ডiary : গালুডি ৪ : মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
|
|ধারাগিরি থেকে ফিরে তন্ময় দেবরাজ অনির্বাণ গেল খেতে। আমি সৌরভ গুড্ডু
ঘুমাতে। ঘুমিয়ে উঠলাম আটটা। ক্ষিদে পেয়েছে। বেরোলাম। দেবরাজ বলল, ওরা দারুণ ধোসা
খেয়েছে। আহা শান্তি পেলাম। এতোক্ষণে দেবরাজ একটা কথা বলেছে যাতে কেউ বিরক্ত হয় নি।
সুতরাং চল। সকালের ঐ ভাত সাথে ব্যঞ্জন আমাদের স্বর বর্ণহীন করেছিল। নতুন উদ্যমে
রাস্তায় নামলাম। রাত আটটায় সব অন্ধকার। দোকানপাট বন্ধ প্রায়। খাওয়ার দোকান-গুলিও। বুঝলাম
ধোসা ধসে গেছে। খুঁজতে খুঁজতে এক এগরোলের দোকান পেলাম। কবি সুকান্ত এই দোকানে
খেয়েছিলেন। তাই লিখতে পেরেছিলেন, পুর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসান রুটি। ওরকম জিরো ফিগার
এগরোল আমি আগে দেখি নি। দুটো খেয়েও পেট ভরল না। এগরোল বিক্রেতার অষ্টত্তর শতনাম
জপছি মনে মনে। সৌরভের মুখ দেখে বোঝা যায় না। গুড্ডুর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে, অন্য
কোন কিছু মাথায় ঘুরছে। গুড্ডু অমায়িক মুখে তার দিকে এগিয়ে গেল। ভালো ছেলে ভালো ছেলে মুখ করে জিজ্ঞেস করল, দাদা
এখানে বিলিতি মদের দোকান কোথায়? আমাদের শালা খিদেতে পেট চো চো আর ও বিলেতি মদ ! ঠিকই
বলে ওর পাড়ার বন্ধুরা। ওর জামায় বিং হিউম্যান এর বদলে পেঁচো মাতাল থাকা উচিত ছিল।
DIARY
|
AUTHOR
|
সেদিন আর্জেণ্টিনার খেলা। সৌরভ গুড্ডুর মতে খেলা মিস করা, মেয়ে মিস করার
চেয়েও বেশি পাপের। প্রথমে ঠিক করল নেট কার্ড ভরাবে। সেটা দেবরাজের ডঙ্গলে ভরাবে।
সেটা ল্যাপটপে দিয়ে ইউটিউব। একটা দোকানে গেলাম নেট কার্ড ভরাতে। সে কি যে বাংলা
হিন্দি মিশিয়ে বলে। কার্ড ভরা হল গুড্ডুর মোবাইলে। প্রকৃত অর্থে যাকে ফোন বলে। কথা
বলা আর এস এম এস করা ছাড়া কিছুই হয় না। তাই আদৌ রিচার্জ সাকসেসফুল হল কি না সেটা
বাড়িতে না গিয়ে বোঝা যাবে না। হোটেলে ফিরে দেবরাজ ডঙ্গল দিল। গুড্ডু স্মার্টলি
জানাল,একি তোমার ডঙ্গলে সিমের স্পেস এতো বড়! দেবরাজ কাঁচু মাচু করে বোঝাতে চাইল,
সিম তো এই সাইজেরই হয়। গুড্ডু - ধুর এই দেখ। আমরা দেখলাম, একটা সিম, চারপাশ দিয়ে
কেটে ছোট করা। ওর আগের কি একটা মোবাইল ছিল তার সাইজে সিম হয় না। তাই কেটে নিয়েছে। বুঝলাম
পুরো টাকা জলে। হোটেলে টিভি ছিল। সেখানেই খেলা দেখতে বসল। আমি সৌরভকে জিজ্ঞেস
করলাম হোটেলে টিভি ছিল জানতিস না? সৌরভ টিভি থেকে মুখ না ঘুরিয়ে বলল, “জানতাম। তবে
একটা ব্যাকাপ রাখা ভালো।” খেলার হাফ টাইমে ভদকা - সেভেন আপ। গুড্ডুই বরাবর দায়ীত্ব
নেয় পেগ বানানোর। ওর মতে পেগ বানানোর জন্য নোবেল থাকলে ওই পেত।
কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। ঘুম ভাঙ্গল দুটোয়। পাশ ফিরে শুধু গুড্ডু
ঘুমচ্ছে। ঠ্যালা
দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি রে সৌরভ কই? –“গাণ্ডু আমিই সৌরভ।” ভালো করে দেখলাম। হ্যাঁ
এটা তো সৌরভই। মদ খেলেই ‘অ’* কি রকম বিবেকানন্দ ভাবতে থাকে
নিজেকে। বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে সোজা টানটান ঘুমায়। সে রকমই ঘুমচ্ছে। - তাহালে গুড্ডু? –ও খেলা দেখছে। বাইরে এসে দেখি
ঘুটঘুটে অন্ধকার। কেউ কোত্থাও নেই। সারা বাড়ি খুঁজে গুড্ডু নেই। আমার তখন দো
প্যায়ের কে বিচ মে যো হ্যায় ভো মাথায় উঠে গেছে। ব্রেকাপের বিরহে বিবাগী হয়ে গেল না
তো গালুডি এসে! টলমান পায়ে এদিক ওদিক ঘুরেছি। হোটেলের মধ্যে এতো অলিগলি। চাঁদের
আলো। একটা কুকুর দূরে ঘুমচ্ছে। তার পাশে ছাদের রেলিঙ। তার ওপরে একটা মানুষ। ছাদের
রেলিং-এ কাত হয়ে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। পাশ ফিরলে সোজা নীচে। সৌরভকে ধাক্কা মেরে বললাম,
ওঠ ভাই। -ধুর বাল। - আরে গুড্ডু রেলিঙে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। - তো ঘুমক না। - আরে পাশ
ফিরলে মরে যাবে। - হ্যাঁহ মরে যাবে! দু জনে মিলে ছুটলাম ছাদে। গুড্ডু অমায়িক। এরকম
বিভৎস ভাবে এতো নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে! চ্যাংদোলা
করে নামাচ্ছি যখন কোন হুঁশ নেই। বিছানায় শুইয়ে দিচ্ছি, গাণ্ডুটা এবার কথা বলল, “আমাকে
রাজশয্যা ছেড়ে কেন মাটিতে শুইয়ে দিলে!”
পরের দিন সকালে ভদ্র ছেলের মত দুটি মাতাল। বিবেকানন্দ এবং আলেকজণ্ডার ফিরে
এসেছে সৌরভ গুড্ডু হয়ে। আমরা যাচ্ছি সুবর্ণরেখা। বাকি তিন ঘুমে অচেতন ভগত। গুড্ডু বলে চলেছে, স্বর্ণালি বালুরাশি চারিপাশে চিকচিক করছে সূর্যের
কিরণে। তারই মাঝে সুবর্ণ রেখা। বুঝলে মৃগাঙ্ক দা। ভিসুয়ালাইস করতে করতে চলেছি। যেন আমি
মিশরে। গুড্ডু বলে চলেছে, পাশে খেজুরের
বন। তুমি যেন এক মরুদ্যানে। শুধু উটটুকুই নেই। জাস্ট চোখ বন্ধ করে ভাবো একবার। আমি ভেবে চলেছি।
যেকথা আমি ক্যাটি ছাড়া আর কাউকে বলি নি। ক্যাটি আমার রাশিয়ান প্রেমিকা। একজন
বিদেশি প্রেমিকা না থাকলে কবিদের চলে! ঠাকুর
আমার গুরু। ক্যাটিকে বলেছি, তুমি জাতিস্মরে বিশ্বাস কর? আগের জন্মে তুমি ছিলে এক
মিশরীয় শিল্পীর মেয়ে। আমি তার ছাত্র। আমাদের প্রেম হয়। আমি রোজ দেখি এই স্বপ্ন।
প্রথম যখন সৌরভের প্রোফাইলে তোমাকে দেখি, অবাক হয়ে যাই। সেই মুখ সেই চোখ আর যেন
কিসব বলে ঐ সব সেই সেই। সে বলল, আমি পাতি গুল মারছি। কষ্ট হল খুব কষ্ট। ইচ্ছে
হচ্ছিল শুনিয়ে দি দু লাইন কবির সুমন ট্রান্সলেট করে। কি বুঝবে জাতীস্মরের মানে।
ব্যাটা কমিউনিস্ট। “আমার মনে হয় আমি চীন বা জাপানে ছিলাম।” ক্যাটি লিখল পরের
চ্যাটে। দীর্ঘশ্বাস ফেলব না ছাড়ব বুঝতে পারলাম না। জাতিস্মর একই সংগে কনফিডেণ্ট
এবং অপশানাল- আমি এই প্রথম দেখলাম। শ্রীজিত কি জানে!
