Dolchhut Printed 5th Edition - Poetry
কবিতা
রাহুল দেব বর্মন-এর কবিতাগুচ্ছ
আমার একটা কান্না আমি খুঁজে পাচ্ছিনা …
চোখ চুল্কোলে, শুধু সী ভিউ হোটেলের রাশ জেগে ওঠে
তোমার মুখ থেকে নোয়ানো আলো,
আর চুল থেকে বালি
ঝরে পড়ে ..।
*
চোখ চুল্কোলে, শুধু সী ভিউ হোটেলের রাশ জেগে ওঠে
তোমার মুখ থেকে নোয়ানো আলো,
আর চুল থেকে বালি
ঝরে পড়ে ..।
*
রিনি মাসি বলতেন যা কিছু নিজের তা আগলে রাখতে হয় ..।
নাহলে হারিয়ে যায় ...
একেকটা হওয়া উড়ে আসে, আরেকটার পাশ দিয়ে
বালির পাশে বালি, দমহনির চর ..। হয়ে ওঠে
ইন্দু, স্বাগতা, পেরিয়ে পেরিজাদ-এর
মন হয়ে উঠছি আমি
*
শুধু মৃণালিনীর পাড়া জানে
বৃষ্টির মানে
ধু ধু আসে, হাওয়াদের পিছু আসে...
সে শুধু নিজের ভিতর থেকে বাহির ঝাপসা দেখে
শাল পাতার শিরা জুড়ে জল লেগে থাকে ...
কাদা-মাঠে শুয়ে থাকে বিকেলের স্নান ..।
মৃণালিনীর পাড়া জানে বৃষ্টির গান ...
ধু ধু আসে, হাওয়াদের পিছু আসে...
সে শুধু নিজের ভিতর থেকে বাহির ঝাপসা দেখে
শাল পাতার শিরা জুড়ে জল লেগে থাকে ...
কাদা-মাঠে শুয়ে থাকে বিকেলের স্নান ..।
মৃণালিনীর পাড়া জানে বৃষ্টির গান ...
*
তারপর
সন্ধে হয়ে এলে
বুকের চড়ায় শালিকের ডানার মতো ছায়ারা নেমে আসবে ...
ঘাসের ওম মেখে জ্যোৎস্না শবরী তৈরি হলে
শস্য ক্ষেত্র ডুবে যেতে চাইবে চাঁদের আলোয় ..।
জোনাকির মতো একটানা বিবাহ সঙ্গীতের আবহ ভেসে এলে
হাসির ছলে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে নিজের নিজের মতো করে ...
শুধু ...
একেকটা হাসির একেকটা নাম দিতে দিতে
পাথরের কোলে ঘুমে এলিয়ে পড়বে শুকতারার সন্ধে ইচ্ছেগুলি ..
বুকের চড়ায় শালিকের ডানার মতো ছায়ারা নেমে আসবে ...
ঘাসের ওম মেখে জ্যোৎস্না শবরী তৈরি হলে
শস্য ক্ষেত্র ডুবে যেতে চাইবে চাঁদের আলোয় ..।
জোনাকির মতো একটানা বিবাহ সঙ্গীতের আবহ ভেসে এলে
হাসির ছলে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে নিজের নিজের মতো করে ...
শুধু ...
একেকটা হাসির একেকটা নাম দিতে দিতে
পাথরের কোলে ঘুমে এলিয়ে পড়বে শুকতারার সন্ধে ইচ্ছেগুলি ..
দু’টি কবিতা
দেবাংশু চক্রবর্তী-এর কবিতা
লজ্জা - দেবাংশু
চক্রবর্তী
এই যে ও
বলল, স্নিগ্ধ আকাশের মতো ভালো থেকো। বলল,
অদাহ্য
নাভিকুণ্ডের মতো জ্বলে থেকো আজীবন।তারপর না
বলে চলে
গেল একলাটি ফেলে।আমিও যেভাবে বাধ্য
রাত্রি-পুরুষের
মতো অক্ষরে অক্ষরে পালন করলাম সব।ফিরতে
পারব না
জেনেও অনেকটা রোদ,অনেক চাঁদ টপকে আষ্টেপৃষ্ঠে
জড়িয়ে ধরলাম
ঋণার্ত অন্বয়, একে কীভাবে
নেবেন ঈশ্বর!
