একুশের রিভিউ - ২ - তাপসকিরণ রায়




মতামত
| |
দলছুটের ২১শে কবিতায় আমার ভাল লাগা, মন্দ লাগার কথা (পর্ব ৬ থেকে ১০ নিয়ে লেখায়)

৬ষ্ঠ পর্বের কবিরা হলেন--রাজর্ষি, প্রশান্ত, প্রজ্ঞাদীপা, সোমনাথ ও সমরজীৎ। রাজর্ষির লেখা কবিতা--বসন্তমঙ্গলের দিনে, ভাল লেগেছে। রেখেছ রঙীন পাতা, কবিতায় প্রশান্ত সরকার লিখলেন--
যেন কোনো  শব্দ নেই তেমন কোথাও,  এমন শব্দহীন
ছায়ার উপাচারহীন, গাছের সন্ধান যা কিনা সস্নেহে রেখেছ
নির্জনে, আর রেখেছ রঙীন পাতা, আহতের সমূহ বিন্যাস|
বিদায় যশোর রোড - প্রজ্ঞাদীপা হালদারের কবিতাও ভাল লেগেছে
ওঁর লেখা চারটি কবিতার মাঝে ভাল লাগা রেখে গেছে,  মনমোহিনী গার্লস—
ওদিকে বাইরে রোদ , উজানী হাওয়ায়
ভেসে যাচ্ছে প্রিয় নাম,
চেনা চেনা চিঠি,
ভেসে যাচ্ছে আমাদের দ্বিতীয় পৃথিবী।
এ ছাড়া ক্যাম্প ফায়ারে, ৪রাধাকান্ত জীউ-এ দুটি কবিতাও বেশ ভাল।
সালাম-বরকত... সোমনাথ রায়ের কবিতা, ২১শে সংখ্যাকে বিষয় ভিত্তিক সার্থকতা এনে দিলেন যেন এ কবি—তাঁর লেখা উচ্চারণে আমরা পাই--
যেমন সাহস গড়ে ওঠে। পিতার কারক থেকে ভেঙে ভেঙে যাওয়া
শূন্যতা কিংবা আরও ক্ষতিকর কোনও ঋণভার উপেক্ষা করে-
যেমন মিছিল গড়ে ওঠে।
এগিয়ে গিয়ে কবিতাকে শেষ করলেন এমনি ভাবে—
মনে হল এঁর লেখাতেই যেন খুঁজে পেলাম একুশে লেখাকে---
 :অন্ধকারে, শুধু যেই মনে পড়ে যায় তোমাদের- মাথা উঁচু করে
দেখি, আকাশ দেখতে পাই, সেইদিন-ই- অমর একুশে।|
সমরজীৎ তাঁর কবিতা, বাসন্তীতে লিখেছেন—
পাঠ শেষ হলে আমাদের
সকল জানালা যায় খুলে
অবধারিতের পথে ক্রমজীবনের
 এই যাত্রা গোধূলিরচিত !।
৭ম পর্বের কবিতার মধ্যে—সুমনের কবিতা ব্যক্তিগত ভাল লাগল। প্রবীরের—কবিতা, পাঁক ও সীমাপরিসীমার মাঝে কিছুটা নতুনত্ব পেলাম। ছন্দ তালের কবিতা লিখেছেন রাণা পাল।সরোজের তিনটি কবিতার মাঝেই ভালো লাগা খুঁজে পেলাম। বয়ঃপ্রাপ্ত কবিতার মাঝে--তাঁর ভাবনার পংতিগুলি তিনি এভাবে সাজিয়েছেন—
তুমি না ছুঁলে বয়সপ্রাপ্তি হবে না কক্ষণও,...
আবার কোথাও  পাই—
মহিলাদের ত্বকে শুমধু পিছলে যেত কৌতুক,
ওদের নাভি আর না-গোপন অঙ্গের রিংয়ে
এ-ফোঁড় ও-ফোঁড় হয়েছে নকশিকাঁথার রাত
তবু বয়স প্রাপ্তি হয়নি, যুবকের অছিলায়
দীর্ঘ কবিতাকে নাবালক করে রেখেছিল মাত্র..
তানভীর রচিত কবিতা—চক্র, আদর্শ ও পাঠ। তিনটি কবিতাই সুন্দর ভাববাহী।
৮ম পর্ব--এ পর্বের কবিরা হলেন সুস্মিতা, তাপস, শেখ সদ্দাম, সিয়ামুল ও সোম সরকার। সুস্মিতার কবিতা--‘ঈশ্বরী’ভূত, ভালো লাগলো। এ পর্বে তাপসের লেখা কবিতা, পালকের নীচে। সেক সদ্দাম--লিখেছেন তোমাকেই বলছি, ছোট্ট  ও সুন্দর কবিতা। সিয়ামুলের কবিতা পেলাম ভুলচুক—সংসার। এ পর্বের শেষ কবি সোম সরকার লিখেছেন ডুবুরী কবিতা, তাতেও ডুবে দেখার চেষ্টা করলাম। সবার কবিতা ভালো লেগেছে।
৯ম পর্বের কবিরা হলেন—কচি রেজা, মেঘ অদিতি, জয়াশিস, কৌশিক, সব্যসাচী হাজরা।  কচি রেজার বিষতীর, ছোট কবিতা, বেশ লেগেছে—
বিষ কীভাবে তুলবে  কীভাবে মুছবে তির
দেহাতীত ছায়ায় তুমি জুড়ে আছো,…
