অলকনন্দা - অনুপম মুখোপাধ্যায়







আপাতত হিংসেই আমার খোরাক। আমি জেলাসি খেয়ে বেঁচে আছি।
এই যে তুমি শোবার ঘরে ঢুকে এলে, না বলে-কয়ে, অন্য কোনোদিন এমন করলে এর ফল তোমাকেই ভোগ করতে হবে। দ্যাখো, আমি বাথরুমের দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভিতর থেকে ভেসে আসছে খোলা ট্যাপের আওয়াজ। এখন এই আংশিক নগ্নতা যেকোনো ফোটোগ্রাফারের স্বপ্ন হতে পারে। আমার মুখের ভাব ফেদেরিকো ফেলিনি পেলে লুফে নিতেন।
আমি জানি তুমি জলের অপচয় সহ্য করতে পারো না। তুমি জানো খাঁ খাঁ দুপুরগুলোয় আমার অবৈধতা জাগে।
আমি জানি। আমি তোমার হিংসে খেয়েই তো বেঁচে আছি।
তোমার জিভে নিজের জিভ মুছে নিয়েও আমি বলব, আমি তোমার হিংসে খেতে ভালবাসি।
সোজা তাকিয়ে আছি তোমার চোখের দিকে। কিছুতেই চোখ ফেরাব না। তোমাকেই ফিরিয়ে নিতে হবে।
এটা কাউকে ছোটবেলায় শেখাতে হয় না যে, না-বলে কারো অন্তর্বাসের তলায় হাত দেওয়া উচিত নয়। সেই অন্তর্বাস আলমারিতে থাকলেও... তার তলায় একটা দুটো তিনটে চিঠি থাকতে পারে। সেই চিঠিগুলো স্কুলশিক্ষিকার বাঁ-স্তনের বোঁটা, পাগলির স্ফীত ক্লিটোরিস বা রাগী মানুষের উত্থিত পেনিসের চেয়ে ঢের বিপজ্জনক
তুমি আমার চিঠি পড়েছ। আমি জানি তুমি পড়েছ।
ভেবে পাচ্ছ না এতদিন কেন তোমার চোখে পড়েনি।
বোকা।
বরং ভাবো এই ই-মেলের যুগে কেউ চিঠি কেন লিখবে!
তুমি চিঠি পড়েছ।
তারিখ দ্যাখোনি।
ওগুলো আমি এই মাসেই পেয়েছি।
ওগুলো আমার এই জন্মেরই চিঠি।
প্রতিবার চিঠি পেয়ে পরখ করে নিই, আমার ব্রা-র তলায় তোমার হাত ঠিকঠাক পৌছচ্ছে কিনা। হৃদি, কেন যে তোমার হাত অতল হল না।



সকালে উঠে দেখেছিলাম তুমি ঘুমোচ্ছ। আমার ঘোর কাটতে সময় নেয়। আজও নিয়েছিল। তোমার শ্বাসের আওয়াজ পাচ্ছিলাম। হাল্কা আওয়াজ। হাল্কা চুলগুলো এসে পড়েছে তোমার মুখ জুড়ে। তোমার বন্ধ চোখ। আমি টের পাচ্ছিলাম আবেগ কাকে বলে। জোরে ডেকে উঠতে ইচ্ছে করছিল। তোমার ঘুম যেন সইতে পারছিলাম না।
অত গভীর ঘুম আমি কখনও নিজের জন্য টের পাইনি।
যেন প্রাণের বাইরে ওই ঘুম!
অর্ধেক আলোয়।
তোমার হাতের ত্বক। তোমার গলার ওঠানামা। ওই শুকনো গরমে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে চাইছিলাম। কিন্তু তোমার ঘুম। তোমার ঘুম চুরমার করার অধিকার কি আমার আছে!
তখন যদি তোমাকে জড়িয়ে ধরতে হয় ? সব ভুলে ?
আমি পিছিয়ে গিয়েছিলাম। তুমি ঘুমের মধ্যেই ভাল ছিলে।
তোমার ওই ঘুম তো তুমি আমার থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। তোমার মুখে নিজের ছায়া দেখার লোভ তো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। তুমিও না।
স্বপ্ন। শুদ্ধ। গভীর।
বছরগুলো আসছে। এই একইভাবে রোজ। বছরগুলো যেভাবে যায়নি।
আজ যেমন কথাবার্তা নেই দুম করে অফিস থেকে চলে এলাম ...
প্রথমবার।
একটাই নদী তো নয়! একটাই নদী হতে পারে না।







--

Comments