ডiary : অবলা ২ : রোশনি কুহু চক্রবর্ত্তী






Author
| |
ডাIARY

ক্লাস ফাইভে পড়তাম তখন , প্রতি বছরের মত ঋতুরঙ্গের অনুষ্ঠান। আমাদের সেকশনের জন্যে বসন্ত ঋতু বলে দেয়া হল। এবার ১০ মিনিট সময়ের মধ্যে নাচ , গান , নাটক যা ইচ্ছে করতে পারি। তবে হ্যাঁ, অবশ্যই রবিঠাকুরের গান বা নাটক । আমি তো বরাবর একটু বেড়ে পাকা , আর ইশকুলের এসব অনুষ্ঠানে সবসময় গান গাইতাম। আমি গান বাছলাম '' আমি পথ ভোলা এক পথিক এসেছি''। আর এবার দায়িত্ব ভৌমিকের , না ওর পদবী ভৌমিক , নাম না কিন্তু । নাম স্বর্ণালী। এই নামে আরও একজন বন্ধু থাকায় ও আমাদের ভৌমিক । ওড়িশি নাচে তুখোড় । ও সবসময়ের জন্যে কোরিয়োগ্রাফার। তবে ও তো হবে সেই মেয়েটি যার কাছে পথিক আসবে । আর পথিক হল প্রিয়াঙ্কা। কিন্তু ও ঠিক স্টেপ তুলতে না পারায় সোমদত্তা শুরু করল প্র্যাকটিস । গানটা আমি তনুশ্রীকে তোলালাম । দুজন মিলে পুরুষ আর মহিলা অংশগুলো গাইতাম । মহড়া ঠিকঠাক চলে , শুধু বসন্তের এই ললিত রাগে/বিদায় ব্যথা লুকিয়ে জাগে/না চিনিতেই ভালবেসেছি- র জায়গাটাতে ওরা নাচের সময় হেসে ফেলে । এই যে না চিনিতেই ভালবেসেছি এটা বোঝার ক্ষমতা দশ বছর বয়সে সত্যি ছিলনা । বিদায় ব্যথার মানে খুব একটা বুঝি তাও না। কাজেই আমরা হেসে ফেলতাম এই অংশটাতে । বসন্তের এই ললিত রাগে আর না চিনিতে ভালবাসার মত তখন কেমন আধো আবছা অন্ধকারের মত উচ্চারণ। 'না চিনিতেই ভালবেসেছি' অংশটায় স্টেজেও ওরা হেসে ফেলে,কিন্তু মহড়াতে আমি গান থামিয়ে দিতাম,সেটা তখন হয়নি।অনুষ্ঠান ভালোভাবে হয়। আমার প্রিয়তম বন্ধু শ্র্রীয়ার পাড়ায় থাকত সোমদত্তা , কাজেই আমার বন্ধুত্বে ভাগ বসাচ্ছে সোমদত্তা এটা ভেবে প্রার্থনার লাইনে কান্নাকাটি অব্দি গড়িয়েছে শ্রীয়া কার পাশে দাঁড়াবে তাই নিয়ে। ও কেন জানিনা ভাবত ওর পাড়ার ছোটবেলার বন্ধু শ্রীয়া সে কেন আমার সঙ্গে বেশি থাকবে। আমার রাগ হত একটু। সেই মেয়ে নাচ করছে আমার গানের সঙ্গে, কী আর করা যাবে ! ক্লাস সিক্স থেকে ক্লাস নাইন ওরসঙ্গে খুব একটা আর কথা হয়নি,সিক্সে সেকশন বদল হওয়ায় আর কে বেশি বন্ধু এই নিয়ে মনমালিন্য আর কী । ক্লাস নাইনের মাঝে আবার একদিন হঠাৎ করেই কথা বলা শুরু হয়।তখন আমি একটা আলাদা সেকশনে, আর শ্রীয়া সোমদত্তা একসঙ্গে । ইলেভেনে অন্য ইশকুলে চলে যায় ও। সোমদত্তা কাঁধ ঝাঁকিয়ে কথা বলার অভ্যেসটা ছিল আর এত বেশি ইংরাজি বলত আমার সামনে ভাল লাগতনা । সেটাও একটা বসন্তের দিন ছিল ,২০০৮ সাল নাগাদ যেদিন শ্রীয়া জানায় সোমদত্তা আর নেই।জন্ডিসের কারণে এতটা দূরে চলে গেছে যেখান থেকে আর ফেরা যায়না।ফেব্রুয়ারি মাসটা মন কেমন করিয়ে দেয় এখনও। পথ ভোলা এক পথিক আবার কোন দূরের পথে হারিয়ে গেছে। বিদায় ব্যথা লুকিয়ে জাগে -এর মানেটা বেশ স্প্ষ্ট এখন।আর বার বার মনে মনে বলি , তুই প্লিস শ্রীয়ার পাশে প্রেয়ার লাইনে দাঁড়া, আমার একটুও রাগ হবেনা।

Comments