add as a friend - Nirmalya Sengupta


Dolchhut weekly
||অ্যাড অ্যাজ ফ্রেন্ড-নির্মাল্য সেনগুপ্ত 


পার্থদা বলল- “দ্যাখ গল্পটার শুরুতেই কিন্তু হাজারটা বিবরণ দিসনা। আস্তে আস্তে ভাঙ্গিস। তাতে গল্পের এসেন্স বাড়ে।”
আমি বললাম” ওফ তুমি এই ফেলুদা মার্কা কথাবার্তা বন্ধ করবে! এছাড়া আমি আর লিখিনা। মোদ্দা কথায় আস। তুমি আসবে কি না?”
“ সেকি রে লিখি না মানে? তুই আবার না লিখে পারিস না কি? ধ্যাত হতেই পারেনা। ঢপ দিসনা।”
আমি একটু বিষন্ন হয়ে বললাম” না গো, লেখালিখি আমার দ্বারা হবেনা। এই বেশ ভালো আছি। কি-বোর্ড ঘষছি রাতদিন। খিস্তি খাচ্ছি। চলে যাচ্ছে। ব্যাস।”
কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর পার্থদা বলল” না রে পাগলা তুই ঠিক নেই তাহলে। নে আমাদের এই প্রজেক্টটা নিয়েই আবার লেখ। এটা ভালো একটা টপিক।
“ আমার কাছে এটা টপিক না পার্থদা। অনেক বড় কিছু। তুমি প্লিজ এসো।”
পার্থদা হেসে বলল” আরে আমি একটা সিক্রেট মিশনে আছি রে। নইলে সিওর আসতাম। আমি না হয় সব ঘটনা তোর লেখায় পড়ব।
আমি রেগে বললাম” অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারের আবার সিক্রেট মিশন কি? জ্ঞান দিওনা আমায়। বল তোদের এইসব ফালতু বচপনায় আমি নেই।”
“ বাবু রাগ করিসনা প্লিজ। সত্যি রে অসুবিধে আছে একটু। নইলে বলতে হতনা এতবার করে। আমারটা না হয় বাবিকে দিয়ে দিস।”
আমি এবার হেসে ফেলে বললাম” মনে আছে সেই নবমীর দিন? বাবি তোমারটা খেয়ে নেওয়ায় কি খিস্তি দিয়েছিলে ওকে?
পার্থদা বলল” ওটা গালাগাল খাওয়ার মতই কাজ ছিল, আবার করলে এখনও খাবে। যাক তোরা মজা করিস। সবাই আসবে বলেছে?”
আমি বললাম” হ্যা মোটামুটি সবাই। শুধু তোমাকেই খুব মিস করব। প্রজেক্টে তুমিও ছিলে।”

পার্থদা হেসে বলল” ওরে আমি না থাকলে মালটা থাকত কোথায়? হু হু। আচ্ছা চল রাখি। সাইটে যেতে হবে। আর হ্যা লিখিস কিন্তু। বাই।”
আমি ফোনটা রেখে ধপ করে সোফাটায় বসে গা এলিয়ে দিলাম। আহ কতদিন পর আবার সেই একসাথে। সেই সব কেচ্ছা। ভাবলেই হাসি পায়। আচ্ছা আমার মত বাকিরাও এই দিনটা নিয়ে এত ভেবেছে? বিশটা বছর। একবারে ঝলসাবে। আস্তে আস্তে। এক এক করে


২৮শে নভেম্বর, ২০১০

আমার মগজে এখনও রয়েছে নিভে যাওয়া স্বপ্নের দেশলাই
যেভাবে পেরনো যায় আরও দু তিনটে স্কাইলাইট

“ ওয়ে এটা দিয়ে শেষ করলে কেমন হয় রে?” পিকু আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল।
বিরক্তের সাথে গ্লাসটা ঠাস করে রেখে বললাম” বোর করছিস শালা পুরো বোর করছিস। প্লিজ চুপ কর। শান্তিতে নেশাটা আসতে দে।”
“ প্লিজ ভাই। আর ৩দিন বাকি লাস্ট ডেটের জমা দেওয়ার। শেষ বছর স্কুল। একটা ভালো লেখা না দিলে”

“ ধুর মোটা।” বাবি গ্লাসটা এক চুমুকে শেষ করে রেখে মুখ মুছতে মুছতে বলল” তবে যাই বল গুড্ডু হুইস্কিই বেস্ট। একটা আলাদা টেস্ট আছে। ওই চিরতার জল খাওয়ার কোনো মানে হয়না। আসল হল টেস্ট রে টেস্ট।”

