২১ শে কবিতা সংখ্যা

| |                   ২১ শে কবিতা সংখ্যা | ২০১৬; ৮ ই ফাল্গুন, ১৪২২


আমি চাই সাঁওতাল তার ভাষায় বলবে রাষ্ট্রপুঞ্জে
আমি না . আমরা . আমরা চাই পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ তার মাতৃভাষায় কথা বলুক, লিখুক, বাঁচুক . আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আসলে মায়ের শেখানো উচ্চারণে গর্ব রাখার নিশান ! দলছুট রা কিছু টুকরো টুকরো পাতা জড়ো করে একটা সামিয়ানা খাটিয়েছে মাথার ওপরে . ওপরের দিকে চোখ তুলে , আসুন , সবাই আজ পড়ে নি , যা আজ পড়া এবং পড়ানো বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ...
আমি চাই ধর্ম বলতে মানুষ বুঝবে মানুষ শুধু - দলছুট
 
                  
                       সম্পাদনা - সৃজনী-সায়ন্তন


          আবদুস সালাম , রফিক উদ্দিন আহমেদ , আবুল বরকত |  চিত্রণ: মৃগাঙ্ক শেখর গঙ্গোপাধ্যায়

অনির্বাণ দে -র কবিতা
রুটি ও শাকের গন্ধ - মানে শীতকাল 
তারপরও বুকের মাঝে উপত্যকা টের পেলে কেউ
আমি তাকে অপরাধী স্বীকার করি না।
স্যাডিস্ট বালকের সাথে হাজার দুপুর
উত্তাল ঝর্ণার পবিত্র বিকেল
আমি তাদের কালিমালিপি স্বীকার করি না।
শুদ্ধতাসুর চেয়ে তার কাছে যাই 
নির্বাণবার্তা তার আঁচলে লালন
আমি তার অপবাদ স্বীকার করি না।
সে আমার ঈশ্বরী , ছায়া এনে দিই
ঘুম দিই , শব্দ রাখি , অলংকার শোভা
প্রাচীন কাব্য থেকে গীতিকা ও কথা
আমি তাকে দিতে চাই - স্বীকার করি না।
**********************************
প্রশ্ন-চিঠি
প্রত্যয়ী জীব হারায় হারায় দিনের শেষে
আঁচল পাতবি ? নোংরা চিহ্ন ঘাসের শিষে
আজকে তুই অন্যরকম , বাকহীনতায় স্পর্শকাতর
 
আজ কি আমি চোখ খুঁজিনি ? খুঁজতে চাইনি ভাষার চাদর ?
 
ওই যেখানে চুপ করে সেই রঙ মাখল শেষ তারাটা
অবাক হবি , সত্যি করে রাত জাগছে সব পাড়াটা
নিম্নগামী আবেগগুলো নৌকো খোঁজে তোর ওপারে
ভাসতে চাইলে শেষ ঠিকানায় , আসতে পারে এই এপারে
সন্ধিধারা শেষটা শুধু আবর্তমান স্বপ্ন দেখায়
 
শেষ আদরটা পাবে বলেই বাঁক-পথেতে উপচে তাকায়।




দেয়া | অস্মিতা মন্ডল
মেঘের আদুরে নাম নাকি দেয়া ?
সোঁদা মাটির গন্ধ জানায় -
'হবে নাই বা কেন
বৃষ্টি যে তোর সফরসঙ্গিনী।'...
গুমোট হওয়া অন্ধকার জানায়-
তোর স্বেচ্ছানির্বাসনে যার আনন্দপতন
তোর প্রতিটি ভাঙন তো আসলে তারই নবজীবন
 
ফুটপাতের একলা ফুলটা জানতে চায়
বৃষ্টি কি খোঁজ রাখে তোর অকালবর্ষনে বাঁধ ভাঙতে চাওয়ার ?
নাকি তোর দুপায়ে শিকল পড়িয়ে চোখ রাঙিয়ে জানায় -
তোর ঝরতে চাওয়ার ইচ্ছেরা আজ পরাধীন
ফুরিয়ে যাওয়া সময় জানায় -
সত্যি বলতে জমাট বাঁধা জলবিন্দুই তোর নির্মাণ
 
যার ঝরে পড়া আছে তবে ঝরতে চাওয়া নেই


আমার দেশ | তাপস দাস
আমার সামনে রেখে দাও মানচিত্র;
বুক চিরে অপ্রশস্ত পথে চলে যাব দেশে।
চরম তাচ্ছিল্য নিয়ে ভালো আছে আমার দেশ
করুণার প্রত্যাশায় বেঁচে আছে আমার দেশ।
ডুয়ার্সের মানচিত্র ঘেরা আমার দেশ
মদেশিয় কুলি কামিন আমার দেশ।
তুমি যখন দেশপ্রেম বল; ভাবতেই থাকি ভাবতেই থাকি
বিভোর স্বপ্নে ভাবি সামসিং বাগান।
যুবতী মেয়ে দাঁড়িয়ে খদ্দেরে আশায়;
তুমি যখন দেশপ্রেম বল; ভাবতেই থাকি ভাবতেই থাকি
বেগুসরাইয়ের পলেস্তার খসা ঘর।
তুমি যখন দেশপ্রেম বল; ভাবতেই থাকি ভাবতেই থাকি
অপুষ্টি অনাহার বন্ধ কারখানা।
আমি জানি দেশ মানে মানুষ, তার অন্তর্গত মানুষ।
আসলে দেশ; এসবের বাইরে অন্য কিছু
মোচ্ছব বাহার, কালো টাকা, বেতমিজ বিনোদন।
আমার সামনে রেখে দাও মানচিত্র;
বুক চিরে অপ্রশস্ত পথে চলে যাব দেশে।
আলোহীন আধমরা ঘিঞ্জি বস্তি আমার দেশ
রেড ব্যাঙ্ক হান্টাপাড়া আমার দেশ।
আসলে দেশপ্রেম অন্য কিছু 
রুমালি রোশনাই, লুট আর লুট।
আসলে দেশ এসবের বাইরে অন্য কিছু
অবরুদ্ধ নিষিদ্ধ প্রান্তর।


