের কবিতাও কমপ্লেক্স ; ফিলগুড কবিতা নয় । এই কবিতাটায় 'রেখো মা দাসেরে' আছে শিরোনামে, তাই মনে হল যে কবিতাটা লেখার আগে মগজে যা-যা ঘটেছে সেগুলো জানিয়ে দিই, নয়তো মাইকেল মধুসূদন দত্তকে নিয়ে কাজ করছেন যিনি, তাঁকে গিয়ে কোনো চুতিয়া কবি বোঝাবে যে মলয় আপনাকে নিয়ে কবিতা লিখেছে ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: সে আর কি করবে! মানুষ কেন এতো সহজে ভুল বোঝে! আনন্দবাজারে তুমি যখন বলেছিলে, প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার নিয়ে, আমার একটু অভিমান হয়েছিল, কিন্তু ভালোবাসা কমে নি। আমি পড়েছি কবিতা টা 'রূপসী বাংলার ভাতার'। কিন্তু ঐ কবিতার পর নিশ্চয়ই তুমি মন বদলে ছিলে। কারণ আর তেমন কবিতা পড়ি নি যাতে তুমি এইভাবে সূত্র বলে দিচ্ছ।

মলয় রায়চৌধুরীঃ  আনন্দবাজারে আমি 'প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার' নিয়ে কোনো সাক্ষাৎকার দিইনি । ওটা কোনো সাংবাদিকের তৈরি সংবাদ । মুম্বাইতে বসে কী করেই বা খবরের কাগজে সাক্ষাৎকার দেবো । আর আমার সাক্ষাৎকার তো লিটল ম্যাগাজিন ছাড়া কেউই নেয় না । অবশ্য বিদেশের ব্যাপারটা আলাদা ; নয়তো বিবিসির সাংবাদিক কী করেই বা আমাকে খুঁজে বের করবে ! না, কবিতার সঙ্গে ওরকম নোটস দিয়ে লিখিনি তারপর । আমার কবিতা সম্পর্কে লিখতে হলে নোটস না দিয়ে নিজেই ব্যাখ্যা করব, যেমন 'অ' বইতে কয়েকটা কবিতা নিয়ে করেছি । অনেকে আবার প্যানপ্যানানি না থাকলে কবিতা বুঝতে পারে না, কিন্তু আমি তো গানের মতন কবিতা লিখতে পারি না । 


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: এবার রূপসী বাংলার ভাতার নিয়ে একটা কথা বলি। যখন প্রথম বার আমি কবিতাটি পড়ি, প্রথম নামটায় ধাক্কা খাই, রূপসী বাংলার 'ভাতার' রূপসী বাংলা যেহেতু জীবনানন্দে পড়েছি। তাই তার পাশে ভাতার শব্দটা কানে লাগছিল। এই যে আমাদের একটা শব্দের মধ্যে ডেবে যাওয়া। রূপসী বাংলার পাশে অন্য কোন শব্দ বা সেই শব্দ টা ব্যবহার করলেই, আমাদের মাথায় বিশেষ কোন কবির কথা মাথায় চলে আসে। কেন হয় এমনটা তোমার কি মনে হয় ? আর রূপসী বাংলার , ভাতার কেন ?

মলয় রায়চৌধুরীঃ  শব্দের আঁতাতের কারণে । শব্দগুলো পাশাপাশি সাজানো থাকে বলেই তা থেকে মনের ভেতরে ছবি গড়ে ওঠে । ওটাই "ভাতার বাংলার রূপসী" লিখলে একই ছবি গড়ে উঠবে না, হয়তো রক্তমাংসের কোনো নারী দেখা দেবে, পছন্দ অনুযায়ী । "রূপসী বাংলা" তো বাংলার অ্যাবসট্রাকশান, একজন নারীর ছবি প্রত্যেকে নিজের মতো করে তৈরি করে নেয়, কিন্তু "বনলতা সেন" বললে তেমন অ্যাবসট্রাকশান হয় না । "রূপসী বাংলা" বললে দুই বাংলার জোড়া মানচিত্র চোখে সম্ভবত কারোরই ভাসে না । কেউ কেউ হয়তো ছবিটা কংক্রিটাইজ করার মাধ্যমে গ্রামবাংলাকে দেখতে পায় । তাও বিরল । এখন তো গ্রাম বাংলা বললেই ভয়াবহ ছবি গড়ে ওঠে । 'ভাতার' তো 'আমি',  বলাই রয়েছে কবিতাটায়, যে ভাতার ভাত-কাপড় দিতে অসমর্থ, সে নিজেই "মরা কালবোসের ডিম্বদৃষ্টি মেলে" "রজনীগন্ধা গোছার তলায় বদগন্ধ লাশ" "ঠোঁটের মাছি ওড়াতে" পারছে না, কিন্তু সে এককালে ছিল "কুহকঠোঁটো মেয়েদের মাঝে ট্রিগারলিঙ্গ যুবা" "মকাইগুঁফো চাষার ছেলে" এখন লাশ হয়ে আনন্দে ডগমগ যে "শবশকটে আগে চাপিনি কক্ষুনো" । কিন্তু এই 'আমি' ,কবিতাটায় স্পষ্ট করে দেয়া হচ্ছে, যে, সে বহুস্বরিক, সে সমষ্টি, সে কৌম, অর্থাৎ সে পশ্চিমবাংলা । এই 'আমি' বলতে মলয় রায়চৌধুরী বোঝায় না । 


