রাসেল রায়হান
|
আয়ুর্বেদ
আমার
সর্বকনিষ্ঠ কন্যাটির একেক
ঝলক হাসিতে আমার আয়ু দুবছর
করে বেড়ে যায়। আমিও আয়ু বাড়ানোর
লোভে তাকে হাসানোর নানাবিধ
কসরত করতে থাকি। নিজের বাড়িতেই
বানানো এই যে সার্কাসপার্টি,
যেখানে
ক্লাউনের দায়িত্ব আমার;
দায়িত্ব
চতুর দর্শকেরও—সেও আমার আয়ু
বাড়ানোর লোভেই। নিজের সমস্ত
মৌলিক জ্ঞান,
বই
আর অন্তর্জাল-লব্ধ
জ্ঞানসমূহ কাজে লাগাই তাকে
হাসানোর জন্য।
সেদিন
দেখলাম কোনো এক যুবকের হাত
ধরে আমার সর্বকনিষ্ঠ কন্যাটি
হাসছে। আর টের পাই,
থার্মোমিটার
বেয়ে সাতান্ন বছর নেমে যাচ্ছে
আমার আয়ুর রেখা। মনে আছে,
একদিন
আমিও কারও আয়ু কমিয়ে দিয়েছিলাম
এভাবেই—সাতান্ন বছর!
কাঁটাতার
জিরাফ,
শরীরভর্তি
এত এত মানচিত্র!
কাঁটাতার
কই?
পরম্পরা
১.
মাছের
লেজের ঢঙে,
মাছির
ডানার ঢঙে জেগে উঠতেন আমার
বাবা। তারপর ছুটতেন বাজারে।
রাতে যখন ফিরে আসতেন মাছ ও
মাছির গন্ধ নিয়ে,
আমি
ভাবতাম,
আহা,
একদা
কি চন্দনের ঘ্রাণ নিয়ে আসতে
পারেন না?
(তখন
মোটেই জানা ছিল না,
সেসব
নিয়ম অনেক আগে উঠে গেছে,
আজকাল
শুধু মৃত্যু এই গন্ধ নিয়ে
আসে)।
আজ রাতে যখন বাবার শরীর ভর্তি
চন্দনের ঘ্রাণ,
ভাবছি,
মাছ
ও মাছির গন্ধ আরও বেশি ভালো
ছিল!
২.
আমি
যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি,
ফিস
চাইতে গেলে বাবা আমার দিকে
ম্রিয়মান ভঙ্গিতে তাকিয়ে
ছিলেন,
যেন
তার মনে পড়ে গেছে গত রাতের
কথা,
যখন
আমি মোমের আলোয় চেঁচিয়ে পড়ছিলাম,
‘ফিস
মানে মাছ,
ফিস
মানে মাছ...।’
তিনি
মাছ কুটছিলেন। সেই মুহূর্তে
আমার দিকে মনোযোগ দেওয়ার ফলে
তাঁর একটি আঙুল ছিন্ন হয়ে যায়।
যেহেতু ফিস দেওয়া হচ্ছেই না,
কিছু
অ্যাডভেঞ্চার করা যাক ভেবে
আমি সেই আঙুল রঙিন পেপারে মুড়ে
স্কুলে জমা দিয়ে দিলাম।...এইভাবে
দশম শ্রেণি পর্যন্ত দশ ক্লাসে
দশটি আঙুল জমা পড়ে স্কুলে!
স্কুল
ছাড়ার আগে ফিজিক্স-টিচার
দেখলাম শল্যচিকিৎসকের ভূমিকায়
নেমে গিয়ে কাগজে মুড়িয়ে রাখা
পুরাতন দশটি আঙুল আমার দুহাতে
লাগিয়ে দিলেন। নিজের হাতের
দিকে তাকিয়ে মনে হলো,
আমার
সন্তানকে বিশ ক্লাস পড়াতে
পারব। সেও নিশ্চয়ই তার সন্তানকে
পড়াবে ত্রিশ-ত্রিশটি
ক্লাস...
|
|
|| সূচীপত্র
|
|
Comments
Post a Comment