ডiary : পত্রলেখা : সব সংলাপ কাল্পনিক: সৌম্যজিত চক্রবর্তী







DIARY
AUTHOR
সব সংলাপ কাল্পনিক 






আবার সেই একঘেয়ে প্রেমের গল্প শোনাই? শোনাই, কেমন! তবে এ গপ্পোটা সেই সব মানুষদের জন্যঃ যাঁরা খুব ভালবাসেন, কিংবা ভালবাসতে চান। কিন্তু এটা বোঝেন না, যে ভালবাসা চার-অক্ষরের একটা শব্দ- যার একটা নিজের, একটা অপরের, একটা দু’জনের, আরেকটা এই পৃথিবীটার। আমরা কতটুকুই বা একে অপরকে তাঁর মত করে ভালবাসতে পারি? আর কতটুকুই বা অপরে আমাদেরকে আমাদের মত করে ভালবাসতে পারে? প্রশ্নগুলো কঠিন, উত্তর তো আরওই অজানা। আমি নিজে কবিতা খুব ভালবাসি, লেখার চেয়েও পড়তে। তাই যেখানে যা কুড়িয়েবাড়িয়ে পাই, তাই পড়ি। কবিতার মধ্য দিয়ে একটা অন্য পৃথিবীর খোঁজ করি। এবং সেই খোঁজ মাঝেমধ্যেই এই পৃথিবীটার সাথে ঝগড়া ক’রে বসে। আমার যে সব বন্ধুবান্ধবরা কবিতা ভালবাসেন, তাঁদেরকে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এও দেখি যে তাঁদের এক ধরণের মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়- সব কথা কবিতার ছলে বলা, সব প্রশ্নের উত্তর কবির কথায় দেওয়া, এবং ভালবাসায়ও তার ছাপ পড়ে। এখন আপনার উল্টোদিকের মানুষটি যদি কবিতা ভালবাসেন, কিন্তু আপনার মত অতটাও নয়, তখন কি করবেন? স্রেফ কেটে পড়বেন? না কি তাঁকে বলবেন, যে আমাকে ভালবাসতে গেলে আমার চিন্তাভাবনা, আমার ভালোলাগা- এগুলিকেও ভালবাসতে হবে তোমায়। যদি সে না বাসে, ধরুন তাঁর আপনার মত কবিতার প্রতি সেই টান অনুভূতই হয়না। তখন আপনি কি করবেন? আমরা মনের মত কাউকে পেতে চাই, তাঁর সঙ্গে ঘর বাঁধতে চাই, এক ছাতের তলায় থাকতে চাই। সঙ্গে কোথায় যেন অবিচ্ছেদ্য ভাবে একটি সমীকরণ চলে আসে যে ‘আমাকে বুঝতে হবে, আমার ভাষা, আমার ভাবনা- এগুলিকে বুঝতে হবে। না হলে আমাকে তুমি আমার মত ক’রে পাবেনা।’ আমি বলি কি, এই গোঁ-টা ছাড়ুন। ঋতুপর্ণ ঘোষ সেই কবেই বলে গেছেনঃ “কেউ কি কারো মনের মত হয়? তুই নিজেই কি নিজের মনের মত দিদিমণি?” (সংলাপঃ ‘দহন’)। সবসময় কবিতার ঢঙে আপনার জবাব দেওয়া, কিংবা কবিতার ছলে কিছু সহজ কথা এড়িয়ে যাওয়া- এগুলি করবেন না। নিজেদের সম্পর্ক কবিতায় থাকুক ছাই না থাকুক, অন্য কিছুতেও তো থাকতে পারে। সেটা খুঁজে বের করতে হবে আপনাকেই। আমি কেবল গপ্পোর ছলে দু’টো কথা শোনাতে পারি, ব্যস। তবে, গপ্পো শুরু করি?
(গপ্পো)কল্পনা - গপ্পোর নাম ‘সব সংলাপ কাল্পনিক’
কল্পনা, একটি গোর্খা মেয়ে – কালিম্পঙে তার ঘর, শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা। পাহাড়ি জংলা ফুলের সৌরভ মেখে মেঘের একখানা পথ বানিয়েছিল সে। ইস্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ টপকাতে গিয়ে, সেই পথে ধ্বস নামেধ্বসের পর শান্তিনিকেতনে তার নতুন করে জীবন গোছানোর পালা শুরু হয়। হাত লাগায় শ্যামলেন্দুও। শ্যামলেন্দু, আদি নিবাস কলকাতা। শ্যামলেন্দু কবিতা লেখে, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সে’সব কবিতা ছাপাও হয়। তাঁর কবিতা ঝাড়গ্রামের কোন এক ইস্কুলে ক্লাস ইলেভেনে পড়া কিশোরী কতটা পড়ার সুযোগ পায় বা পড়ে, সে দ্বন্দ্ব তাঁর মনের ভিতরেও চলে। তাঁর পাঠক বলতে পরিবারের দু-একজন, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে গুটিকতক, আর মেরেকেটে