ডiary : শুক্রাণু ১০ : অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়








Author
|

শুক্রাণু ১০ :  ওরে হাল্লা রাজার সেনা
অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায়

আইনস্টাইন বলেছিলেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে মানুষ কোন্‌ অস্ত্রে লড়বে আমি জানি না... কিন্তু চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধে আমি নিশ্চিত মানুষ লড়বে লাঠি নিয়ে আর ঢিল ছুঁড়েএই পৃথিবী ভালোবাসায় কতটা আগ্রহী? বার্ট্রাণ্ড রাসেল নামে একটা বোকা লোকের চাকরিই চলে গেছিল ট্রিনিটি কলেজ থেকে, এই যুদ্ধবিরোধিতার জন্যপ্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিরোধিতার জন্যে জেলও হয়েছিলঊননব্বই বছরের বৃদ্ধ যখন তিনি, সোচ্চার দাবি তুলেছিলেন, পৃথিবীর যে দেশগুলো পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে ব'সে আছে, তারা নিরস্ত্রীকরণ করুকফলে, আবার জেলঠিকই তোএ আবার কি অদ্ভুত দাবি! যুদ্ধের বিরোধিতায় শুধু গানই বাঁধবে মানুষকবিতাই লিখবে বোকা কবিরাছবি আঁকবেন ভাবুক শিল্পীঅনেকদিন আগে, কার যেন লেখা পড়েছিলাম, মানুষে মানুষে মিলে / পৃথিবী খাবে গিলে / যুদ্ধের সন্ত্রাস।/ আমার দু'চোখে ভাসে / ডালের ডগায় ব'সে / গোড়া কাটে কালিদাস
বরানগরের লেবুবাগানের বাঙলা মদের ঠেকে তিন তলার খোলা ছাদে বসে আমার বন্ধু অর্ঘ্য আমার এ কথা শুনে দূরে হাত দেখায়। যেদিকে একটা বাড়ির ছাদে জড়ো হয়েছে অনেক অনেক অনেক কাক। অর্ঘ্য বলে, অর্জুন, এখন যদি ঐখানে গম ছড়িয়ে দেওয়া হয়, তাহলে কাকগুলোও কিন্তু নিজেদের মধ্যে লড়াই শুরু করবে। ক্ষতবিক্ষত করবে একে অপরকে। আমি মদের গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলি, অর্ঘ্য, ওরা সেই মারামারির জন্যে কোনো বাজেট পেশ করে না। অস্ত্র মজুত করে না। একটি কাক অন্য কাকেদের মেরে ফেলার পরিকল্পনা ফাঁদে না। এবং পরিকল্পনা মাফিক কোনো মারণাস্ত্র ফেলে আসে না অন্য কাকের বাড়ি। মানুষ ফেলে আসে।
একটা গান, একটা কবিতা কিম্বা একটা ছবি কিইবা ছিঁড়তে পারে এই সভ্যতার[?]। ইয়ান জুন, চীনের এই সময়ের একজন কবি ও সঙ্গীতশিল্পী, ওঁর একটি কবিতায় লিখেছিলেন ‘I demand that the whole of mankind have the right to vote for the president of the United States.’ ভাবুন তো একবার, এর’ম যদি হয়? যুদ্ধবাজ দেশগুলোর রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করবেন সারা দুনিয়ার লোক। আট-ন’ বছর আগে, ব্রিটেনের বিখ্যাত গ্রাফিতি শিল্পী, ব্যাঙ্কসি, যাঁকে আর্ট টেরোরিস্ট বলা হয়, ইস্রায়েলে গিয়ে প্যালেস্তাইনের দিকে থাকা ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের বিতর্কিত নিরাপত্তা পাঁচিলে ছবি এঁকে এসেছিলেন। এতো এতো বন্দুক, পাহারা, দূরবীন কেউ ধরতেই পারেনি একটা মাথা-ঢাকা জ্যাকেট আর গেরিলা-মুখোশ পরা লোক, হাতে রঙের স্প্রে-ক্যান নিয়ে এসে ওদের পাঁচিলে এঁকে দিয়ে গেল ছবি। অসাধারণ ছবি ছিল সেটি। ইস্রায়েলি নিরাপত্তার বিরাট সেই পাঁচিলের একজায়গায় দুটো বাচ্চা ছেলে খোদাই ক’রে মস্ত এক গর্ত খুঁড়েছে। সেই গর্ত দিয়ে পাঁচিলের ওপারে দেখা যাচ্ছে সমুদ্রের তটভূমি। হাল্কা নীল জল এসে ঠেকছে তীরে। আর নারকেল গাছগুলো ঝুঁকে আছে জলের বুকে। অন্ধের এই পৃথিবীতে একজন ডেঞ্জারাস শিল্পী তো এটাই পারেন, পাঁচিলের ওপারে কী আছে, পাঁচিল ফাটিয়ে সেটা দেখিয়ে দেওয়ার আরডিএক্স ধারণ করেন তিনিও।

Comments