হারাতে হারাতে একা ( কিস্তি ১৭ ) : বারীন ঘোষাল


                          
     সংশোধনাগারের গেটে কিছুক্ষণ বিমূঢ় দাঁড়িয়ে থাকার পর হঠাৎ দম ফাটা হাসিতে আমাদের সম্বিত ফিরলে দেখি আমাদের মধ্যে পরিমলই পুরো ব্যাপারটাকে মস্করা ভেবে উড়িয়ে দিলো সর্বপ্রথম
    --- আর কখনো মেয়েদের জন্য পাগলামি করবি বাঞ্চোৎ ? দারুণ দিয়েছে। কী খিটকেল মাইরি ! কোথায় গেলেন স্যার ? একটা প্রণাম করব যে। দেখ না বারীন, একটু ওদিকে দেখ। আর ভীম, তুই এদিকটা।
    --- চল তো, খেয়ে নেয়া যাক। ভীষণ খিদে পেয়েছে। তোদের পায়নি ? তিনটে বাজে। তারপর আবার পথ। যা করতে বেরিয়েছি। মাল খাওয়া, মেয়ে দেখা, এসব তো জলপাইগুড়িতেই ছিল। তাহলে বেরোলাম কেন ? আমি বলি।
    --- গুরু রাগিস না মাইরি। রাস্তায় একটু দুষ্টুমিও করব না ? ক্লাস নাকি ? ভীম বলে।
     খেতে বসে ডাল ভাত পেঁয়াজ লঙ্কা বেগুন ভাজা। তোফা। পরিমল মাছ ভাজা খাওয়াতে চাইলো। আমি বললাম --- নোলাকে বশে রাখতে দে। আচ্ছা, ধানের ক্ষেতকে ধানজঙ্গল বলে না কেন ? বা ডালজঙ্গল। দেখেছিস, যেখানে বড় বড় গাছের জঙ্গল সেখানে ধানগাছ হয় না। এত নদী নালা বলে পাটের জঙ্গল খুব। এখানে কত পাট হয় দেখেছিস ?
    --- আবে খা তো। মেলা বকবক করছিস। মাছ না নেওয়ায় পরিমল একটু অসন্তুষ্ট।
    --- হাঃ হাঃ হা... হেসে উঠলো একজন। পাশের টেবিলে একটা মাঝবয়সী লোক ভাত খাচ্ছিল, সে-ই হেসেছে। আমি সেদিকে চাইতে বলল
    --- ভাল বলেছেন। ধানজঙ্গল, ডালজঙ্গল। বাঃ ! আপনারা শুনেছেন কখনো মুসুর ডালের মেঘ, মাছের ঝোলের মেঘ ?
    আমি অবাক হয়ে বলি --- কই, না তো ! সে আবার কি ?
    --- ভাবুন না। আছেন একজন কমলকুমার। তিনি লিখেছেন
    --- তাই নাকি ? ভীম আর পরিমল আমাদের কথায় বোর হচ্ছিল। ভীম বলল --- আপনিই সেই পদমপ্রসাদ নাকি ?
    --- পদমপ্রসাদ ! হাঃ হাঃ হাঃ... আই গট ইউ। আচ্ছা রসিক ছেলে তো আপনারা। তা কোথায় চলেছেন ? চায়ের জঙ্গল দেখেননি ? কোথায় থাকা হয় ? সাইকেলে ?
    --- আমরা জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনীয়ারিং-এর ছাত্র। হোস্টেলে থাকি। দেশ দেখতে বেরিয়েছি।
    --- উরি ব্বাস ! ডেঙ্গুয়াঝার ? সেতো চায়ের রাজ্যঅত বড় বাগান, চা-গাছের জঙ্গল এদেশে নেই। কোন ইয়ার ?
    --- ফোর্থ ইয়ারে উঠব। আপনি আমাদের কলেজ দেখেছেন ?
