উল্লাস - রাজর্সি পি দাস




বিভিন্ন স্তর থেকে খেলি তোমার সাথে। সবস্তর যে পূর্বপরিকল্পিত একদম নয়। কবিতার লাইনের মত ঝিলিক ঝিলিক। আর আমি বাঁচার আরেকটা ক্ষণস্থায়ী পথ আবিষ্কার করি তোমার সাথে রঙ্গ কোরে আরেকটা দিন বেঁচে থাকার জন্য। আমি ভালবাসি প্রতিদিন বাঁচতে আর প্রতিদিন ভালবাসি সেলিব্রেত কোরতে। তো উল্লাস !

ঘটনার ছলেবলে আজ পকেটে পয়সা ফুড়ুৎ, তাই ধার কোরে বাংলা, আর বুদবুদটা টিপে ধরতেই ফেটে শব্দ বেরোল জয় বাংলা । এই জয় বাংলা শব্দটা আমাকে ভীষণ অনিকেত কোরে তোলে, সাথে রোম্যান্টিক । ‘জয় বাংলা’ আমার বাল্যকালের একটা রোগের নাম এবং একটা ঘোষণা । এবং সবচেয়ে বেশী চর্চিত। সারাদিন চোখ লাল আর চুলকানো । একটি চোখের ছোঁয়াচে রোগ, তাকালেই হবে। ফলে চারদিকে কালো চশমা । তাই এখনো কালো চশমা পরা কোন মানুষ দেখলে আমার প্রথম ঝিলিক ঝিলিক জয় বাংলা ।

ঐ সময়ে, আমার দেশের পাশেই আরেকটা দেশের জন্ম নিলে সবাই হাসিহাসি মুখে চোখে কালো চশমা আর রাজেশ খান্নার পাঞ্জাবী । সবাই বলত এটা নোতুন দেশের রোগ। স্বাধীনতার রোগ । জয় বাংলার রোগ, এ রোগে রোগ কাটে, চোখ ভালো করে। সবার হোক এই রোগ। তারপর, রোগ চলে গেলেও কালো চশমা রয়ে গেল। পাড়ার বেকার দাদাদের ফ্যাশন। তার সাথে ‘মনিকা’ জুড়ে কালো চশমা হোল পরাধীন ।

কয়েক বছর পর, ১৫ই আগস্ট, আমাদের স্বাধীনতা দিবসের যাবতীয় লাফালাফি সেরে বাড়িতে এসে ভাত খেয়ে দুয়ারে বসে মোড়াকে পাখি ধরার ফাঁদ বানানোতে মশগুল। এমন সময় একটা গান, হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হল...মুখ তুলে দেখি এক মহিলা, মাথায় কাঁচাপাকা চুলের হিমালয়ীয় জটা, পাশ দিয়ে চার পাঁচটা নদীর মত নেমেও এসেছে, উঁচু ফোকলা লালচে দাঁত আর চোখে কালো চশমা, চশমার নীচ দিয়ে জল। আমি হাঁ কোরে দেখছি, এক অসাধারণ নারীকে, গান চলছে। গান গাইতে গাইতে একবার আমার দিকে তাকিয়ে তর্জনী তুলে না না বল্লেন । যেন অনেকদিনের সম্পর্ক, আমি মোড়া–ফাঁদ সরিয়ে রাখলাম ।

মা একমুঠো চাল দিয়ে – এই দিন দুপুরে এই গান গাইতাছ ক্যান ...ভাল না ...

যোগিনী গান থামিয়ে, কালো চশমা খুলে, চোখ মুছে, হেসে বললেন, মুজিব আর নাই, মুজিব ভাইরে... বাড়ি ঢুইক্যা কয়ডা চেনা পোলাপান...মাইরা দিছে ...সবংশে বলতে পারেন !

মা ভাঙা গলায়, কি উলটাপালটা কথা কইতাসেন ...মা আমাকে টেনে নিয়ে দরজা বন্ধ কোরে দিল। বাইরে গান শুরু হয়ে ক্রমশঃ ..আমি এক ৮ বৎসরের ছেলে, আসাম নামক ভারতবর্ষের এক রাজ্যের তিনসুকীয়া শহরে খগেশ্বর রোড নামক পাড়ায় বিছানায় শুয়ে ভরাক্রান্ত কে এই মুজিব, ঐ যোগিনীর কে হন ? মাকেই বা কেন বল্ল ?

যোগিনী, আজ তোমার সাথে রঙ্গ করার রাত। বল তো মুজিব তোমার কে ছিল ? আজ রাতে ‘তুমি’ সবস্তর নয় একটা স্তরেই খেলব ‘তোমার’ সাথে, একটাই প্রশ্ন আর উত্তর। রঙ্গ করবো তাই সঙ্গ চাই যোগিনী, আমি থাকি ৯৯/১ মজলিস আরা রোড কলকাতা ৪১ এ। এসো একদিন কালো চশমা পরে আমার প্রথম প্রেমিকা। হরি দিন তো গেল সন্ধ্যা হল পার কর আমারে। এবার আমি তোমার মুখে মৃত্যুর খবর শুনতে চাই, আমার !

জয় বাংলা ! 
 
 
 
 
 
--

Comments

  1. Jadio ami sahitya sanskritir manush noi tabuo pore bhalo laglo. Purono diner prai bhule jawa pratichabi.

    ReplyDelete

Post a Comment