Diary : শুক্রাণু : গন্ধবিচার : অ র্জু ন ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়




DIARY
AUTHOR


গন্ধবিচার
অ র্জু ন  ব ন্দ্যো পা ধ্যা য় 

শুনেছ কি ব'লে গেল অর্জুন বন্দ্যো
শুক্রাণু জুড়ে নাকি টক টক গন্ধ !

আচ্ছা 'পুরুষতান্ত্রিকতা'র বিপরীত কী? মানে, এর বিপরীত শব্দ জানতে চাইছি না। বরং, জানতে চাইছি, এর বিপরীত এবং কাম্য অবস্থা। আমার ধারাবাহিক কলামটির নাম 'শুক্রাণু' হওয়াতে, কেউ কেউ সেখানে 'একটা যেন কেমন কেমন গন্ধ' পেয়েছেন। আমি জানতে চেয়েছিলাম, কেমন সে গন্ধ? জানা গেলো, ইহা পুরুষতান্ত্রিক।
'শুক্রাণু', ইংরেজিতে স্পার্ম, গ্রিক থেকে আগমন ইহার, স্পার্মা। যাহাকে ইংরেজিতে Seed বলা হয়। অর্থাৎ বীজ। যাহা, প্রাণের যাবতীয় গুণাবলী এবং বৈশিষ্ট্য, ভবিষ্যৎ প্রাণ-সম্ভাবনাকে সুপ্ত আকারে ধারণ করে।
যদি, কেহ 'পুরুষতান্ত্রিকতা'র বিপরীত 'নারীতান্ত্রিকতা' বলেন, তাহলে আমি ধারাবাহিক কলামের নাম পালটে 'ডিম্বাণু' ক'রে দেবো।
কিন্তু, মুশকিল হইল ইহা, যে, সেই ক্লাস সেভেন থেকে দেখে আসছি, আমি মাস্টারবেট করিলে তো শুক্রাণুই নির্গত হয়। এবং সে তো পুরুষ কি নারীতান্ত্রিকতার কোনো থিওরিরই ধার ধারে না।

এরপরে যদি শুনি, হি হি (He He) ক'রে হাসিটাতেও কেমন একটা 'পুরুষতান্ত্রিক' গন্ধ;  সেখানে একবারও She-এর কথা নেই। তাহলে আমি কিঞ্চিন্মাত্রও আশ্চর্য হইব না।
বরং পুরুষ-নারী উভয়েই আছেন এর'ম গণতান্ত্রিক কিছু ভাববো তখন। এই যেমন, হিসি। হ্যাঁ, হিসি।

আচ্ছা, 'কক্সবাজারে সন্ধ্যা' নামটা কি পুরুষতান্ত্রিক, না?

হে মোর অতি দুর্ভাগা দেশ, এখানে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহকে তাঁর বইয়ের নামটাই পালটে ফেলতে হয়েছিল। যেহেতু বইটির নাম ছিল ‘স্তন’। এখানে, তামিল ভাষার কবি কুট্টি রেবতীকে চেন্নাই-এর রাস্তায় প্রকাশ্যে পুড়িয়ে মারার দাবী উঠেছিল। বেশি দিন আগে নয় কিন্তু। এই তো ২০০২। কেন? যেহেতু তাঁরও কবিতার বইটির নাম ছিল ‘স্তন’। কিন্তু, সাহসিনী রেবতী তাঁর বইয়ের নাম পাল্টাননি। বাড়িতে হুমকি-চিঠি এসেছে। নোংরা ফোন কল এসেছে। রাস্তায় বেরিয়ে টিটকিরি শুনতে হয়েছে। কিন্তু রেবতী দমে যাননি।

দেখা যাক, কী লিখেছিলেন কুট্টি রেবতী ওঁর ‘স্তন’ বইয়ের ‘স্তন’ কবিতায়—

স্তন
কুট্টি রেবতী

বুদবুদ, এই মাই দুটো
যেন জলময় জলায় জেগেছে

সম্ভ্রমে আমি দেখি ওদের— নজরে নজরে রাখি—
ধীরে ধীরে ওদের ঢেউ ফুলে ওঠা আর
লালিমা আমার বসন্তের প্রান্তে