আমি মাথা নেড়ে বললাম” না রে ভাই। রামে একটা বনেদিয়ানা আছে। হ্যাং ওভার হয়না, এছাড়া সুব্রতদা বলে”
“ হ্যাং ইওর সুব্রতদা।” সমু পেশাদার বিড়িখোরদের মত বিড়িটা টান দিয়ে শেষ করে বলল” আমি অতশত বুঝিনা। ফোঁকা মানে ধোয়া আর গেলা মানে লাল জল। ব্যাস।”
“ হ্যা ব্যাস। তাহলে যা না তিমিরের দোকানে গিয়ে চুল্লু আর গাঁজা খা গিয়ে। কোথাকার বোদ্ধা এসেছেন।” আকাশ সমুকে খিস্তি মারল।
একটা ঝটাপটি বাধার আগেই আমি হাত তুলে বললাম” সাইলেন্স। আসল কথা হল আমরা অকেশনাল ড্রিঙ্কার। তাই কার কি সুট করছে সেটা খুব দরকার। হুইস্কি খেলে আমার গা গোলায়। কিন্তু তাই বলে আমি খেয়ে বাওলামি করিনা।”
“ না বাওলামি করিনা।” ভাস্কর ভেংচি কেটে বলল” শুধু ছাদের পেছনে গিয়ে লম্বা হই।”
“ প্লিজ ওটা একটা অ্যাকসিডেন্ট ছিল ওকে। অত খাটাখাটনির ফলে।” আমার তীব্র প্রতিবাদ।
“ আর আর ওই পার্থদার বাড়ির কেসটা? শালা আমি সারারাত ধরে বমি সাফ করেছি।” ভাস্কর কঁকিয়ে উঠল।
“ হয়েছে হয়েছে। ওরকম দু একদিন হয়। আজ দ্যাখ তো কিছু হয়েছে?”
“ বস ওই দু পেগ খেলে বিড়ালের বাচ্চাও টলেনা। আর তুমিতো হি হি” সবাই জোরে হেসে উঠল।
আমি প্রচন্ড অপমানিত ফিল করে চেঁচিয়ে উঠলাম” ও তাইতো? কখনও বুঢঢা পেগ মেরেছ? শালা এক পেগ খেলে না বাপের নাম দশবার ভেবে লিখতে হবে।”
আকাশ অবাক হয়ে বলল” সেটা আবার কি?”
হু হু, এবার বাগে এসেছে। আমি ছাদের পাচিলটায় আরাম করে ঠেস দিয়ে বসে বললাম” আছে। আমাদের খাওয়ার অকাদ নেই রে। ওসব বাপেদের জিনিস।”
“ ধ্যান্তারামো ছাড়।” বাবি ভুরু কুঁচকে বলল” সেটা কি জিনিস?”
আমি মুখে একটা বাদাম ছুড়ে সোজা হয়ে বসে বললাম” আরে মালটা কি? কিছু ইস্পেশাল কার্বোহাইড্রেটকে ইস্টের সাহায্যে কোহল সন্ধান ঘটিয়ে গেঁজিয়ে তারপর ফ্লেবার দেওয়া। পাতি ভাষায় পচিয়ে ফেলা। এখন যতদিন যাবে মাল আরো পচবে, অ্যালকোহলও বাড়বে। তাই কিছু মদকে এইভাবে পুরনো করা হয় অনেক বছর। একে বলে বুঢঢা পেগ। বোঝলা?”
পিকু এতক্ষন চুপচাপ ছিল। হটাত বলে উঠল” তার মানে তো তার দাম অনেক বেড়ে যাবে?”
“ আরিব্বাপ বাড়বে মানে! আরে শুরুই বোধহয় হাজার খানেক দিয়ে এক একটা পেগ। তাইতো বললাম ওসব বাপেদের জিনিস।” আমি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম।
“ হুম।” বাবি বলল” কিছু কিছু ওরকম স্কচ আছে শুনেছি প্রায় ১০০ বছর পুরনো। আর তার বোতলের দাম প্রায় এক দেড় লাখ টাকা।”
“ নো চিন্তা বস। আমরাও বাপ হব। আজ থেকে ঠিক ২০বছর পর। এই নে এই গ্লাসের বাকিটুকু খেলামনা। ২০বছর পর খাবো। তখন এর দাম হবে ১লাখ টাকা, হি হি।” ভাস্কর গ্লাসটা নামিয়ে রাখল।
“ মালটার চড়েছে। ওই তুই আর খাবি না।” সমু ভ্রু কুঁচকে গ্লাসটার দিকে হাত বাড়াল।
“ উহু এটা ২০বছর পর খাব চাঁদু। পচতে দাও, পচতে দাও।”
“ শালা মাতাল। আবার আমাকে বলে।” আমি হেসে বললাম” চল একটা কাজ করি আমরা এই ধান্দা খুলি। এখন প্রচুর মদ কিনে রেখে দিই, ২০বছর পর বেচে দেব। হেব্বি মুনাফা হবে।”
পিকু বলল” তাহলেই হয়েছে, ভাটিখানা খুলি এবার। শালা আমার ম্যাগাজিন”