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: ' দে গরুর গা ধুইয়ে' ১৮ সেপ্টেম্বর ২০০৪ আররে ইসলাম ভাই -আদাব। প্রণাম। সৎশ্রী আকাল। গুড ডে।বোমা ও বউমা শাসিত ভুঁয়ে পা ছড়িয়ে দিব্বি শুয়ে আছো। ....
ইসলাম ভাই কে?

মলয় রায়চৌধুরীঃ আরে এটা তো সবায়ের জানা । তোদের প্রজন্মে পৌঁছোয়নি হয়তো । তার কারণ তিরিশের দশক থেকে কাজি নজরুল ইসলামকে পশ্চিমবঙ্গের অ্যাকাডেমিক জগত গুরুত্ব দেয়নি, সাহিত্যের ঔপনিবেশিক মানদণ্ডের কারণে । এই উক্তি টা কাজি নজরুল ইসলাম প্রায়ই করতেন ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়:  আর জে ডি স্যার ?

মলয় রায়চৌধুরীঃ হাওড়ার যে কলেজে জীবনানন্দ দাশ পড়াতেন সেখানে এই নামেই উনি পরিচিত ছিলেন ।


মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়: ওনাকে নিয়ে যে কবিতাটা, সেটা সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করছে।

মলয় রায়চৌধুরীঃ   'জে ডি স্যার' কবিতাটা জীবনানন্দ দাশকে ‘নিয়ে’ নয় ; ওনাকে উপলক্ষ করে বাঙালর রাজনীতি-সংস্কৃতিকে ধোলাই । প্রতিটি স্তবকে বাঙালির একটা স্তরকে তুলে এনে ধোলাই দিতে চেয়েছি । স্তবকগুলোর দ্বিতীয় আর তৃতীয় পংক্তিতে দ্যাখ খোলোশা করা হয়েছে ঠিক কোন অবস্হায় রয়েছে বঙ্গসমাজ । আর রাজনৈতিক-সংস্কৃতিক রাক্ষসদের যৌথ খোরাকির চাহিদা ওই "হাঁউ মাউ খাঁউ" । গ্রামে-গ্রামে তো ঘুরেছি, দেখেছি অতিগরিবেরা সত্যই বুনোকচু আর আমআঁটি খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে অথচ একই সময়ে কলকাতায় "ভুঁড়িদাস ধবধবেদের" চলছে ইলিশ উৎসব । কালনেমিদাদু  পঞ্চায়েতগুলোকে রাজনৈতিক ভাগাভাগিতে ফেলছিলেন, যার দরুণ আজকের গ্রামগুলোকে মারকাটে ভুগতে হচ্ছে । জীবনানন্দ, বলতে গেলে, ভবিষ্যবাণী করে গিয়েছিলেন । গ্রামে-শহরে তিমিরবিলাসীদের গ্যাঞ্জাম ।





মলয় রায় চৌধুরীকে নিয়ে উৎসাহী* মানুষজনের কাছে প্রশ্ন করাতে তারা যে ভাবে প্রতিক্রিয়া জানালেনঃ 

Conversation with 
Bondona Kabir
started March 14
3/14, 12:44am

Mrigankasekhar Ganguly

মলয় রায় চৌধুরির লেখা নিয়ে আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।

March 14
3/14, 1:23pm
Bondona Kabir

জ্বী বলুন

3/14, 1:24pm
Mrigankasekhar Ganguly

আপনার মলয় দার  কোন সময়ের লেখা ভালো লাগে?

