পাগলী | অলভ্য ঘোষ
|
বুকে দুধ ভর্তি স্তন দুটো
ছেঁড়া ব্লাউজের ফাঁক ফুঁড়ে যেন বের হয়ে আসতে চাইছে। ফুটপাতের কোনায় কাটা মুরগির মতো লাল টুকটুকে নাড়ি ভুড়ি জড়ানো রক্ত স্রাব ভেসে যাওয়া ধুলায় ধুকপুক করছে মানবের ভ্রুণ। পথ চলতি লোকেরা যেন ভিড় করে সিনেমা দেখছে। দুই হাতের উপর ভর দিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করেও পড়ে যায় দুর্বল পাগলী টা। প্রসবের আবর্তে ক্ষরণ হয়েছে অনেকটা রক্ত।
এতটা রক্ত ঝড়ে এ দেশের
স্বাধীনতাও আসেনি।
দূরে এক সাংবাদিক
গল্পটাকে খবরের হেডলাইনে পরিবেশিত করতে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল খুঁজে চলেছে। ট্রাফিক পুলিশ ভিড় সরাতে ব্যস্ত। ভোটের প্রচারে লালবাতি সাইরেনওলা মন্ত্রী যাবেন এ পথ দিয়ে। প্রসূতি পাগলীর খবর পেয়ে কোন এক খ্রিস্টান মিশনারীর লোক এসে হাজির। ভ্যাটিক্যান সিটি থেকে তাদের নাকি কেউ আবার সন্ত উপাধি-ধারী। হাড়হাভাতে এদেশের সদ্যজাতের চাহিদা খুব বিদেশে। মোটা মোটা ডোনেশন দেয় তারা। এই তো কদিন আগে ইঁদুর ছানার মত বড়দির নার্সিং হোমে রেট করে মিলেছিল চালান হবার জন্য প্রস্তুত কলকাতার নবজাতক। মুখে মাস্ক হাতে গ্লাভস সমাজ সেবিকারা যেন এগিয়ে চলেছে গোয়েন্দাদের মত পাগলী টার দিকে। পাবলিকের চোখের পাতা পড়ছে না।
-কে মা করেছে পাগলীটাকে?
-অপজিশন। কখন যেন লাল বাতি সাইরেন বন্ধ করে গাড়ির সওয়ার ন্যাওটা পুলিশকে কানে কানে ফিসফিস করে বলে; -ভালো করে একটা ইনকয়েরি করে দেখো! এ দেশের রাজনীতির বেশ্যারা প্রচার পেতে নিজের মাকেও লাইনে দাঁড় করায়। বিরোধী ক্যাডারদের হাতে পাগলীর ধর্ষণ! হট কেক।কোটে প্রমাণ হতে হতে ভোট ফুরাবে।
বিরোধীরাও সদলবলে উপস্থিত হলো।
একদল বিরোধী পাগলীর জাত খুঁজে পেল। পাগলী টাকে বলল সীতা মাইয়া; রাবণ নয় ধর্ষনের তীর মহম্মদের দিকে। আর এক দল বিরোধী; ধর্মের ভোট নয় মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে বেশ উদ্বিঘ্ন তারা গদি হারানোর পর থেকে। শাসকের ব্যর্থতা ঝান্ডা উড়িয়ে শ্লোগানে শ্লোগানে ময়দান কাঁপাচ্ছে যখন;র্যাব নামার আগে পাগলী টা হঠাৎ একগাদা থুতু ছুড়ে দিল সংবিধানের দালালদের মুখে।
ঘৃণার সে বজ্র নিক্ষেপে
বিন্দুমাত্র গরল ছিল না অ্যাসিডের মত। খসে পড়ল না দাঁত ,মুখ ,নাক-চোখ; পুড়ে ছাই হলো না এদেশের মেকি গণতন্ত্র; সার্বভৌমত্ব!
কারো কারো ইচ্ছে করলো পাগলীটার তলপেটে
ছুটে দিয়ে কেঁত কেঁত করে লাথি কষিয়ে দিতে। সাহসে কুলালো না।
উৎসুখ মানুষের ভিড়ে কত মানব দরদী মোবাইলে
বন্দি করে চলেছে গোটা দৃশ্যপট । নারীবাদী মানবতাবাদীরা মিডিয়ায় বসে সন্ধ্যাবেলায় গালভরা মানব অধিকারের বহু চর্চিত,চর্বিত বুলি কপচে বাড়ি ফিরে বিছানায় শরীর চায় স্ত্রীর। মাসিকের অসম্মতির ও বারণ মানে না। কারো আবার প্রিয় নারী কখনও কখনও স্বামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে থানায় পৌঁছলে ছোটবেলার টিকার দাগের মত বুদ্ধিজীবীর প্রিয় ব্যান্ডের সিগারেটের ছ্যাঁকা মেলে শরীরের আনাচে কানাচে।
টিপ্পনি নয়!
বাসে, ট্রামে ,মিছিলের ভিড় ঠেলে ভারতবর্ষের নারী বাড়ি ফিরে গা আলগা করে গোণে তার স্তনের উপর নখের আদমশুমারি।
পাগলীটা তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো আবার;
-"ভালবাসা না বাল! শুধু চোদার তাল।"
কেউ কেউ ফিক ফিক করে হাসল।
কেউ কেউ মুখ চাওয়া চাই করল । কুকুর ধরার মত ফাঁসকল করে পাগলী ধরা হলো। পাছায় ইনজেকশন ফুটতে ঘুমে ঢলে পড়ল সে। সভ্য সমাজের উদ্দেশ্যে তার অসভ্য কথাটির তাৎপর্য বুঝলো না কেউ!
আজকের শিশু বাঁচবে কিনা জানি না;
কাশ্মীর থেকে কন্যা কুমারিকা পর্যন্ত সমস্ত ভারতবর্ষের ভারত মাতা মনে হলো পাগলিটাকে। সে ছাড়া আমরা সকলেই অসুস্থ। | |
Comments
Post a Comment