ডiary : শুক্রাণু ৭ : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়


DIARY
AUTHOR
|শুক্রাণু ৭ : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়
কাঁধ ও দায়িত্ব



কোরিয়ার ভাস্কর্য শিল্পী জুয়াং চোই-এর ভাস্কর্য, দ্য কিং, ২০০৮

ইশকুলে পড়া বয়েস তখন। বেড়ে উঠছি কোচবিহার শহরে। যাকে আজও, এই দু’ হাজার চোদ্দ সালের মাঝামাঝিতে এসেও একটা সেমি-ফিউডাল টাউনশিপ বলেই মনে  হয় আমার। তো, সেবার পৌরনির্বাচনে আমাদের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে হেরে গেছেন জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিনিধি। পাঁচবছর কাউন্সিলর থাকাকালীন সময়ে তিনি যা কিছু কাজ করেছিলেন, রাস্তায় কিছু ল্যাম্প লাগানো তার মধ্যে একটি। ব্যক্তিগত পরিচয় থাকার সুবাদে আমরা ওনাকে কানুমামা বলতাম। ইশকুল থেকে সোজা মাঠে খেলতে চলে গেছিলাম বোধয় সেদিন । তাই ফিরতে ফিরতে সন্ধে সমাগত। কানুমামা দেখি ঢিল ছুঁড়ে রাস্তার ল্যাম্পগুলো ভাঙছেন। ভারতীয় গণতন্ত্র! প্রায় সতেরো বছর হয়ে গেল। কিন্তু এই ঘটনাটিকে আমি ভারতীয় গণতন্ত্রের একটি ছোট্ট ও তুচ্ছ ঘটনা বলে ভাবতে পারি না আজও। যাই হোক, যে কথা বলতে এ লেখা, সেখানে আসা যাক। মনোরমা ধর্ষণের পর মণিপুরের মেয়েরা পেরেছিলেনমনোরমা ঘটনার পর, শুধু মনোরমার ঘটনার পর বললে বিরাট ভুল বলা হবে, আসলে এরকম অনেক মনোরমার ঘটনাই এর সলতে তৈরি করেছিল, যার ফলে বিবস্ত্র হয়ে ব্যানার হাতে রাস্তায় নেমেছিলেন মেয়েরালেখা, 'কাম অন ইণ্ডিয়ান আর্মি, রেপ আস'বাঙলার মেয়েরা এতটা দুঃসাহস রাখার ধৃষ্টতা করবেন না নিজেদের কলিজার খাঁচায়। পাছে লোকে কিছু বলে? ইশশশ। বেশ কয়েকবছর আগের কথা, তখনও দুঃসংবাদ পত্র পড়া বন্ধ করিনিবাড়িতে তখনও আসে দুঃখহাট পত্রিকাশচীন তখন সম্ভবত ভারতীয় ক্রিকেট দলের ক্যাপ্টেনকোনো একটি সিরীজে, দলের বাকি প্লেয়াররা যাচ্ছেতাই খেলে ডোবাচ্ছেকি ব্যাটিং, কি ফিল্ডিং, কি বোলিংএকা শচীন তাও ব্যাটিঙে রুখে দাঁড়াচ্ছেনবাকিরা কেউই কিছুই করে উঠতে পারছেন নাএক মারাঠি সাংবাদিক জিগ্যেস করেছিলেন ওঁকে, আপনি কী বলবেন আপনার টিমমেটদের সম্পর্কে? 'আপলেচ দাত, আপলেচ হোট, দোস কুনালা দেয়াইৎজা' (স্মৃতি থেকে লিখছি, আমার লেখা মারাঠি কথাটায় কিছু ভুল থাকতেই পারে), শচীন বলেছিলেন বাঙলাটা মনে আছে, নিজেরই দাঁত, নিজেরই ঠোঁট, নিজেই তাতে কামড় বসিয়েছি, কাকে দোষ দেবো! হে পৃথিবীর বৃহত্তম গণপ্রজাতান্ত্রিক ভারতরাষ্ট্র, হে তাঁর গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিকবৃন্দ, নিজেরাই নির্বাচিত করেছ তোমাদের এই জনগণমনঅধিনায়ককেইকোনমিক্সে লেমন থিওরি ব'লে একটা থিওরি আছেখুব সোজাবাজারে গিয়ে আলু কেনার সময় আমরা বুঝতে পারি না এটা পচা হবে কিনাআলুটা কেমন সেটা জানার জন্যে বাড়িতে এনে কেটে দেখা অবধি অপেক্ষা করতে হয়একবার কেটে ফেললে দোকানে আর ফেরতও চলে নাকবে বুঝবে, গণতন্ত্রের ভেলকিবাজিটা ঐ লেমন থিওরিই আসলেনকশাল পিরিয়ডে যখন দেওয়াল লিখন ছিল, কমরেড কানু সান্যালকে জেল ভেঙে ছিনিয়ে আনুন। কবি মণিভূষণ ভট্টাচার্য লিখেছিলেন তাঁর সেই বিখ্যাত কবিতাটি। একটি স্লোগানের জন্ম। লিখেছিলেন, যখন দেখি কমরেড কানু সান্যালকে জেল ভেঙে ছিনিয়ে আনুন, তখন ভাবি, এরা অন্যের ওপর দায়িত্ব দিয়ে চলে গেলেন কেন? মণিবাবু, আপনি দেখে যেতে পারলেন না, বাঙলার দামাল ছেলে কিন্তু অন্যের ওপর দায়িত্ব দিয়ে চলে গেলেন না। নিজের কাঁধে (অবশ্য ওটাকে কাঁধ বলা যায় কিনা আমি জানি না) তুলে নিয়েছেন দায়িত্ব। উনি পিস্তলটাও চালাতে জানেন ভালোই। এবং সে দায়িত্বও তুলে নিয়েছেন নিজের পিস্তলে। আচ্ছা, মণিবাবু ইনিও কি তাহলে বিশ্বাস করেন, বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস? নাকি, যেটাকে আমি কাঁধ বললাম সেটা উৎস? যখন দেখি, বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস, তখন ক্ষমতার আগে রাজনৈতিক শব্দটা নেই দেখে আমি আঁতকে উঠি, এমনটাই তো লিখেছিলেন আপনি ঐ কবিতায়? বিপ্লবী বরুণ বিশ্বাস বেঁচে থাকলে কি করতেন জানি না। সুটিয়া গণধর্ষণ প্রতিবাদ মঞ্চ থেকে তিনি কী আন্দোলন করতেন আজ বেঁচে থাকলে, জানি না। অন্যের ওপর দায়িত্ব দিয়ে তিনিও কিন্তু বসে ছিলেন না। যদিও বন্দুকের নলই তাঁকে বসিয়ে দিল। তফাৎ একটিই। শ্রীযুক্ত মাননীয় তাপস পাল মহোদয় বন্দুকের ট্রিগারের ওপারে। আর আপনি, বরুণ বিশ্বাস আপনি ও আপনার আন্দোলন, আপনারা বন্দুকের নলের সামনে পড়ে গেছেন।            |

Comments

  1. Anekbar bola kothai hoyto bolte Hobe lekhata pore,,,besh bhalo lekhe Arjun Bandopadhay,,,dhil chure lamppost bhangar kotha jantam kintu nishana practitioner Amar ovijyotay ekti notun sanjojon,..

    ReplyDelete

Post a Comment