Film@Dolchhut
একলা মানুষ... দাড়িপাল্লায় হিসেব নিকেশ
নিরুদ্দেশ - #তন্ময়?
৭ই জুলাই, ২০০৫। অন্যতম একটি তারিখ। উল্লেখিত তারিখটিতে হিমঘরের নিশুতি উৎসবটির সফল উৎযাপন তরান্বিত হয়। পীঠস্থান। লন্ডন। শিকার। যাত্রীবাহী একটি বাস। সুতরাং মৃত্যু। এবং নিরুদ্দেশ। খবরটির ছোঁয়াচে রোগের সংক্রমণ ক্রমশ বাড়তে থাকে। রোগের সংক্রমণ দ্রুত সঞ্চারিত হয় উদ্বিগ্নতায়। উদ্ভ্রান্ত হন দুই সন্তানের বাহক ও পালক। সহ আরও অনেকে। সেইসব সহ-রা হয়ত হঠাৎ হারিয়ে যান। যাদের সাথে নতুন করে হয়তো হারিয়ে গিয়েছিলো তাদের খোঁজখবরের মানুষগুলো। যাইহোক, এদেরই মধ্যে দুজন শরিকের অস্তিত্ব হাতড়ে পাওয়া গিয়েছিলো। একজনের পুরুষ সন্তান। দ্বিতীয়জনের শরীরে তার কন্যা সন্তানের জলজ পরাগ এখনও লেপটে আছে। কন্যা সন্তানের মা, ধর্মের চুম্বকে তিনি ক্রিশ্চিয়ান। বসবাস চ্যানেল দ্বীপে। অন্যজন রেসের দৌড়ে আফ্রিকান। এবং রুটিন করে না হলেও তাকে নামাজ পড়তে হয়। ভিটেমাটি ফ্রান্স। সাবালক পুরুষ সন্তানের পিতা। শিক্ষা সূত্রে ছেলের আস্তানা লন্ডন। পৃথক পৃথক ছেলেমেয়ে দুটির বাবা এবং মা পরস্পরের কাছে অচিন। জুলাই মাসের ঘটনাটি দুজনকে লন্ডনে বয়ে আনে। হদিশের আঁতুড়ঘরে কড়া নেড়েও আত্মজদের হদিশ মেলেনা। দেখা যায় ছেলেটি এবং মেয়েটি নিজের নিজের আস্তানায় নেই। তাদের ঘুমঘোরে এখন শূন্যতা তার ঘড় বুনতে মশগুল। স্ব-ঘটিত দুর্ঘটনাটির প্রায় একই সময়ে ছেলেটি ও মেয়েটি লন্ডনের একটি বাসের সহযাত্রী ছিল। নিষ্ফল সন্ধান যাত্রা যাপন করতে থাকেন দুজন প্রবীণ মানুষ। চলতে চলতে মুখোমুখি হন দুজনে। নিয়ন্ত্রিত আলাপ হয়। পারষ্পরিক সাক্ষ্য প্রমাণের সময় প্রমাণিত হয় দুজনের সন্তান পরস্পরের প্রেম। মেয়েটি তার মায়ের ধর্ম সূত্রে ক্রিশ্চিয়ান। সেই মেয়ে এক দূর দেশের বুলি আরবি শিখত তার প্রেমিককে উৎসর্গ করে। নিখোঁজের খোঁজের খবর ক্রমশ জটিল হয়ে যায়। তারা তলিয়ে যেতে থাকে। অথচ সামান্য পরিচয়ের এই একলা প্রবীণ মানুষ’ দুজন, মনের প্রতিবেশী হয়ে ধরা দেয়। অধর্মীয় কুসংস্কারের কাঁটাতার পারাপার করে মানবিকতার চাদরের আড়ালে ধরা পড়ে তারা। সন্তান হারানোর যন্ত্রণায় তারা কাতরায়। অন্য খাতার পাতায় তারা সহানুভূতি আর সহমর্মিতার কথা লেখে। একাকী দুই মানুষের মাঝে স্রোতের মত চিরন্তন বয়ে চলা টেমস নদী এদের জীবনের প্রতীকী হয়ে থাকে... এই গল্প নিয়ে ২০০৯ সালে ছবি করেছিলেন আলজেরিয়ার পরিচালক রচিদ বোচারেভ। ছবির প্রধান দুই শিল্পী ব্রেন্ডা ব্লেথিন এবং সোতিগুই কোয়েতে। ছবির নাম ‘লন্ডন রিভার’। ছবি দেখতে বসে মনে হল এরকম বেশ কিছু নাম, বেশ কিছু সম্পর্ক আমার জীবন থেকেও কবেকার মত চিহ্নহীন হয়ে গেছে, এখন তাদের আমি খুঁজছি... ভীষণভাবে খুঁজছি। কিন্তু কোনও লাভ নেই... কারণ তারা এখন আমার হারিয়ে যাওয়ার দিনলিপিতে কালো কলমের আঁশটে গন্ধ শরীরে জড়িয়ে চাপা পড়ে গেছে...তাদের হিসেব নিকেশ আজকাল রোজ জীবনের দাঁড়িপাল্লায় চুরি হয়ে যাচ্ছে...
Comments
Post a Comment