কবিতার পত্রিকা কেনা কয়েকজন বিলুপ্তপ্রায় মানুষ, আজকাল কবিতা সব অর্কুট বা ফেসবুকেই পড়ে নেওয়া যায়। ইউনিভার্সিটিতে পাঁচ পাঁচটা বছর ওঁদের (কল্পনা আর শ্যামলেন্দু) একসাথে এলোমেলো লাইব্রেরি, হঠাৎ সাইকেল আর যৌথ রান্নাঘরের স্বপ্ন ফেলে শ্যামলেন্দুকে ফিরে আসতে হল কলকাতায়, দু’বছরের একটি গবেষণার কাজে। একলা পড়ে থাকে কল্পনা। বুকে মেঘ, মাথায় ভবিষ্যৎ আর দু’হাতে শূন্যতা নিয়ে শিক্ষিকা হওয়ার লড়াই শুরু তার, সেই শান্তিনিকেতনেই।
... অনেকদিন পর, দূরভাষের এপার ওপার
কঃ লিসন্ শ্যামলেন্দু, আই হ্যাভ নোটিসড্ সিন্স ইউ মুভড টু ক্যালকাটা, তুমি বদলে যাচ্ছ। আই মিন, রাইট নাও ইউ আর অলমোস্ট অ্যান আননোন পার্সন টু মি! কি হয়েছে তোমার বল? প্লিজ, আমিও শুনতে চাই হাউ ইওর লাইফ ইস গোয়িং অন?
-     শ্যাঃ আরে বাবা, কি হবে! কিছুই হয়নি। দ্যাখো, কাজের চাপ বেড়েছে। সেই নিয়ে একটু ঘেঁটে আছি, আর কিছু না। বদলে যাওয়ার কি আছে আবার! যা ছিলাম, তাই আছি। বদলের মত কিচ্ছু হয়নি।
কঃ প্লিজ ডোন্ট লাই ওকে। ইউ জাস্ট ডোন্ট নো হাউ দিজ ডেজ আই অ্যাম পাসিং হিয়ার উইদাউট ইউ। ইউ কান্ট ইম্যাজিন অলসো! বলো না, কি হয়েছে? হোয়াটস রঙ উইথ ইউ? দ্যাখো, ইজ ইট মাই ফল্ট- আমি কি তোমাকে ভালবাসতে ভুলে গেছি? না, তুমি আমাকে আর ভালবাস না? তুমি আজকাল আর ভালভাবে কথাটুকুও বলো না। আর ইউ গোয়িং টু সেভ দ্য ওয়ার্ল্ড অর হোয়াট? ... বাট আই নো দ্যাট আমি আমার শ্যামলেন্দুকে একদিন ঠিক ফিরে পাব। আই অ্যাম হোপফুল। লাভ ইউ লট, বাবি।
-     শ্যাঃ তুমি ভালবাস আমায়? আচ্ছা, কেন ভালবাস বলতো? এতো ভালবাসারই বা কি আছে হে বাপু? আমি যা বলছি, শোনো।
তুমি আমায় বল যে তুমি শেষ কবে একটা ভিখিরিকে একটা পচা আপেল বুকে জড়িয়ে ভালবাসতে দেখেছ?
শেষ কবে তুমি একটা বাস কন্ডাক্টরকে এক্কেবারে শেষ সিটে বসে খুচরো গুনতে দেখেছ?
শেষ কবে তুমি একটা ভালো কবিতা পড়েছ?
শেষ কবে তুমি ভালবাসতে গিয়ে ক্লান্ত হয়েছ?
শেষ কবে তুমি সেই ছোট্টবেলার মত একটা পাখি হয়ে উড়ে যেতে চেয়েছ?
শেষ কবে তুমি কাঁদতে গিয়ে বুঝতে পেরেছ কান্নার বাজারদর বেড়ে গেছে, অত সহজে আর যখন তখন কেঁদে ফেলা যাবেনা!
শেষ কবে তুমি স্বপ্নে সমুদ্র ঘুরে এসেছ?
কিছু দিশাহীন নিঃশ্বাস কথা বলছে ওপারে তখন। শ্যামলেন্দু শুনতে পায়। বিরক্ত হয়।
শ্যাঃ কি হল? উত্তর দাও।
কঃ হোয়াট! কিসের উত্তর দেব?   
শ্যাঃ ওয়েল, আই আস্কড ইউ সামথিং!
কঃ ইউ আস্কড? হোয়েন!!!
শ্যাঃ এতক্ষণ ধরে তোমায় গোটা সাতেক প্রশ্ন করলাম আমি! আমি সেগুলোর উত্তর চাইছি কল্পনা।
কঃ বাবি, আমি ভাবলাম তুমি নতুন কোন কবিতা লিখেছ! সেটা আমাকে পড়ে শোনালে!
শ্যাঃ ওহ! ঠিকই তো! কবিতাই। হুমম... এটা আরেকটা কবিতাই ছিল। শোনো আমায় বেরিয়ে পড়তে হবে বুঝেছ। খুব জোর বৃষ্টি আসছেকলকাতা আবার ভাসতে চলেছে খবরে পড়লাম, কালিঝোরার কাছে কালিম্পং যাওয়ার রাস্তাটায় গতকাল ধ্বস নেমেছে। তোমার বাড়িতে খবর নিও। টেলিফোনটা রাখছি।                                            (ঋণ স্বীকারঃ অঞ্জন দত্ত)

গপ্পোর গরুটাকে গাছ থেকে নামাতে চাইলে নামিয়ে দিন, আমি ক্ষুণ্ণ হবনা। তবে সেই একই কথা আবারও বলি, আমি আপনাদের কাছ থেকেও শুনতে চাই, তাই এত বাজে বকা।                                         _ _ _




Comments