“ হ্যাং ইওর ম্যাগাজিন।” আমি বললাম” আচ্ছা একটা কাজ করলে হয়না? ধর একটা বোতল আমরা এখন কিনে রেখে দিলাম। ২০বছর পর সেটা আমরাই খাব। কেমন হয়?”
“ খুব বোকা বোকা হয়। ২০বছর ধরে থাকবে যেন? বাড়িতে রাখবি তুই? তোর বাবাই শালা খেয়ে নেবে।”
“ আরে বাড়িতে কেন? লুকিয়ে রাখব। গুপ্তধনের মত। দারুন হবে, চল না।”
আকাশ বলল” আরে ধুর ২০বছর পর কে কোথায় থাকব কোন আইডিয়া আছে তোর? বাঁচব কিনা সেটাই সন্দেহ। ধুস।”
আমি উত্তেজনায় তালি মেরে বললাম” আরে সেটাই তো, আমাদের বন্ধুত্ব কতটা বোঝা যাবে। সেই গল্পে পড়িসনি? বিশ সাল বাদ। একটা দিন ঠিক হবে। সেদিন মিট করব সবাই। একটা লেজেন্ডারি কেস হবে ভেবে দ্যাখ।”
“ হুম।” বাবি জেমস বন্ডের মত গালে হাত বুলোতে বুলোতে বলল” আইডিয়াটা মন্দ নয়, কিন্তু কথা হচ্ছে যে থাকবে কোথায় মালটা? আমাদের মধ্যে কে এতো স যে ২০বছর না খেয়ে রেখে দেওয়ার দায়িত্ব নেবে?”
আমি বললাম” কারো বাড়িতে না, কোনো নিউট্রাল জায়গা চাই।”
“ কোথায় বল তো?”
আমি কিছুক্ষন ভেবে বললাম” হয়েছে। উছুমাঠের পোড়ো হনুমান মন্দিরের পিছনটাতে পুঁতে দি চল। রাতের দিকে যাব, কেউ জানতে পারবেনা।”
“ ব্যাস তাহলেই হয়েছে।” পিকু বলল” ২০ দিনও থাকবেনা, ঝাপ হয়ে যাবে।”
তাহলে কোথায়, কোথায়? সমুর পায়ে চটাস করে একটা চড় মেরে চেঁচিয়ে বললাম” বল না”
“ প্লিজ তুই এখন আর কোনরকম নাটক করিসনা। সব ঠিক হয়ে আছে। পার্থদাটাও নাটক মেরে দিল। র এখন তুই।”
“ আমি চেষ্টা করছি রে। এত চাপ অফিসেরামি খুউব চেষ্টা করছি।”
আকাশ এই দিনটা কিন্তু লাইফে আর আসবেনা, কতগুলো দিন ধরে অপেক্ষা করেছি ভাই। সবাই আসছে। প্লিজ”
কিছুক্ষন চুপচাপ।
“ ওক্কে, আমি আসছি সিওর। শালা আমায় চাকর বানিয়ে রেখেছে। ডোন্ট ওরি দোস্ত, টিকিট না পেলে ভ্যান্ডারে বসে আসব শালা। দেখে রাখ তুই।”
হাসতে হাসতে ফোনটা রাখলাম। মালটা চিরকালই বার খায় খুব। যাক সবাই মোটামুটি কনফার্ম। পিকুকে নিয়ে নো চিন্তা, ও কাছেই থেকে গেছে চিরটা কাল। আকাশ দিল্লীতে, বাবি আর ভাস্কর ব্যাঙ্গালোর, সমু দক্ষিন কলকাতা। আর আমি বাড়িতে।
বাবি আর আকাশ কে দেখব ১৮ বছর পর। ভাস্কর মাঝে মাঝেই আসে কাজের সূত্রে। সমুকে আগের পুজোয় দেখেছিলাম। এখন একটা অনামী কল সেন্টারে চাকরী করে। সারা মুখে পাকা দাড়ি। আমি হেসে বলেছিলাম” কিরে তুইতো রবীন্দ্রনাথ হয়ে গেছিস পুরো। কি অবস্থা। সমুর মুখে একটা ক্লান্ত হাসি ছিল। এখনও মনে পরছে সেই হাসিটা।
সবার কত্ত স্বপ্ন। আকাশছোয়া। আর ৫টা টিনএজারদের মত। সবাই কি নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করেনি? হয়ত করেছে। হয়ত সমুর ওই হাসিটুকুই স্বপ্ন ছিল। আমার স্বপ্নটাই হাসির ছিল।
লেখক হব আমি। আনন্দ পাব্লিশার্সের কর্মকর্তারা আমার বাড়িতে ধন্না দিয়ে পরে থাকবে। একটা লেখার জন্য। বাবাকে বলেছিলাম ইঞ্জিনিয়ারিং পড়বনা। জানো ৪টে লিটিল ম্যাগে আমার লেখা বেড়িয়েছে। লিখেই খাব। ভাগ্যিস আমার কথার তখন কোনো দাম ছিলনা। নইলে আজ আমিই সাহিত্য হয়ে যেতাম অন্য কারো কলমে।

