২১ শে - কবিতা সংখ্যা - পর্ব ১
মোহ(কবিতা)
|দিনগত - যশোধরা রায়চৌধুরী
বিষাদপ্রতিমা হয়ে কেন তুমি বসে আছ, বল।
বিষাদপ্রতিমা হয়ে কেন তুমি বসে আছ, বল।
দিনগত মেয়েবাঁচা তার বুঝি অবিরাম চাপ?
ছোট ছোট ভিরু কাজ ছোট ছোট মনের উত্তাপ
তোমাকে বেঁধেছে যেন চূর্ণফুল বাঁধা দুব্বোঘাসে
বিষাদ বিষাদ তুমি কেন এত উত্তেজনা চাও?
ফুচকা চাও, খুচরো পয়সা, চাও চৈত্র সেলের কাপড়
চৌত্রিশ সাইজের ব্লাউজের মাপে মাপে চাওয়া
এত ছোট চাওয়াগুলি বেঁধে রাখি কী করে হাওয়ায়
বিষাদপ্রতিমা তুমি, আজ খুশি করি বা কী করে
ছিঁড়ে পড়ে যাওয়া ফুল, তুমি গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে আছ
একদিন সুগভীর রোজমরা রোজবাঁচা ছেড়ে
তোমাকে পালিয়ে নেব স্কুটারে দূরের টিলাটিতে
তোমাকে ছুটিয়ে নেব কোলঘেঁষে আলো করে বসা
চামড়ার সিটে তুমি আঁকড়িয়ে থাকবে আমাকে
কালো ঘোড়া ছুটিয়েছি বল্গাহীন হেলমেটবিহীন
তুমি তো পদ্মিনী, রাখী , বা অনন্ত মাধুরী দীক্ষিত
চলো যাব অন্ধকার দুটি সিটে সিনেমাহলের
অক্লান্ত নাবিক আমি , বাঁচো হয়ে আনন্দদ্রাঘিমা।| |উলফত কি আর - বারীন ঘোষাল
বাক্কানো ওয়াক্কানো লাগছে দেখতে
বাক্কানো ওয়াক্কানো লাগছে দেখতে
তুমি কি গারদ
ঝর্না
জলের গরাদ
তখন বর্শা না
বর্ষানাচায় চা চা
হুলা হুলা
রক্তে ধোয়া পার্টিগণিতে পিরিয়ড আঁকা চেপে ধরেছো
তখন পতাকা গোঁজার ক্লাস শুরু হয়েছে মেয়ে লেগুনের গুহায়
সেদিন আদুরে মাদুরে রোদ পোয়ালো আমার মরাল
ড্রপ খেতে খেতে আকাশ বানালো মেঘ
মেঘ ফেঘ বর্ণালী গোপন করতে পারল না
পাহাড় লেখার পরে
পাখি আঁকার আগেও
কী রঙ যোনিপথের যুদ্ধে
উলফত আর কি
শীতের শেষে কেবল বাক্কা ওয়াক্কা
উলমেষ
আর মেগুলান এসে মুছে দেয় শ্লেটের মেমরি| |অবন্তিকা তোর ওই মহেঞ্জোদারোর লিপি উদ্ধার - মলয় রায়চৌধুরী
কী গণিত কী গণিত মাথা ঝাঁঝাঁ করে তোকে দেখে
ঝুঁকে আছিস টেবিলের ওপরে আলফা গামা পাই ফাই
কস থিটা জেড মাইনাস এক্স ইনটু আর কিছু নাই
অনন্তে রয়েছে বটে ধূমকেতুর জলে তোর আলোময় মুখ
প্রতিবিম্ব ঠিকরে এসে ঝরে যাচ্ছে রকেটের ফুলঝুরি জ্বেলে
কী জ্যামিতি কী জ্যামিতি ওরে ওরে ইউক্লিডিনী কবি
নিঃশ্বাসের ভাপ দিয়ে লিখছিস মঙ্গল থেকে অমঙ্গল
মোটেই আলাদা নয় কী রে বাবা ত্রিকোণমিতির জটিলতা
মারো গুলি প্রেম-ফেম, নাঃ, ফেমকে গুলি নয়, ওটার জন্যই
ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিস ব্রহ্মাণ্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ
