বৃত্ত - সৃজনী গঙ্গোপাধ্যায়



Weekly-Editionযাপন
চুপ করে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। কথা না বলে থাকা সম্ভব হচ্ছে না। কষ্ট হচ্ছে , রাগ হচ্ছে হতে হতে একটা থেকে একটা আলাদা করতে পারছি না। এক্ষুণি রাগ ছিল অনুভূতিটা। মিনিটখানেক পর চোখ খুলে দেখলাম কই না তো কোথায় ,  বরং অনেকক্ষণ দূরে আছি। কেউ কারো দিকে তাকাচ্ছি না। কেউ কোথাও তো নেই। আমার রাগ আমার কষ্ট আমার অভিমান আমার ক্ষোভ গুঁড়ি মেরে এগিয়ে আসছে মাথা নীচু করে বসে থাকা আমার দিকে। কেমন ছোট বড় সরীসৃপের মত আমার চেয়ারের পায়া বেয়ে জামার হাতা বেয়ে পিঠ বেয়ে কানের পাশ দিয়ে উঠে আসছে।

উঠে শুতে গেলাম। এপাশ ওপাশ করতে করতে বালিশ ভিজে যাচ্ছে চাদরটা আস্তে আস্তে গলায় পেঁচিয়ে বসছে চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে পা কাঁপছে থরথর করে নিজের হাতদুটোকেও খুব একটা বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।

উঠে গেলাম বাথরুমে , চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ অসাড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর তাকিয়ে দেখলাম চাপ চাপ দলা দলা হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে অসহায় বিরক্তি উফ ! টলতে টলতে এসে দাঁড়াচ্ছি যেখানেই মাছির মত সর্বক্ষণ উড়ে বেড়াচ্ছে ভনভন করছে কানের চারপাশে কীসব !  আতঙ্কিত হয়ে পড়ছি।  এক চাপড়ে মেরে ফেলতে চাইছি যত ওগুলোকে , ওগুলো একবার দূরে যাচ্ছে একবার কাছে আসছে একবার ঝাঁক বাঁধছে কখনো একা একা উফ কেন ওরা এভাবে বিদ্রুপ করছে আমায় কেন কেন এভাবে ছুটিয়ে মারছে সারা ঘরে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে সবকিছু , আমি ছিটকে যাচ্ছি ছুঁড়ে ফেলে দিচ্ছে আমায় কেউ উফ এভাবে এভাবে ওলটপালট হয়ে যেতে যেতে ঘাম গড়াচ্ছে মনে হচ্ছে যাক সব যাক শুধু একটু স্থির হয়ে যাই একটু শান্ত হয়ে যাই সব চেষ্টা  বন্ধ করে দিই।

আমি ঘরের কোনে গুটিসুটি হয়ে বসে আছি। আমায় কেউ দেখতে পাচ্ছে না বিশ্বাস করো। কেউ উঁকি মারছে না কোথাও থেকে। কেউ লুকিয়ে দেখছে না বিশ্বাস করো। বিশ্বাস করো আমি কথা বলতে চাইছি  যতবার চাইছি যতবার ডাকতে যাচ্ছি গলায় আটকে যাচ্ছে কী যেন। স্বপ্ন দেখে ছটফট করছি। অথচ হাত নাড়াতে পারছি না। অবশ হয়ে গেছে সারা শরীর। মনে হচ্ছে আঙুলগুলো বন্ধক দিয়ে দিয়েছি কোথাও।

কারা জানলার কাঁচে মুখ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওরকম করে ! কেন অত ছায়া ওদের চোখে ? কেন চাপা হাসি কেন ওরকম ?  কেন ঘিরে ফেলা হচ্ছে আমায় এভাবে ? কেন এভাবে বৃত্ত ছোট করে আনা হচ্ছে ?  ঘর ভর্তি বিভিন্ন ছোট বড় মিহি তীক্ষ্ণ রিনরিনে হাসি উফ দুহাতে কান চেপে ধরছি , চিৎকার করছি আমার চিৎকার বুঁজে যাচ্ছে চাপা পড়ে যাচ্ছে ডুবে যাচ্ছে হ্যাঁ দ্যাখো চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে আমার দ্যাখো কেঁপে উঠছে সর্বাঙ্গ দ্যাখো না দ্যাখো তাকাও একবার এদিকে দ্যাখো না একবার দ্যাখো একবার একবার।

ওদের অমন করে ফিসফিস করতে নিষেধ করে দাও।
ওদের চুপ করতে শিখিয়ে দাও।
ওদের শান্ত হতে শিখিয়ে দাও।
ওদের থাবা গুটিয়ে দরজার পিছনে ঘুমিয়ে পড়তে বলো।
ওদের জানিয়ে দাও , যেমন করে আমি জানি।

ক্ষমা করে দেওয়া অভ্যাস হয়ে গেছে তোমার।

Comments