কান্না
না হয় চাপলাম কষ্ট করে, লজ্জাগুলো লুকোই কীভাবে?
অন্তর্বাহী - দেবাংশু
চক্রবর্তী
ধারালো
বিকেল বেয়ে সন্ধ্যা নামল বারান্দায়।
নক্ষত্র-সমেত
চাঁদ, চাঁদের আলোয় ভেজা টবের গোলাপ,
বাঁপাশে
আধখোলা বিনয় মজুমদার, সবকিছু নিমেষে
স্থবির
হয়ে মিশে গেল অন্ধ পাখির মতো। অন্ধকারে
ইতস্তত
পড়ে থাকা আমার শব্দবিন্যাস গোত্রহীন চরের
মতো একে
একে উড়ে গেল বিষণ্ণ প্রদেশে।যে চেয়ারে
বসে তোমায়
দেখতাম চিরকাল, সেই চেয়ারে দেখি আমার
ক্লান্ত
ছায়া ঘুমিয়ে পড়েছে হঠাৎ। আর আমি উল্কাপতনের
শব্দে ঈশ্বরপ্রাপ্তি
হয়েছে ভেবে আহ্লাদে আটখানা হয়ে
কৃপণ নদীর
মতো থেমে গেছি মোহনার আগেই।
দীর্ঘ কবিতা
মেঘ বলেছে জলকে চলে মেয়ে – মৃগাঙ্কশেখর গঙ্গোপাধ্যায়
ফিরে
এসো নদীটির তীরে – সৌরভ ভট্টাচার্য
এখন সকলে মিলে ঘাসের ওপরে বসে আছি
বসে আছি গোল হয়ে মন্দিরের পাশে এক মাঠে
ফুটবলে ধাক্কা লেগে দূরে কোনো সূর্য ডুবেছে
মন্দির-খিলানে তার রাগ যেন লাল হয়ে পড়ে।
আমরা সকলে মিলে ‘পুজো ডাকে’ ফিরে আসি গ্রামে
দুই বিজয়ার মাঝে ঝুলে থাকে যেটুকু সময়
গ্রামের পুজোর মত তাও আজ বারোয়ারী করে
দেব বলে। কিংবা জানি, ছিঁড়ে যাওয়া ঘুড়িদের মত
যেসব কথারা আর উড়বে না কোনোদিনও ভুলে
বন্ধুরা মিলে তাই হেসে হেসে ভাগ করে নেব।
চুল ঘেঁটে এইবার এলোমেলো হাওয়া চলে গেল
আমাদের কথারাও একতারা হাতের বাউল
ঠোঁটের ডগার থেকে দিক্হীনভাবে ঝরে যায়
অথবা আদৌ কোনো কথা নেই- শব্দের ছেনালি করেছি।
টিনের শব্দ নিয়ে দূরে এক ঝালমুড়িঅলা
হেঁটে হেঁটে ফিরে যায় আমাদের স্মৃতির মতন
রামের নেশায় লাল সেইসব দিন মনে পড়ে
মনে পড়ে আমাদের সকলের স্বপ্ন ছিল কিছু।
শুভেন্দু চিকিৎসক হবে বলে আশা ছিল তার
এখন শহরে কোনো ওষুধের দোকান চালায়;
ব্যবসা মন্দ নয়- আয়-টায় শুনেছি ভালোই
তবুও এখন তার ঘাস ছেঁড়া দেখে কষ্ট হয়।
রথীন পাশেই ছিল, এইবার তার ডাক এলো
শুভেন্দু শুধোয় তাকে, “বল তোর খবর কেমন?
এখনো লিখিস নাকি সেইসব ছেড়েছুড়ে দিয়ে
ভালোমানুষের মত ট্রামে-বাসে পরিচিত ছবি?”
হাঁটুর ওপরে হাত আড়াআড়ি রেখেই রথীন
ঈষৎ হেসেই বলে- “এখনো লিখছি তবে, তার
প্রকৃতি এখন অন্য। শুধুই নিজের জন্য লেখা
তার বেশি আর কিছু নয়...”