দোষটা কি শুধু ভাগ্যের? নাহ। আমিই পারিনি। এখনকার লেখনীর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে। কল্পনা, মায়া, সেক্স, প্রেম নিখুত মাপ মত মিশিয়ে তবে একটা জমাট লেখা বের হয়। আমি ওই মিশ্রণের পরিমানটাই বুঝে উঠতে পারিনি।

“ রাম।”
“ না প্লিজ। হুইস্কি। এটা গনতান্ত্রিক ডিসিশন।”
“ ওকে।” আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
জায়গাটাও ঠিক। পার্থদার বাড়ির বিশালাক্রিতি ক্যাকটাসের চৌবাচ্চা। একটা সিগনেচারের বোতলে ৭জনের নাম লিখে মাটি দেওয়া শুরু হল। সবুজ রঙের ছিপিটা আস্তে আস্তে ছোট হতে হতে যখন নেই হয়ে গেল সবাই মিলে চেঁচিয়ে উঠলাম উল্লাস!
“ ব্যাপারটা ঠিক হল? শালা মাসের শেষে ১০০টাকা। তাও ফিউচার প্ল্যা্নিং।”
“ ওরে আমি ১৭৫ দিয়েছি তাও হুইস্কির জন্য।” আমি কাঁদ কাঁদ হয়ে বললাম।
“ প্ল্যানটা তোমার গুরু। তোমায় তো খসাতেই হবে। হি হি”
“ হুমম। তাহলে ঠিক ২০বছর পর। সন ৩০শে নভেম্বর, ২০৩০। মনে থাকবে তো?
“ আছে রে আছে। এলাম তো।”
হা করে তাকিয়ে রইলাম। এটা বাবি। সারা মুখে সোনালী দাড়ি।” শালা তুই ব্যাঙ্গালোর গেছিলি না ক্যালিফোর্নিয়া?”
“ ইস্টাইল বস ইস্টাইল। বুঝবিনা। তুই তো সেই আমসিই রয়ে গেলি।”
“ অনেক হয়েছে। আয় ভাই যাদু কি ঝাপ্পি।”
নবু আর বুবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ৬টা আপকামিং বুড়োর দিকে।
“ কি তুই খাবি নাকি এক ঢোক?”
“ আমার কোনো ইচ্ছে নেই।” মুখ ঝামটে নবুর রান্নাঘরের দিকে প্রস্থান।

দরজাটা খুলতেই একটা ভ্যাপসা গন্ধ নাকে এল। প্রায় একবছর পরে খুলল দরজাটা, শেষ আগের পুজোয় পার্থদার আসার পর এই। বাবা মা মারা যাওয়ার পর আর কলকাতায় থাকেনি পার্থদা। বছরে একবার আসে। এইবারই গ্যাপ। বাড়িটা তদারকির দায়িত্ব একরকম যেছেই নিয়েছিলাম আমি। সেটাও কি ওই বোতলটার নিরাপত্তার জন্য? সেটাও প্রায় ১২বছর হয়ে গেছে।
“ কি বস মাল্লু কি আদেও আছে? এ যে দেখছি পুরো খান্ডার।” ভাস্করের কথায় অবাঙ্গালী ছাপ এসে গেছে।
“ হাম হ্যে না। আকাশ বাথরুমের পাশ থেকে গাইতিটা নিয়ে আয়।”
আসছে আসছে। পাক্কা দশ মিনিট পর সেই ট্রেজার আইল্যান্ডের গুপ্তধন পাওয়ার মত ঢং করে একটা শব্দ হল। আর সবাই হইহই করে উঠল।
“ আস্তে বাপ। ভেঙ্গে গেলে টোটাল লস।”
বিশকাপ জেতার মত বোতলটা হাতে নিয়ে আমি উইনিং পোজ দিলাম।

