রুহুল মাহফুজ জয়
ভূগোল
পৃথিবী ভ্রমণের ইচ্ছা হলে আমি আম্মার মুখের দিকে তাকাই
দরিদ্র বেদনা সব কপালে জমে হয়েছে আফ্রিকা-এশিয়া
মুখের নিচের দিকে থুতনিতে দৃশ্যমান ল্যাটিন আমেরিকা দুই গালে হাসির ভিতর লেপ্টে আছে আমেরিকা ইউরোপ আর অস্ট্রেলিয়া
স্নো-ফল প্রসঙ্গে মায়ের চোখে শীতকাল এঁকে গেছেন বাবা
ইচ্ছেই তখন সুবিপুল সাইবেরিয়া
পৃথিবী ভ্রমণের ইচ্ছা হলেই আমি আম্মার মুখের দিকে তাকাই
দেখি, সমস্ত কাঁটাতার একেকটা বাবা বাবার ফেলে যাওয়া মহাদেশ—অবজ্ঞা
মৃতদের ভাষা
১.
কখনো কখনো মৃতরা সন্ধ্যার পাখির চেয়েও বাচাল, কিচিরমিচির ভাষায় প্রলাপ
বকে যায়
দাদীর বোবা দৃষ্টিরে মনে হতো বায়োস্কোপ—যেখানে ফুরোয় নি নির্বাক
ছায়াছবিকাল
মরে যাবার আগে আমার দাদীরে আমি চিনি নাই; দাদীর চোখের ভিতর ফুপুর কবর দৃশ্যমান
ঝাপসাকাল-আষাঢ়-বারান্দা-মাটির উঠান অজস্র ফুল মৃত্যুবাহক
সকালে একটানা বৃষ্টির মধ্যে দশ বছর বয়সে আমি মরে গেছি
আষাঢ়ের বৃষ্টিতে দাদীর চোখ সবাক, বড় ফুপুর পৃথিবী না দেখা
সন্তান কী সব যেন বলে যায়
মৃতদের ভাষা বোঝার জন্যে দশ বছর বয়সে আমি মরে গেছি বৃষ্টির শব্দকে বর্ণমালা ধরে আজও শিখে যাচ্ছি মৃত্যুনিনাদ—জীবন খুইয়েছি ভাষা ও বিষাদে
২.
মৃতদের চোখ-মুখ থেকে শ্রাবণঢলের মতো মুগ্ধতা
ঝরে পড়ে।
সেসব মুগ্ধতার নাম নস্টালজিয়া। পপিফুলের রঙে গোধূলির বর্ণমালা লিখে গেছেন মিসেস আমেনা রহমান—আমার নানী। সমূহ কলরব চিড়ে সুর করে কুরান পড়া পড়শির ভিড়ে— চিতাগ্নির শ্লোকে সময় মৃত—বয়স ফুরালে মানুষ আর সময় একই প্রশ্বাসে মরে যায়, আরক্তিম অশ্রু-হরফে কাফনে লেখা হয় বিদায়। কান্নার চোখ শিয়রে বসে দেখেছে—নানীর মৃত্যুরঙ শাদা নহে, লাল।
অংক
বৃত্ত মেলানো পৃথিবীর স্বভাব
আমি তোমার বৃত্তে ঘুরপাক খাই
অংক মেলাতে পারি না
তুমি যদি সংখ্যা
তোমার নামের পাশে ইচ্ছামতো শূন্য বসাতে চাই || সূচীপত্র
|
Comments
Post a Comment