২১ শে - কবিতা সংখ্যা - পর্ব ১২
মোহ(কবিতা) ||
|শারীরিক - মিলন চট্টোপাধ্যায়
শরীর চাই শরীর ।
সবথেকে সাংঘাতিক খিদেতে
আমার গা গুলোচ্চে,
আমার গা গুলোচ্চে,
মাথা ঝিমঝিম করছে ।
একটা ঘোরের ঘুরঘুরে পোকা
নড়িয়ে দিচ্ছে
একটা ঘোরের ঘুরঘুরে পোকা
নড়িয়ে দিচ্ছে
আপাদমস্তক ।
দোয়াত নিয়ে অপেক্ষা কোরোনা যুবতী
অপেক্ষার অন্তে -
একফালি চাঁদ জেগে থাকে !| অপেক্ষার অন্তে -
|তিনটি কবিতা - অরিন্দম
রোজকার
ঘুম ভেঙে আড়মোড়া ভাঙার পরই
রোজকার চিত্রনাট্যে শুরু হয় অভিনয়
কোনো পাঞ্চলাইন নেই, গোটাটাই
ক্ল্যাইম্যাক্স বিহীন, অন্তঃসারশূন্য
চেনা মঞ্চ চেনা দর্শক আর
চেনা আমির ভিড়ে কেটে যায়
সকাল দুপুর সন্ধে গড়িয়ে মধ্যরাত।
ধীরে ধীরে আলো নিভে যায়
ক্লান্ত শরীর লুটিয়ে পড়ে বিছানায়
সমস্ত সংলাপ গুলিয়ে যায়, অচেনা
আমি একাকীত্বে ছটফট করে, কামড়ে ধরে
বালিশ-চাদর। বিষাদ বাজে গোপন ঘরে
ব্যর্থ প্রেমিকের মতো সিগারেটও
ডুকরে কাঁদে অ্যাশট্রেতে।
সমস্ত অনুভূতি চুরি করে অচেনা আমির
আত্মারা, ঘুরে বেড়ায় অন্ধকার ঘরের
কোনায় কোনায়….
বসন্তপেরিয়েগেলে
প্রতিটিবসন্তপেরিয়েগেলে
বান্ধবীদেরবয়সবেড়েযায়
একটুএকটুটেরপাই।
ফেসবুকেপ্রেমিকযুগলেরছবিতেভরেওঠে
ওয়াল। মনেরকোণেচলতেথাকে
কামনাভালোলাগাআরঈর্ষারএকঅদ্ভুতজাগলিং
বেকারত্ত্ব ও প্রেমহীনতার-
এক গাঢ় উপহাস্যে ইদানিং মাঝেমধ্যে
ডুবদি, নেশার সাগরে।
যুবক
একাকী রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন
সঙ্গীহীন, যেন এক অনন্ত ভ্রমণ
গলিতে দাঁড়িয়ে থাকা মব্যবিত্ত ইগো
ট্যাগলাইন সেঁটে দেয় ব্যক্তিজীবনে।
প্রত্যাশা আর ব্যর্থতা যেন
মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ মনে হয়!
সামাজিক আর পারিবারিক শোষণ
থেকে সুখীগৃহকোণের আশায়
মধ্যরাতে হাতবদল হয় কোলকে।
কৈশোরের রঙীন দিনগুলো
প্রথম যৌবনে পা দিয়ে
বড় বিষাদময় লাগে।
নিজেকে মেলার ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া
এক অজানা কিশোর মনে হয়
এইভাবে আনিশ্চয়তার সাঁকো পেরোতে পেরোতে
কখন যেন কিশোর থেকে যুবক হয়ে উঠি!|
|ভায়োলিন বাজে অবিরাম - উদয় শংকর দুর্জয়
তোমাকে মনে পড়লে বুকের মধ্যে
ভায়োলিন বাজে অবিরাম
একশ'টা প্রজাপতি দল মেলে ওড়ে,
মেঘেরা তুলোর ওড়না জড়িয়ে মাখে আবির দু'হাতে
তখন জুরিখ শহরের শান্ত লেকে
চিক চিকে আলোয় জন্ম ন্যায় কাঁচের ঘর।
তোমাকে ভাবলে সোনামাখা ছেলেবেলা
চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়,
এই ভাঙ্গা রাস্তার মোড়ে আড্ডারা জেগে ওঠে
পুরনো অংকের খাতায় কিছু অস্পষ্ট নাম-
কিছু অভিমান স্মৃতি বিস্মৃতির বিনম্র প্রচ্ছদ।
তবে কি নাম ধরে ডাকা হয়নি সে সূর্যাস্তের সীমান্ত রেখায়।
তোমাকে ভাবলে এক কল্পকাল বাস্তবতায় জেগে ওঠে
বেইলি রোডের রাশি রাশি আলোয়
তুমুল কথার ধুমে রাত গভীর হয়। কঙ্কণ সুর ভাসিয়ে ন্যায়
পুরনো নাচ ঘরে।
তোমাকে ভাবলে
মুনিখ শহরের সব নিভে যাওয়া বাতিরা জ্বলে ওঠে
জীর্ণ গাছেরা পরে ন্যায় জামদানি শাড়ি
পকেটে রাখা ভাঁজ করা চিঠি
হৃদপিণ্ডে বাড়ায় স্পন্দ, জেগে ওঠে
প্রথম আলোর কথন, ভর করে জানালায় রৌদ্র দুপুর।
এমন করে ভেবে দেখেছো কি
এমন করে করেছো কি বিষপান?