সবাই একটুখানি চুপ্চাপ ছিলাম এবার
সবার মতেই ঠিক চার কাপ চা নেওয়া হ’ল
সতর্ক চুমুক দিয়ে মাথা তুলে অতীশকে দেখি
চিরকাল চুপচাপ- আজকেও কথাই বলেনি।
ছেলেবেলা থেকে তাকে খুব ভালো করে চিনি আমি
লেখাপড়া সাদামাটা, তারপর চাকুরির খোঁজে
ব্যর্থ হয়ে শেষে এই গ্রামের খুপরি এক ঘরে
মুদির দোকানে বসে- একা সংসার চলে যায়।
এইটাকে মোটামুটি পরিচয় বলা যায় তার
যদিও আড়ালে এক অন্য কোনো পরিচয় আছে
শরীর মনের ঘোরে যখন সে নতুন যুবক
আতরগন্ধী এক নারীকে সে ভালোবেসেছিল।
তারপর বলা যায় সেরকম আর কিছু নেই
যা দিয়ে নতুন কোন গল্পের প্লট খোঁজা যায়।
এখন সকলে মিলে ঘাসের ওপরে বসে আছি
বসে আছি গোল হয়ে মন্দিরের পাশে এক মাঠে
ফুটবলে ধাক্কা লেগে দূরে কোনো সূর্য ডুবেছে
মন্দির-খিলানে তার রাগ যেন লাল হয়ে পড়ে।
আমরা সকলে মিলে ‘পুজো ডাকে’ ফিরে আসি গ্রামে
দুই বিজয়ার মাঝে ঝুলে থাকে যেটুকু সময়
গ্রামের পুজোর মত তাও আজ বারোয়ারী করে
দেব বলে। কিংবা জানি, ছিঁড়ে যাওয়া ঘুড়িদের মত
যেসব কথারা আর উড়বে না কোনোদিনও ভুলে
বন্ধুরা মিলে তাই হেসে হেসে ভাগ করে নেব।
চুল ঘেঁটে এইবার এলোমেলো হাওয়া চলে গেল
আমাদের কথারাও একতারা হাতের বাউল
ঠোঁটের ডগার থেকে দিক্হীনভাবে ঝরে যায়
অথবা আদৌ কোনো কথা নেই- শব্দের ছেনালি করেছি।
টিনের শব্দ নিয়ে দূরে এক ঝালমুড়িঅলা
হেঁটে হেঁটে ফিরে যায় আমাদের স্মৃতির মতন
রামের নেশায় লাল সেইসব দিন মনে পড়ে
মনে পড়ে আমাদের সকলের স্বপ্ন ছিল কিছু।
শুভেন্দু চিকিৎসক হবে বলে আশা ছিল তার
এখন শহরে কোনো ওষুধের দোকান চালায়;
ব্যবসা মন্দ নয়- আয়-টায় শুনেছি ভালোই
তবুও এখন তার ঘাস ছেঁড়া দেখে কষ্ট হয়।
রথীন পাশেই ছিল, এইবার তার ডাক এলো
শুভেন্দু শুধোয় তাকে, “বল তোর খবর কেমন?
এখনো লিখিস নাকি সেইসব ছেড়েছুড়ে দিয়ে
ভালোমানুষের মত ট্রামে-বাসে পরিচিত ছবি?”
হাঁটুর ওপরে হাত আড়াআড়ি রেখেই রথীন
ঈষৎ হেসেই বলে- “এখনো লিখছি তবে, তার
প্রকৃতি এখন অন্য। শুধুই নিজের জন্য লেখা
তার বেশি আর কিছু নয়...”
সবাই একটুখানি চুপ্চাপ ছিলাম এবার
সবার মতেই ঠিক চার কাপ চা নেওয়া হ’ল
সতর্ক চুমুক দিয়ে মাথা তুলে অতীশকে দেখি
চিরকাল চুপচাপ- আজকেও কথাই বলেনি।
ছেলেবেলা থেকে তাকে খুব ভালো করে চিনি আমি
লেখাপড়া সাদামাটা, তারপর চাকুরির খোঁজে
ব্যর্থ হয়ে শেষে এই গ্রামের খুপরি এক ঘরে
মুদির দোকানে বসে- একা সংসার চলে যায়।
এইটাকে মোটামুটি পরিচয় বলা যায় তার
যদিও আড়ালে এক অন্য কোনো পরিচয় আছে
শরীর মনের ঘোরে যখন সে নতুন যুবক
আতরগন্ধী এক নারীকে সে ভালোবেসেছিল।
তারপর বলা যায় সেরকম আর কিছু নেই
যা দিয়ে নতুন কোন গল্পের প্লট খোঁজা যায়।
হঠাৎ খেয়াল হ’ল- কেউ কিছু শুধোচ্ছে আমাকে
নিজের কাছেই আজ এইবার ছোট লাগে কিছু-
আজকের জমায়েতে সব কথা গিলেছি হাঁ ক’রে
অন্যের দুঃখয় তৃপ্তি পেতে ভালোলাগে জানি।
অথচ ‘আমার কথা’- যেটুকু শুনেছি শুধু নিজে
অনেকদিনের পর পুরাতন প্রেমিকাকে দেখে
তার বরের সামনে অভিনয় করার মতন
অস্বোয়াস্তি নিয়ে যেন এইসব বলে দিতে হবে!