    --- হ্যাঁ, দেখেছি বইকি। আমার একটা ইন্টারেস্ট আছে। আমার মেয়েটাকে ঐ কলেজে ভর্তি করতে চাই। চাঁপা এবারই ফাইনালে। জয়েন্টের জন্য তৈরি করতে হবে। তা আপনারা তো দেশ দেখতে বেরিয়েছেন। চলুন না আমার বাড়ি। আমি মথুরাবাগানে কাজ করি, থাকি। এই মাইল দশেক। ঘন্টা দুয়েক লাগবে সাইকেলে। আমারও সাইকেল। চলুন, কথা বলতে বলতে চলে যাবসন্ধের মধ্যে পৌঁছে যাবো। রাতে আমার ওখানেই খেয়ে দেয়ে শোবেন খন। আমার ভাল লাগবে। চলুন প্লিজ। পরামর্শ দেবেন। চাঁপার সাথে আলাপ করে জেনেও নেবেন তার কি কি টিউশন প্রয়োজন হবে।
    --- আহাহা, অমন করে বলতে হবে না। আপনার মেয়ের উপকার করতে আমাদের ভালই লাগবে। কী বল বারীন ? পরিমল বলল। তার আগ্রহ আমাদের জানা। ভীম পরিমলকে আড়ালে চিমটি কাটতে সে বলল --- কী করিস। খেয়ে দেয়ে আমরা পদমপ্রসাদের সাথে চললাম। আমি বলি --- এই যে দেখছেন পরিমলকে, ও দারুণ কোচিং করে। কথা বলে নেবেন।
    --- তাই নাকি ? নমস্কার। আপনার নাম কি ভাই ?
    --- পরিমল চক্রবর্তী। আমাকে তুমি বলুন।
    --- ব্রাহ্মণ ? চমৎকার। বাঁচা গেল। বলে পদমপ্রসাদ পরিমলের পাশাপাশি গল্প করতে করতে সাইকেল চালাতে লাগল।  বাঁচলাম। ওদের আগে যেতে দিয়ে আমি সবচেয়ে পিছনে। ধুপগুড়িতেই দেখলাম সূর্য সেন কলোনি। টিনের চাল দেয়া বাড়ি, ছোট ছোট একচালা দোচালাই বেশি, আটচালাও দু একটা, সরু নোংরা রাস্তা গলি, বিদ্যুৎ নেই, টেলিফোন নেই, নালা নেই, বাচ্চারা খেলছে, পুরুষরা মাঠে কাজ করছে, ধান, ভুট্টা, পাট, কত কিছুএরা নির্ঘাৎ চট্টগ্রামের রিফিউজি। ধুপগুড়ি ছাড়িয়ে কিছুটা এগোতেই চা বাগান শুরু হল। দুপাশে, বুক সমান উঁচু গাছ। ডেঙ্গুয়াঝারের তুলনায় মাপে সামান্য, ছোট ছোট। নাম আর মনে নেই চা বাগানগুলোরগোটা বিশেক পেরিয়ে একটা কারখানা দেখা গেল, চায়ের গন্ধ আসছে, পদমপ্রসাদ পেচ্ছাপ করতে থেমে বলল --- চা-এর কারখানা। দেখেছেন কখনো ?
