ডiary : চার্লি চ্যাপলিনের কবর থেকে দেহ চুরি





DIARY
AUTHOR

| চার্লি চ্যাপলিনের মৃত্যুর তিন মাস পর কবর থেকে দেহ চুরি যায়। চোরেদের ইচ্ছেছিল, মোটা টাকা আদায় করবে তার পরিবারের থেকে। তবে ধরা পরে যায়। ১১ মাস পর দেহ ফেরে কবরে। কংক্রিটের ৬ ফুট নীচে রাখা হয় শব। আবার যাতে চুরি না হয়। |

লাশটা ভারি লাগল। রাস্তা পেরোলে দেখতে পেলাম একটা বাড়ির নীচে এক বৃদ্ধা। লাশটা কাছে নিয়ে গিয়ে প্রশ্ন ছিল, এটা তোর ছেলে। সে মাথা নাড়ে। তখন ল্যাম্পপোস্টের আলোটা কিছুটা কম। পাশের গলি থেকে আলো বেড়িয়ে পড়েছে মাঝ রাস্তায়। দুটো কুকুর শুয়ে থাকছে রাস্তার কিছু দূরে। হেঁটে গেলে রাস্তাটা বাঁক নিল। এখানে দেয়ালের গায় গ্রাফিত্তি। একটা সময় এখানে অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটে গ্রাফিত্তির। আশে পাশের বাড়ি থেকে জানানো হয়। কিছু বিশেষ মাপের গ্রাফিত্তির চরিত্রদের দেখা যেত ঘোরা ফেরা করতে গ্রাফিত্তির সামনে। একই সময় শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। পুলিশের আঁকিয়েরা একই মুখের ছবি এঁকে দেয় অভিযোগকারীদের কথা শুনে। তখনও আমরা জন্মাই নি। আমার জন্ম এর ঠিক দু বছর পর। এই ঘটনার পর থেকেই গ্রাফিত্তি নিষিদ্ধ হয়। অনেকে বলে এটা ব্ল্যাক ম্যাজিক। গ্রাফিত্তিতে ব্যাবহৃত রঙ ছিল নাকি মানুষের দেহের থেকে তৈরী। তারাই নাকি ফিরে আসত। পাহারা দিত গ্রাফিত্তি। যাতে কেউ নষ্ট করে না দেয়। কারণ সেসময় এরকম হত, এক গ্রাফিত্তি মুছে ফেলে তার ওপর আর এক গ্রাফিত্তি আঁকা পড়ত। তাই এভাবে কালোজাদুতে আস্তা রেখে গ্রাফিত্তি আঁকা হত। তবে সরকার থেকে নিষেধের পর যে আঁকা বন্ধ হল তা নয়। লুকিয়ে চুরিয়ে। পুলিশের তাড়া খেয়ে। এই এডভেঞ্চারটাই সবাই উপভোগ করতে থাকল। একটা বিপ্লব ঘটানোর কায়দায়। তবে এ গ্রাফিত্তি আর পাঁচটা থেকে আলাদা। বুঝতে পারলাম কারণ আমার পড়াশোনা আছে এর ওপর। তবে সেটা বলা অযৌক্তিক। বরং বৃদ্ধার অনেকটা কাছে আমি গেছিলাম। আমি তার মুখ ভুলি নি। মাংস ঝুলে পড়া। চোখ ঢুকে যাওয়া। ঠোঁট শিথিল মুখ। তার সাথে মিল আছে এ ছবির। তবে পুরুষের মুখ। 



