The Dreamers - Nirnoy Basak
Cinema | |ফিল্মঃ দ্য ড্রিমার্স।
পরিচালকঃ
বার্নার্ডো বার্তলুচ্চি।
দেশঃ
ফ্রান্স।
জনাপাঁচেক ফিল্ম সমালোচক একদিন দুম করে
ক্যামেরার পিছনে চলে যায় আর একটা দেশকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করে। স্বপ্ন দেখতে শুরু
করে ফ্রান্সের হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী। তখন ষাটের দশক। পৃথিবী ভিয়েতনাম , চীনের
আঁচে ফুটছে। সংস্কৃতির পীঠস্থান ফ্রান্সে তখন উত্তেজনআ তুঙ্গে। আধুনিক সিনেমার
জন্ম হচ্ছে। শত শত উৎসাহী যুবক-যুবতী ‘সিনেমাথেক ফ্র্যাঞ্ছাইসি’তে New Wave ফিল্মমেকিং শিখতে আসছে। তাদের
উদবুদ্ধ করছে সেই পাঁচ হোতা- গোদার, ত্রুফো, চ্যাব্রল, রিভে, রোমার। এই এক
পরিস্থিতিতে এক আমেরিকান ছাত্র আর দুই ফরাসী যমজ ভাইবোনের জীবনের কয়েকটা তোলপাড়
করা দিন নিয়ে বার্নার্দো বার্তোলুচ্চির ‘দ্য ড্রিমার্স’।
১৯৬৮ সাল। New Wave। ফ্রান্স তথা বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসে
কয়েকটা উজ্জ্বল নাম। অরাজকতা। ‘সিনেমাথেক’ থেকে বিতাড়িত প্রতিষ্ঠাতা হেনরী
ল্যাঙ্গয়। কারখানা লকআউট। স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে প্যারিস আসা মার্কিন
ছাত্র ম্যাথুর সাথে আলাপ যমজ থিও আর ইসাবেলের। স্থান সিনেমাথেকের বাইরের এক ছাত্র
সমাবেশ। সিনেমার প্রতি ভালবাসা, রাজনৈতিক, দার্শনিক বিষয়ে আগ্রহ – তিনজনের মধ্যে
বন্ধুত্ব হতে সময় লাগেনি।থিও আর ইসাবেলের বাড়িতে নিমন্ত্রিত ম্যাথুর সাথে তাদের
কবি বাবার আলাপ হয় , যিনি ভিয়েতনামীদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদে সই দিতে অস্বীকার
করেন(কবির প্রতিবাদ কবিতায়)।
থিও আর
তার বাবার মতানৈক্য , ম্যাথুর খাবার টেবিলে বসে Cosmic Harmony ‘আবিষ্কার’, মাকে লেখা ম্যাথুর
চিঠি- সবকিছুর মধ্যেই তৎকালীন এক প্রচণ্ড টালমাটাল আর সম্ভবনাময় পরিস্থিতির খোঁজ
পাওয়া যায়। বাবা মার অনুপস্থিতিতে থিও আর ইসাবেল তাদের বাড়িতে থাকার আহ্বান জানায়
ম্যাথুকে। তিন বন্ধু এক হওয়ার পর তর্ক চলতে থাকে তৎকালীন রাজনীতি, সঙ্গীত ও
সর্বোপরি সিনেমা নিয়ে। আমাদের অজান্তেই কখন যেন মাও সে তুং , জিমি হেন্ড্রিক্স,
গোদার, এরিক ক্ল্যাপ্টন, বেলমেন্ডো এক একটা চরিত্র হয়ে যায়। স্বপ্নরাজ্যে
বিচরণকারী তিনবন্ধু এক বিকেলে ‘Bande a part’ এর
ল্যুভঁ দৌড়ের রেকর্ড ভাঙে । ইসাবেল এক সন্ধ্যায় প্যারিসের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে
নিজের মধ্যে গোদারের ‘Breathless’ এর
সেই New York Herald
Tribune
পসারিণীটিকে খুঁজে পায়। ম্যাথু আর থিও দুম করে তর্ক জুড়ে দেয় চ্যাপলিন আর কিটনকে
নিয়ে।
এর মধ্যেই
বার্তলুচ্চি তাঁর সেই প্রিয় থিম – যৌনতাকে নিয়ে এসেছেন সুকৌশলে। ম্যাথু এক ভোরে
ইসাবেল আর থিওকে এক শয্যায় নগ্ন অবস্থায় আবিষ্কার করে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে Incestuous মনে হলেও আদতে তা নয়। পরিচালক
এখানে বোঝাতে চেয়েছেন যে থিও আর ইসাবেল একে অপরের যৌনতাকে ও নগ্নতাকে
সুস্থস্বাভাবিকভাবে নিয়েছে (যদিও তা বাবা-মার অজান্তে)।তাই পরস্পরের ঠোঁটে অবলীলায়
চুম্বন এঁকে দেওয়া তাদের পক্ষে স্বাভাবিক।এরপর সিনেমা কুইজ আর যৌনতাকে মিশিয়ে এক
অদ্ভুত খেলা শুরু হয় তিনজনের মধ্যে। খেলার ফল-
মার্লিন ডিট্রিখের পোস্টারের উপর থিওর হস্তমৈথুন এবং অবশেষে ম্যাথু আর ইসাবেলের
যৌনসঙ্গম।
গল্প ধীরে
ধীরে মোড় নেয় ম্যাথু-ইসাবেলের প্রেমে, থিও-আর ম্যাথুর ছোটো ছোটো মতানৈক্যে। ম্যাথু
ধীরে ধীরে আবিষ্কার করে থিও আর ইসাবেল আসলে একটি মানুষেরই দুটি অর্ধেক। এমতাবস্থায়
গল্পের শেষ মোচড়টি আসে যখন থিও ইসাবেলের বাবা-মা তিনজনকে এক শয্যায় নগ্ন অবস্থায়
আবিষ্কার করে । ইসাবেল তা বুঝে ফেলে আত্মহত্যার
চেষ্টা করে মারণগ্যাসের সাহায্যে। মুক্তি আসে বাইরে থেকে উড়ে আসা ইঁট হয়ে। বাইরে
তখন ছাত্রদের আন্দোলন চলছে।
শেষ দৃশ্যে
রাস্তায় দাঁড়িয়ে ম্যাথু থিও-ইসাবেলকে বোঝানোর চেশটা করে যে হিংসার পথ আন্দোলনের পথ
হতে পারে না। ব্যর্থ হয়। ম্যাথু পিছনে হাঁটা দেয়। সামনে থিও ইসাবেলের হাত ধরে
পুলিসের দিকে মলোটভ ককটেল ছোঁড়ে। মারমুখী পুলিস এগিয়ে এলে ছাত্র-ছাত্রীরা পিছু
হটে। পথে পড়ে থাকে কয়েকটা ইঁটের টুকরো।
|
|
ভালো আলোচনা হয়েছে।
ReplyDelete