এক পশলা বাংলাদেশ - বক্তব্য
পার্থক্য শুধু কাঁটাতারের। অথচ তার জন্যই দীর্ঘদিন থমকে
ছিল দুই বাংলার শৈল্পিক আদানপ্রদান। ফাঁক গলে যেটুকু আসত, তা প্রতিবেশী’কে চেনার
পক্ষে যথেষ্ট নয় মোটেই। অবশ্য ‘প্রতিবেশী’ শব্দেও লুকিয়ে আছে দীর্ঘশ্বাস। সে
প্রসঙ্গ থাক। বরং বাস্তবে ফিরে আসি।
পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ত্রিপুরা – ভারতের এই তিনটি রাজ্য এবং
বাংলাদেশ... বাংলাভাষার আঁতুড়ঘর মূলত এটুকুই। কিন্তু শৈল্পিক বিনিময়ে আমরা পিছিয়ে
রয়েছি আজও। বই বা পত্রপত্রিকার আদানপ্রদানে আজও বাধা হয়ে দাঁড়ায় কাঁটাতার। একটি
নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত কৌতূহল জারি থাকার পর হতাশা ক্রমে ছায়া বিস্তার করে। অবশ্য
একুশ শতাব্দীর এই দ্বিতীয় দশকে সামাজিক মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক কিছুটা খিদে মেটাতে
পারলেও অসীমের কাছে তা নগণ্য। ফলে বাঁধভাঙা বন্যা যেখানে কাম্য, চুঁইয়ে আসা
সামান্য দু’এক ফোঁটা তৃষ্ণা বাড়িয়ে দেয় আরও।
এর আগে পশ্চিমবঙ্গের কোনও ওয়েব ম্যাগাজিনে শুধুমাত্র
বাংলাদেশের কবিদের নিয়ে কোনও সংখ্যা হয়েছে কিনা, জানি না। ওয়েব ম্যাগাজিনের সুবিধা
হল এই যে, কাঁটাতার বিশেষ ভিলেন হতে পারে না। দু’বাংলার পাঠকের কাছেই সহজে পৌঁছে
যেতে পারে ইন্টারনেটের দৌলতে। অবশ্য হাতে পত্রিকা নিয়ে পড়ার অমৃতস্বাদ অধরাই থেকে
যায়, কিন্তু রাজনৈতিক সীমানা তুড়িতে উড়িয়ে বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যাওয়ার ক্ষেত্রে
ওয়েব ম্যাগাজিনের গুরুত্ব অন্তত অস্বীকার করতে পারি না আমি।
‘দলছুট’ সম্পাদনার দায়িত্ব দেয়ার পর আমার তাই প্রথমেই মনে
হয়েছিল, বাংলাদেশের কয়েকজন কবি’র কবিতা দিয়ে সংখ্যাটি সাজানোর, যাতে পশ্চিমবঙ্গের
পাঠক’রা একটি স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারেন ও-দেশের বর্তমান সাহিত্যধারার। এবং
বাংলাদেশের পাঠকও একই সঙ্গে পেতে পারেন তাঁদের প্রিয় কবিদের লেখা। পরিকল্পনামাফিক
পঁচিশ জন কবিকে নিয়ে প্রকাশিত হল এই সংখ্যাটি, যার নামকরণ করেছি ‘এক পশলা বাংলাদেশ’।
আষাঢ়ের মেঘলা দিনগুলোতে এই পাঠ হঠাৎ-বৃষ্টি নিয়ে আসুক। সংখ্যাটির অধিকাংশ কবিই
তরুণ এবং স্বীয় পরিচিতিতে উজ্জ্বল। প্রত্যেকের তিনটি করে কবিতা রয়েছে এতে। পশ্চিমবঙ্গ
বাংলা আকাদেমির বানানবিধির সঙ্গে ঢাকার বাংলা আকাডেমির বানানবিধির কিছু পার্থক্য
আছে। এক্ষেত্রে কবির লিখিত বানানটিকেই মান্যতা দেয়ার চেষ্টা করেছি সবসময়।
এ কথা অনস্বীকার্য, এই পঁচিশজনের বাইরেও অসংখ্য তরুণ কবি
স্বমহিমায় বর্তমান। পরিচিতি এবং সময়াভাবের কারণে তাঁদের সকলের সঙ্গে যোগাযাগ করা
হয়ে ওঠেনি। এবং এ কথাও স্বীকার করতেই হবে, কবি ও কবিতার সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত হলে
পাঠকের মনে একঘেয়েমির উদ্রেক অসম্ভব নয়। ফলে এই সংখ্যায় পঁচিশজনেই ছেদ টানতে
হয়েছে। ইচ্ছে, পরবর্তীকালে অন্যান্য তরুণ কবিদের নিয়ে আরেকটি বা একাধিক সংখ্যা
করার। দেখা যাক, প্রকৃতি কতটা অনুকূল হয়!
আর কথা নয়। পাঠক, আসুন, আপাতত সমস্ত দূরত্ব ও প্রতিকূলতা
তুচ্ছ ক’রে প্রবেশ করি কবিতার সম্মোহনী প্রাসাদে...
শোনো হে মৌলবাদ; রাষ্ট্রযন্ত্র, তুমি শোনো –
বাংলায় কথা বলি। কাঁটাতার বসেনি এখনও...
- তন্ময় ভট্টাচার্য
|
||সূচীপত্র
|
আমরা এপার বাংলার পাঠক ও কবিরা গর্বিত হলাম আপনার অসামান্য পরিকল্পনায় ।
ReplyDelete