বিষয় : চলচ্চিত্র
জাফরের আঁচড় এবং কয়েকটি সামাজিক
ও আইনের কাটাকুটি - # তন্ময়?
দুনিয়াতে শিল্পের সুত্রে খুব অস্পষ্ট একটা বিষয়
যেটা মাঝেমাঝেই আমাদের খুব গুলিয়ে দেয় যে, একজন শিল্পী হতে গেলে ঠিক কোন এলিমেন্টটা
বেশি জরুরি? বিতর্ক-সমালোচনা,
না স্রেফ কয়েকটা ভাল কাজ, অর্থাৎ সাবেকি ভাষায় কিছু
ভাল সৃষ্টি। না! আমার ঠিক জানা নেই। তবে যবে থেকে মানুষ শিল্পীকে সেলেব বানাতে শুরু
করেছিলো সেদিন থেকে আজ অবধি কিছু সাধারণ মানুষ নকলি বিতর্ক বেচে সেলিব্রিটি হয়ে ওঠেন কখনো কখনো, কিন্তু সেই সেলেবের গা থেকে তার সো কল্ড অ্যাটিচিউডের চল্টাটা খুব তাড়াতাড়ি ঝরে
পরে, আর যেটুকু অবশেষ পরে থেকে সেটা হল কয়েকটা ভাঁজ পরা কুঁচকে যাওয়া পেপার কাটিং, যেটাও কিছুদিন
পর জাজিমের তলায় লুকিয়ে রাখতে হয়। তা যাইহোক এরকম বাঁ-হাতের কাজকর্ম না চললে খবরের চ্যানেলগুলো খাবার জোটাবে কোথা থেকে বলুন তো? আর আমরা
যারা গসিপ করতে ভালবাসি তাদের পক্ষে টপিক খোঁজাটা খুব চাপের হয়ে যাবেনা কি? বন্ধুরা
আজ আমার আলোচনার বিষয় যদিও এটা নয়। কারণ এদের নিয়ে কথা বলতে গেলে রোলকলের খাতার পাতা
ফুরিয়ে যাবে। শিল্পীর গো–অ্যাস–ইউ-লাইকে এদের ভিড় যে বড়ই বেশি, তাই তো বাজারে এত কার্বন-ডাই-অক্সাইড
এর ঘনত্বের রমরমা।
আমার আজ স্পেশালি কথা বলব
এমন একজন মানুষকে ঘিরে যার কাজের মাপকাঠি বুঝে ওঠার আগেই বিতর্ক তার শ্বাসরুদ্ধ করে
দিয়েছে প্রতিবার। হ্যাঁ তিনিই জাফার পানাহি। একজন পার্সিয়ান মানুষ। জন্ম ১১ই জুলাই
১৯৬০। মেয়ানেহ্ ,
পূর্ব অ্যাজারবাইজান, ইরান। মাএ দশ বছর বয়সের সেই ছাপোষা
ছেলেটি এমন এক বই লিখে ফেলেছিল যেটি খুব অদ্ভুদভাবে তখন একটি লিটেরারী ফেস্টিভ্যালে
প্রথমের শিরোপা জিতে নিলো। ঠিক সেই সময় থেকেই সিনে দুনিয়ার সাথে তার আত্মজ হবার দিন
শুরু হয়ে গিয়েছিলো। ৮ এম.এম এর চোখ দিয়ে তার তখনকার মুভিং ইমেজের মধ্যে অভিনয় এবং নির্দেশনা
দুই সারতে হতো। পরস্পর চলতে থাকলো স্টিল ইমেজের গড়াপেটা। স্বদেশী মিলিটারি সার্ভিসে
থাকাকালীন এবং ইরাক-ইরান (১৯৮০-১৯৮৮) যুদ্ধ চলাকালীন তিনি সমসাময়িক বিষয় নিয়ে একটি
তথ্যচিএ-ও নির্মাণ করেন। ১৯৮৮ সালে ইরান ব্রডকাস্টিং কলেজ থেকে সিনেমা পরিচালনায় স্নাতক
হবার পর তিনি ইরানের টেলিভিশনের জন্য বেশকিছু টেলিমুভি বানান। এবং যে খবরটি প্রায় বেশিরভাগ
মানুষের কাছেই আজানা সেটি হল যে তিনি ইরানের অন্যতম বিখ্যাত পরিচালক আব্বাস কিয়ারোসস্তামির
‘থ্রু দ্ অলিভ ট্রিস্’
(১৯৯৪) এর মতো বিখ্যাত ছবিতে পরিচালনায় সহায়তার পাশাপাশি তিনি
অভিনয় করেছিলেন। এর পাশাপাশি তৎকালীন তিনি বেশকিছু ছবি পরিচালনা করে সারা পৃথিবী থেকে
অসংখ্য সম্মান অর্জন করেছিলেন। এই সময়কার ছবিগুলি হল ‘দ্ আউন্ডেড
হেডস্’ (ইয়ারালি বস্লার,
১৯৮৮) {স্বল্পদৈর্ঘের তথ্যচিএ}, ‘কিশ্’ (১৯৯১) {৪৫ মিঃ
এর তথ্যচিএ}, ‘দ্ ফ্রেন্ড’
(দোস্ত, ১৯৯২) {স্বল্পদৈর্ঘের কাহিনীচিএ}, ‘দ্ লাস্ট
এস্কাম্’ (আখরি ইমতেহান,
১৯৯২) {পূর্ণদৈর্ঘের কাহিনীচিত্র}। ‘কিশ’ ছবিটি তৈরির
সাথেসাথে তিনি ইরানী পরিচালক ‘কাম্বুজিয়া পারতভি’-কে ‘দ্ ফিস্
(মাহি, ১৯৯১)’ ছবিটি পরিচালনা করতে সহায়তা করছিলেন। ‘দ্ লাস্ট এস্কাম্’ ছবিটি তৈরির
পরবর্তীতে তিনি বাহ্মান কিয়ারোসস্তামির টেলিতথ্যচিএ ‘সাফারি
বে দায়রে মুসাফির’(১৯৯৩)-য়ে আব্বাস কিয়ারোসস্তামি, হাসান দরাবি, জিন-প্যেরে-লিমসিন্
এর সাথে নিজস্ব চরিএে অভিনয় করেন।
পানাহির সেই অর্থে প্রথম
ন্যারেটিভ ছবি ‘দ্ হোয়াইট বেলুন’
(বাদকোনাকে্ সেফিদ্, ১৯৯৫) তৈরি হয় একটি ছোট্ট ইরানী
মেয়েকে ঘিরে যে নতুন বছরে একটা গোল্ডফিস্ কেনার জন্য পয়সার বায়না ধরে তার মার কাছে, যা অবশেষে
সে জোগাড়-ও করে ফেলে,
কিন্তু আশেপাশের কিছু মানুষ সেই ছোট্ট মেয়েটির নাদানির সুযোগ
নিয়ে সেই টাকা ছিনিয়ে নেয়,
যার সাথেসাথে সেই গোল্ডফিস্ কেনার স্বপ্নটাও কোথায় যেন হারিয়ে
যায়। ছবিটি ক্যানাস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘দ্ গোল্ডেন ফিল্ম’(১৯৯৫)
(Prix de la
Camera d'Or), নিউ ইয়র্ক ফিল্ম ক্রিটিকস্ সার্কেল অ্যায়ার্ড {শ্রেষ্ঠ
বিদেশি ভাষিক ছবি –