     কারখানা থেকে চা বেরিয়ে আসছে ভাবতেই কেমন লাগে। পরে অবশ্য নানা জায়গায় এই কারখানা দেখেছি, গা সওয়া হয়ে গেছে। প্রচুর পাখি উড়ে যাচ্ছে এদিক ওদিক, ছোট উড়ান। চড়াই শালিক কাক মাছরাঙা ছড়াছড়ি। রাস্তার ওপর মুরগী, হাঁস, গরু ছাগল শুয়োর অহরহ। গাড়ি কম। সাইকেল আরোহী অনেক। কোথায় স্কুল আছে। ছেলেমেয়েরা কারো ব্যাগ, কেউ হাতেই বইখাতা নিয়ে ফিরছে।  আমাদের পা ঘুরেই যাচ্ছে। ক্রমে পায়ের থেকে চোখ কান বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল, মনও। ভাবছি। এদেশে এত শাল গাছ কেন ? আমাদের দেশে, জামশেদপুর আর দক্ষিণ বিহারে লক্ষ লক্ষ শাল গাছ, জঙ্গল ভরা, সেখানে তো চা গাছ হয় না। ওখানকার লোকদেরই ধরে নিয়ে এসে এখানে চা বাগানে লাগানো হয়েছে। এই চা গাছ ছাড়া বাকি সব ওদেশের মতো। একটা ঘুঘু রাস্তায় বসে আছে। পাশ কাটিয়ে গেলাম। ক্রমে আমরা সারদাপল্লী, মালাইগ্রাম, গাদাং, পেরিয়ে শালবাড়িতে এসে পড়লাম। ঘড়িতে দেখি দুঘন্টা হয়ে গেছে। পাঁচটা প্রায়। বলি --- পদমবাবু, আর কতদূর ? চলুন চা খাই। হাঁ হাঁ করে উঠল পদমপ্রসাদ। --- আরে এখানে না, এখানে না। আরো একটু এগোলে ফালাকাটায় পৌঁছে  যাবো। সেখানে চা খাওয়া যাবে। বোঝা গেল। বাড়িতে কোচ নিয়ে যাবার তালে পদমপ্রসাদ গুল মেরেছে দশ মাইল বলে।
    ফালাকাটা শুনেই মনে পড়ল ময়নাগুড়িতে বাসে লেখা ছিল। তাহলে আরো একটা ফালাকাটা আছে। দেখা যাক। হিসি করে সিগারেট। শেষ করে আবার সাইকেল। পদমপ্রসাদ বলল --- যেতে যেতে খাওয়া যায় না ?
    --- উঁহু। গুরুজীর বারণ আছে। আমার যোগাগুরু বলেছেন পরিশ্রম করার সময় সিগারেট খেতে নেই। ওটা রিল্যাক্স করে খেতে হয়। পদমপ্রসাদ বলল --- আপনার কোন স্ট্রিম ভাই ? আমি --- ইলেকট্রিকাল। পদম --- তাই এত বুদ্ধি।
    ব্যাটা ইয়ার্কি মারলো কিনা বোঝা গেল না। যাই হোক, আরো আধঘন্টা সাইকেল চালিয়ে আমরা ফালাকাটায় এসে পড়লাম। পরিমল একদম তাজা। মনের মতো টপিক পেলে ওর ফুর্তিই আলাদা। চলতে চলতে অনেক ছোট খাটো নদী নালা পেরিয়ে এসেছি। এবার একটা বড় সড়ো নদী দেখলাম, পেরোতে গিয়ে নদীটার নাম জানতে চাইকি একটা বলল যেন। ধ্যাৎ ! নদীর নাম, পাখির নাম, মানুষের, ফুলের নাম ভুলে গেলে কী খারাপ লাগে। যাক গে। প্রতিবার অবাক হবার জন্য সেটাই ভাল। আমার তো আবার অবাক হতেও খুব ভাল লাগে। হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আঙরাভাসা। কী সুন্দর নাম না ? গ্রামের লোকেরা কি ভাল নাম রাখে। আঙরাভাসা। আগুন ভেসে যায় এই নদীতেওরা এগিয়ে গেছে। আমি খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম পুলের উপর।  সুবর্ণরেখার কথা মনে পড়ল আমারএই যে এদেশ দেখতে দেখতে আমার নিজের দেশের কথা মনে পড়ছে, প্রেম জাগছে, মিল খুঁজে পাচ্ছি আমি। ভীম তখন থেকে একলা একলা চালিয়ে যাচ্ছে। ওকে একটু সঙ্গ দেয়া উচিত আমার।
    ভীমের পাশে এসে বললাম --- কিরে দাজু ? আমার তো হামরো জামশেদপুর মনে পড়ছে। তোর হামরো খুর্শিয়াং মনে পড়ছে না ? মাইরি, নেকস্ট ট্রিপ টু খুর্শিয়াং। তোর বাড়িতে থাকব।
    --- ঠিক আছে। তবে পরিমল গেলে হবে না। আমার বোন আছে বাড়িতে। আমি দুনিয়া কাঁপিয়ে হা হা হা হা করে হেসে ফেটে পড়লাম। --- শালা, দিয়েছিস মাইরি জব্বর। পরিমল আর পদম দাঁড়িয়ে গেল। --- কী ব্যাপার রে ? জিজ্ঞেস করল পরিমল। --- ভেলভেট পোকার চাটনি খেয়েছিস কখনো ? ভীমের বাড়িতে হয়। আমি যাবো খেতে। তুই যাবি ?