আমাকে ভাবলে তোমার মধ্যেও
ম্যাটারহর্নের জমাট বরফ গলে যাবে, সূর্যাস্তের শেষে
চিলন ক্যাসলের সামনে এসে নিজেকে খুজে পাওয়ার
ইচ্ছেরা জেগে উঠবে।|
|এক অথবা অনেক নারী - শুভাঞ্জন বসু
একদিন পৃথিবীর শেষে রক্তের ধারাপাত
অবিরাম বৃষ্টি
আর রাস্তায় জুতোর চলাচল
আমি হারিয়ে ফেলবো তোমায়
মানব ভিড়ে,অন্ধকারে|
তুমি লোভনীয় দ্রষ্টব্য
তুমি আগুন
তুমি হারিয়ে যাওয়া গল্প
তবু বারেবারে ফিরে আস
আমার গল্পে,আমাদের গল্পে|
তুমি স্বাধীনতার শিকার
না আমাদের অস্বীকার?
তুমি বখে যাওয়া ছেলের স্বপ্ন
নাকি বুকে আগলে রাখা
টাকার গন্ধ?
আসলে তো তুমি নারী
তাই রয়ে গেছ অধরা
আর পেয়েছ অশ্লীলতার তকমা
তুমি শান্তি খুঁজেছ
যন্ত্রণার আড়ালে
আর ফিরে তাকিয়েছ পেছনে বারেবার|
কার ভরসায়?
কেউ আসছে?
নাকি ধাওয়া করেছ
তুমি নিজেই নিজেকে?
জানি না কোথায় আছ
মানুষ ছিলে তাই জিজ্ঞাসা করতাম
তুমি ভালো আছ তো?|
|আলাপ - চয়ন ভৌমিক
আমার নেটওয়ার্কে ওরা কেউ নেই,
পরিচয়ের গন্ডীর বাইরে ,ওদের হাসি ওদের কান্না-
ভীড়ের মাঝে কত নির্বিকার মুখ,
কতই না লুকানো অভিব্যাক্তি, হিসাব কথা।
পরিচয়ের গন্ডীর বাইরে ,ওদের হাসি ওদের কান্না-
ভীড়ের মাঝে কত নির্বিকার মুখ,
কতই না লুকানো অভিব্যাক্তি, হিসাব কথা।
জানতে ইচ্ছে করে আমারই মত নাকি ওরা?
ওদের গল্পগুচ্ছ কি মেলে আমার জীবন গ্রন্থের সাথে?
ওদের গল্পগুচ্ছ কি মেলে আমার জীবন গ্রন্থের সাথে?
বইয়ের পাতা ওল্টালেই যত কবিতা খেলা করে,
প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় পুরুষেরা যেই অবয়ব পায়-
রহস্যের অশরীরি জমাট ধোঁয়ায়,
স্মৃতি-মনোজালে বাঁধা পড়া ব্যাকরন মুখ-
--- স্বপ্ন বুদবুদের মত উড়ে উড়ে,
ফিরে আসা শুরু করে
অনন্ত ইচ্ছার বাসর ঘরে।
প্রথম, দ্বিতীয় আর তৃতীয় পুরুষেরা যেই অবয়ব পায়-
রহস্যের অশরীরি জমাট ধোঁয়ায়,
স্মৃতি-মনোজালে বাঁধা পড়া ব্যাকরন মুখ-
--- স্বপ্ন বুদবুদের মত উড়ে উড়ে,
ফিরে আসা শুরু করে
অনন্ত ইচ্ছার বাসর ঘরে।
আমি লেখকেরও গৃহস্থ খুঁজি,
কাব্যের হাটেবাজারে,
খুব আলাপ করতে ইচ্ছে করে
খুব আলাপ করতে ইচ্ছে করে
কবি আর তাদের ঘিরে থাকা গৃহস্থালির সাথে,
যত মুখ, বাস, ট্রাম বা ট্রেনের কামরায়
নিরাসক্ত মুখ্, নিজের ব্যাক্তিগত গণ্ডীতে জাবর কেটে
নিরাসক্ত মুখ্, নিজের ব্যাক্তিগত গণ্ডীতে জাবর কেটে
হঠাৎ উন্মুখ হয় কিছু বলার জন্য,
ঠোঁট কেঁপে ওঠে কোনো অপরিসর পথের বাঁকে,
সেখানে মুখোশ ছেঁড়ে অজানা পথিক,
খুব আপন করে নেয় আমাকে, নিবিড় আলাপচারিতায়।
অকপট আকাশ বুকে,
তারপর সবারই কিছু বলার কথা থাকে।।|
Comments
Post a Comment