ইরান} (১৯৯৬), সুডবিউরি সিনেফেস্ট {শ্রেষ্ঠ
বিদেশি ছবি – ইরান} (১৯৯৫), সো্ পাওলো ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘ইন্টারন্যাশানাল
জুরি অ্যায়ার্ড’
(১৯৯৫), টোকিও ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ড অ্যায়ার্ড’ (১৯৯৫), ভাল্লাদোলিদ্
ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ডেন স্পাইক’(নমিনেশন)
(১৯৯৫) সহ বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত হয়। এরপর ১৯৯৭ তে তিনি ‘আরদেকৌল’ নামে পার্সিয়ান
ভাষায় ২৯ মিঃ-এর একটি স্বল্পদৈর্ঘের তথ্যচিএ বানান। ‘দ্ হোয়াইট
বেলুন’ ছবির রাজিয়ে নামের ছোট্ট মেয়েটি, যার এখনও পুরদস্তুর অভিনেএী হয়ে
ওঠা হয়নি (হয়তো আইনের ভয়েই), তার বাস্তবিক আইনসম্মত নাম আইদা মহম্মদ্খানি, জাফারের
তৃতীয় পরবর্তী ছবি ‘দ্ মিরর’
(১৯৯৭) –য়েও যে অন্যতম মুখ্য চরিএে অভিনয় করেছিল। ‘দ্ মিরর’ ছবিটি পানাহির
নিজস্ব প্রযোজনায় প্রথম ছবি। ছবি শুরু হয় স্কুলের ছুটির শেষে একটি ছোট্ট মেয়ের স্কুল
থেকে বেড়িয়ে তার মাকে খুঁজে না পাওয়া ও একলা রাস্তায় বেড়িয়ে নিজের ঠিকানা না জেনেই
বাড়ি ফেরার জার্নি দিয়ে। ছবিটি একটি তথ্যচিএ হতে গিয়েও একটা অভূতপূর্ব কাহিনীচিত্রে
রূপ নেয়। এই ছবিটি ইস্তানবুল ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ডেন
টিউলিপ’ (১৯৯৮), লোকার্নো ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ডেন লেপার্ড’ (১৯৯৭), সিঙ্গাপুর
ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘সিলভার স্ক্রিন অ্যায়ার্ড’ (১৯৯৮), ভাল্লাদোলিদ্
ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ডেন স্পাইক’ (নমিনেশন)
(১৯৯৭) সম্মান পেয়েছিল। এই বছরেই তিনি পারভিজ শাহ্বাজির ‘ট্র্যাভেলার
ফ্রম দ্য সাউথ’
–এ মুখ্য সম্পাদনার কাজ করেন।
২০০০-এর দশকের শুরুতে তিনি
আরও একবার স্ব-মহিমায় ক্যামেরার এলেন জামশঈদ্ আক্রামির তৈরি ‘ফ্রেন্ডলি
পারসুয়েশান : ইরানিয়ান সিনেমা আফটার দ্য ১৯৭৯ রিভলিউশান’ নামের একটি
১১৩ মিনিটের পূর্ণদৈর্ঘের তথ্যচিএে। এই বছরেই তার সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন ‘দ্য সার্কেল’ মুক্তি
পায়। ছবিটি ইরানের নারীজীবনের সামাজিক পোর্টেট হলেও, ছবিটির মাধ্যমে জাফর অশিক্ষা, অধর্ম, কুসংস্কার, গোঁড়ামি
ইত্যাদি নানা অসংগতিকপূর্ণ সামাজিক অবস্থানের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সারা পৃথিবীর মানুষের
সাথে। ছবিটিও বেজায় সারা দুনিয়ার সিনেপ্রেমী, সমালোচক, পরিচালক
সবার কাছ থেকে অসংখ্য প্রশংসা কুড়িয়ে নেয়। এর পরবর্তী ছবি প্রায় তিন বছরের গোঁড়ায়।
নাম ‘ক্রিমস্ন গোল্ড’
(২০০৩)। ছবিটি গড়ে ওঠে এক পিজা ডেলিভারি ড্রাইভারের রোজনামচাকে
ঘিরে। যখনই সে জীবনের কোনও একটি পথে বাক নেয় সমাজের কিছু ইম্ব্যালেনস্ মুহূর্ত সেই
ক্ষণেই তার কাঁধে চাপর বসায়। এবং এভাবে চলতে থাকে। হুসেনের বন্ধু আলি হঠাৎ এরমধ্যে
একদিন কারো একজনের হারিয়ে যাওয়া পার্স কুড়িয়ে পেলে সে আবিষ্কার করে, খুব দামী
এক নেকলেসের পেমেন্ট রিসিপ্ট। আর যেটা হুসেন কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনা। কিন্তু এই
হুসেনই নেক্ট কোনো রাতে এমনই এক উচ্চবিও জীবনের পরবাস করে। এই ছবিটি ও ‘দ্ সার্কেল’ দুটি ছবি
তার কাঁচিতেই মেক-ওভার সারে। এই ছবিটিও অসংখ্য সম্মানে মর্যাদা পায়। সেগুলি যথাক্রমে
: ক্যানাস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘সার্টেন রিগার্ড বিভাগে জুরি পুরষ্কার’ (২০০৩), শিকাগো
ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ড হুগো’ (২০০৩), বিলিসি
ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ড প্রমিথিউস্’ (২০০৪) এবং
ভাল্লাদোলিদ্ ইন্টারন্যাশানাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘গোল্ডেন স্পাইক’ (২০০৩) ।
এরপর ২০০৫ সালে পরপর দুটি ছবির সম্পাদনার কাজ করেছিলেন। যার মধ্যে প্রথমটি মাসুদ কিমিয়াইয়ের
‘ভারডিক্ট’ বা ‘হওঁক্ম্’। এবং দ্বিতীয়টি ইরানী চলচ্চিএের একটি আবশ্যিক ছবি ‘বর্ডার
