জন্মদিন এবং..| সৌম্যজিৎ


Trans-species Repast, Dr. Catherine Page Harris, UNM, 2014-ongoing, Photography: Andy Mattern ||
Diary
Soumyajit
 জন্মদিনের সুযোগ নিয়ে ডায়েরিতে পাতা ভরানোর দিন এলো। শুরু হল। কিছুক্ষণ বাদে মনে হল, বড্ড বাজে লিখছি। ছিঁড়ে ফেললাম।


কবিতা লিখতে গেলে কিছু নিয়ম মেনে লেখাই ভালো, এমনটা বলেছিলেন জনৈক কবি। বাইরে তাকিয়ে মুহূর্তে মনে হল, পাতা ঝরানোর দিন শেষ। এবার সাদা, কেবল সাদা হওয়ার পালা। কিছুক্ষণ বাদে মনে হল, বড্ড বাজে ভাবছি। ঝেরে ফেললাম।

গতবছর জন্মদিনের দিনটা খুব ব্যস্ততায় কেটেছিল। পরদিন দিল্লী যাওয়ার কথা। বিদেশে পড়তে যাওয়ার প্রস্তুতি। একটা ইন্টারভিউ। গতবছর জন্মদিনের দিন আবিষ্কার করলাম, আমার কোনো ফর্ম্যাল প্যান্ট-শার্ট নেই। কাউবয় জীবনে তখন হঠাৎ ঝড়। আরে, একখানা কালো শ্যু-ও তো নেই।

ইন্টারভিউইয়ের দরকারি কিছু জিনিস অফিসের ডেক্সটপে বন্দী করে চলে এসেছি ঘরে। মাথায় বাজ পরল। পরিমলদা’কে টেলিফোন। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আমার কাউবয় ডেক্সটপ থেকে উদ্ধার হল সেই জিনিসপত্র। পরিমলদা জীবনের প্রথম ই-মেইলটা সেদিনই করেছিল। পরিমলদা, অফিসে ঢোকার সময় সাইন-ইন খাতার সামনে বসে থাকা জলজ্যান্ত একটা মুখ, সেদিনও হাসার চেষ্টা করছিল, যেদিন পরিমলদা’র বাবা চলে গিয়েছিলেন।

বাবা টেলিফোন করলেন ভারতীয় সময়ের হিসেবে। জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আবেগ। লেডি ডাফরিণের কথা তুললেন। দুপুর সাড়ে তিনটে নাগাদ রক্তমাখা পুরুষসন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন আমার মা। কোনোদিন কেউ আমাদের ইচ্ছের কথা জানতে চান নি। মা, দ্বিতীয়বার মা হতে চেয়েছিলেন কি না? আমি, আদৌ আমি হতে চেয়েছিলাম কি না? ঘর ছেড়ে থাকার অভ্যাসটা চিরকালই আমার মজ্জাগত। আজ, মা-র সাথে কথা বলতে গিয়ে দৃঢ় হলাম, এটা এক ধরণের বদভ্যাসই।

সেই ইন্টারভিউতে স্কলারশিপটা পাইনি। কারণ, ইন্টারভিউয়ের কিছুক্ষণ আগেই, যারা জটলা করে বসেছিলাম বন্ধ ঘরের বাইরে, তাদের মধ্যে একজনের একখানা ই-মেইল এসেছিল। অক্সফোর্ডের অ্যাডমিশন কনফার্মড। আমার সোয়াস-এর খবরটা তখনও আসেনি। এল, দেরি করে। খুব হিংসে হয়েছিল মুহূর্তের জন্য। কিন্তু কোথায় কি! সেই রাতে জেএনইউ-তে ফিরে একসাথে গল্প করেছিলাম পিএসআরে। নেহা এখন জমিয়ে অক্সফোর্ডগিরি করছে। সেদিন স্কাইপে কথা হল। বললাম, হিংসে হচ্ছে আবার।

পৃথুর সাথে কথা হল। প্রায় ঘণ্টাখানেক। ইশকুলের কথা, বন্ধুদের কথা। জীবনমুখী গানের মতো লাগছিল পুরো ব্যাপারটা। প্রথম যেন নচিকেতা শুনছি। পৃথু এখন অস্ট্রেলিয়ায়, চাকরি করছে এবং।
ইদানীং নিজের সাথে কথা হয়না বিশেষ।

-------------------
পত্রলেখার ডায়েরি।

অ্যালবাকার্কি, ৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৬।
কলকাতা, ৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৬।

Comments