সত্যি কথা - সীমা ব্যানার্জী রায়






উত্তর -দক্ষিণ আমেরিকায় আমাদের এক বান্ধবী জলি তার সদ্য কেনা বাড়ীতে “হাউস ওয়ার্ম” পার্টির আয়োজন করেছে। আমরা সকলে এক একটা পদ রান্না করে নিয়ে সন্ধ্যে সাতটার সময় হাজির হলাম। সকলেই সকলের চেনা, তার মধ্যে শুধু দুজন স্বামী -স্ত্রী অচেনা। সবে নতুন এসেছে দেশ থেকে। 


জলি সকলের সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেবার সময় যেমন প্রচুর প্রশংসা করল তেমনি আমাদের সকলের সম্পর্কেও তাদের কাছে প্রশংসা করতে লাগল। বেশ লাগছিল শুনতে নিজেদের প্রশংসা।
মেয়েদের দিকে খাওয়া হল, গল্প গুজব হল... শাড়ি থেকে একেবারে বিউটি সেলুন। তারপর কয়েকজন এ- ওর কোমর ধরে (স্বামী -স্ত্রী) নাচলেন- রবীন্দ্র সঙ্গীত থেকে লারে লাপ্পা হিন্দী গান লাগিয়ে। আমরা বসে বসে দেখে উপভোগ করলাম, কারণ আমরা( স্বামী -স্ত্রী) নাচতে একেবারেই পারি না।

তারপর শুরু হল একে একে ঘরে ফেরার পালা। কিন্তু হকচকিয়ে বসে পড়লাম। দেখলাম- একজন যাওয়া মাত্রই অন্যরা তাকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করল। যাকে বলা যায় অকারণ নিন্দায় আমোদ উপভোগ করা। নতুন আসা দুজন উঠে যেতেই তাদের নিয়ে শুরু করল এবা্র জলি নিজেই। সেইসব শুনে সবাই হি হি করে এ ওর গায়ে লুটিয়ে পরতে লাগল। আমি হাসতে পারছিলাম না, কারণ মনে পড়ছিল আমার শাশুড়িমার কথা- ”ঘুঁটে পোড়ে, গোবর হাসে-”। 

আর পারলাম না। বলেই ফেল্লামঃ “কি ব্যাপার! তুই যে ওদের এত প্রশংসা করছিলি পরিচয় করিয়ে দেবার সময়?”

 কাঁধ দুটোকে একটু ঝাঁকিয়ে জলি বলল, “ আরে, সামনে কি আর সত্যি কথাটা বলা যায়, নাকি? সামনে সবাইকে ভালোই বলতে হয়, বুঝেছিস?” বুঝলাম! আমি যখন এখান থেকে উঠে পড়ব তখন জলি আমার সম্পর্কেও সত্যি কথা অন্যদের শোনাবে। তাই গ্যাঁট হয়ে বসে রইলাম যতক্ষণ না সকলে বিদায় নিল। সকলের সম্পর্কে সত্যি কথা আমি শুনলাম, কিন্তু আমার সম্পর্কে সত্যি কথাটা কাউকে শুনতে দিলাম না। কি ঠিক করি নি? হয়ত ফোনে কাউকে বলবে আমার সম্পর্কে সত্যি কথাটা। কিন্তু সবার সামনে নয়। এ জমানা বড়ী আজীব হ্যায়!!



---

Comments