কাফে’ বা ‘কাফে ট্রান্সিট’। পরিচালনা করেছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক তথা চিত্রনাট্যকার কাম্বুজিয়া
পারতভি। যার সাথে জাফারের সম্পর্কটি ছিল বেশ ট্রাজিক। কখনো বা অভিভাবক পরিচালক, কখনো প্রযোজক, কখনো সহকারী
চিত্রনাট্যকার আবার কখনোবা সম্পাদনা – চলচ্চিএের বিভিন্ন ভাষায় এই দুজন
মানুষ পরস্পরের দোসর হয়ে কাজ করে গেছেন। আবার ২০০৬ সালে মার্ক কইউন্সের ‘সিনেমা
ইরান’ ছবিতে নিজের উপস্থিতি যাপন করেছিলেন। এবছরেই ২০০৬ সালে তিনি আবার মহিলা জীবনের
সামাজিক বাঁধা নিয়ে তৈরি ক্রলেন ‘অফসাইড’। এপর্যন্ত এটিই তার শেষ ফিচার। এবং
এই ছবিটির জন্যই তিনি সর্বপ্রথম বার্লিন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘সিলভার
বিয়ার’ –এর মূর্তিটি তার হাত স্পর্শ করে। এবছরেই তিনি আরও একবার নাদের টি। হমায়ুনের তথ্যচিএ
‘ইরান : এ সিনেমাটিক রিভলিউসানে’ ধরা দেন। ২০০৭ সালে তিনি এরপর ‘আনটাইং
দ্য নট্’ নামে ৭ মিনিটের একটি ছোটছবি বানান। ২০০৯ সালে মহম্মদ রসৌলফের প্রখ্যাত ছবি ‘দ্ হোয়াইট
মিডোসে’ সম্পাদনার কাজ করেন। ২০১০ সালে তিনি আরও দুটি তথ্যচিএে কাজ করেন। প্রথমটি নাদের
টি। হমায়ুনের ‘সারক্লে ভিসিও’। দ্বিতীয়টির নাম ‘সাদাঙ্কলিয়া ইকুয়িসাস্ত্রি’- এটি একটি
টেলিতথ্যচিএ।
২০১০ সাল। জাফর পানাহি ইরানী
আদালতের বিচারে একজন দেশদ্রোহী (?)– শিল্পীর নামে ভন্ড (?) – অধার্মিক(?) ব্লা ব্লা
ব্লা। সেইরকম এক উওাল সময়ে গৃহবন্দী দশায় তিনি নিজের শিল্পের প্রতি আর্তনাদের ভিত্তিতে
গড়ে তুললেন ‘দিস্ ইস্ নট এ ফিল্ম’
নামের তথ্যচিএটি। সারা দুনিয়ার সিনেপ্রেমিরা, সিনেকর্মীরা
তার ডাকে সারা দিয়ে অনেক কিছু করলেন বটে। কিন্তু তাতে ইরান সরকারের কী বা যায় আসে, আসলে নিজেদের
সংরক্ষণের প্রবল উচ্চচাপে তারা নিজেরাই কখন সারা পৃথিবীর কাছে নিজেদের ধার্মিক অবলম্বনটাকে
এক্কেবারে খাটো করে ফেলেছেন তা নিজেরাই টেরটি পেলেননা। আসলে বেচারাদের দোষ দিয়ে কি
লাভ! একেই সারাবছর এরসাথে তার সাথে যুদ্ধ, ঝগড়াঝাঁটি লেগেই রয়েছে, তার উপর
ভেতরকার নিম্ন মননের কারসাজি যদি কোনও বড়মাপের শিল্পীর হাত ধরে সারা পৃথিবীর চোখের
সামনে ধরা পড়ে যায় তাহলে তো দেশের হোতাদের আলখেল্লার দড়ি ঢিলে হওয়াটাই স্বাভাবিক। পানাহি
এখন প্রোপ্যাগান্ডা চার্জে ছয় বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত। ইরান সরকার তার উপর কোন সঠিক
দোষারোপ না করতে পেরে তাকে গৃহবন্দী করে রেখেছে, এবং ফলাও করে ঘোষণা করেছে
যে উনি আগামী ২০ বছর কোনও ছবি করতে পারবেননা। দেশের বাইরে যেতে পারবেননা। আরও কত কি? বাঃ বাঃ
এই না হলে শাসনব্যবস্থা,
দেশি আইন।{ যাইবল তাইবল লালু কাকু এর থেকে আমাদের দেশি মদের
কেতা বেশি।}
যাইহোক এত কিছু হলেও এখনও
সিনে দুনিয়া তার পাশে কাঁধেকাঁধ ঠেকিয়ে হাঁটছে। এখনও তাকে প্রধান অতিথি করে ইন্টারন্যাশানাল
ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে শূন্য কেদারা
অপেক্ষায় থাকে। পরিচালক Ken
Loach, Dardenne brothers, Jon Jost, Walter Salles, Olivier Assayas, Tony
Gatlif, Abbas Kiarostami, Kiomars Pourahmad, Bahram Bayzai, Asghar Farhadi,
Nasser Taghvai, Kamran Shirdel and Tahmineh Milani –actors Brian Cox and Mehdi
Hashemi, actresses Fatemeh Motamed-Aria and Golshifteh Farahani, ছবি সমালোচক Roger Ebert, Amy Taubin,
David Denby, Kenneth Turan, David Ansen, Jonathan Rosenbaum andJean-Michel
Frodon, Federation of European Film Directors, European Film Academy,Asia
Pacific Screen Awards, Network for the Promotion of Asian Cinema, Berlin Film
Festival, Karlovy Vary International Film Festival, International Film Festival
Rotterdam,Febiofest, National Society of Film Critics, Toronto Film Critics
Association and Turkish Cinema Council তৎক্ষণাৎ তার মুক্তির দাবী
পেশ করেন। France's
Ministry of Foreign Affairs and minister of culture and communications Frédéric
Mitterrand, German foreign minister Guido Westerwelle, Canadian government,