    --- অ্যা ! পরিমল নাক শিঁটকালো। আমি নেই বাবা। আমি ভীমের দিকে চেয়ে দেখি ও আশ্বস্ত হল।
    --- ভেলভেট পোকা ? চাটনি খায় নাকি ? টক হয় বুঝি ? আমাদের ওখানে বিস্তর আছে। চেখে দেখতে হবে তো। ভেলভেট পোকার ট্রেন দেখেছো ? কী সুন্দর জুড়ে লাইন দিয়ে চলতে থাকে। দেখাবো। শুনে টুনে পরিমল নিশ্চিন্ত হল। ছোটবেলায় ভেলভেট পোকা ধরে দেশলাই বাক্সে পুরে রাখতাম। লাল ভেলভেটের মতো চামড়া, ছোট পোকা, গুড়িগুড়ি হাঁটে, ডানা নেই, কি সুন্দর লাগতো হাতের চেটোয় তুলে নিতে। এখন তো বানিয়ে বানিয়ে চাটনির কথা বললাম। পদমপ্রসাদ ভেলভেট পোকার চাটনির কথাটা বিশ্বাস করেছে। দেখা যাক ওকে চাটনি খাওয়ানো যায় কিনা।
    ফালাকাটায় এসে পড়েছিবেশ বড় জায়গা। পথে জয়চাঁদপুর, ভুতনির ঘাট আর কত চা বাগান, লেবার কলোনি পেরিয়ে ফালাকাটা বাস স্ট্যান্ড। একটা বোর্ড দেখলাম, লেখা আছে -- ভাটিখানা বার। আরে শালা ! এখানে বার ! পদমজীকে বললাম বারে যাবার ইচ্ছে। সে আমাদের নিরস্ত করলো বারটা আপকামিং বলে। একটা দোকানে বসে চা খাওয়ালোবিদেশ বিভুঁই,       পদমপ্রসাদকে চটানো যাবে না, যখন তার বাড়িতেই আমরা রাতের অতিথি হচ্ছি। আবার শুরু হল পথ চলা। অন্ধকার হয়ে গেছে। রাস্তায় আলো নেই। পথে কারো বাড়িতেই বিদ্যুৎ নেই। হেরিকেন আর লম্ফ, কুপি ইত্যাদি জ্বেলে বাড়ির কাজ সারছে লোকজন। বাচ্চারা পড়াশুনো করছে। এরকম তো আমরাও করেছিলাম ফার্স্ট ইয়ারে শান্তিপুর মেসে। কিন্তু সেখানে রাস্তায় আলো ছিল। এখানে, লক্ষ্য করলাম, পথের দুধারের ঝোপ ঝাড়ে জোনাকিরা পিট পিট করছে। মোটামুটি বোঝা যাচ্ছে মাঝের জোনাকপথটি। দুই পাশের সেই পিটপিটানির মধ্য দিয়ে সাইকেল চালাতে ক্রমশ অভ্যস্ত হয়ে গেলাম। এর পর থেকে ডুয়ার্সে আমি কখনো আলোর অভাব বোধ করিনি। আমরা কিন্তু পুব দিকে যাচ্ছিলাম শালবাড়ির পর থেকেই। ফালাকাটা ছাড়িয়ে আর কিছু চোখে পড়ছিল না দুপাশে। না বাগান না জঙ্গল।
    একঘন্টা সাইকেল চালানোর পর আমরা এসে পড়লাম মথুরাবাগানে। এখানে বাগানের ভিতর কয়েকটা বাড়িতে কারেন্ট আছে মনে হল। পদমপ্রসাদের বাড়িতে আছে। সাইকেলগুলো আমরা তুলে দিলাম তার গ্যারেজে। একটা ল্যান্ডমাস্টার গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞেস করি --- গাড়ি থাকতে সাইকেলে এতদূর থেকে ?
