অন্ধ অন্ধ খেলা -অনিন্দ্য সুন্দর রায়



রাস্তায় চলতে চলতে হঠাত চোখ বন্ধ করে কিছুটা হেঁটে নেওয়া বাঁটুর ছোটবেলার অভ্যেস। চলতি পথটাকে নিজের আভাসে রেখে, একটা হাল্কা ভরসায় নিজেকে ছেড়ে দেওয়াটা তার কাছে একটা মজার খেলা। যখন সে ক্লাস টু-থ্রী, একটা সাইকেলওয়ালা বাঁটুকে ধাক্কা দেয় সজোরে। চোখ বন্ধ থাকায় ধাক্কাটা সামলাতে সামলাতে সে দেখতে পায়নি লোকটা আসলে কে শুধু আবছা শুনেছিল, ‘খানহির ছ্যাইলা’। গ্রামে মাটির রাস্তা বলে চোট তেমন লাগেনি। চোট না লাগার আরো একটা কারণ ওই ‘খানহির ছ্যাইলা’ বাঁটুর কাছে তখন শব্দটা ‘শক্তিমান’ ‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা’ গোছের। খান-রা যেরকম হিরো তারচে’ও খানিকটা এগিয়ে সে নিজেকে ভাবত। বাড়িতে নিজের হিরোইজ্‌ম্‌ দেখাতে গিয়ে একদিন অকারণ বেধড়ক মার খায়। কারণ ছিল নাকি অশালীন ভাষা। ভাষার আবার অশালীনতা কী? বাঁটু অবাক হয়ে ভাবে। শব্দটির অর্থের পেছনে ছুটতে থাকে সে, ছুটতে ছুটতে তার চুল-দাড়ি গজায়, স্কুল-কলেজ, বাড়িবদল হয়, প্রেম হয়। আজ সকাল থেকে খাওয়া হয়নি বাঁটুর। খিদে যে পেয়েছে তেমনও না। আজ তার প্রেমিকার গায়ে-হলুদের দিন। তারিখ তাই বলছে। সারারাতের না-ঘুম হওয়া চোখগুলো ঘামতে ঘামতে অর্ধেক পচে গেছে। এরকম ছটফটের সময় কয়েকটা সিগারেট খাওয়ার টাকাটাও যদি থাকতো, তাহলে হয়তো মাঝরাস্তায় এসে ছোটবেলার খেলাটা খেলতে ইচ্ছে করত না তার।


থিয়েটার রোডের ঠিক মাথাটায়, যেদিকটার রাস্তা বেঁকে গেছে পি টি এস হয়ে ব্রিজের দিকে সেখানে রাস্তা পার করছে বাঁটু। সশব্দে একটা লোকাল বাস ব্রেক করে ঘ্যাঁচ করে। ভিড়ের খানিকটা ঝুঁকে পড়ে সামনের দিকে। এর ঘাম ওর গায়ে লেগে যায়, সুযোগ বুঝে কারোর কারোর হাত হাতলে, অন্যের পকেটে, সামনের জনের মাই-এ। কন্ডাক্টর মুখ বাড়িয়ে বলে ওঠে, “খানকির ছেলে। অন্ধ নাকি! সালা হিরো সাজছে...”









 ---

Comments