Finnish Green MP Rosa Meriläinen and Human Rights Watch এই ঘটনার
প্রবল নিন্দা করেন।
তার জীবনের
এই সময়কার কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনা ভাষা ও অভিব্যাক্তি অপরিবর্তিত রেখে তুলে ধরা হল। On 8 March 2010, a
group of well-known Iranian producers, directors and actors visited Panahi's
family to show their support and call for his immediate release। After more
than a week in captivity, Panahi was finally allowed to call his family। On 18 March 2010 he
has been allowed to have visitors, including his family and lawyer। Iran's
culture minister said on 14 April 2010 that
Panahi was arrested because he "was making a film against the regime and
it was about the events that followed election." But in an interview with
AFP in mid-March, Panahi's wife, Tahereh Saeedi, denied that he was making a
film about post-election events, saying: "The film was being shot inside
the house and had nothing to do with the regime."
In
mid-March, 50
Iranian directors, actors and artists signed a petition seeking Panahi's
release। American film directors, Paul Thomas Anderson, Joel & Ethan Coen,
Francis Ford Coppola, Jonathan Demme, Robert De Niro, Curtis Hanson, Jim
Jarmusch, Ang Lee, Richard Linklater, Terrence Malick, Michael Moore, Robert
Redford, Martin Scorsese, James Schamus,Paul Schrader, Steven Soderbergh,
Steven Spielberg, Oliver Stone and Frederick Wiseman, signed a letter on 30 April 2010
urging Panahi's release। The petition ends with “Like artists everywhere,
Iran’s filmmakers should be celebrated, not censored, repressed, and
imprisoned.” He was named a member of the jury at the 2010 Cannes Film Festival, but
because of his imprisonment he could not attend and his chair was symbolically
kept empty.
On
May 18,
2010, J। Hoberman at VoiceFilm.com reported that an unconfirmed
announcement indicated the Iranian regime would release Panahi to coincide with
the public screening of another Iranian film at the festival, Abbas
Kiarostami's Certified Copy। However, it was instead announced at the screening
that Panahi's prison sentence had been extended। Hoberman reported that the
leading lady of Kiarostami's film, Juliette Binoche, cried upon hearing the
news.
On
May 18,
2010, Panahi sent a message to Abbas Baktiari, director of the
Pouya Cultural Center, an Iranian-French cultural organization in Paris। Panahi
wrote that he has been mistreated in prison and his family threatened, and as a
result has begun a hunger strike.
On
25
May 2010, Panahi was released on $200,000 bail.
On
12
November 2010, Panahi was back in court for his hearing। In a lengthy
statement he defended himself and told the court that "I am Iranian and I
will remain in Iran."
On
20
December 2010 Panahi, after being prosecuted for “assembly and colluding
with the intention to commit crimes against the country’s national security and
propaganda against the Islamic Republic,” was handed a six-year jail sentence
and a 20-year
ban on making or directing any movies, writing screenplays, giving any form of
interview with Iranian or foreign media as well as leaving the country.
On
23
December 2010 Amnesty International announced that it was mobilizing an
online petition spearheaded by Paul Haggis and Nazanin Boniadi and signed by
Sean Penn, Martin Scorsese, Harvey Weinstein and others to protest the
imprisonment of Panahi.