প্রথম ঢোকটা গলায় পরতেই মাথাটা ঢং করে উঠল। কার বয়েসের দোষ এটা? আমার না বোতলের?
পিকু বোতলটা নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল।” দ্যাখ ভাই আমার মার্কারে লেখা সেই নামগুলো। এখনও অস্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।”
সে তো যাবেই গাধা। আমার চোখে একটা জয়ের ছাপ। সবার চোখেও একই ছবি খুজছিলাম আমি।
“ এই সমু কি হয়েছে রে তোর? এত মনমরা কেন? বিড়ি শেষ?”

সমু একটু হেসে বলল” বিড়ি খাইনা রে। অনেকদিন হল ছেড়ে দিয়েছি।”
আমি প্রায় চেয়ার থেকে পরে যাচ্ছিলাম। কার মুখে কি কথা?
“ তো হয়েছে টা কি বলবি তো?”
“ না রে কিছুই না।”
গ্লাসটা এগিয়ে দিয়ে বললাম” নে গেল। গিলে বল।”
কাঁপা কাঁপা হাতে গ্লাসটা শেষ করে সমু বলল” নিপার শরীরটা ঠিক নেই রে। গলব্লাডারে স্টোন ধরা পরেছে। ২লাখ টাকার দরকার। এক আমি জোগার করেছি। তোদের বলব ভাবছিলাম। কিন্তু
“ ভাগ এক পয়সাও দেবনা। অত ভাবলি কেন তুই?” বাবি চোখ পাকিয়ে বলল।
আকাশ হেসে বলল” অনেক বিড়ি নিয়েছি আমরা তোর থেকে। সুদে আসুলে ১লাখ তো হবেই।”
আমি বললাম” এবার যদি তুই আমাদের হাত ধরে বলিস কিভাবে তোদের ধন্যবাদ দেব তো পরের পেগ ভুলে যা।”
“ মাথা খারাপ।” চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসে সমু বলল” দে একটা সিগারেট দে। আয়েশ করে খাই।”
সবাই হেসে উঠলাম। হাসিকান্না মিলেমিশে এক হয়ে গেল।

এবার সবার গর্তে ফেরার পালা। আমি হেসে বললাম” চল আরেকটা বোতল, আবার ২০বছর।”
বাবি বলল” ধুর। অতদিন না। নেক্সট বছর ঠিক এই দিন। যতই কাজ থাকুক আসব। এবার না হয় কিনেই খাব।”
সবাই হাত তুলে বলল রাজি।
সবাই এক এক করে বেড়িয়ে যাওয়ার পর বাবি উকি মেরে আমায় কানে কানে বলল” গুড্ডু আমার স্পষ্ট মনে আছে, বোতলটা পোঁতার ঠিক ৩দিনের মাথায় আমি, সমু আর পার্থদা ওটা বের করে খেয়ে নিয়েছিলাম। আর খালি বোতলটা পুঁতে দিয়েছিলাম। ওটা ভরল কি করে বে?”
আমি হেসে উঠলাম। এর উত্তর আমার জানা নেই। এই ২০বছরে কতবার বোতলটা ভর্তি আর খালি হয়েছে তার হিসেব রাখিনি। কারন আজ অনেক বড় একটা হিসেব আমি মিলিয়ে দিয়েছি। মদের থেকেও বেশি একটা জিনিস আছে যা যতদিন যায় তত নেশা বাড়ে। সেটা বন্ধুত্ব। প্রতি বছর না হোক আজ থেকে ২০বছর পরে আবার ৬টা মাথা মিলবে, সে যেখানেই থাকি, আবার সেই হাসি, খিস্তি, স্বপ্ন, গড়ে ওঠা, ভেঙ্গে যাওয়া। আবার ৬টা গেলাস একসঙ্গে আওয়াজ করে চেঁচিয়ে উঠে বলবে চিয়ার্স।
||

Comments

  1. আমেজ টা যা এলো না রে পড়ে!

    ReplyDelete

Post a Comment