কাউকে তো কিচ্ছুটি বলে না,
একা একাই গান গায়
আমার সাথে একা,
গান, ভালোবাসার
গান পরমানন্দ আর বুক ভেঙে যাবার গান

যখন বড় হচ্ছি, নার্সারি,
আমাকে জাগাতে ভোলেনি ওরা
একবারও, সেই তখন থেকেই

ক্লাসে শাস্তির সময় ওরা ফুলে উঠতো
যেন আগল খুলে বেরোবার জন্য টানটান
আর কামনার হঠাৎ রাক্ষুসে টানে
যেন শূন্যে, উঁচুতে উড্ডীন,
ডেকে আনছে অপার অর্কেস্ট্রা

বুকে জড়িয়ে যখন পিষে দিয়েছে কেউ,
গ’লে গেছে ; আর পেট থেকে
অনাহূত শিশুর জন্ম, তার ধাক্কায় দুধ
যেন রক্তের প্রবাহে
না-সম্পূর্ণ প্রেম থেকে চোখের জলেরা
মোছা যাবে না,
তখন ওরা উথলে উঠেছে, দুঃখে
প্রবল চলকে পড়ছে ওরা


একটি ছেলের পক্ষে কোনোদিনও এই কবিতা লেখা সম্ভব? আমার মনে হয়, না। লিখলে সেটা সৎ-আচরণ হয়ে উঠতে পারে কি? আবার, বীর্যপাতের সময় কী-অনুভব হতে পারে একজন পুরুষের, সেটা একজন মহিলার কাছে অজানা অনুভূতি। এই কবিতাটা ‘বাক্‌’-এর ‘অন্য ভাষার কবিতা’র জন্য অনুবাদ করেছিলাম গতবছর। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ। কিন্তু এই একটা অনুবাদ করতে আমার সময় লেগেছিল প্রায় দেড়মাস। কেননা, রেবতী’র কবিতা তীব্র শরীর-চেতনার প্রাখর্য্য সম্পন্ন। এবং, সে শরীর একটি নারী শরীর। আমি মেয়ে নই। যৌবনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একটি মেয়ের শরীরে যে ‘চেতনা’ জাগছে, তা আমি কক্ষনো প্রত্যক্ষ করিনি। সেই সুখ, সেই হর্ষ, সেই বিস্ময় আমি জানি না। আমার জীবন দিয়ে জানি না। তার সূক্ষ্ম জায়গাগুলো আমার কাছে একেবারেই অজানা, অচেনা। তাই, এই কবিতাটি অনুবাদ করার এত মাস পরেও, আজও আমার মনে হয়, আমি কি যথাযোগ্য সুবিচার করতে পেরেছি ওঁর এই কবিতাটার প্রতি? রেবতী যখন লেখেন, ‘Breasts are bubbles, rising / In wet marshlands’, আমি মহা বিপদে প’ড়ে যাই, কি অনুবাদ করবো এর !? আমি আমার বুকের দু’পাশে হাত রাখি। কল্পনায় স্তন ভাবি নিজের। নরম পুঞ্জমেঘ আঁকি বুকের দু’পাশে, কল্পনায়। কিন্তু আমার জলাশয়ে কোনো বুদবুদ জেগে ওঠে না। শূন্যে, মহাশূন্যে হাতড়ানো চলে আমার। তখন, আরো বেশি ক’রে ওঁকে জানার জন্য ওঁর অন্যান্য লেখাপত্র পড়া শুরু করলাম। ওঁর গদ্যগুলোও। কিন্তু, শ্রীকমলকুমার মজুমদার বলতেন জ্ঞানযোগে কী আর ঈশ্বর প্রাপ্তি হয়? ঈশ্বরের ব্যাখ্যা হতে পারে। রেবতী’র এই একটা লাইন, আমাকে থমকে দাঁড় করিয়ে দেয় দেড়মাস। ঐ লাইনে প্রবেশের অযোগ্যতা ও অক্ষমতা নিয়ে কবিতাটির প্রথম লাইনের প্রথম শব্দের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি নিজেকে। কেননা, এই কবিতায় ‘স্তন’ যে মমত্ব নিয়ে বেড়ে উঠেছে, সেখানে কি ‘মাই’ শব্দটি আসতে পারে? এই শব্দটি লেখার সময় আমার পুরুষতান্ত্রিক হেজেমনিই কি কাজ করলো তবে? আমি জানি না। আমি সত্যিই জানি না। প্রকৃতি আমায় সে সম্পদ দেন নি। জীবনের এই অজানার সামনে দাঁড়িয়ে আমার নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয়। ভীষণ। একটা হাত বা পা না-থাকলে যের’ম হ’ত আমার, স্তন না থাকায় সেইরকম প্রতিবন্ধী মনে হয়। মনে হয় আমি কেন শুধুই পুরুষ হলাম? কেন কিছুটা নারীও হলাম না! মনে হয়, তুমি কেন শুধুই নারী হলে? কেন কিছুটা পুরুষও হলে না!?    
........



