বসন্তের বাতাসটুকুর মতো




| |  বসন্তকালটা গা ঝারা দিয়ে উঠতে চাইছে। আবার মাঝে মাঝেই বর্ষাকালের সাথে পড়ে যাচ্ছে দ্বিচারিতায়। এই অনিশ্চয়তা আমাদের সার্বজনীন। পেন্ডুলামের মতো আমাদের এপ্রান্তের সুখ থেকে টেনে আনে অন্যত্র।

তাই হয়ত বলে ওঠা ‘কতকাল ধরে ফিরছি। ফেরায় অস্পষ্টত খুব নীল’। ফিরছি কোথায় আমরা জানি না। ফেরার গন্তব্যে আসলেই কি লুকিয়ে আছে কোনো ‘আদিগন্ত পেরতে চাওয়া মানুষ’। জানা নেই আমাদের কারোরই। শুধু জানা আছে আয়ুষ্কাল বড়ো দীর্ঘ। কোকিলের ডাক আর ভেসে আসা আমের মুকুলের গন্ধের জন্যই এই শিরোনামহীন পথ চলা। তাই আমরা এগিয়ে যাবই কোনো নতুন অধ্যায়ের দিকে...প্রতিদিন।





খসে পড়া ঘুঙুর... | শৌ ন ক  দ ত্ত

গতরাতেই ঘুঙুরটা ছিঁড়েছে। কিছুতেই খুঁজে পাওয়া গেলো না কোত্থাও। দরবারের কোন কোণে পড়েছে কে জানে। আসলে কিছু কিছু হারানো বুদবুদের মতো। এই তো সামন্য গল্প,তবু এই গল্পই আমাকে সারা জীবন বলে যেতে হবে। কেউ হয়ত পাতা মুড়ে রেখে উঠে যাবে আর আমি নুপুরের জোরেই নারী। -কাল লটনা হোঁ গাঁ! কতকাল ধরে ফিরছি। ফেরায় অস্পষ্টত খুব নীল। ইটালী থেকে ফিরে যখন এখানে এসেছি কে জানতো সন্ন্যাসীর ধ্যানের মতো শান্ত অন্ধকার তারপর আমি তাকে সাজাতে বসলাম আমার নিজের পালকে। পায়ের ধুলো সূর্যে রামধনু ওড়াবে। আজ এত কষ্ট কেন। ঝাঁড়বাতির আলো নিভে গেছে অনেক আগেই। পথ জুড়ে পরে থাকবে ব্যস্ততা,কোথাও ছেঁড়া ঘুঙুরটা,এরই মধ্যে চলে যাওয়া। সন্ন্যাসের হাওয়া বুকে অন্তহীন শুধু চলে যাওয়া লক্ষনৌর মায়া মতিভ্রম নয় শব্দ নয়,গন্ধ নয় কেবল গোপনতা অন্ধকারে কে যেন ডাকে রৌশন বাঈ। আমার ঘোর কেটে যায়। রাতের প্রচ্ছন্ন অসুখ কাটিয়ে ফিরে তাকাই নবাব ওয়াজেদ আলি শাহ। ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেন সারারাত জ্বলতে থাকা প্রদীপ কিংবা বিষন্নতা। নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়ান সে মুখে ক্লান্তি এক পলক তার পরই ফিরে যান। টুকরো আবছায়া কথা কানে আসে শেষতম ঠিকানা জানিও না, ফিরে যাও... ভোর পেরিয়ে এখন সকাল ঘাটে বাঁধা ময়ূরপঙী উঠতে গিয়ে চোখে পড়লো বালুতে পড়ে আছে হারানো ঘুঙুর তুলতে গিয়েও মন চাইল না বরং ভাসিয়ে দিলাম ঘুঙুর জোড়া আর নুপুর। দূরে আলো তখন নিভে আসচ্ছে পাখির শব্দ জলের শব্দ সব শব্দ একাকার...

মায়ের রান্নাঘর ২৯।১০।২০১৪




শিরোনামহীন | ইন্দ্রনীল তেওয়ারী

# কোনও ঘর নেই।
কোনও বসত...
# যেন কোন ট্রেন।
# এই যে এতো ষ্টেশন, হল্ট।
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দ্রুততর ট্রেন আমরন ছুটে যায়।
লক্ষ্য একটি নিশ্চিত মৃত্যু-লোকোশেড-গহ্বর।
# গভীর অসুখ...
ক্রমশ ডুবে যাচ্ছি একটি থির জলে।
# দেখো সমস্ত কুলির দল ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটে।
অন্ধকার ঝুঁকে থাকে,ঝুকে যাওয়া কোন প্লাটফর্মে।
# আর আমি কোনও গম্ভীর বিষাদ
উগরাতে উগরাতে শেডের ভিতর দাঁড় করায়
কোনও অসুস্থ ট্রেন।
# তবুও ক্রমশ দুরেই চলে যেতে থাকি।
# মুছে যেতে থাকে ফিরতি ট্রেনের ফেরিওয়ালা।
# আমিও অন্ধকারের ঠোঁটের ভেতর ডুবে যাই ।
# ফেরত ট্রেনের লোকেরা বলাবলি করবেঃ
ষ্টেশনটা আজও ওখানেই আছে,
শুধু লোকটাই চলে গেছে দূরে কুয়াশার ভিতর।



ভেতর পথ | পলাশ গঙ্গোপাধ্যায়

নিদ্রা থেকে চুরি গেছে মুকুট
আমি ত্রাণের কথা ভাবছি না
আমি রক্তের কথা, বিষাদের কথাও নয়

আমি দেখতে পাচ্ছি আদিগন্ত পেরতে চাওয়া মানুষেরা
কেমন নিশ্চিন্ত সুখে থাকে ...



আয়ুষ্কাল | অস্মিতা রায়

বড় দীর্ঘ এ আয়ুষ্কাল।
কতখানি চিনেছ মধ্যরাত?
কতখানি তারাখসা ভোর?
শিশির ভেজানো পদাবলী রাত পার হলে,
আজানে আজান জাগে।

হিমবাহ ওই গলছে দেখো,
ধসে যায় প্রহরার কাল।
শৈত্যপ্রবাহ ঢাকে...
দেড়শো ঘন্টা পার হলে বুঝি,
স্পন্দন কাছে আসে।

বাতাস রেখেছে কথা সেইমত,
ফুলেল শ্বাস বয়ে যায়,
শীততাপনিয়ন্ত্রিত...

গাছেদের থেকে ইদানীং কানকানি শুনি,
বড় দীর্ঘ এ আয়ুষ্কাল?

 | |

Comments