ছেলেবেলা থেকে আমি ইচ্ছে ছিল অধ্যাপক হব
আজ তার যবনিকা পড়ে গ্যাছে কেরানীগিরিতে।
আমাকে নীরব দেখে সকলেই চুপ করে যায়
ঠাণ্ডা হাওয়ায় সব জড়োসড়ো হয়ে আসি কাছে
পরিবেশ লঘু করে অতীশকে ডেকেছি সকলে
বলেছি এবার বল তোর ‘সে’ এখন কেমন?
শুভেন্দু নিজেই তার জবাবের ভার নিয়ে বলে
অতীত পুরোনো কথা- জীবনকে স্রোতহীন করে
সেইসব ভুলে গিয়ে একটুখানি বিবেচক হয়ে
বুঝতে চেষ্টা কর ভালোবাসা জীবনের বুকে
একটা পৃষ্ঠা শুধু, জীবনের গোটাটাই নয়...
অতীশ এবার ধীরে আমাদের চোখে চোখ রাখে
ঈষৎ হেসেই বলে,- “জীবনের কথা ভাবিনি তো
ভেবেছি শুধুই রোজ আমি নিজে কতখানি সৎ
কিংবা বেঁচেছি আমি আংশিক অহঙ্কার নিয়ে?”
এই বলে ধীরে ধীরে উঠে বসে পড়েছে অতীশ
হেসে বলে- “ আজ যাই, পরে কোনোদিনো কথা হবে ”।
আমরাও এইবার উঠে পড়ি বাড়ির পথেই
পাশ দিয়ে দেখি এক ঝালমুড়িঅলা চলে যায়...
রোজকার মত আজ খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ি রাতে
তবুও কেমন যেন ঘুমহীন নরম আবেশে
বারান্দায় গিয়ে একা নিজের অপেক্ষা করি যেন।
মোষের পিঠের মত আকাশের শরীরের থেকে
স্নানের জলের রেখা টুপটাপ বৃষ্টিতে ঝরে
আকাশে এখন কোনো চাঁদ নেই, তারারাও নেই
অথবা এমন রাতে সকলেই অভিসারে যায়...
গ্রামের নদীর দিকে দূরতর চোখ চলে যায়
এখন কেমন জানি অতীশের কথা মনে পড়ে
মনে হয় আমরা কি নিজেদের অনুভবে সৎ ?
হঠাৎ করেই দেখি আকাশের মেঘ কেটে গ্যাছে
তার মাঝে স্নানরতা একফালি চাঁদ দেখা যায়
আবার বৃষ্টি হবে আবার সে হারাবে আয়াসে
অন্য আকাশ থেকে চাঁদ তবে কেন ফিরে আসে ?
হলুদ নদীর জল এঁকেবেঁকে দূরে চলে যায়
এ নদীর শেষে কী আমরা তো নিজেও জানিনা
প্রতিটা জলের কণা এইভাবে ব্যয় করে শেষে
নামহীন এই নদী একদিন কোথায় হারাবে?