Cine
Foundation International, a "non-profit film company and human rights NGO
aiming to 'empower open consciousness through cinema'" announced on 3 January 2011 that
they are launching a campaign of protest films and public actions calling for
the release of Panahi। "The campaign will include protest films that speak
to human rights issues in Iran and throughout the world, six of which are
commissioned feature-length, plus twenty shorts। Participating filmmakers may
act anonymously or through pseudonyms since voicing their stories can be
dangerous। The films, which will address themes of nation, identity, self,
spiritual culture, censorship and imprisonment, will be aimed for public, web
and various exhibition media"। Later in January, CFI deployed a video
protest mechanism called WHITE MEADOWS (named for theMohammad Rasoulof film,
The White Meadows, which was edited by Panahi) and developed by Ericson deJesus
(of Yahoo! and frog design) at the request of the foundation। The video
mechanism "allow(s) anyone in the world to record a short video statement
about Panahi and Rasoulof। There will be an ESCAPE button at top, allowing
quick exit for those in countries where recording a statement would be
dangerous। There will an option to have the screen black, and soon, voice
distortion। The video statements will be recorded as mp4s, giving them maximum
transmedia capacity, which essentially makes them broadcastable from any device
that can show video"। Users can also use the mechanism to comment on how
they would "like to see as an international response by the film
industry", comment on the state of human rights in general, or to
"report a human rights abuse to the world".
In Spring 2011, Boston's American
Repertory Theater and System of a Down's Serj Tankiandedicated their production
of Prometheus Bound to Panahi and seven other activists, stating in program
notes that "by singing the story of Prometheus, the God who defied the
tyrant Zeus by giving the human race both fire and art, this production hopes
to give a voice to those currently being silenced or endangered by modern-day
oppressors"
পানাহির সাথে তারই উত্তরসূরি
আব্বাস কিয়ারোসস্তামির সৃষ্টির তুলনা করে স্টিফেন তঁয় বলেন : "Panahi's films redefine the
humanitarian themes of contemporary Iranian cinema, firstly, by treating the
problems of women in modern Iran, and secondly, by depicting human characters
as "non-specific persons" – more like figures who nevertheless remain
full-blooded characters, holding on to the viewer's attention and gripping the
senses। Like the best Iranian directors who have won acclaim on the world stage,
Panahi evokes humanitarianism in an unsentimental, realistic fashion, without
necessarily overriding political and social messages। In essence, this has come
to define the particular aesthetic of Iranian cinema। So powerful is this
sensibility that we seem to have no other mode of looking at Iranian cinema
other than to equate it with a universal concept of humanitarianism."
আমি লেখার শুরুটা জেভাবে
করেছিলাম সে কথায় আরও একবার ফিরে যাই, যে কোনটা শিল্পীর কাছে বেশি প্রিয়
বিতর্ক না সৃষ্টির উল্লাস। না! পানাহি এর কোনটার মধ্যেই পরেন না। পানাহি তার নিজস্ব সিনেমাটিক ভিউ সম্পর্কে বলেছিলেন : "humanitarian events
interpreted in a poetic and artistic way"। তিনি আরও
বলেন : "In
a world where films are made with millions of dollars, we made a film about a
little girl who wants to buy a fish for less than a dollar (in The White
Balloon) – this is what we're trying to show." অ্যান্টণি
কৌফম্যানের সাথে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন : "I was very conscious of not
trying to play with people's emotions; we were not trying to create
tear-jerking scenes। So it engages people's intellectual side। But this is with
assistance from the emotional aspect and a combination of the two."
অনেক ভার জমে আছে বুকে, তারা সরবেনা এতো সহজে। তোমায় দুহাত
বাড়িয়ে ডাকতে চাইছে আজ। কিছুই করতে পারলামনা আজ অবধি। সবাই কত্ত শান্তনা দিল, শিল্পী নিয়ে এত মাতামাতি
করার আছেটা কি?
তার শিল্পটাতো আছে, তা যে কটাই থাকুক,
তাই নিয়ে আনন্দে থাক না বাপু, যা পাচ্ছ তাই নিয়ে সুখে থাকো, তুমি তো
নতুন এ লাইনে তাই ঠিক জাননা, এসব জায়গায় ওই বেশি আহ্লাদ আদিখ্যেতা এসব কিন্তু
আকদম চলবেনা। কিন্তু তুমিই বল যদি শিল্পীর কদর না দিই, হররোজ নয়, মাঝেসাঝে
তাকেও যদি দুধটা ডিমটা না দিই, তবে শিল্পের ফলন টা হবে কোত্থেকে? যে যাই
বলুক ফিরে তোমায় আস্তেই হবে।
ও জানেমন
জাফর, আমরা তোমার প্রতীক্ষায়..। ফিরে এসো তাড়াতাড়ি..। দেখো লেন্সগুলোর ভাঁজে খুব ধুলো
জমেছে কয়েকদিনের,
তোমার চোখের স্পর্শের অপেক্ষায় ও আজ বৃষ্টি ভিজতে চাইছে..। ফিরে
এসো জাফর..। ফিরে এসো,
অনেক তো হল..। আবার আমরা নতুন করে ঘর সাজাই, সামনে তাকিয়ে
দেখো ওদের চোখের ঝাঝানি এখন অনেকটাই নিস্তব্ধ..। এসো জাফর..। বেলা পড়ে এলো, এবার ওদের
কালো বুকের ওপর পা রেখে ওদের মুখে আঁচড় কেটে কাটাকুটি খেলার পালা..। এসো জাফর..। ফিরে
এসো...