March 14
3/14, 8:22pm
Bondona Kabir

উনার খুব অল্প সংখ্যক লেখাই আমার পড়া হয়েছে। ব্লগ ফেসবুক ছাড়া আর কোথাও তো উনাকে পড়াএ ভাগ্য হয়নি। তবে এবারে শুনেছি আজিজ মার্কেটের বিদিত'তে উনার বই পাওয়া যায়। কিনে পড়বো। তখন হয়তো বলতে পারবো।

3/14, 8:37pm
Mrigankasekhar Ganguly

ওনার যে কটি লেখা পড়েছেন, পড়ে কি মনে হয়েছে ?

এরপর আর কোন উত্তর আসে নি।  

Conversation with 
Samir Kumar De
started March 14


3/14, 12:45am
Mrigankasekhar Ganguly

মলয় রায় চৌধুরির লেখা নিয়ে আপনার সাথে কিছু কথা ছিল।

Seen Mar 14
দেখেছেন কিন্তু কোন কিছু বলেন নি।

Conversation with 
Subrata Mondal
started March 14


3/14, 12:23am 
Mrigankasekhar Ganguly 
মলয় রায় চৌধুরি র লেখালিখি নিয়ে আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন আছে।

3/14, 12:27am 
Subrata Mondal 
শুরু করুন

3/14, 12:28am 
Mrigankasekhar Ganguly
মলয় দার কোন সময়ের লেখাগুলি আপনার ভালো লাগে ?

3/14, 12:29am 
Subrata Mondal 
প্রথম দিকের

3/14, 12:29am 
Mrigankasekhar Ganguly 
যেমন ? একটু কবিতার নাম বলুন।
Seen 5:41pm 


এরপর আর কোন উত্তর আসে নি। 



Conversation with 
Suman Mallick
started March 14

3/14, 12:29am
Mrigankasekhar Ganguly
মলয় রায় চৌধুরি র লেখালিখি নিয়ে আপনার কাছে কিছু প্রশ্ন আছে।
3/14, 6:46am
Suman Mallick
Korte paro......bt ami kotota sahajjo korte pari jani na...
3/14, 7:40am
Mrigankasekhar Ganguly
আপনার ওনার কোন সময়ের লেখা ভালো লাগে ?
3/14, 8:02am
Suman Mallick
Sobsomoy er
3/14, 8:02am
Mrigankasekhar Ganguly
কেন লাগছে সেটা কি কখনো বুঝতে পেরেছেন ?
3/14, 8:16am
Mrigankasekhar Ganguly
ওনার লেখার বিশেষত্বএর দিকটা , আপনার পাঠের দিক থেকে আমি জানতে চাইছি।
3/14, 8:59am
Suman Mallick
Oner lekha sompurno aladarokom....koro lekhar sathe mil nei....ar sobder karigori ta chorom... Arekta paper holo uni nidor hoa lekhen...kono kichur toyakka koren na....jail ferot manusher kach theke amra atai asha kori...kotha hoy unar sathe...bhalo lage
3/14, 10:26am
Mrigankasekhar Ganguly
ওনার লেখার মধ্যে কি কোন বাঁক দেখতে পান। প্রথম থেকে শুরু করে এখনকার লেখায় ?
3/14, 11:33am
Suman Mallick
Bak to thakbei....somoyer sathe prottekta jinis e paltae....lekhao aki.....amrao to palte jai roj....'bak' ase notun notun...
3/14, 12:12pm
Mrigankasekhar Ganguly
বাক গুলো কি স্পষ্ট ভাবে ধরা পড়ছে ?
Seen Mar 14
এরপর আর কোন উত্তর আসে নি। 
*উৎসাহী মানুষের ব্যখ্যাটা দেওয়া উচিত। মলয়দার ফেসবুক প্রোফাইলে, তার পোস্টে করা কমেণ্টস পড়েই বেছেছিলাম এই মানুষগুলিকে। যারা মলয়দার লেখালিখি নিয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন বা মলয়দাকে বাহবা দিয়েছেন। 

Comments

  1. মলয় রায়চৌধুরির লেখালেখি নিয়ে আপনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন ঠিকই। তাঁর রচনা সম্পর্কে কিছু বলার মতো যোগ্যতা আমার নেই।

    আমি শুধু একথাই বলতে পারি যে, মলয়দা তো কারুর পোঁদে লাগেন না, তবে অনেকে মলয়দার পোঁদে লাগে কেন? উনি তো নিতম্ববানই নন। বহু পোঁদমোটা দিব্যি বিরাজ করছেন। তাঁদের পোঁয়ায় ধুপকাঠি দেওয়া যায় না কি?

    ReplyDelete

Post a Comment