লোককে জিজ্ঞেস করে করে গুড্ডু শেষ মেশ নিয়ে এসেছে তার স্বপ্নের নদীর কাছে।
আমি অভিভূত। বললাম, কালকে রাত্রে একটা ভুল করেছি।
-কি?
–তোকে রাজশয্যা থেকে মাটিতে না
নামিয়ে খাদে ঠেলে দেওয়া উচিত ছিল। এটা সুবর্ণ রেখা! দেখে মনে হচ্ছে কনস্ট্রাকশানের
কাজ। ক্যানেল খুঁড়েছে। তাতে বৃষ্টির জল জমেছে।
- তাহালে নদীটা কোথায় গেল?
“আমার মনে হয় ওই পাঁচিলের ঐ পাশে।
দেখে মনে হচ্ছে মাঝে একটা বিরাট গ্যাপ রয়েছে। দূরের গাছপালাগুলো দেখেছিস।” সৌরভ
বলল। বিবেকানন্দ তার মানে এখনো ছেড়ে যায় নি। এগিয়ে গেলাম। চারপাশ সবুজ। দূরে
পাহাড়। খেজুরের গাছের সারি। মাঝে মাঝে পাথরের টিলা। বয়ে যাচ্ছে সুবর্ণ রেখা। জলের
পরিমাণ কম। ভাটা বোধয়। সিড়ি দেখতে পাচ্ছি। তার পাশ দিয়ে খাড়াই হয়ে নেমে গেছে নদীর
মধ্যে কংক্রিটের দেয়াল। সিড়ি নেমেছে নদীতে। কিন্তু আমাদের তো মরুদ্যানে যেতে হবে। সুতরাং গুড্ডু দেয়ালের
গা বেয়ে পা বাড়াল। অনায়াসে গিয়ে নামল সেই মরুদ্যাণে। আমরাও ওর পথ অনুসরণ করতে গিয়ে
বুঝলাম, কাজটা মোটেই সহজ না। খাড়াই বড্ড বেশি। সামান্য ব্যালেন্স হারালে সোজা
পাথরে গিয়ে মাথা ঠুকবে। ভাগ্য ভালো থাকলে হাড় ভাংবে কিছু। খারাপ হলে ক্যাটির সাথে
এ জন্মে আর কথা হবে না। পরের জন্মে হলেও হতে পারে। ও তখন প্যাঙ্গুইন আমি হয় তো শিল
মাছ।
জায়গাটা সত্যি সুন্দর। সবুজ নরম ঘাস। ভিজে। সাদা পাথরের বড় বড় চাঁই মাঝে
মাঝে। দূর পর্যন্ত চলে গেছে এই দৃশ্য। শুধু মাঝে মধ্যে কুকুরের গু। ভারতে ঐটুকু
অতি তুচ্ছ ঘটনা। অন্তত গু্ডডুর কাছে। মোহাচ্ছন্ন মুখ করে সে শুয়ে পড়েছে। এর মধ্যে তন্ময় দেবরাজ এসেছে। অনির্বাণ
ঘুমচ্ছে গেস্ট হাউসে। নানা গল্পের মধ্যে জানতে পারছি, গুড্ডু আর সৌরভের সাথে দারুণ
দোস্তি জমেছে আমাদের পাশের রুমের তিন চল্লিশোর্ধ মানুষের। তারা মদ্যপ অবস্থায়
সুনীল শক্তি জয় শঙ্খ – যেন বন্ধু তাদের। একবার নাকি সুনীল গাঙ্গুলির বাড়িতে লেখা
আনতে গেছেন। সুনীল বাবু বিদেশী সুরা নিয়ে বসে। এক পেগ বানিয়ে এগিয়ে দিলেন তার
দিকে। “নাও খাও”। নাম তো জানি না, ধরা যাক রামবাবু। রাম বাবু জানালেন, আমি তো
এভাবে শুধু শুধু মদ খেতে পারি না। মানে চাট। “চাট! নো প্রবলেম।” গিন্নিকে ডেকে
বললেন, “কি রান্না হয়েছে?” গিন্নি জানালেন, ডাল সেদ্ধ। ভাত বসিয়েছেন। “বাহ। এক