এই ছবি ধীরে ধীরে বিঁধে যায় চোখের ভিতর
অতীতের কথা নিয়ে নদীর শরীরে তবু স্রোত
রাতের শরীরে বলে ফেলে যাওয়া তারার আদর
সমস্ত বিবেচনা একদিন শেষ হয়ে গেলে
আমরা সত্যি খুঁজি জীবনের ওপারে জীবনে।
রাত-নারী-যশ-ঘুম একদিন সব শেষ হলে
আমরা সকলে বাঁচি শুধু এক সৎ বোধ নিয়ে
নদীর জলের স্রোতে যেই বোধ চাঁদের শরীরে।
নিজের কাছেই আজ এইবার ছোট লাগে কিছু-
আজকের জমায়েতে সব কথা গিলেছি হাঁ ক’রে
অন্যের দুঃখয় তৃপ্তি পেতে ভালোলাগে জানি।
অথচ ‘আমার কথা’- যেটুকু শুনেছি শুধু নিজে
অনেকদিনের পর পুরাতন প্রেমিকাকে দেখে
তার বরের সামনে অভিনয় করার মতন
অস্বোয়াস্তি নিয়ে যেন এইসব বলে দিতে হবে!
ছেলেবেলা থেকে আমি ইচ্ছে ছিল অধ্যাপক হব
আজ তার যবনিকা পড়ে গ্যাছে কেরানীগিরিতে।
আমাকে নীরব দেখে সকলেই চুপ করে যায়
ঠাণ্ডা হাওয়ায় সব জড়োসড়ো হয়ে আসি কাছে
পরিবেশ লঘু করে অতীশকে ডেকেছি সকলে
বলেছি এবার বল তোর ‘সে’ এখন কেমন?
শুভেন্দু নিজেই তার জবাবের ভার নিয়ে বলে
অতীত পুরোনো কথা- জীবনকে স্রোতহীন করে
সেইসব ভুলে গিয়ে একটুখানি বিবেচক হয়ে
বুঝতে চেষ্টা কর ভালোবাসা জীবনের বুকে
একটা পৃষ্ঠা শুধু, জীবনের গোটাটাই নয়...
অতীশ এবার ধীরে আমাদের চোখে চোখ রাখে
ঈষৎ হেসেই বলে,- “জীবনের কথা ভাবিনি তো
ভেবেছি শুধুই রোজ আমি নিজে কতখানি সৎ
কিংবা বেঁচেছি আমি আংশিক অহঙ্কার নিয়ে?”
এই বলে ধীরে ধীরে উঠে বসে পড়েছে অতীশ
হেসে বলে- “ আজ যাই, পরে কোনোদিনো কথা হবে ”।
আমরাও এইবার উঠে পড়ি বাড়ির পথেই
পাশ দিয়ে দেখি এক ঝালমুড়িঅলা চলে যায়...
রোজকার মত আজ খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ি রাতে
তবুও কেমন যেন ঘুমহীন নরম আবেশে
বারান্দায় গিয়ে একা নিজের অপেক্ষা করি যেন।
মোষের পিঠের মত আকাশের শরীরের থেকে
স্নানের জলের রেখা টুপটাপ বৃষ্টিতে ঝরে
আকাশে এখন কোনো চাঁদ নেই, তারারাও নেই
অথবা এমন রাতে সকলেই অভিসারে যায়...
গ্রামের নদীর দিকে দূরতর চোখ চলে যায়
এখন কেমন জানি অতীশের কথা মনে পড়ে
মনে হয় আমরা কি নিজেদের অনুভবে সৎ ?
হঠাৎ করেই দেখি আকাশের মেঘ কেটে গ্যাছে
তার মাঝে স্নানরতা একফালি চাঁদ দেখা যায়
আবার বৃষ্টি হবে আবার সে হারাবে আয়াসে
অন্য আকাশ থেকে চাঁদ তবে কেন ফিরে আসে ?
হলুদ নদীর জল এঁকেবেঁকে দূরে চলে যায়
এ নদীর শেষে কী আমরা তো নিজেও জানিনা
প্রতিটা জলের কণা এইভাবে ব্যয় করে শেষে
নামহীন এই নদী একদিন কোথায় হারাবে?