আর নিশ্ছিদ্র বিয়োগে প্রবলেম বলে কিছু নেই সবই সমাধান
জাস্ট তুমি পিকআপ করে নাও কোন প্রবলেমটাকে
সবচেয়ে কঠিন আর সমস্যাতীত বলে মনে হয়, ব্যাস
ঝুঁকে পড়ো খোলা চুল লিপ্সটিকহীন হাসি কপালেতে ভাঁজ
গ্যাজেটের গর্ভ চিরে তুলে নিবি হরপ্পা-সিলের সেই বার্তাখানা
হাজার বছর আগে তোর সে পুরুষ প্রেমপত্র লিখে রেখে গেছে
মহেঞ্জোদারোর লিপি দিয়ে ; এখন উদ্ধার তোকে করতে হবেই
অবন্তিকা, পড়, পড়, পড়ে বল ঠিক কী লিখেছিলুম তোকে ---
অমরত্ব অমরত্ব ! অবন্তিকা, বাদবাকি সবকিছু ভুলে গিয়ে
আমার চিঠির বার্তা তাড়াতাড়ি উদ্ধার করে তুই আমাকে জানাস| |নীল আরো কত - দেবারতি মিত্র
এখন আমাকে ডেকো না,
এখন আমাকে কিছু বলতে বোল না।
এবার সন্ধ্যা আমাকে ভর করবে,
এরপর আমাকে সন্ধ্যায় পাবে।
অপরাজিতা ফুল হালকা হ’তে হ’তে
কুমারীর নিঃসঙ্গতা,
তারপর উলুঘাসের বনে গোপনচারী সাপ,
নীল আরো কত যে!
কতরকম জীবন---
নীলবর্ণ ওঙ্কারের শব্দ সমস্ত প্রান্তর জুড়ে।
তোমার চোখের মণি যেন
স্বপ্নে, প্রেমে, কান্নায় মজে যাচ্ছে।
কথা দিয়ে যা গড়ে তুলেছি, তা মুছে যাক,
ছায়ার বর্ষণে ডুবন্ত দ্বীপের মতো নিশাকাল
আকাশ, সমুদ্র যেন বা আমার ভুরুর মধ্যিখানে।| |পারীতে লেখা কবিতা - আর্যনীল মুখোপাধ্যায়
(তোমাকে, মোনিক)
জানিনা যে-গাছের-নাম মোনিক
তার নিচে এই আমাদের শেষ কাউন্টার
থেকে ধরিয়ে আরো এক নতুন শেষ
সিগারেট - বঁ-ন্যুই মোনিক
যত কাছে কোঁকড়ায় উড়ে আসা পাতা
গাছের নামে না-জানা-মোনিক তোমার
শেষ চুমু কোঁকড়ায় বিসর্জিত মানচিত্রের কোমায়
নদীর ধারে যেসমস্ত কথা হলো
প্রত্ন সভ্যতার গির্জা বা ঝর্ণার অপর আলোকিত সমাজের
নতুন ইশারার সমস্ত ট্রিঙ্কেট মোনিক
এক রাজপথের সাথে অন্য রাজপথের উল্লম্ব কাটাকুটি –
জীবনের মোড় বলতে এই
ইশারা বলতে এই
নাম-না-জানা পাতা তার নাম-না-জানা গাছ
ছেড়ে দিয়েছে
পালিত রোদের রঙপ্রজাতি হয়ে সে ফুটপাথে ঘষটায়
ক্যানভাসের সামনে গিয়ে খেয়াল হবেই কত রঙ অজানা
তোমার সোয়েটারে লাগা পাতার, হাতের, পিঠের দুদিক, তোমার বোঁটার
শব্দে শব্দে বন্ধ রঙের কৌটো তাকে সারি সারি
এভাবেই পংক্তির প্রস্তুতি
কৌটো খুললে ভাষা আসে কম, আসে বরং গন্ধভরা অন্ধকার
মাঝরাত পেরিয়ে নিভে গেছে ত্যূর-ইফেলের হরিণসোনা
এখন আমি সাঁ-মিশেল আর সাঁ-জর্মেনের কাটাকুটিতে মোনিক
প্রবাসের পথে হাওয়ারাস্তার বাতাসী একায়
তোমার সুস্নাতার ওপর স্বচ্ছ সাদা সফেন
পোশাকি রাত –
বঁ-ন্যুই|
Comments
Post a Comment