অসংখ্য
ধন্যবাদ :-
১। ঊস্মান কুরেতজির।(Friend from Iran Media)
২। Hamid Dabashi, Masters & Masterpieces of
Iranian Cinema
৩। The New Iranian Cinema: Politics, Representation
and Identity by Richard Tapper
-o-
একটি ইচ্ছে ও কয়েকটি সংলাপ - শুভাশীষ আচার্য্য
স্মৃতির অন্তর্লীনে লুকোচুরি খেলতে থাকা কিছু ভাল কথা আর কিছু মন্দ কথার মিশেল মাঝেমাঝে পিঠে পড়ে চাপড় দিয়ে যায় মনের অগোচরে। মনে মনে সেসব ইতিহাস আওড়াতে হয়ত ভাল লাগে অনেকেরই। ঠিক তেমন ভাবেই এসে ভিড় করে, কয়েকটা ঘামে চ্যাটচ্যাট করা গরমের দুপুর। আর সেখান থেকে বেছে নেওয়া কোন দুপুরের বিকেলে, মধ্যবিত্ত বাঙাল্ পরিবারের একটি ছেলে কাঠিওয়ালা আইস্ক্রীম খাওয়ার জন্য মরাকান্না না জুরে কেবল বায়ানাক্কা করে। কিন্তু এখন যে তার ছুটির খাতার সিলেবাস শেষ করার সময়। আর বিকেল গড়াতেই রমাপদ
স্যারের ইংরেজির কোচিং ক্লাস। সো, এরকম একটা বোগাস্ আবদার এসময় ক্লাস সিক্স এর ছেলেটিকে
কি কোনদিনও মানায়; সেকথা আপনারাই একবার ভেবে দেখুন। না থাক! ভেবেটেবে আর কাজ নেই। এর
একটা সিপ্লল অ্যান্সার তো ছিলই তার মার কাছে। মা তাকে
ধমকে দিয়ে বলে “পয়সার গাছ লাগাইছি তো একখান্ যে নাড়াইলেই
পয়সা পড়বহানে!! চুপচাপ এই খাতার লেহাডা কমপ্লিট
কইরা লাল খাতাডা ধর। আর এই গরমে ওইসব ড্রেনের জলের বানানো হাবিঝাবি খায় নাকি কেউ। আর
তুই না আমার সোনা ছেলে। নেও তো বাবা এখন আমার লক্ষ্মী ছেলের মত টাক্সগুলো সব শেষ কইরা
দাও দেহিনি। নইলে যে আকাশ, সোহম ওরা সবাই এগাইয়া যাইব।” না! ড্রেনের জলে বানানো আইস্ক্রিমওয়ালা এসব কথা চলার বিরামে তখন এপাড়া ওপাড়া
ছাড়িয়ে অনেক দুরের কোনও ‘শিশুর স্বাধ’ পুরনে ব্যাস্ত। না পয়সার
গাছ নয় আসলে তা ছিল ছোট্ট সেই বাচ্চা ছেলেটির ‘ইচ্ছের গাছ’। আর এই
উত্তরে সেই ‘ইচ্ছাবৃক্ষ’-র একটি সুদৃঢ় প্রশাখার পতন অনিবার্য ছিল। আর তাই হলও। ভয়ে গুটিসুটি হয়ে ছেলেটি চলে গেল মা র কাছ থেকে। ঢুকে পড়ল সোজা সামার ভ্যাকেস্নের বলয়ে।
শুধু মনে মনে এটুকু আওড়ে গেল ‘মা এখন আমি তোমার বারো বছরের খোকা তাই এখন বোধহয় আর ওই ড্রেনের জলের অজুহাতের আইডিয়াটা ঠিক খাপ খায়না আমার
সাথে।‘
সেম রুটিনের
টানা হেচঁড়ায় সেই বাচ্চা ছেলেটি গায়ে-গতরে
বড় হল। দেন, হঠাৎ একদিন বাড়িতে মিথ্যে
প্রোজেক্টের নাম করে তার দুই বন্ধুর সাথে নন্দিতা
রায় ও শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়-এর বানানো একটা বাংলা ছবির ইভিনিং শো দেখতে গেল। ছবির নাম
‘ইচ্ছে’। কথা শুনে মনে হতে পারে, ছেলেটি
যেন এই ছবি দেখার জন্যই বড় হল-আসলে তা
নয়, ছোট থেকে বেড়ে ওঠার প্রত্যেকটি
ধাপই সে নিজের অনিচ্ছায় ও অন্যের ইচ্ছার বশে কাটিয়ে এসেছে । তারপর বহু চেষ্টায় নিজের
ইচ্ছার জেরবারে দেখল এই ছবিটি হয়তবা উপলব্ধিও
করল।
সিনেমা
শেষে তার দুই বন্ধু সামনে গঙ্গার কাছে একটু গায়ে হাওয়া খেতে যেতে পারলেও, তাকে রওনা হতে হল বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে। কারণ তার মা-র ইচ্ছে যে ছেলে রাত ন’টার মধ্যে
বাড়ি ফিরুক। ঠিক একই
ভাবে ছবিতে রানার মা (মমতা)-র ইচ্ছে ছিল ইতিহাসের পাতায় সে ‘হরপ্পা সভ্যতার’ বদলে ‘গুপ্ত যুগ’ লিখুক। আসলে যে ‘গুপ্ত যুগ’ রানার কম, মমতা-র বেশি মুখস্থ ছিল।
এই ছবির প্রত্যেকটি ঘটনাই যেন তার নিজের জীবনের ঘটনা এবং বস্তুতঃ পক্ষে শুধু তার