এই ছবি ধীরে ধীরে বিঁধে যায় চোখের ভিতর
অতীতের কথা নিয়ে নদীর শরীরে তবু স্রোত
রাতের শরীরে বলে ফেলে যাওয়া তারার আদর
সমস্ত বিবেচনা একদিন শেষ হয়ে গেলে
আমরা সত্যি খুঁজি জীবনের ওপারে জীবনে।
রাত-নারী-যশ-ঘুম একদিন সব শেষ হলে
আমরা সকলে বাঁচি শুধু এক সৎ বোধ নিয়ে
নদীর জলের স্রোতে যেই বোধ চাঁদের শরীরে।
কখন নিজের ভুলে ঘরের বাইরে চলে যাই
যেখানে বোধের স্রোত জীবনের চেয়েও গভীর
যেখানে চেতনা নিয়ে একদিন ফুল ফুটে ওঠে
চলে যাই নামহীন সেই কোনো নদীটির তীরে
যেখানে সমস্ত জল কিশোরীর মত দুলে ওঠে
নরম গন্ধে ভরা অতীশের ক্লান্ত শরীরে...
যেখানে বোধের স্রোত জীবনের চেয়েও গভীর
যেখানে চেতনা নিয়ে একদিন ফুল ফুটে ওঠে
চলে যাই নামহীন সেই কোনো নদীটির তীরে
যেখানে সমস্ত জল কিশোরীর মত দুলে ওঠে
নরম গন্ধে ভরা অতীশের ক্লান্ত শরীরে...
চিঠির সময় - সুচেতা রায়
০১/০১/১১
অনেকদিন
খরায় কাটিয়েছি,
এখন
একটু জল চাই।
তোমার
মাটি খোঁড়া গর্তে
তুমি
জলের মূর্তি রেখেছ।
আমি
স্বার্থপরের মতো শেষ করছি সময়।।
০৩/০৩/১১
আমি
জানি, প্রতিদিন পাল্টানো দোষের।
পবিত্রতা
চেয়েছি বলে, তোমার ভুলগুলোও স্বপ্ন ভাবি।
কান্না-ভাবনা
এইসব খুব অল্প,
উপরে
যাও। কোনো ভয় নেই।
আমি
কালো পিঁপড়ের ঠোঁটের ভাষাও বুঝতে পারি,
আর তোমাকে
ভুল বুঝলেও, চিনতে অসুবিধে হবে না।।
২০১৩
জানো,
সেদিন অনেক রক্ত দেখেছি।
অত রক্ত
দেখলে ভয় করে, জানো?
অবশ
হাত-পা নিয়ে ঠিকানা পাল্টাব,
আর মৃত্যু
দেখব না।
তোমাকে
রক্ত নিয়ে কাজ করায় না তো? ভয় করে।।
০৮/০৮/২০১৫
সেদিন
দেখেছি,শহরের উঁচু পাচিল থেকে,
শহরটাকে
চিনতে পারছি না।
অত উঁচুতে
ওঠার কোনো ভাষা নেই,
নিঃশ্বাস
বন্ধ করলেও, আমি সেখানে যাচ্ছি না।
নেমে
এসো, আমি চিনতে পারছি না।।
সিঁড়ির
কোনো ভূমিকা থাকবে না, আমাদের সম্পর্কে।
একটি কবিতা
কিউ - দেবব্রত
কর বিশ্বাস
অসংযত যত্নে
বহুদূর গলেছে মোম, তার চিৎকার,
তার হিসেব-নিকেশের
ভাষা যাচ্ছেতাই জ্বলমান।
রাস্তা
ঘুমোবে কথা ছিল, অনুবাদের রাতে ঝড়
খুব নিঃসঙ্গ
ঝড় পেরিয়ে অন্ধ উঠোন কথা ছিল।
আর যে সব
বাড়ি বাড়ি ফেরিওয়ালা ঘোরে আজ
মায়ের আঁচলে
বাঁধা রান্নাঘর আমি খুঁজি।
পুরনো এবং
ঝাঁকড়াচুলো, শোনো, গাছটি চিনি,
সেই আছাড়ি-পিছাড়ি
কোমলতা খসে পড়ে গেছে।
গাছটি উত্তর
দেবে, তুমি পাতায় প্রশ্ন লিখে এসো।
আনাহুত - দেবরাজ চক্রবর্তী
আমি তো
কেউ নই!
