২১ শে - কবিতা সংখ্যা - পর্ব ৩




মোহ(কবিতা)



|অসুখের গান - ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়

অসুখ গায়ে কিসের যেন অপেক্ষায় থাকি সারাদিন—
জ্বরজারি,তুমি গান ভালোবাসো?ফাল্গুনের প্রতি বিকেল
হাওয়ার সুরে যে গান শোনায়..সে গান পলাশ জানে

ছুটি হয়,গুড়কাঠি হাতে ওরা দাদা আর ভাই
কোথায় চলেছে আজ?ওদের ঠিকানা চাই ইস্কুলের গাছেদের কাছে

গানের দিন আমায় ছেড়ে যায়,পাঠ শেষে
শুকনো পাতা খুব উড়ে আসে চোখেমুখে—বড় মায়া হয়
ছায়া পড়ে এলে দেখি পথ সেও চলে যায় অন্য কোথাও

এখন শুধু অকাল বৃষ্টি এলে কখনও
তাকে বলি – কে গাইছ গান?আর 
পাতার ধুলোর কথা লিখে রাখি কবিতায়
যে কবিতা ডাকবাক্স পাবেনা কখনও
অথবা পৌঁছে যাবে ভুল ঠিকানায়|




|ঈশিতা-র কবিতা

রাতের অন্ধকারে
যখন তোমার কবিতার তারা খসে পরে টুপটাপ,
আমি তখন টেলিভিশনে ডিসকভারি দেখি
তারপর রাত বাড়লে,
বুকের আঁচল খসে-
আর, কবিতার নক্ষত্রেরা আগুনে ঝঁপ দেয়
নতুন করে আর
লেখা হয় না কিছুই;
শুধু ক্লান্তিকর একঘেয়েমি ববংশবিস্তার করে চলে...|





|রাধিকা কথন - স্রোতস্বিনী চট্টোপাধ্যায়

রাত বাড়লে বাঁশি আরও তীব্র হয়ে কানে আসে
তুমিতা জানতে শ্যাম ,
তাই একটু কাব্যি করেই সম্মহনের ভাষা রপ্ত করার পর
আমি ভেতরে ভেতরে কোথায় পুড়ছি, তা ইশারা দিলে
তুমিনিজেই খুঁজে নিতে -

আয়ানঘোষের ঘরণী হয়ে একটা গোটা জীবন
আমি দীর্ঘনিঃশ্বাসের সঙ্গে বেচে দিতে পারিনি বলেই ,
রোজ একটু একটু করে তোমার অষ্টসখীদের ডিঙিয়ে
অমঙ্গলের আশঙ্কাতেই পথ খুঁজেছিলাম ,

রাস্তায় চলার সময়,
আমার উঠোন জুড়ে ঝমঝমে বৃষ্টিতে আগুন ধরে যেত 
চোখের কাজলও ঘেঁটে যেত বিচ্ছিরি রকমের লোক নিন্দায়

আর আজ দেখ
সেই আগুন জ্বলজ্বল করছে আমার কপাল জুড়ে

যদিও আমার কোনও ত্রিনয়ন নেই
আমি দেবী হতে পারিনি কোনোদিন  -

শুধু তোমার কাঁধে মাথা রেখে মূর্তি হয়ে মন্দির আলো করেছি !

আগুন আর প্রদীপ আসলে দুটোই আলো দেয় ,
আমি এপিঠ ওপিঠ করে দুটোই পেয়েছি

এক শতাংশ সুখের জন্য আমি যেমন ঝাঁপিয়ে পড়েছি
তোমার ধারালো নীল শরীরে,
তেমনইনিজেকে বহু টুকরে ভেঙ্গে পরে বুঝেছি
আমাদের এই সমস্ত মুহূর্ত
একদিন শুধু ঐতিহাসিক প্রেমের উদাহরণ হয়ে থাকবে !