একার-ই নয়; এই ঘটনার সাক্ষী এরকম অনেক ছেলে মেয়ে যাদের ইচ্ছেডানা থাকলেও
তাতে ভর দিয়ে উড়ে যাওয়ার ক্ষমতা হয়ে ওঠে না। এই পৃথিবীতে আসাই যখন আমাদের নিজের ইচ্ছেয় হয়না। তখন আমাদেরকে লাঙল দিয়ে বা একটু সার দিয়ে উর্বর করে তাতে আমাদের মা-বাবা রা তাদের ইচ্ছার গাছ পুঁতে
দেবেন-সেটাই স্বাভাবিক নয় কি ??? ছেলেকে
বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই করার জন্য এক বস্তা বই তারা বাচ্চা ছেলেটির কাধে চাপিয়ে দেওয়াটাই তো কাম্য। এক্ষেত্রে বস্তা বোঝাই বই নেওয়া ছেলেটিকে শেখানো হয়, যে বস্তা বোঝাই মুড়ি নেওয়া মুড়িয়ালাকে
পড়াশুনা না জানার জন্য মুড়ি বিক্রি করতে হয় । যদিও খিদে পেলে মুড়ির বস্তা থেকে বের করে খাওয়া যায়, কিন্তু বই-খাতা তো
আর খাওয়ার পাএ নয়।
অনেক মা-বাবা তো এমনও আছেন যাঁরা
অনর্গল বাংলা-ইংরাজী তে বাক্যালাপ করে যাচ্ছেন, ছেলে-কে পরিচিত করাচ্ছেন
রবীন্দ্রনাথ-Shakespeare
সম্পর্কে।
কিন্তু তারা ভাবতেই পারেন না যে তাদের উর্বর মস্তিষ্কের ছেলে comparative literature নিয়ে পড়বে - আর science stream এর ধারও ঘেঁষবে না,ছিঃ!ছিঃ!ছিঃ! কী লজ্জা, কী লজ্জা। হয়ত তারা জানেন না যে
বিঞ্জান বা বিঞ্জানী প্রত্যেক ক্ষেত্রেই ভাষার উপর একটা অত্যাশ্চযর্কীয় দক্ষতার
প্রয়োজন হয়। ছবিতে মমতা নিজেই তার ছেলে রানা-র পরীক্ষার suggestion করে দেন, সেক্ষেত্রে তিনি যদি নবম-দশম শ্রেণী-র পাঠ্য ‘ভাগীরথীর
উৎস সন্ধানে’ প্রবন্ধটির লেখক সম্পর্কে একটু দৃষ্টিপাত করেন তাহলে দেখবেন তিনি একজন
বিশ্ববরেণ্য বিঞ্জানী ব্যক্তিত্ব। হয়তঃ
দেখেছেন এবং বলেছেন ছেলেকে “নাম লেখার আগে লেখক নয় প্রাবন্ধিক লিখবি নয়তো স্যার ১ এর
মধ্যে ১/২ দেবেন”।
ছবিতে মমতা তার স্বামী কে বলে ছেলেকে নিয়ে তার ইচ্ছের কথা,
ছেলেকে হার্ভার্ড, কেমব্রিজ এ পাঠানোর কথা। ছেলেকে lecturer হিসেবে
কল্পনা করতে সে বিন্দুমাত্র সময় নেয় না। কিন্তু একথা হলফ করে বলতে পারি যে রানা যদি গিটার শেখার জন্য বিদেশে পারি
দেওয়ার কথা ভাবত তাহলে মমতা তাকে বাড়ির পাশের গলি অবধিই যেতে দিত না, বিদেশ তো
আনেক পরের কথা..। (ছবিতে রানার কাছে একটি গিটার দেখতে পাওয়া যায়)। এক্ষেত্রে আমার নিজের সচক্ষে দেখা
একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ আছে। আমার এক বন্ধুর বড় ইচ্ছে ছিল Film Direction নিয়ে এন।ওয়াই।এফ।এ (N.Y.F.A) তে পড়ার। সে দিনরাত পরিশ্রম করে যোগাড় করেছিল অনেকগুলি scholarships-ও। কিন্তু তার বাড়ির লোকেরা ভাবতেই
পারেনি যে ষষ্টাদশ বর্ষীয় একটি ছেলে-র
হেরম্বচন্দ্র বা গোয়েঙ্কা বা জ্য়পুরিয়া –তে অ্যাকাউন্টস অনার্স এর বদলে এমন একটা বিষয়ে আগ্রহ থাকতে পারে। ফলস্বরূপ তার সেই
ইচ্ছের গাছ উপড়ে এল গোড়া থেকে আর স্কলারশিপস-এর কাগজ গুলি দিয়ে নৌকা তৈরী করে ছেড়ে দেওয়া হল বাড়ীর সামনের
বৃষ্টিমাখা নর্দমার জলে......না – না ভেসে থেকে ছেলেটিকে ব্যঙ্গ
করার জন্য নয় – ডুবে যাওয়ার জন্য। কত সহজেই একটি ছেলের ইচ্ছে খুন হয়ে শায়িত হয়ে গেল কবরে। কিন্তু হল না কোন enquiry বা হল না কোন পুলিশ কেস। তবে তার সাক্ষী রইল অনেক না
ভিজতে পাড়া সাদাকালো ফ্রেম।
যে কোন get
together এ আমাদের বাবা-মা রা হাই
হ্যালোর ফাঁকেফাঁকে অন্যদের বলে থাকেন, যে তারা আমাদের একজন ন্যয়পরায়ণ মানুষ হিসেবেই দেখতে চান। আবার গর্ব করে সকলকে বলেন যে তাঁরা নাকি তাদের ছেলে মেয়ে কে সেভাবেই মানুষ করছেন। সত্যি!!
