Diary : শুক্রাণু: প্রথম মায়ের দুধের গন্ধ সব মানুষের মুখে : অ র্জু ন ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়




DIARY
AUTHOR

‘প্রথম মায়ের দুধের গন্ধ সব মানুষের মুখে’

একটা ছোট্ট বাচ্চা, যখন সবে একটুকুন বড়ো হয়েছে, কেউ তাকে ব’লে দেয় না, কিন্তু সে নিজে নিজেই আঁকতে শুরু করে, পেন্সিল দিয়ে, মোম রঙ দিয়ে, ঘরের দেওয়ালে। আলমারির গায়ে। শুরুতেই কাগজে আঁকে না। মেঝেতেও না। দেওয়ালেই আঁকে। যে বাড়িতে এর’ম শিশু আছে, সেখানে গিয়ে এই দৃশ্য দেখলেই আমার গায়ের রোমগুলো একটু খাড়া হয়ে যায়। মানুষ যখন ভাষা আবিষ্কার করেনি, হয়তো তখনও পাতার পোশাক গায়ে। কিম্বা হয়তো লজ্জাই আসেনি তখনও। গুহাবাসী। শিকারপর্ব। আর গুহাচিত্র। দেওয়ালে দেওয়ালে হরিণ, বুনো শুয়োর, দাঁতাল হাতি, বাঘ। ধীরে ধীরে ভাষা এলো। লিপি এলো। গুহার দেওয়ালেও উঠে এলো লিপি। আমি সেই বাচ্চাটাকে দেখি। কি আদিম গুহার নিবিড় মানুষটি দাঁড়িয়ে আছে আমার সামনে। খেলিছ এ বিশ্ব ল’য়ে বিরাট শিশু, আনমনে ! কেউ তো ওকে ব’লে দেয়নি দেওয়ালে আঁকতে। আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখি লক্ষ বছরের আদিম ও প্রাচীন মানব। আমি মনে মনে নতজানু হই সেই সভ্যতার কাছে। আমার ভীমবেটকা, অজন্তা দেখা হয়ে যায়। 

তারপরে আসে আরেক সভ্যতা। যা তাকে বলবে, দেওয়ালে ছবি আঁকতে নেই। এতে ঘর নোংরা হয়। এটা অসভ্যতা। কাগজে আঁকো। এইভাবে তার কাছে একটা বিরাট নির্বাসন এনে দিই। তার স্ব-সভ্যতা থেকে নির্বাসন। আমরা নির্বাসিতরা, তাকে নিজেদের দলে টেনে, দল ভারি করি।   
.......

মাটি আর পশুর চর্বি মিশিয়ে মানুষ প্রথম রঙ তৈরি করেছিল। সে নাকি আজ থেকে প্রায় পনেরো হাজার বছর আগে। কি তারও বেশি হবে। গবেষকরা বলেন মানুষের প্রথম তৈরি রঙগুলো ছিলো লাল, হলুদ, সাদা আর কালো। গুহার দেওয়ালে সেই সব রঙ দিয়ে ছবি আঁকতো মানুষ। আজ থেকে দশ হাজার বছর আগে আঁকা দাক্ষিণাত্য মালভূমির উপকণ্ঠে, বিন্ধ্য পর্বতমালার উত্তর সীমানার গা ঘেঁষে  ভীমবেটকার গুহাচিত্রের বেশির ভাগ ছবি সাদা ও লাল রঙে আঁকা। কিছু কিছু ছবি হলুদ, কমলা, সবুজ ও বেগুনি। কিন্তু আমি ভাবছি, পনেরো হাজার বছর আগে, শিকার করে মানুষ ফিরছে গুহায়, আগুনে ঝলসে একসাথে সেই খাবার ভাগ করে নিচ্ছে। তারই অবকাশে হয়ত সেই পশুর চর্বি আর মাটি মিশিয়েই বানাচ্ছে রঙ। গুহার দেওয়ালে ছবি আঁকছেন পৃথিবীর প্রথম শিল্পী। প্রথম গণেশ পাইন। প্রথম পাবলো পিকাসো। প্রথম যামিনী রায়। বাইরে, আগুনে ঝলসানো হচ্ছে মাংস। সে আগুনের কাঁপা কাঁপা আলো এসে পড়েছে গুহার ভেতরে। হয়ত, হয়ত, সেই পশুটাকেই আঁকছেন তিনি, যাকে শিকার করা হল সদ্য। আঁকছেন তার শিকার দৃশ্য। তারপর, যে রঙ, তা হয়ত আগুনে চাপানো বুনো শুয়োরটারই চর্বি  থেকে।    

ততক্ষণে খাবার তৈরি এদিকে। কেউ ডাকছে, ‘খেতে এসোওওও...’

DIARY
AUTHOR

Comments