শুধু দুই
মুহুর্তের আলিঙ্গন ।
ঘূর্ণায়মান গ্রহপুঞ্জ থেকে
আছড়ে পড়েছি
প্রাচীন পাথরে ।
ওই পাথরের
নাম পৃথিবীও হতে
পারে ।
কুহেলি - ইন্দ্রাণী
মুখোপাধ্যায়
আগাছা ফুরিয়ে
এলে ভ্রমর-গন্ধী দুই চোখ
বিশ্বস্ততা
খুঁজে ফেরে কিশোরী বারান্দায়
পুরাতনী
যা কিছু প্রলাপ,স্বাধীনতা
ছাপিয়েছে
অসম্ভব কৌতূহলী বাকসংযম
এও কি বাহুল্য
নয়? নিদেনপক্ষে কুহেলিকা?
পর্দানশীন
ক্ষতে অযথাই স্বেদ জমে ওঠে
অনায়াস
দক্ষতায় স্মৃতিচিহ্ন রেখে যায় ঘুম
মরীচিকা
ব্রাত্য হয় মূহুর্তের উদাসীনতায়
তুমিও অশান্ত
হও,তুমিও উদগ্র হও কিছু
অথবা মাড়িয়ে
ফেলো ব্যবহৃত পোশাকের স্তূপ
পরাজয় এনে
দাও অনুক্ষণ সূর্যাস্তের স্নানে
ফিরে এসো
অহেতুক—সে তোমার মাধুকরী হোক
ন' মাস এবং আরো অনেক দিন -২ - রুহিনা ফেরদৌস
বড় বড় স্বপ্নগুলো
মাঝে মাঝে ঝুপ করে নিভে যায়
পথে পথে
আলো জ্বালিয়ে রাখে কিছু লোক
চটপটি,বাদামওয়ালা
ফিরে গেছে সারাদিনের গল্প মাথায়
নিঃসঙ্গ
নির্দ্বিধায় বসে আছে রাতমাস্টার
দিন হলেই
ছুটি হয়ে যাবে আর একবার
দূর থেকে
গোঙানির শব্দ শুনে ভাবছি,
কে ভাল নেই -
আগন্তুকের
সাথে দামাদামি করে চলেছে মহিলা অনেকক্ষণ
আমাদের
সময় রাত সাড়ে এগারোটা থেকে বারোটা বেশি হলে
তারপরেই
গেট বন্ধ হয়ে যাবে,
কোন চাবিও নেই আমার কাছে
প্রিয় হ্যালোজেন
আলোটা পার হয়ে যাচ্ছি
আকাশে আজও
অগণিত তারা দেখা গেলো না।
অনুভব তোমাকে..। - শ্রদ্ধা পত্রনবীশ
অনুভব, একদিন ছুঁয়েছো
গোপনে
আমাকে আদর
তুমি করো না আবার
এবার নির্দয়ভাবে ছুঁড়ে ফেলে দাও
এ যন্ত্রনা
বীজ হোক হৃদয়ে আমার
রক্ত নয়, স্বেদ নয়, পুঁজ় নয়-
শুধু
ফোঁটা ফোঁটা
সত্য ঢেলে জাগাবো তোমায়
ফুটবে ফুটবেই
ফুল রক্তকরবী
থাকবে না
সাজি ভরে তোলবার দায়
মৃত্যু
নয়, জীবনেই মুক্তি খুঁজি আমি-
অনুভব বাতাসের
সঙ্গে পাঠিও
এক গুচ্ছ
অভিযোগ আর সব ক্ষমা
আমাকে আজলা
ভরে খাইও অমিয়
কবিতার
শেষে এসে স্তব্ধতার ছুটি
তোমাকে
আমাকে নিয়ে দীর্ঘ বিশ্রাম
অনুভব, বলবো না
"চেনো কি আমাকে?"
সেইদিনো
চাইবো না কবিতার দাম।।
গাছ-মানুষ – নীলাঞ্জন দরিপা
কাঠবেড়ালির
গায়ে লেখা থেকে যায় ডাকনাম |
একফোঁটা
ধরেছিলি পাতার শিরার সীমানায় ;
ধরে রেখে
দিস, তাকে ধরে রাখা যায় যদ্দূর ;
আমি তো
প্রবাসী ঘুম ভাঙিয়ে ফিরিনি এখনো |
ছায়াপথ
শুয়ে থাকে, সময় পাথুরে লাল রং ;
গাছ, তোর পাশ
দিয়ে দৌড়ে পেরোয় শৈশব!
