Outstream
অনুপমের
কলমে
সমীর
রায়চৌধুরী বাংলায় অধুনিনান্তিক
কবিতার পাইওনিয়ার বলেই আমি
মনে করি। তাঁর কবিতা বিভিন্ন
কালপর্বে বিভিন্ন মাত্রা
প্রদর্শন করেছে। এই কবি আধুনিক
কবিতা লিখেছেন...
কৃত্তিবাস
ঘরানার সঙ্গে তাঁর যোগ ছিল
আমরা সকলেই জানি,
সকলেই
জানি সুনীল-শক্তি-বিনয়ের
সঙ্গে তাঁর হার্দিকতা।
কৃত্তিবাসের একটি সংখ্যার
সম্পাদনাও করেছিলেন সমীর।
এই
সমীর আবার হাংরি কবিতার অন্যতম
মুখ। হাংরি পর্বে তাঁর কবিতা
আরেক রূপ নেয়। অবশ্য কৃত্তিবাসী
কবিতার সঙ্গে হাংরি কবিতার
ভেদ স্থাপন করা খুব সোজা কাজ
নয়। স্বীকারোক্তিমূলক লেখা...
এই
ছিল গোড়ার কথা।
আবার
সমীর অধুনান্তিক পর্বে প্রভাত
চৌধুরীর সঙ্গে মিলে,
এবং
নিজের ভ্রাতা মলয় রায়চৌধুরী
তো অবশ্যই,
এক
নতুন পথের কথা বলেন,
সেই
পথে চলার চিহ্ন কবিতাগুলিও
রচনা করেন। হাওয়া ৪৯ এবং কবিতা
পাক্ষিকের পাঠকরা সে-কথা
জানেন। বিস্তারে গিয়ে লাভ
নেই।
সম্প্রতি
আমার ব্লগজিন ‘বাক’
পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর
কবিতাগুলি আবার ভিন্ন পথ ধরেছে। তিনি অধুনান্তিকতার চিহ্নগুলি
অঙ্গে ধারণ করেই এক আশ্চর্য
কবিতাপথে চলেছেন। এই পথ
একেবারেই সর্বজনগামী নয়।
জনপ্রিয়তার কোনো আশু সম্ভাবনা
তার নেই। চূড়ান্ত সাংকেতিক
এই কবিতাগুলি বুঝতে হলে ভারতীয়
নন্দনন্তত্ত্ব(
যদি
তার অস্তিত্ব আছে বলে মেনে
নিই)
এবং
ভারতীয় ভাষাবিজ্ঞানে পাঠকের
দখল থাকা চাই। এমন পাঠক খুব
কম আছেন। মনে হয় সমীর ভবিষ্যতের
দিকে তাকিয়েই রচনা করে চলেছেন
তাঁর সাম্প্রতিক টেক্সটগুলি।
উপরের
‘মায়া’
কবিতাটি ব্যতিক্রম নয়।
প্রথম
লাইনেই পাই আজকের কবিদের
শব্দব্যবহারে পাশ্চাত্যপন্থী
হয়ে ওঠার জন্য সমীরের খেদ।
তারপর চতুর্থ পংক্তি অবধি
দেখি তিনি বলতে চাইছেন আজকের
কবিরা শব্দপ্রবণ হয়ে উঠেছেন...
শব্দের
আড়ালে নৈঃশব্দ তাঁদের গোচরে
আসেনা। তাঁরা সব কিছু বলে
ফেলতে চান। কবিতা থেকে ইশারা
মুছে যাচ্ছে...
সংকেত
উধাও হয়ে যাচ্ছে। তারপর বলেন
কবিরা আজ শব্দপ্রবণ হলেও
শব্দসচেতন নন...
তাঁরা
অলৌকিকের পথে যাচ্ছেন...
অর্থাৎ
নিজেরাই জানেন না কেন একটি
শব্দ তাঁরা বেছে নিলে...
লোকসমাজে
তার কোনো প্রাসঙ্গিকতা আছে
কিনা। মঙ্গলকাব্যের যুগ থেকে,
চরিতামৃতের
যুগ থেকে বাংলা কবিতা আজ এতই
দূরে সরে গেছে...
সে
আজ অলৌকিক হয়ে উঠতে চায়,
প্রতিভাপ্রদর্শন
ছাড়া কোনো লক্ষ্য বুঝি আজ নেই। ফলে মায়ার জায়গা নিচ্ছে
মাকড়সার জাল। চেতনা...
বিষময়
হয়ে উঠছে...
চৈতন্যের
পানে সে আর যেতে চায়না,
উত্তীর্ণ
হতে চায়না।
বলা
বাহুল্য,
এই
কবিতার সঙ্গে একমত না হয়ে উপায়
নেই।
-অনুপম মুখোপাধ্যায়
-অনুপম মুখোপাধ্যায়
Comments
Post a Comment