হাসাতেও পারেন বটে এঁনারা; কারণ- ছেলের
আগ্রহ বাড়ানোর জন্য তারা বেছে নেন হিংসা কে। যেরকম ছবিতে মমতা খুব সহজেই বলতে পাড়ে “বিক্রম এগিয়ে যাবে তুই ভাল করে
পড় বাবা”। তারা হয়তঃ বুঝতেই পারেন না যে এই একটা কথার মধ্য দিয়ে তারা নিজের ছেলেকে কতটা ক্রিমিক কিউবিকল করে তুলছেন। অথচ এই ছেলেই বন্ধুর একটা সুন্দর জামা দেখে সেটা কেনার জন্য বায়না ধরলে তার গালে
ঠাস করে একটা চড় মেরে কিভাবে সেই আবদার কে ফোল্ড করে বরফের মত
জমিয়ে দিতে হয় তার কোচিং টা ঐসব মা-বাবা রা খুব ভাল করেই
জানেন। এসব
পড়তে পড়তে অনেকেরই হয়তঃ মনে হতে পারে আমি এই সমাজের সমস্ত বাবা-মা র প্রতি ভরাস্
নিকালতে পাতাগুলো কালো করে দিচ্ছি । কেজানে হয়তঃ বা সেটাই । আসলে সেই ছোট্টবেলা
থেকেই জানলার শিকের ফাঁক থেকে আকাশ দেখতে দেখতে উন্মুক্ততার চিরন্তনকে ছোঁয়ার
ইচ্ছেটাই জানিনা কখন বা মুছে গেছে। তবু আজও বুকবাঁধি, যে হয়ত বা আমার সাথে আমার
ইচ্ছেদের দেখা হবে আকাশের নীল ছায়াপথে..।
লেখার জন্য হয়তঃ আরও অনেক শব্দই লুকিয়ে ছিল। বা বলার জন্য হয়তঃ বা কিছুকথা বাকী থেকে গেল। আর এক্ষেত্রে আমার এই বিষয়ে লেখা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে
থাকলেও আপাততঃ আমার মায়ের ইচ্ছে যে আমি এখন Hydrostatics ও Linear Algebra নিয়ে বেশী কাঁটাছেড়া করি। আসলে আমরা বোধহয় আমাদের জীবনের প্রায়
নব্বই শতাংশই অন্যের ইচ্ছাধীন। তাই
নিজের ইচ্ছের ক্যানভাসটা আর রঙ্গীন করে ওঠা হয় না।
বিভিন্ন
পত্র-পত্রিকায় ফিল্ম রিভিউ বেরোনোর পর সেই ফিল্ম সম্পর্কে লেখা সমুচিত
কিনা জানি না তবে সেই ফিল্ম যদি কারু-র বাস্তব জীবনের সরল রেখার সাথে সমাপতিত হয়
তবে সেই ফিল্ম নিয়ে হাজারো বার লেখা উচিত। শুধু ঈশান কোন কেন আমার কাছে জীবনের প্রত্যেকটি কোন দিয়ে অনুভব করার মত ছবি ছিল এটি।
গোটা
ছবি জুড়ে সোহিনী-সমদর্শী ফাটাফাটি অভিনয়
করে গিয়েছে। তবে সেরার শিরোপার সিংহ ভাগের
অধিকারিণী হয়ত সোহিনীই ছিল। তাদের ক্ষেত্রে একটা
ফ্রেমের মধ্যে দাঁড়িয়ে অভিনয় করাটা বা
হয়ত অনেকটা সহজ ছিল। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় যখন কারো সামনে
থেকে কল্পনার দরজা গুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন যে পালানো ছাড়া আর কোন অবশেষ থাকে
না।যাই হোক আমার ঘ্যন-ঘ্যানানি বন্ধ করে ছবির কথায় আসি। তা ‘পারমিতার একদিন’-র পর
অনেকদিন বাদে এমন একটা কঠিন চরিএে তার
সাবলীল অভিনয় সকলকে শুধুই মুগ্ধ
করে রাখে। সেখানে আর নতুন করে এটা প্রমাণের আর অবকাশ থাকেনা যে তার অভিনয় দক্ষতা কতটা। তাই ল্যাডলীর ‘ম্যাডলি’ পনা কে দূরে সরিয়ে রেখে বলা যায় যে জীবনের সাথে মিশে যাওয়া এই ছবিকে হয়তঃ
নম্বর দিয়ে বিচার করা যায় না। মা-বাবা দের প্রতি এই ছবির একটা সুন্দর ছোট্ট
বক্তব্য ছিল যে
তারা যেন নিজের ইচ্ছের ভারি বস্তাটি দয়া করে সন্তানের ঘাড়ে
না তুলে দেন । ছেলে মেয়ে দের রোজ একটু একটু করে বড় করে তোলা ইচ্ছের গাছটিকে না
কেটে তাতে একটু জলপানি ঢাললে দেখবেন অর্থনৈতিক মূল্যবৃদ্ধির
এই বাজারে আপনার মূল্যও আপনার সন্তানের কাছে বেশ
অনেকটাই বেড়ে গেছে। হয়তঃ আপনার সন্তানই একদিন বলবে “ইচ্ছার গাছ লাগাইছি একখান, যাতে নাড়া দিলেই একটু খুশি একটু আনন্দ ঝইরা পড়ে”।
নাঃ!
লেখা থামাই, বাস্তবের সম্মুখীন হই নাহলে আমার মা এসে এবার হয়তঃ বলবে “বিক্রম, জিৎ ওরা সব এগিয়ে গেল...”
Comments
Post a Comment