সিনেমাঃ বিগ ব্যাড উল্ভস্‌: নির্ণয় বসাক

| |

নির্ণয় বসাক

বিগ ব্যাড উল্ভস্‌
পরিচালকঃ আহারঁ খশালে, ন্যাভো প্যাপুশ্যাদো
দেশঃ ইসরায়েল

 কয়েকটা নেকড়ে আর কয়েকটা মেষের গল্প। বলা ভাল নেপথ্যের কয়েকটা মেষকে নিয়ে কয়েকটা নেকড়ের খাওয়াখাওয়ির গল্প। মেষ হল কয়েকটি বাচ্চা মেয়ে, আর নেকড়েরা হল এক বেপরোয়া পুলিশ মিকি, এক স্কুলমাস্টার ড্রর, আর এক সদ্য মেয়েহারা রিটায়ার্ড মিলিটারি গিডি।
 ছবির প্রথম দৃশ্যে এক জঙ্গলের প্রান্তে লুকোচুরি খেলার সময় একটি বাচ্চা মেয়ে অপহৃত হয় কোনো এক অজানা আততায়ীর হাতে। সন্দেহবশত ড্রর-এর ওপর অত্যাচার করে মিকি।এই অত্যাচারের ভিডিও ক্লিপস্‌ এক কিশোর ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়। পরিণামে চাকরি যায় মিকির। সমস্যা জটিল করে তোলে জঙ্গলে পাওয়া অপহৃত মেয়েটির ধর্ষিত, মুণ্ডহীন দেহ।এখন ইহুদী নিয়মমতে জন্মের সময় তুমি যেভাবে পৃথিবীতে এসেছো ঠিক একইভাবে মৃত্যুর পর তোমাকে কবর দেওয়া হ’লে প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হবে শুদ্ধ। মেয়ে-হারা বাবা গিডি মেয়ের মাথা খুঁজতে শুরু করে।
 এরপরের গল্প এক উন্মাদ পিতা , এক পুলিশ, আরেক সন্দেহভাজন স্কুলমাস্টারের মানসিক টানাপোড়েনের। ঘনিয়ে ওঠে এক সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারের প্লট। ভিডিও ক্লিপস্‌ এর দরুণ চাকরিহারা ড্রর প্রথমে অপহৃত হয় মিকির কাছে আর তারপর মিকিসুদ্ধ অপহৃত হয় গিডির কাছে। এরপর এক নির্জন বনের মাঝে এক বাড়িতে ড্ররের ওপর শুরু হয় অত্যাচার। আঙুল ভেঙে দেওয়া হয় , নখ উপড়ে নেওয়া হয়। অকথ্য অত্যাচারের মধ্যেও ড্রর নিজেকে নির্দোষ বলতে থাকে। মিকি প্রথমে এই অত্যাচারে অংশ নিলেও পরে বেঁকে বসলে আবার বন্দী হয় সে। এই পরিস্থিতিতে গিডির বাবা এসে উপস্থিত হয় আর সব শুনে আরও ভয়ঙ্কর অত্যাচার শুরু করে। ব্লো-টর্চ জেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয় ড্ররের বুকের খানিকটা। যন্ত্রণা থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি পেতে এক মনগড়া জায়গার কথা বলে ড্রর। গিডি বেড়িয়ে যায় মেয়ের মাথার সন্ধানে। ঘটনা মোড় নেয় এখান থেকেই। সুযোগ পেয়ে নিজেকে মুক্ত করে পালায় মিকি এবং পথে খবর পায় তার মেয়েকেও একইরকমভাবে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বিদ্যুচ্চমকের মত তার মাথায় আসে ড্রর একবার মিকিকে তার মেয়ের নামে দোহাই তোলে। কিন্তু ড্ররের জানার কথাই ছিল না যে মিকিরও মেয়ে আছে। যদি না...
 এদিকে মৃত মেয়ের মাথা খুঁজে না পেয়ে গিডি ফিরে এসে শেষ প্রতিশোধ হিসেবে ড্ররের মাথা কাটতে শুরু করে। মিকি ফিরে এসে তাকে থামায় । রক্তাক্ত ড্ররকে  মেয়ের সন্ধান জিজ্ঞেস করে। কোনো উত্তর পাওয়া যায় না। শেষ দৃশ্যে দেখা যায় ড্ররের বাড়ির এক গুপ্ত দরজার ওপাশে ঘুমন্ত মিকির মেয়ে।
অভিনয় , চিত্রনাট্য, পরিচালনা দর্শককে একঘন্টা চল্লিশ মিনিট বসিয়ে রাখার পক্ষে যথেষ্ট ।মিকি, ড্রর দুর্দান্ত। কিন্তু গিডি মহা ভয়ঙ্কর।  শুধুমাত্র শোক , রাগ একটা মানুষকে এমন জায়গায় নিয়ে চলে যায় যে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন পেডোফাইল (মানসিক রোগী যে ছোট শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনে আনন্দ পায়) –এর সাথে কোনও তফাত থাকে না। হিন্দুমতে ষড়রিপুর ক্রোধ আর ক্রিশ্চান মতে Seven Deadly Sins এর Wrath একটা মানুষকে উন্মাদ করে তুলতে পারে। তার ওপর কাজ করছে মিলিটারি ইতিহাস। সব মিলিয়ে একটা বোমা ফাটার মতো ব্যাপার। আসলে পরিচালকজুড়ি দেখাতে চেয়েছেন যে গল্পের প্রধান তিনটি চরিত্র তিনটি মূর্তিমান নেকড়ে। যে নেকড়েরা নিরীহ মেষগুলোকে ভুলিয়ে এনে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায় । এই সমস্ত নেকড়ে কে আবার সবসময় বাইরে থেকে চেনা যায় না , এরা গাধার চামড়ার ভিতর লুকিয়ে থাকে।শিকার সামনে এলেই ধারণ করে নিজমূর্তি।এমনকি আমরা জানি না যে আমাদের নিজেদের ভেতরেও একেকটা নির্মম নেকড়ে বর্তমান। আমরা বড়ো অত্যাচারী, বড্ড বেশি রকমের অত্যাচারী।
  | |

Comments