কিছু (অ)প্রাসঙ্গিক কথা- বিজ্ঞাপন ও অপমান - অভীক দত্ত

|

DIARY
AUTHOR
|কিছু (অ)প্রাসঙ্গিক কথা-    বিজ্ঞাপন ও অপমান
অভীক দত্ত

।।অপমান।।
অপমানিত হতে কেমন লাগে?
ভাল লাগে, এই উত্তরটা কি কেউ দেবেন? অথচ এই ম্যাগাজিন করতে গিয়ে প্রচুরবার অপমানিত হতে হয়েছে। বহুবার মনে হয়েছে, অনেক তো হল, এবার চাকরিটাই করা যাক শুধু। বলতে গেলে চাকরি করে, সাধারন জীবন কাটালে এই অপমানিত তো কোনদিনই হতে হত না। তাহলে কেন শুধু শুধু আর যেচে এই ঘরের খেয়ে পরের মোষ তাড়ানো!
একটা উদাহরণ দিই। আমি কলকাতা থাকি না। এক ভদ্রলোক আমায় একবার বললেন কলকাতায় যেতে পরের দিনই।কাজটা কি ছিল সেটা আর এখানে উল্লেখ করছি না। অপ্রাসঙ্গিক মনে হবে।
যাই হোক, তাঁর কথা অনুযায়ী যেভাবে হোক যেন আমি পরের দিন কলকাতায় আসি। খুব, ভীষণ জরুরি কাজ। আমিও ছুটি টুটি নিয়ে কলকাতা চলে গেলাম। সেই সপ্তাহটা আবার বেশ শরীর খারাপ যাচ্ছিল, তিনি না বললে আমি কখনোই যেতাম না।
যাই হোক,  চাপ টাপ নিয়ে গেলাম। তাঁর অফিসে পৌঁছে দেখি তিনি নেই। তার সহকর্মীদের জিজ্ঞেস করলাম তিনি কোথায়। তারা বলল স্যার তো আজকে আসবেন না। তাঁর জ্বর। আমার মাথায় ভাঙল আকাশ। উক্ত ভদ্রলোকের বাড়িও আমি চিনি না যে বাড়ি পৌঁছে দেখা করব। ফোন করলাম, তিনি ফোন অফ করে রেখেছেন। আমি কি করব বুঝতে না পেরে বেশ কিছুক্ষণ সেখানে বসলাম। ওই অফিসের বাকি কর্মচারীরা আমার সাথে এমনভাবে ব্যবহার করছিলেন যেন আমি ওখানে একজন ট্রেসপাসার। অথচ আমার জ্ঞানত আমি তাদের কোন ক্ষতি করি নি। আমার সারা দিনের যাতায়াত, কষ্ট, শারীরিক পরিশ্রম আমাকে ভীষণ অপমানিত বোধ করাচ্ছিল। আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আমি তো নিজে থেকে আসিনি, আমাকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ডেকে নিয়ে গিয়ে এরকম করার কি মানে হয়।
আমি বরাবরই একটু টিউব লাইট। ওই সময়টা যে আমাকে হেয় করা হচ্ছে, আমাকে ইচ্ছা করে এমন হ্যারাসমেন্ট করা হচ্ছে আমি বুঝতে পারি নি। প্রায় আধ ঘণ্টা মত ওই অফিসে বসে আমি বেরিয়ে গেলাম।
আরেকটা বলি।  এক বিখ্যাত লেখিকা আসার কথা এক স্টলে। আমি গেলাম তার সাথে দেখা করতে। বেশ ভিড়ের মধ্যেই স্টলের এক ছেলে আমাকে বলে বসলেন “ওনার জন্য একটু কোল্ড ড্রিঙ্ক নিয়ে আসুন না প্লিজ”।  আমি কিছু বলতে পারলাম না। কান মাথা জ্বলছিল, কিন্তু আমি কিচ্ছু বলতে পারলাম না।  
।।এবং বিজ্ঞাপন।।
এই দুটো উদাহরণ দিলাম, এরকম প্রচুর আছে। বস্তুত ম্যাগাজিনের লাইনে এইসব আমাদের ধরেই নিতে হয়, যে মাঝে মাঝে এরকম অপমান আমাদের পাওনা থাকে। বইমেলার ঝকঝকে আলোয় যে বইগুলি উজ্জ্বল হয়ে থাকে, তার পেছনে যে কত অপমান, লাঞ্ছনার ইতিহাস জড়িয়ে থাকে, সেটা যারা আমাদের মত এইসব পাগলামি করে তারাই জানে। মনে পড়ে একবার ম্যাগাজিনের জন্য বিজ্ঞাপন চাইতে গেছি, এক ভদ্রলোক প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে আমার সাথে পৃথিবীর সাহিত্য, খেলা ধুলা আলোচনা করে শেষে একটি টাকাও ছোঁয়ালেন না। জানালেন তার অন্য কাজ আছে। এখন দিতে পারবেন না কিছু। আমি ভাবছিলাম সেটা শুরুতে বলতে কি সমস্যা ছিল।
কিভাবে, কেন বিজ্ঞাপন দেবে একটা লিটল ম্যাগাজিনে কেউ? এই প্রশ্ন করলে আমাদের অনেক কিছু বলার থাকে, কিন্তু আমরা বলতে পারি না। এই বইমেলা সংখ্যার “বাতিঘর” পত্রিকাটির সম্পাদকীয় দেখলাম। পরিষ্কার ভাষায় লেখা ছিল তাঁরা জানেন না কিভাবে সংখ্যাটি বেরবে, তাদের বিজ্ঞাপন ওঠে নি, বেরলে তাঁরা অবাকই হবেন।
ভাবা যায়? “বাতিঘরে”র মত একটা চমৎকার কাগজ বিজ্ঞাপন পায় না! শুধু বাতিঘর কেন প্রচুর লিটল ম্যাগাজিন, যারা অত্যন্ত ভাল ভাল কাজ করে চলেছে দিনের পর দিন তারা বিজ্ঞাপন পায় না। অথচ অপচয় কিন্তু হয়েই চলেছে। এবং সেটা অত্যন্ত চোখে লাগে।  এবং এই লিটল ম্যাগাজিনগুলোর সম্পাদকদের কাজই হল তাদের পরিশ্রমের অধিকাংশটাই এই বিজ্ঞাপন সংগ্রহের পিছনে দিয়ে দেওয়া। 
এই বিজ্ঞাপনের সুযোগেই বহু ভুলভাল লেখা ম্যাগাজিনগুলিতে ছাপতে বাধ্য হন তারা, কিছু করার থাকে না, মূলধন জোগাড় করতে হলে এই নতিস্বীকার করা ছাড়া তাদের আর কিছু করারও থাকে না।
এই টাকার অভাবে বহু ভাল ভাল ম্যাগাজিন বন্ধ হয়ে গেছে, এক্ষেত্রে বিজ্ঞাপনদাতাদের যুক্তিও ফেলে দেবার মত হয় না, যে, কতই আর ম্যাগটির বিক্রি, তাঁরা যে খরচ করে বিজ্ঞাপনটি দেবেন, সেটা তো আর উঠে আসবে না।
এই অপমান এবং বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করার ঝামেলাগুলি লিটল ম্যাগের অর্ধেকের বেশি আকাশ দখল করে রেখে দেয়। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া বড় সহজ কাজ নয়।
  | |

Comments