মেঘ অদিতির কবিতা--কী তার নাম, পড়ে  মুগ্ধ হলাম--তাঁর কবিতা নৈপুণ্যে উঠে এসেছে এমনি ভাষা—
পাতার পোষাক ছেড়ে তাকে বলি
দৃশ্য খুলে তুলে নাও সমস্ত আবেগ
শরীরগুচ্ছের কাছে লাল নীল ভাষা গড়ি এসো...
আবার কথাও পাই—
আহত চোখ
রাতভর সে তখন কুয়াশায় মুড়ে
সীমান্ত পেরিয়ে যায় সমস্ত উড়ানে,
কিম্বা ভাল লাগার এই কটি লাইন—
স্মৃতি পুড়ে তৈরি হয় শূন্যবাগান
জেনেছ কি, ভায়োলিনে সুর তুলে
দিনরাত ডাকে যে
কী তার নাম?|
জয়াশিস লিখেছেন—শিকার, কবিতা। কৌশিকের সুন্দর ভাবনাচারি কবিতারা খেলে বেড়িয়েছে পৃষ্ঠাময়--লেখার ওপর অনায়াস দখলই কি এতে বুঝতে পারি ? হ্যাঁ, কৌশিকের কবিতায় ভাবনা হারা ভাবনা ছাড়া অভ্যন্তর কথা খুঁজে নিতে এক ধরণের আনন্দ পাওয়া যায় বৈকি ! যেমনটা--
এই সরলরেখার পায়ে পায়ে আলো
ক্রমে
কমে
আসিতেছে
অস্থির পথ
পথচারী
পথিকের দল
উড়ালের বুকে এই খেলাটি লোভেছে
ধুলো     অপেক্ষমান        ধোঁয়ার অক্ষর
অবরোধী হাত পা হাত পা পা পা হাত মাথা মাথাহাত পা হাত পা পা পাহাত মাথা মাথা...
এ পর্বের শেষে সব্যসাচী, অনেকটা এলোমেলো ভাবনায়, কিন্তু সারগর্ভ রচনায় লিখলেন—
এসো চুপ করে চাঁদনি ফাটায় , ফুটিয়ে তুলুক দাও
দাও আমাকে বাদল ঘষে দাও
            গম ফলুক      বার্লি ফলুক   এসোর ফলায়...
কৌশিক ও সব্যসাচীর বাকসিদ্ধ শব্দ গাঁথায় মনে হল ভাবনাকে মনের ভেতর থেকেই খুঁজে নিতে হবে ! অবশ্য এমনি খুঁজে নেওয়াতে পাঠক হিসাবে বেশ আনন্দ পাওয়া যায়।
১০ম পর্বে আছেন কবি সৌমাভ, অয়ন, সুভান, নুরুল হাসান আর আকাশ। কবি সৌমাভর কবিতা প্রজন্ম, ভালো লেগেছে। অয়ন ঘোষের চাকা, অভিশাপ, জন্মদিন তিনটি ছোট্ট কবিতা এখানে স্থান পেয়েছে। এর মাঝে অভিশাপের ভাষা মনোগ্রাহী লেগেছে –
ঠিক যতটা চোখের পর চোখ রাখা ছিল ততটা বসন্ত, ততোধিক পুষ্প।
 এরপরে প্রেমের
মতো তীক্ষ্ম শব্দগুলো মুহূর্তে গূঢ় হয়ে যায় অভিশাপের মতো।
সুভানের হোয়াদ্দা ফাক্, নামের অন্তর্গত চারিটি অণু কবিতাই বলতে হয় প্রশংসার যোগ্য—তাঁর কবিতার না রাখা ঢাকার সোচ্চারে আমরা পাই—
ভিজে ওঠা জিন্সের চেইন চেটে খা মাগি, প্যাকেট ছাড়িয়ে রাখা গোলাপি
সাহসে চুমু ঘষ।
সুভান অতি সাধারণ কথাকে কবিতায় অসাধারণ বানিয়ে দিয়েছেন—
হাত ধর। আঙুল নখ । কালো নেইল পলিস । হাত যাচ্ছে না । তবু ছুঁই।
ওঁর তৃতীয় কবিতাও উল্লেখ করার মত—
পুলিশ – পুলিশ ।  তোমার স্বামীও শাসাবে আমাকে। তারপর একদিন বিষে
মুখ রেখেছি আমি ।
তুমি রেখেছ? কি জানি...
নুরুল হাসান ও আকাশকেও ভালো লেগেছে আমার।
সব শেষে আবারও আমায় বলতে হচ্ছে যে এটা আমার সম্পূর্ণ নিজস্ব অভিমত। আমার বোধজ্ঞানের সীমা থেকেই আমার এ বিচার বিশ্লেষণ। মানুষ মাত্রেই পছন্দ-অপছন্দের ভিন্নতা থাকবে  আর লেখক কবির সব লেখাই শ্রেষ্ঠ মানের হবে এমনটা হতে পারে না। লেখাতে ভাল মন্দ ত্রুটি বিচ্যুতি থেকে যেতেই পারে। অজ্ঞানে কারও মনে ব্যথা দিয়ে থাকলে তাঁর কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

Comments