২১ শে কবিতা - রিভিউ ৬




আলোচনা

| |কবিতা কাননে,ছড়িয়ে যাওয়া সৌরভ  - অরিন্দম||



দলছুট পত্রিকার পক্ষে মৃগাঙ্ক শেখর গাঙ্গুলী যখন আমার কাছে রিভিউ-এর আবদার করলেন।তখন আমি সত্যিই খুব চমকে গিয়েছিলাম।কারণ একটা কবিতা পত্রিকার রিভিউ করতে গেলে যেটুকু কাব্যজ্ঞান থাকা দরকার,আমার মধ্যে তার বিন্দুমাত্রও নেই।কবিতা কি?কেন?তার ভবিষ্যৎ কি?এইসব প্রশ্নের উত্তর একজন পাঠক হিসাবে আমি আজও খুঁজে চলেছি।তাই প্রথমেই বলে রাখা ভালো-এটা কোনোভাবেই রিভিউ নয়।একজন নিতান্ত পাঠক হিসাবে দলছুটের ২১শে কবিতা সংখ্যা পড়ে আমার মধ্যে তৈরি হওয়া কিছু প্রশ্ন,ভালোলাগা,খারাপলাগা আর সম্ভাবনার কোলাজ মাত্র।সংখ্যাটিতে পনেরোটি পর্বে বিভক্ত কবিতা বিভাগটি বেশ দীর্ঘ।সেখানে যশোধরা রায়চৌধুরী,বারীন ঘোষাল,মলয় রায়চৌধুরী,দেবারতি মিত্র,আর্যনীল মুখোপাধ্যায়,ঈশিতা ভাদুড়ী প্রমুখ তথাকথিত পরিচিত কবির সঙ্গে জায়গা করে নিয়েছেন শূন্য ও একুশ শতকের বহুকবি।প্রথমেই চোখে পড়ে যশোধরা রায়চৌধুরী তাঁর “দিনগত”কবিতায়-মহিলাদের রোজমরা রোজবাঁচা জীবন ছেড়ে তাদেরকে এক অনন্ত স্বপ্নের দেশে পাড়ি দেওয়ার সন্ধান দিয়েছেন।এক রোম্যান্টিক অ্যাপ্রোচেবারীন ঘোষাল তার উচ্চারণে চিরাচরিতভাবে কবিতার চেনা স্রোতের আড়ালে স্বতন্ত্র স্বাক্ষর রেখেগেছেন।“মারো গুলি প্রেম-ফেম,নাঃ,ফেমকে গুলি নয়,ওটার জন্যই/ঘামের ফসফরাস ওড়াচ্ছিসব্রহ্মান্ড নিখিলে গুণ ভাগ যোগ”-এমন উচ্চারণ মলয় রায়চৌধুরী ছাড়া আর কেই বা করতে পারেনস্রোতস্বিনী চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় ফুটে উঠেছে নারী মনের এক গোপন দহন যন্ত্রণা ও তাদের সামাজিক অবস্থার বিরুদ্ধে এক অনন্য প্রতিবাদ-“আয়ান ঘোষের ঘরণী হয়ে একটা গোটা জীবন/আমি দীর্ঘনিঃশ্বাসের সঙ্গে বেচে দিতে পারিনি বলেই,/রোজ একটু একটু করে তোমার অষ্টসখীদের ডিঙিয়ে/ অমঙ্গলের আশঙ্কাতেই পথ খুঁজেছিলাম”।আষিকের কবিতাও বেশ ভালো লাগে।পার্থ বসুর কবিতায় দুই বাংলাভাগ এবং বাংলা ভাষার প্রতি অবহেলার বিষয়বস্তু পাঠকের মনে এক নিদারুণ বেদনার সঞ্চার করে।“অফিসফেরতা মৃদু আলো জ্বলে ওঠা/ঝুলবারান্দা-আসলে প্রবঞ্চক/যুবকে দেখায় নকশা কাটা অন্তর্বাস/যুবককে করেছে রঙিন কল্পনায় নিঃস্ব;/বাতাস শুধু প্রগাঢ় লগ্নতায় টের পেত,/দিনভর রগড়ানির গন্ধটুকু/একান্তে যা প্রকৃ্ত তৃ্তীয় বিশ্ব”।–কবি সরোজ দরবার তার কাব্য রসায়নে ফুটিয়ে তুলেছেন তৃ্তীয়বিশ্বের যুবকদের জীবনযন্ত্রণার এক করুন আর্তনাদ।জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় তার কাব্যিক রঙে জীবনের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির এক চমৎকার ক্যানভাস এঁকেছেন।চয়ন ভৌমিকের উচ্চারণও বেশ চমকপ্রদ-“স্বপ্ন বুদবুদের মত উড়ে উড়ে,/ফিরে আসা শুরু করে/অনন্ত ইচ্ছার বাসর ঘরে”।ভালোলাগে আকাশ দত্তের কবিতা। ইন্দ্রানী মুখোপাধ্যায় তার কাব্যে আবার গাইলেন অসুখের গান।একুশ শতকের কবি উল্কা লেখেন-“দেওয়ালের গায়ে পোষ্টারপোষ্টার ইট/চ্যুইংগাম ঘষে ভাড়াটে প্রেমের সাথে/পালাচ্ছে উদ্বৃত্ত পরকীয়া”।এছাড়া রঙ্গীত মিত্র,দীপ্তিপ্রকাশ দে,অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়,মেঘ অদিতি,অনুপম মুখোপাধ্যায় ও প্রশান্ত সরকারের কবিতার উজ্জ্বল উপস্থিতি লক্ষ করা যায় এই সংখ্যায়।গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রায়েল-এর কবিতা অনুবাদে রোশনি কুহু চক্রবর্ত্তী বেশ সাবলীল।কিন্তু পড়ে আস মিটল না।আর একটু বেশি হলে মন্দ হত না। ২১শে সংখ্যার আর একটি উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হল প্রবন্ধ বিভাগ।এই বিভাগে নতুন শতকের দুই কবি অতনু সিংহ ও অনুপম মুখোপাধ্যায়ের কবিতার চুলচেরা বিশ্লেষণে পাঠকের সামনে একখণ্ড কবিতা ভাবনা ফুটিয়ে তুলেছেন প্রশান্ত হালদার।তবে অনুপম মুখোপাধ্যায়ের কবিতা পড়ে একজন পাঠক হিসাবে এইটুকুই মনে হয়- যে “পুনরাধুনিক” বাংলা কবিতার বাঁকবদলের মাইলস্টোন হিসাবে চিহ্নিত হবে কি না,নতুন প্রজন্ম তা অনুসরণ করবে কি না?-এই প্রশ্নের উত্তর সময়ের উপর ছেড়ে দেওয়াই বোধহয় ভালোকিন্তু বাংলা কাব্যসংসারে একটা নতুন প্রয়াসের জন্য কবিকে কুর্নিশ দেওয়া যেতেই পারেবেশকিছু লেখা বাদ পড়ে গেল আলোচনায়,বেশ কিছু লেখা আমার মধ্যে তেমন দাগ কাটেনি।কিন্তু যাই হোক সবমিলিয়ে দলছুটের ২১ শে কবিতা সংখ্যা যে কবিতা কাননে যথেষ্ট সৌরভ ছড়িয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। | |

Comments