    --- এই তোমাদের সাথে দেখা হবার ছিল, তাই। দেখো গো কারা এসেছে। এসো এসো ভাই, এদিক দিয়ে। আমরা জুতো ছেড়ে পোটলা হাতে ঘরে ঢুকলাম। চাঁপা এল। ডাগরটি। সাদাসিধে। পরিমলকে বলল --- এই গিয়ে চাঁপা। তোমাকে বলছিলাম না, পড়াশুনায় চটপটে, তবে অঙ্কে একটু কাঁচা। নেরে মা, ইনি তোকে জয়েন্টের ব্যাপারে দেখিয়ে বুঝিয়ে দেবেন। ইঞ্জিনীয়ারিং করছেন। এরা সবাই। ভাগ্যিস দেখা হয়ে গেল ধুপগুড়িতে, সেখান থেকে টেনে এনেছি। কই তোর মা কোথায় গেল ? তাকে একবার ডাক। তোমরা বসো ভাই। চাঁপা আর তার বাবা ভেতরে চলে গেল। বসার ঘর। দুটো চেয়ার আর একটা তক্তাপোশ। তাতে কিছু বই খাতা ছড়ানো। আমি আর ভীম চেয়ারে বসলাম। পরিমল তক্তাপোশে বসে বই খাতা ...
    --- গা হাত পা ভেঙ্গে যাচ্ছে পরিমল। তোর মাগীবাজি বেশিক্ষণ চালাস না। আর, আমাদের সামনে পড়াতে বসিস না। ও চোখ পাকিয়ে বলল --- তোদের ঝাঁট জ্বলছে কেন বে ?
    --- নারে। ঘুম পাচ্ছে। আর তুই তো মোটে একঘন্টা পাবি। কি আর পড়াবি। একটু আলু কর, ছেড়ে দে।
    --- পড়াশুনো নিয়ে ইয়ার্কি মারিস কেন ? মিসেস পদমপ্রসাদ জল আর চা বিস্কুট নিয়ে ঢুকলেন। দোহারা মাঝবয়েসী চেহারা। সঙ্গে পদমপ্রসাদ। আমরা চা জল বিস্কুট খেতে খেতে বললাম --- সাইকেল চালিয়ে খিদে পেয়ে গেছে বুঝতে পারিনি পদমবাবু, বুঝলেন ? আপনি কি এখানে অফিসার টফিসার কিছু ? গিন্নী জিজ্ঞেস করলেন --- পদমবাবু কে ?
    আমরা সবাই, পদমবাবু সহ হেসে উঠলাম হো হো করে। গিন্নী অপ্রস্তুত। পদমপ্রসাদ বলল --- আমি এদের কমলকুমার মজুমদারের গল্প করছিলাম, আর ওরা কমলকুমারের নাম পাল্টে আমাকে পদমপ্রসাদ করে নিয়েছে। ঠাট্টা আর কি। আমার নাম স্বপন, স্বপন মুখোটি। আমি এখানের সেকেন্ড অফিসার। আর, এই ছেলেটির নাম পরিমল চক্রবর্তী। আমাদের চাঁপাকে একটু জয়েন্টের পড়াশোনা দেখিয়ে দেবে। ভেতরের ঘরে বসার ব্যবস্থা করে দিও। তোমরা এই ঘরেই শুয়ো। চল তোমাদের বাথরুম দেখিয়ে দিই।
    রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লাম। মড়ার মতো ঘুম। একঘুমে রাত কাবার। ভোরে উঠে বাথরুম সেরে বাগানে নেমে একটা ছোট শাল গাছের ডাল ভেঙ্গে মুখে দিয়ে দু-পা এগিয়েই দেখি মাটিতে লাইন দিয়ে চলেছে লাল ভেলভেট পোকারা। অনেক গুলো। আমি না গুণে চেয়ে থাকলাম ভেলভেট পোকার ট্রেনের দিকে। দুটো শালিক ওদের বিরক্ত করছে। টুক টুক করে মুখে তুলছে। ওদের ভ্রূক্ষেপ নেই, প্রতিবাদ করল না। আমি হাত তুলে চেঁচালাম --- হুউস হুউস ... ...
                                                -------------       


Comments