বাটি ডাল দিয়ে যাও। ডালের মত চাট হয় না।” গল্প চললে গল্প এগোয়। গল্প থেকে অনেক
সত্যি ঘটনা আসে। এভাবেই গুড্ডু বলতে থাকে, সে আর সত্যেন, বন্ধু হয় ওর। আমি চিনি।
ওরা এক রাতে ঠিক করেছে বাইকে করে কলকাতা ঘুরবে। যখন ওরা এয়ারপোর্টের দিক ধরেছে
দমদম থেকে বেরিয়ে। দ্যাখে একটা মানুষ, হাত দেখাচ্ছে। দাঁড়িয়ে পড়ে ওরা। লোকটা কাছে
এসে বলে তাকে একটু এগিয়ে দিতে। কোন গাড়ি পাচ্ছে না। ওরা উঠিয়ে নেয়। লোকটার সাথে
একটা বড় ব্যাগ। সেটা গুড্ডু আর লোকটার মাঝে রয়েছে। তার সাথে অনেক কথা হচ্ছে। খুব ভালো
মানুষই মনে হচ্ছে ওদের। খুব ভদ্র। প্রথম থেকেই গুড্ডুর পিঠে খোঁচা লাগছিল। ব্যাগের ভেতর কিছু ভারি জিনিস
রয়েছে। প্রথমে জিজ্ঞেস করতে বিব্রত বোধ করছিল। আলাপ জমে যাওয়ায় জিজ্ঞেস করল, দাদা
ব্যাগে কি আছে? লোকটা একটু গম্ভীর হয়ে বলল, ল্যাওড়া হ্যায়। ল্যাওড়া লেগা। গুড্ডু
সত্যেন অবাক। এতো ভালো ভদ্র মানুষ হঠাৎ এই ভাষা! ওরা আর ঘাটাল না। কিছুক্ষণ পর
লোকটি নিজে থেকেই আবার কথা শুরু করল। আবার স্বাভাবিক কথা বার্তা। কিছু পরে গুড্ডুর
পিঠে জোড়েই লাগল খোঁচা। সে করুণ মুখে জানতে চাইল। সেই এক উত্তর, ল্যাওড়া হ্যায়
ল্যাওড়া লেগা। কিছুটা এগিয়ে লোকটা বলল, সামনের একটা এটি এম থেকে টাকা তুলবে। একটু
দাঁড় করাতে। লোকটা এ টি এম এ ঢুকতে সত্যেন বলল, ল্যাওড়া বের করছি। চল ব্যাগটা নিয়ে
পালাই। মনে হয় কিছু গণ্ডগোলে জিনিস আছে। আগে নাগের বাজার মোড়। কি আছে দেখে পুলিশ।
সেই কাজ। নাগের বাজার এসে
থামা। ব্যাগ খুলে কি দেখি ... গুড্ডু
থামল। আমি বেশ উত্তেজিত হয়ে বললাম কি দেখলি? গুড্ডু – ল্যাওড়া হ্যায় ল্যাওড়া লেগা।
-অ্যাঁ? – ল্যাওড়া হ্যায় ল্যাওড়া লেগা। কোন জানোয়ার ইনস্ট্যাণ্ট এরোকম ঢপ বানাতে
পারে! বাকিরা তখন হাসছে। আমি ভাবছি, এই
গল্প হতেই পারত গুড্ডুদের ছাদে বা সৌরভের মেসএ। কিন্তু গালুডির স্মৃতি হয়ে গেল। |
* সৌরভ কবিতা লেখে। আর 'ও' কে 'অ' লেখে কবিতায়।|
* সৌরভ কবিতা লেখে। আর 'ও' কে 'অ' লেখে কবিতায়।|
Chomotkar laglo ...
ReplyDeleteধন্যবাদ :)
ReplyDeletetrip ta mojar chilo.but tumi ato valo kpbita likhe ato okhadyo golpo lekho ki kore dekhe abak hoe jai..ato baje to amio kobita likhina..:D
ReplyDelete