একটা সময় লাশচুরি হত। শল্য চিকিৎসা তখন বারণ। শল্য চিকিৎসায় উৎসাহী ছেলেপুলেরা লাশ চুরি করত। তারপর কেটে কুটে দেখত শরীরের কোথায় কি। তারা খোঁজ রাখত কোন কবর সদ্য দেওয়া হচ্ছে। রাতে চড়াও হত সেখানে। এর পর মৃতদেহ রক্ষা করার জন্য পাহাড়া বসানো হত। আমরা তাড়াতাড়ি ঢুকে পড়লাম ঘরে। আলোজ্বালিয়ে বসে গেলাম ছুড়ি কাঁচি নিয়ে। আমাদের ধারণা বলো পাথরটা গলায় আটকে আছে। পরশুরাম সেরকমই লিখেছেন আপনারা জানেন। উনি বলেছিলেন পাথরটা গলে যায় লোকটা বেঁচে যায়। আদপে তা নয়। পাথরটা লোকটার কণ্ঠনালিকে ক্রমশ সোনায় পরিণত করে ফেলে।  হিমোগ্লোবিনে লোহা থাকে জানেন নিশ্চয়ই। হ্যাঁ এ সেই পরশপাথর। যা বেশিক্ষণ হাতে রাখলে আপনার হাতের নীচের লৌহকণিকা সোনায় পরিণত হবে। লোকটা মারা যায়। কিন্তু এই অলুক্ষুণে পাথর যাতে আর কারো হাতে না পড়ে তাই লোকটিকে সমাধিস্থ করা হয়। সাথে গলার জিনিস গলাতেই থেকে যায়। এক ভুয়ো এক্স রে রিপোর্ট দেখানো হয় সবাইকে। 



ডায়েরি লিখতে বসে এসব কেন লিখছি তার কারণ আছে। ঘটনাগুলোর সাথে আমার কিছু ঘটনার মিল আছে। আমি মিল পাই। এবং তোমরা মেনে নেবে কিনা জানি না। ওপরের চরিত্রগুলোর মধ্যে একটা আমি। 



আমার যে মানসিক রোগ আছে সেটা ধরা পড়ে আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। কিছু বানানো আচার আচরণে আমি বিশ্বাস শুরু করেছিলাম। কুসংস্কার বলা যায়। এটা শুরু হয় জ্বর থেকে ওঠার পর। আমাদের বাড়ির পেছনে পায়খানার কাছে গেছিলাম। খেলার পর নেট খুলতে। মা বলে সেই কারণেই এই জ্বর। ওখানে নাকি কিছু আছে। যা শরীরে ভর করে। মা শিক্ষিত। কিন্তু চারপাশের সাথে মিশতে মিশতে এসবে বিশ্বাস। আমাদের বাড়ি যে এলাকায় সেখানে শিক্ষার প্রসার তখনও সেভাবে ঘটে নি। ভূত প্রেতের ব্যাপার স্যাপার প্রায়ই ঘটত। সাথে চলত জলপোড়া। ঝাড়ানো। আমাকে ঝাড়ানো হয়েছে বেশ কবার। যারা ঝাড়াতো তারা ওঝা নয়। বরং আমাদের মতই সাধারণ মানুষ। তারা নাকি জানত এসব। লংকা পোড়া দিয়ে মন্ত্র পড়ে দিত। ঘড়ে কেউ থাকত না। কি মন্ত্র পড়ত এ আমি জানি না। এসব আমি তখন বুঝতাম না। বড় হলে বিশ্বাস করতাম না। তবে যে ব্যাপারটা আমার সাথে ঘটত, সেটা এসবের থেকে অনেকটাই আলাদা। আমি পরে পড়াশোনা করে দেখেছি এরকম অনেকের সাথে ঘটে। এবং এতে কোন বুজরুকি নেই।  যদিও আমার এখনও আস্থা জন্মায় নি। তবে অবাক লেগেছে আমার মতো আরো অনেকের এরকম হয়ে থাকে জেনে। আমি দেখতে পেতাম শরীর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছি। বিছানায় শুয়ে আমার শরীর। আমি দেখছি সমস্ত কিছু যা ঘরে ঘটছে। একটা সময় পর শরীরে ফিরে জেতে চাইতাম। একটা প্রচণ্ড কষ্টের মধ্যে দিয়ে। যখন ফিরে যেতাম দেখতাম জেগে আছি। স্বপ্ন না।
(শেষ হলে সমাপ্ত লিখব) |

Comments