তারপর আর না | আকাশ কর
অনন্ত প্রেমিক । 
চিবুকের তিল অবধি তুমি স্বাগত।
তারপর আর নয়।
দিনের শেষ কর্কটক্রান্তি রেখা পর্যন্তও
 
তুমি নামতে পার।
 
তারপর আর নয়।
তারপর.......
আমার ভেতরে শুয়ে থাকা সমস্ত লাল নীল লোকেরা জেগে উঠবে।
আমার হাত ধরে বলবে -
 
চলো....আর না। এবার ফিরতে হবে।
আবার নিয়ে যাবে সেই চেনা অনেক চেনা রাস্তাঘাটে। এনে দাঁড় করাবে -
সেসমস্ত পাহাড়ি ঝরনার সামনে।
যে সমস্ত জলের পাশে এই কিছুদিন আগেও
চুল শুকাতো আমার।
কোনো চমক নেই। কেউ নতুন নেই।
সেই চেনা চেনা পাহাড়।
 
পেরিয়ে যাওয়ার তাড়া নেই।
 
তারপর সেখানে সন্ধ্যে নামবে দিব্বি দিয়ে
 
রাতের দিব্বি। ঐ একই রাতের দিব্বি ,
 
ঘুম হবেই না আমার।
 
তারপর যখন পাশের সেই
 
লাল নীল লোকগুলো ঘুমিয়ে পড়বে,
মধ্যরাতে আমার একলা চলাফেরা
 
কাউকে কিচ্ছু না বলে চুপিচুপি এসে দাঁড়াবে
গোটা সাম্রাজ্যে একমাত্র অচেনা
 
নীলেশ খাদের পাশে।
 
এক বিন্দুও আজ আর থামব না আমি।
 
অনন্ত প্রেমিক,
তোমাকে প্রনাম করে আজ নেমে যাব.....
ঐ খাদের উপত্যকায়। নীরবতায়।
একটাই অভিমান রেখে।
যখন বারবার ফিরিয়েই দিয়েছি...
কেন....... আরেকবার।
 
কেন
 
আরও একটু.........
জোর করলে না।


সৌমাভ দত্তর কবিতা
সমুদ্রগামী জল যখন 
মেঘের রং নিয়ে থমকে দাঁড়ালো
 
চোখে চোখ রেখে, বেয়াদপ
 
গহীন প্রান্তে থেকে, অপরাধপ্রিয়,
 
নরম কিশোরী নদী হয়ে ওঠে
 
#
 
আকাশে কেউ বড় করে ভোর লিখে দেয়,
 
দিন পালিয়ে
 
এক আধ টুকরো মোহ জমায় কেউ।
 
#
 
মুগ্ধতা মানে এখনও
 
সেদিনের বিষন্ন স্মৃতি।
 
মনে আছে একদিন "মাটি "
 
বলতেই ফুলেল উপত্যকা এসে দাঁড়াত
 
পাথর ভুলে।
 
আর "মেঘ " ভাবলে এখন
 
অসহ্য রোদ্দুর আছড়ে পড়ছে-
 
পুড়তে পুড়তে আমি,
 
সেই প্রাচীন তোপ,
 
গর্জন করে যাচ্ছি
 
"ঘুম চাই, জ্বর দাও "



চুপ | সায়ন্তন সেন
এই যে এটুকু কথা 
তোমার-আমার মধ্যে,
 
এর চেয়ে আরও কিছু বেশি
না-বলাই থেকে যায়,
না-বলাই থাকে
 
কেননা
 
কথার চেয়ে পরিপাটি
 
কেননা
 
কথার চেয়ে অগোছালো
আর কিছু নেই ।
শব্দের নাভিমূলে কয়'বিন্দু
জমলে আঁধার
যতখানি নিকটবর্তী তার
ঠোঁট, অপলক চেয়ে থাকা -
না-বলা কথারই মতো
 
চুপ



আতিথেয়তা | সৃজনী গঙ্গোপাধ্যায়
কবিতা আসতে চাইছে না
তবু জোর করে ওকে ভিতরে টেনে আনা
আবোল তাবোল কথা বলা
চা বিস্কুট খাওয়ানো
 
আর চায়ের মধ্যে কিছু একটা
মিশিয়ে দেওয়া
তারপর বেঁহুশ হলেই
তেলরঙে লেপে ,
দেওয়ালে বাঁধিয়ে রাখা
কেন অমন রুটিন তোমার ?
 
প্রশ্ন করলেই তো বলবে ,
"কেন , খাওয়া বাদ দিই একদিনও ?
একদিনও ঘুম ছেড়ে একা বসে থাকি বারান্দায় ?
একদিনও নিজেকে বলি , অদৃশ্য হয়ে যাও
হারিয়ে যাও একেবারে চিরদিনের জন্য ?
তা'হলে কবিতাই বা কেন রোজ আসবে না ? "
আচ্ছা বেশ ,
ধরো কোনদিন সে তোমার আতিথেয়তার উপরে ফেলে দেয় একদলা থুতু !
"নিতান্তই তা যদি করে
তবে আমি , হ্যাঁ আমিই
অতিথি হয়ে যাব তার বাড়ি
গল্পসল্প করব
আর কবিতা চায়ের মধ্যে মিশিয়ে দেবে একটা কিছু ... "

| |

Comments