একফোঁটা
ধরেছিলি, অবশেষে ভিজেছিলি তুই,
তুই তো
শিমূল নোস, আমি তাই তুলোও খুঁজিনি;
আরামের
মানে গুলো বয়সের সাথে বদলায়;
তবু কেন
আজীবন পরিযায়ী পাখি হয়ে উড়ি-
অবিরাম
অবসরে পরিচিত অবচেতনায়,
গাছ, তোর ডাকনামে
ডাকতে ইচ্ছে করে খুব!
আমার পায়ের
ধুলো ফেরার সময় গুনে চলে,
যেমন গুঁড়িতে
তোর খোলস ছেড়েছে একে একে;
সে কথারা
উপলব্ধির কাছে বন্ধক রাখা,
আমিও কোটরে
রাখা চিঠিটাতে লিখে দিয়ে গেছি-
পৃথিবীর
সব রং যেন ছিল তোর ফুলে আঁকা!
গাছ, তোর স্বপ্নেতে
আমিও কি গাছ হয়ে উঠি ?
ক্ষতি- প্রীতম
চট্টোপাধ্যায়
এই সিক্ত
শহরের আর্দ্রতা,
পালকভর্তি
রূপকথা
সব নেমে
আসুক,
ঝরে পড়ুক
কোনো মেঘবালিকার পা'য়...
যদি দূরে
কোনো চাঁদ
কলঙ্কের
দাগে মূর্চ্ছা যায়,
যাক...
ক্ষতি নেই
তবু কিছু
কেটে যাওয়া ঘুড়ির মতো
ভেসে বেড়াব,
কোনো নরম
কোলে নেব আশ্রয়;
যদি না
তুমি ফিরিয়ে দাও
নিঃস্ব – নির্মাল্য সেনগুপ্ত
তুমি
তাকিয়ে দেখ পকেটের ভাঁজে
কত লজ্জা আবার
অঙ্গীকারও লুকিয়ে আছে।
দু চোখ
বুজে নাই বা হলে প্রেমিকসুলভ
গ্রিটিংস
কার্ডে নাম লেখোনি, চিঠির শেষে
এসব
ভীষণ মনখারাপের আগের কথা
ছোট্ট
হৃদয় খেলনা হবে, পাজর ঘেঁষে
তবে
তুমি যতই ভাবো ফাঁকি
আমি
আদর করে তাকে শুধু
পাগলি
বলে ডাকি।
আবার
যখন রূপকথাতে ছবির পাশে
যখন
তখন ধরছ আকাশ, দূর জাহাজও
ফুলের
ছোয়ায় রঙ ছিটিয়ে গড়ছ বিকেল
পায়রা
ভেবে উড়িয়ে দিচ্ছ পক্ষীরাজও
রাজকন্যে,
ভীষণ ভালো থেকো
আমি
দৈত্য হতে পারি যদি
যুদ্ধ
হতে শেখ।
আমিও
তখন তোমার গানে ছন্দ মেপে
গাইব
পাহাড়, নদীর কথা একলা রাতে
সকাল
হলেই হাসির গন্ধে ছুটবে সবাই
তোমার
ঠোঁটের মিষ্টি ছোয়ায় মন সারাতে
এমন
করেই মুখ লুকিয়ে হাসো
আমিও নিঃস্ব হতে পারি যদি
বৃষ্টি ভালবাসো...
বর্ডার- পৃথ্বীরাজ চৌধুরী
আগুনের গ্রাম ছেড়ে পালাতে পালাতে
বর্ডার পেরিয়ে লোকটা হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল।
সোমবার গেল
মঙ্গল, বুধ...রবিবার পার হয়ে গেল...
পরিবার পার হল না
অতিক্রম – অংশুমান
আমার জানালায় অসহায় ভেসে থাকে
অস্তগামী এক সূর্য্য।
ফিরে যাওয়া পাখিদের সুর আমায় এসে ছুঁলে
আমি শিখি,
পরবর্তী গোধূলির রঙ আসলে অভিমান।
মাঝে মাঝে দেখি এদিক থেকে ওদিক
ঘষে যাওয়া সিঁদুর লেগে থাকে
আর সন্ধ্যাচিহ্নের আড়ালে ভাসতে থাকে দহন-গন্ধ।
আমার দৃষ্টিস্থিরতায়,
অস্থির সব অন্ধকারের কণারা এসে ভিড় করে
কমিয়ে দেয় অভিমানের স্বর...
Comments
Post a Comment