ডiary : অবলা ১ : রোশনি কুহু চক্রবর্ত্তী







Author

|অবলা
রোশনি কুহু চক্রবর্ত্তী
না বলা বা হয়ত আবোলতাবোল তিড়িংবিড়িং কিছু বলব থুরি লিখব মৃগাঙ্কদার কথাতেই ,
অবলা বলছি কারণ আমরা নারীরা নাকি অবলা , আবার না বলা না ভাবা আলটপকা কথাগুলো লিখব সেটাকে আর যাই হোক লেখা বলা চলেনা – নিজগুণে মাপ করে দেবেন ।
প্রত্যাখ্যান অথবা বন্ধু চেনার পাঠ 
দুঃখবিলাসী হতে খুব ইচ্ছা করছে আজ , জীবনের প্রথম প্রত্যাখ্যান অথবা বন্ধু চেনার অনুভবের কথা বলতে ইচ্ছে করছে , যদিও সাত বছর বয়সে প্রত্যাখান বানানটাই শুধু জানতাম হয়ত , দক্ষিণ কলকাতার একটা প্রথম সারির বাংলা মাধ্যম স্কুলে প্রথম পাঁচে থাকতাম মোটামুটি , লোকজন বলত ভালো স্টুডেন্ট , সেসবের মানেও জানতাম না সত্যি । প্রথম সর্যগ্রহণ চন্দ্রগ্রহণ শিখছি সরকারী বই থেকে , মা পড়াত সেসব, ক্লাস থ্রি বোধহয় , ফাইনাল পরীক্ষার আগে স্কুলে আরও একটা ২০ নাম্বারের খুদে ফাইনাল হত ,তাতে ভালো মানে ফাইনালের প্রস্তুতি ভালো এটা ধরে নেয়া হত , মাঝে মাঝে ভাবি জীবনের সব  পরীক্ষার আগে  এমনএকটা নিজের ভুল ধরার প্রস্তুতি যদি থাকতো মন্দ হত না , সে যাক গে , অবলা যখন একটু বাজে বকা পড়তে হবে কষ্ট করে। সেইরকম বিজ্ঞান পরীক্ষাতে প্রশ্ন এল গ্রহণ নিয়ে,আঁকা আর লেখা মিলে ৫ নম্বর । আঁকার সময় চাঁদ সূর্য পৃথিবীর মানে পঁচিশ পয়সা , পঞ্চাশ পয়সা আর এক টাকা । ক্লাসে প্রথম হত অরুণিমা [ নামটা বদলালাম স্কুলের বন্ধুকে ভালবাসি বলেই] যার মাথার একটা চুলও এদিকওদিক হতনা টিফিনের পরেও,কারণ ও খুব একটা খেলতোনা , বসে দেখত আমরা খেলছি , সে যাইহোক আমার ভালো বন্ধু ছিল, কাটাকুটি খেলতাম দুজনে খুব , ও খালি কাঁটাটা নিয়ে আমাকে গোল্লা দিত।আরেকটা মেয়ে ছিল শৈলশ্রী যে খুব কামাই করত , রোজ কান ধরে ক্লাসের বাইরে দাঁড়াত , টিফিনে মারপিটের জন্যে যার গার্জিয়ান কল হত । পরীক্ষার দিন ওঁর আমার পাশে সিট পড়ল , আমি যদিও বরাবর ডাকাবুকো ছিলাম কিন্তু মারপিট করিনি কোনোদিন। প্রশ্ন হাতে পেয়ে দেখি সেই গ্রহণের প্রশ্ন,আর আমি সেই প্রথম ও শেষবারের মত কম্পাস , পৃথিবী চাঁদ আঁকার জন্যে পয়সা নিয়ে যাইনি , এবার কী হবে , হাতে গোল করলে তো বেঁকে যাবে , আন্টিকে [ দিদিমণি বলার চল ছোটদের বিভাগে একেবারেই ছিলনা] বললাম যে আনিনি , খুব বকা খেলাম , বললেন যা খুশি কর , কেউ এনে থাকলে দেখ কেউ দেবে কিনা । এরকম যে হয় জানতাম না আগে , কেউ না কেউ পেন্সিল রবার ,শার্প্নার না আনলে আমি তো দিয়েই দিতাম [ বরাবরের নিবেদিতা আর কি ! ] সময় নষ্ট না করে প্রথমেই চাইলাম অরুণিমার কাছে , ও আমার সামনের ডেস্কে বসেছিল তাই , ও আমাকে বলল , ‘তুই তো আঁকতে পারিস , তোকে কয়েন দিলে তুই বেশি নম্বর পেলে মা তো আমাকে বকবে, তোকে কী করে দেব ? ‘
আমি তো সেই শুনেই চোখ মুছতে মুছতে অবাক হয়ে বসে পড়েছি , আমাকে এভাবে ফিরিয়ে দেবে কেউ কাছের বন্ধু ভাবতেই পারিনি যে ,কেঁদেকেটে একসা হয়ে আবার গ্রহণ কাকে বলে লিখতে বসে গেছি আর ভাবলাম হাতেই এঁকে দেবো , আঁকার ক্লাসে তো কত্ত আঁকি এমন , পাশ থেকে দেখি শৈলশ্রী ডাকছে , বললাম;’ লিখছি , ডাকবিনা একদম ।‘ ও আমাকে বলল ‘আমার কয়েনগুলো দিয়ে তুই আঁক , আমার আঁকা হয়ে গেছে’
আমি তো অবাক খুব , ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ওর হাত থেকে নিলাম পঁচিশ পঞ্চাশ একটাকার কয়েনগুলো , চাঁদ, সুয্যি পৃথিবী আঁকলাম , ফেরত দিলাম ওকে সেগুলো । বাড়ি ফিরে মাকে বললাম কী কী হয়েছে , মা তখন যেটা বলেছিল সেটা আবছা মনে আছে – মা ওই দুই বন্ধু আর ভাল্লুকের গল্পটা আবার করে বলেছিল আর বলেছিল মা যেদিন স্কুলে মা আমাকে প্রথম ভর্তি করে মার মনে হয়েছিল বাইরের পৃথিবীতে সেই প্রথম মা আমাকে একা ছেড়ে দেয়, তারপর থেকে কিছুটা হলেও আমাকে চিনতে শিখতে হবে চারপাশ এই ভেবেই। হ্যাঁ আমি চিনতে শিখেছিলাম প্রত্যাখ্যানের মানে , আর বিপদের দিনে বন্ধু কথাটার মানে , তাইজন্যে আজও অরুণিমার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব অটুট , ছোটবেলার ছেলেমানুষী কেই বা মনে রাখে , ওর মনেও নেই , কিন্তু ক্লাস সিক্স থেকে সেভেনে ওঠার সময় ভূগোলে পাশ নম্বর একশোতে ৪৫ না পাওয়ার কারণে শৈলশ্রীকে স্কুল ছাড়তে হয় , কে জানে ও কোথায় আছে , ফেসবুকে খুঁজে পাইনি কিন্তু ওর ওই সব্বাইকে চিমটি কাটা , কানমুলে দেয়া , Lock and Key –এর চোট্টামি , পড়া না পারলে হাসিমুখে কান ধরে ক্লাসের বাইরে বেরিয়ে যাওয়াগুলো ভুলে পারিনা, ‘বন্ধু’ কথাটার ভার যে কত কঠিন , এখন বুঝি তবে সেই আমার প্রথম প্রত্যাখান , সেই আমার প্রথম বন্ধু চেনার পাঠ শুরু হয়েছিল , কিন্তু কী জানি আজও এখনও সেই পাঠ চলছেই ।
             |

Comments