আবার আরেক দিক থেকে যদি দেখি, পাঠক কবি লেখক এঁরা যদি শব্দের মিথ-মুক্ত না হন, তিনি যদি শব্দ-সংস্কার থেকে মুক্ত না হন, ইশকুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও সমাজের শেখানো সংস্কার যদি তাঁর মস্তিষ্কে চলাচল করতে থাকে, তিনি তাহলে এরকম বহু কোটি শব্দে বহু তন্ত্র-মন্ত্রের গন্ধবিচার ক’রে বেড়াবেন সারাজীবন, বলা বাহুল্য।

কয়েকদিন আগে, আরো এক মজার ঘটনা। আটদিন ধ’রে রাত-দিন জেগে একপ্রকার নাওয়া-খাওয়া ভুলে মখমলবাফ-এর একটি নাটক অনুবাদ ক’রে উঠেছি সে সময়। পরদিন ফেসবুকে একটি স্টেটাস লিখেছি তা’ নিয়ে। যেখানে এর’ম একটি লাইন ছিল যে, ‘টানা আটদিনের এক সঙ্গম থেকে উঠলাম যেন’। আমার অত্যন্ত নিকটস্থানীয়া এক প্রিয় মহিলা জানালেন, এতো ভালো লেখাটায় এই একটি শব্দ, ‘সঙ্গম’, তাঁর বড্ড কানে লেগেছে। আহা রে ! বড্ড লেগেছে ওঁনার। উনি লেখাটি নাকি বেশ কয়েকবার ক’রে প’ড়েছেন। এবং প্রতিবারই ওনার কানে ভীষণ লেগেছে। কবি অমিতাভ মৈত্র ওঁর একটি লেখায় লিখেছিলেন, কবিতার শব্দ অ্যালজাইমার গ্রস্ত। অভিধানের বা লৌকিক ব্যবহারের চেনা অর্থের জামা-কাপড় খুলে সে কবিতায় এসে বসে। তখন তার অন্য রূপ হয়। অন্য মানে হয়। আগের মানেগুলো থেকে সে বিস্মৃতিপ্রাপ্ত হয় তখন।

আমি যদি বলি, ‘ওম্‌’— এটি ভারতীয় বৈদিক মন্ত্রের এক আদি উচ্চারণ। এ’ এক ধ্যানযোগের মন্ত্র। সাধকের সবচেয়ে গভীর থেকে উঠে আসা এক শব্দ।
এবারে যদি শব্দটিকে এভাবে বসাই,  সঙ্গ + ওম্‌ 

DIARY
AUTHOR

Comments