সমাজ তাতে ধূপ ধুনো দেবে , কবিরা সখের কবিতা লিখবে
সদ্য ব্রেক আপ হওয়া কাপেল একটু আহা উহু করবে
ছবি টাঙ্গানো থাকবে চায়ের এর দোকান থেকে যৌথ পরিবারের দেওয়ালে ,

আসলে আমি তখনও ঠিক বুঝতে পারিনি
সোনার মুকুট মাথায় দিয়ে তুমি একদিন রাজ সিংহাসনে
রাজাধিরাজ সেজে দিব্বি সুখে ভুলে যাবে আমায় ,
আর আমি ,
ভঙ্গা তোরঙ্গে ছটফট করতে করতে
না পাব স্বামি সুখ না পাব স্বর্গ সুখ

তবুও শ্যাম শুধুমাত্র তোমাতেই বোধহয় সম্পুর্ন হয়ে ওঠা যায়

শুধুমাত্র তোমার জন্য শরীর উজাড় করে যোনি থেকে সিন্ধু খুঁজে আনা যায় -


আমাদের কুঞ্জবনে লুকিয়ে দেখা থেকে অভিসারী ফুলশয্যা
এই খেলনাবাটির সাম্রাজ্যে ছায়ার তলায় ডুবে মরেছে ঠিকই
তবু আজকাল সূর্য ওঠার সময় এক লহমা পবিত্রতার আলোয়
তোমায় দেখতে বড় ইচ্ছে করে ,

কেননা আমার শরীরে এখন আগুন নয় যাত্রা পথের গান বাজচ্ছে প্রতিনিয়ত 

"মরণ রে ,তুহুঁ মম শ্যাম সমান ... "|





|অ্যালবাম থেকে – অনির্বাণ ভট্টাচার্য

এককালে হরিণীর মতো দেখতে আমার মা
মারীচের পোশাক খুলে এখন ষাট ।
আমি যেন ব্যক্তিগত ঈশ্বর-নির্মাণে
দ্বীপান্তরিত গোর্কি ......
 
একহাতে অলৌকিক বিষপাত্র ধরা বন্ধুর
অন্যহাতে গোপনতম সঙ্গমের ক্লিপিং
আমারও যে কিছু বলার ছিল, হোরেশিও ?

আমি অসুস্থ হলে, কতকটা স্বগতোক্তির ঢঙে বলা
বাবার স্মিত সাবধানবাণী
লা হিগুয়েরার স্কুলবাড়ি থেকে আসা
শহীদের শেষ কথাগুলোর মতো শোনায় ।
সাগর থেকে না ফেরা ক্যামিলোর গলায়
আমি ‘ঠিক আছে’ ব’লে সরে আসি .....

বোন, তোর হাসিটুকু মুছে দিতে
আমার আলাদা দেয়াল
লহমাটুকুও নেয়নি ।
শাপে-শোকে-সন্তাপে লাশ হয়ে পড়ে থেকে
কি লাভ বল,
তোকে আন্তিগোনে ব’লে ডেকে?

নগ্নতার দু ভাঁজ খুলেও
বিভাজিকায় বরফ বেঁধে ছিলে তুমি
এ উত্তাপ যথেষ্ট, বতিসেল্লির মেয়ে?
দ্যাখো, আমি একঘর অমাবস্যা খেয়ে
কেমন সিল্যুয়েট হয়ে শুয়ে আছি,
আর দরজায় আলোর ধাক্কা !|





|রেডিও - ইন্দ্রনীল ঘোষ

যেন বৃষ্টি হবো হবো
এই ক্ষমা আটকে আছে আবহাওয়া দপ্তরে
মাথা ধোয়ানোর ঘড়িতে বাজছে গাছেরা
কয়েক সেকেন্ড পাখি
পাখি, নিজে কোনোদিনই দূরবীন না

এক আদিম রেডিও
যার নব্‌ ঘুরিয়ে আমায় জন্ম দিত বাড়ির লোক...
উপকূলবর্তী ঝড়ের সংবাদে
অধিক ফলনশীল ঘরোয়া বাগানে
সে বাড়ি বেতার জমাতো...|

Comments