২১ শে - কবিতা সংখ্যা - পর্ব ৫
মোহ(কবিতা)
|গাছ - শৌভ চট্টোপাধ্যায়
গাছের যতটা দৃশ্য, তার বেশি আমি আর
কিছুই দেখিনি।
মাটি খুঁড়ে, যতবার গাছের শিকড়ে হাত দিতে যাই,
ততবার সে চীৎকার করে ওঠে। তারপর,
আস্তে আস্তে মরে যায়, একা।
অতএব, ফুলের রহস্য আমি কী করে বোঝাব?
কী করে বোঝাব ওই গাছের ভিতরে
গোপনে লুকিয়ে আছে এক বৃক্ষ, লক্ষ লক্ষ বছরের
বৃষ্টিপাত, স্নান, আলো, দুপুরের কাচ?
কখনও কখনও আমিভুল করে
তোমাকেও গাছ বলে সম্ভাষণ করি!
কেননা তুমিই জানো—
গাছের যতটা দৃশ্য, ততটাই গৃহস্থের ভাষা।| |পোস্ট ভি-ক্যাফে - উল্কা
নিজেকে নিষ্ঠুর খুনের পর
ইশাদী সেজে
উল্টে দিলাম দুপাতা চোখ...
দেওয়ালের গায়ে পোষ্টার পোষ্টার ইট
চ্যুইং গাম ঘষে ভাড়াটে প্রেমের সাথে
পালাচ্ছে উদ্বৃত্ত পরকীয়া
একটা চিঠি
লাল শব্দ
কালো শব্দ
পূর্ণচ্ছেদ
তুমি আড়াল ভেঙে ঝুঁকে পড়
এক শব্দভেদী ধনুকের বুকে
অপসারি আগুনের কঙ্কালে
কেটে দাও উদ্বায়ী জল আঁচড়
গোলাকার হতে হতে হঠাৎ
একটা চৌকোনার নাম বদলে যায়
স্বকীয়া খুনের পৌনে ঘণ্টা—
একটা কোকিল ডেকে উঠতে
নেমে এল
একফোঁটা দুফোঁটা
ভ্যালেন্টাইন সন্ধ্যে...| |হাতভর্তি কুয়াশা - আসমা অধরা
যোগমায়া জানে ভিতরবাড়ীতে পুড়ে যাচ্ছে শুভ্রসঙ্গম, আকাশ থেকে খসে পড়া তারাদের ডানা অথবা আয়ুশাপে বিলম্বিত হয় উল্কাপতন। গায়ে অতিরিক্ত জ্বর পোহায় বেলাভূমি তবুও কাঁকড়াদের ছানাপোনা পিপীলিকার মতো ছড়িয়ে যায়, গুটিগুটি হাঁটে।
শাদা কাগজে গোটা গোটা লাল হরফে লিখে রাখা কোমল নাম আফ্রোদিতি আর শীতল দেয়ালে কান চেপে ধরে শোনা নৈঃশব্দ্যের টুপটাপ। যোগমায়া উত্কির্ণ হয়ে শোনে ভায়োলেট ভায়োলেন্স, সাথে সাথে উড়ে যায় কয়েকটি ইতস্ততঃ জোনাকী।
শ্যামাসুন্দরী গায়ে মাখে কাঁচাহলুদ, লেবুফুল নির্যাস। বেণীতে জড়ানো একাকীত্ব ফুঁসে ওঠে গোখরোতাণ্ডবে। জবারঙের চোখে ভাসে এক কাস্তের প্রতিকৃতি। রোদের শহর ছেড়ে কুণ্ডলীর মতো উড়ে যায় সমস্ত সূচিক্ষণেরা, বিষন্ন ছাতিমের ডালে বসা সুক দুঃখ গায় সারির কানেকানে ।
তিতির ভীষন কাঁপছে, সাথে যোগমায়া। ও সোনার কাঠি রূপোর কাঠি, যাদুর মতো বদলে দাও শিথান- এ তল্লাটেও কিছুটা ভোর আসুক।||শব্দের অন্ত্যমিল খুঁজতে গিয়ে - সুপ্রিয় মিত্র
এত বাড়ির স্বপ্ন দেখে দেখে আমার ইচ্ছে হল - এবার কি অনিকেত নাম নেওয়া যায়? গাছের কোটর থেকে নেমে আসে চড়ুই, মনোযোগ না থাকলে ঈশ্বর ভেবে বসতাম নির্ঘাত...
পায়ের কাছেই ফেলে রাখা দানা খুঁটে খায়... তারপর হাতে এসে বসে...
পালক ঘেঁটে আদর করতে গিয়ে দেখি, কে যেন তারই বহু আগে চামড়া পুড়িয়ে লিখেই দিয়েছে - মায়া চঞ্চুর শান দেখে হঠাৎই মনে পড়ে, এরকমই তীক্ষ্ণ কলম পিষে একদিন শব্দের অন্ত্যমিল খুঁজে পেয়েছিলাম - হায় প্রেম! তার পরিযানে উড়ে যাওয়া দো শ্যব...||দূর্বা সরকার
সুখ
সুখ এক পারিযায়ী পাখি,
কিংবা প্রবাসী ভাই-বোন,
সে আজ ফিরে যাচ্ছে বলে
সাজাচ্ছি টিফিন,
আমার সুসময়টুকু ভরে।
বলে দিচ্ছি তাকে,
পরের বার যেন সে
আনে তোমায় সাথে করে।
উদ্বেগ
রাজনীতির 'র' বুঝিনা,
শুধু জানি, পুড়ে যাচ্ছে দেশ!
বাবা সারাদিন ধরে
দেখছে নিউজ চ্যানেল,
রাতে ফিরছে না ভাই,
বোনের কলেজ বন্ধ,
নির্বিকার মুখে তবু
সংসার আগলে যাচ্ছে মা।
আমি আর কি করি!
এক বুক উদ্বেগ
জড়িয়ে নিয়ে ঘুমোতে চাই।
এখনো হয়নি কিছু
জেনে কান্না চুপ থাকে খুব;
গোপনে হাওয়া কে বলি,
ফিরে যেন পাই!|
Comments
Post a Comment