ডুয়েল - তন্ময় ভট্টাচার্য্য




বড্ডো কাছাকাছি বসেছে দু’জন। নিমো’র ডানহাত আর বিদুষীর বাঁ-হাত প্রায় ঘেঁষাঘেঁষি। ফুটপাথের লোকটা খালি পায়চারি করছে আশেপাশে। নিমো আর থাকতে না পেরে আকাশের দিকে তাকিয়ে জোরে একটা খিস্তি দিয়ে উঠলো। তবু শালা যাওয়ার নাম নেই লোকটার। মরুক গে যাক। বিদুষী মোবাইল নিয়ে খুটখুট করছে। কী বলবে বুঝতে না পেরে একটা সিগারেট ধরালো নিমো। রাস্তার ওদিকের ল্যাম্পপোস্টটার জ্বলা-নেভা দেখতে দেখতে আলগোছে বিদুষীর হাতটা ছুঁয়ে নিলো। বুঝতে পারেনি মেয়েটা। ভালোই হয়েছে। সামনের মোড় দিয়ে বাস যাচ্ছে একের পর এক। চুপ করে বসে থাকতে থাকতে কিছুটা বিরক্ত হয়েই বিদুষী জিজ্ঞেস করলো – “কেমন লাগছে বল!” “দারুণ” –নিমো বললো,অনেকটা থুতু গিলে আর বুকের ধুকপুকানি ভিতরের দিকে ঠেলে দিয়ে । আবার সব চুপচাপ।

একটা গাছের বাঁধানো শানে বসেছে ওরা। ওপর থেকে টুপটুপিয়ে পড়ছে সন্ধ্যার পাতা। বলার মতো কিছু পায়নি আর। সত্যিই,ফোনে অতো কথা না বলে এখনের জন্য কিছু জমিয়ে রাখলেও হতো! কী আর করা যাবে! সাড়ে পাঁচটা বাজতে চললো। বিদুষীকে ফিরতে হবে এবার। ও উঠে দাঁড়াতেই নিমো উসখুস করে উঠলো! ইসস! প্রথম মুলাকাত এভাবে মাঠে মারা যাবে! হাত ধরাধরি নয়,পার্কে গাছের আড়াল নয়... একে তো খোলা রাস্তা তারপরেও কিনা মিনিট পনেরোর মধ্যেই বাইবাই! বলে লাভ নেই। অভি’র কথা ভালো করেই জানে নিমো। বিদুষীর বয়ফ্রেন্ড। ও’ই রসিয়ে রসিয়ে বলেছে একদিন ফোনে। শুনতে শুনতে গা-পিত্তি জ্বলছিলো। আজ এরকম কন্ডিশানে কোনো সুযোগ নিতে গেলে আবার লোচ্চা না ভেবে বসে মেয়েটা! ঠোঁটের হুক থেকে হাসি ঝুলিয়ে বিদুষীর পেছন পেছন মেট্রোস্টেশনের দিকে এগোতে লাগলো সে।

দু’জনে দু’দিকে যাবে। বিদুষী শোভাবাজারে আর নিমো দমদমে। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেটে শেষ টান মেরে ভেতরে ঢুকলো। টিকিট কেটে প্ল্যাটফর্মে বসলোও পাশাপাশি। আরিব্বাস! দুটো চেয়ারের মাঝখানে একটাই কমন হাতল! বিদুষী আগেই হাত রেখেছে ওতে। নিমো গুঁতোগুঁতি করে কনুই থেকে বাকি হাতটা সাঁটিয়ে দিলো ওর হাতের পাশে। মেয়েটা কিছু বুঝছেও না মাইরি! হাসিহাসি মুখে মাথা ঘোরাচ্ছে চারদিকে। যতক্ষণ ট্রেন না আসে ততক্ষণই মস্তি। আর কিছু না হোক,গা ঘেঁষাঘেঁষি তো হবে! নিমো তেতে উঠলো।

ট্রেন ঢুকছে। একটা ছোট্টো ‘বাই’ বলে এগিয়ে গেলো বিদুষী। কামরায় উঠে হাত নাড়ছে। চলেও গেলো। ডানপাশটা বড্ডো ফাঁকা-ফাঁকা লাগছে এবার। নিমো উঠে দাঁড়ালো। নাহ! এরকম একতরফা ভালোলাগা পোষাবে না ওর। মেয়েটাও বলিহারি! ওই কেলেকুষ্টি ছেলেটার সঙ্গে ঝুলে আছে দিনের পর দিন। সামনের দিকে এগিয়ে গেলো নিমো,আরো সামনের দিকে। দুটো কামরার জয়েন্টে দাঁড়াতেই হবে আজ। ঠিকমতো ঝাঁকুনি না খেলে ফুরফুরে হবে না মন। দমদম থেকে আবার তো ভিড় ঠেলে ওঠা!

মোবাইলটা বের করলো পকেট থেকে। সাইলেন্ট ছিলো এতক্ষণ। উনিশটা মিসকল আর সাতটা মেসেজ,প্রেমিকার...






এই মাসের অন্যান্য গল্পগুলি:

কর্ত্রী -সরোজ দরবার  ।  ঘুম - সুমন ধারা শর্মা  । একটি ব্যক্তিগত মনখারাপের গল্প - অরিনিন্দম মুখোপাধ্যায়
অনাথবাবু ও হাওয়াবাড়ি -- ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী ।  কুলীন বনবিহারী - একটি অসুখপাঠ্য অনুগল্প।। - অতীন্দ্রিয় চক্রবর্তী

Comments